পরীক্ষায় ফলাফলের মাপকাঠিতে সন্তানকে বিচার করবেন না
পরীক্ষায় ফলাফলের মাপকাঠিতে সন্তানকে বিচার করবেন না; পরীক্ষায় ফলাফলের মাপকাঠিতে সন্তানকে বিচার করবেন না।
আজ ৩১ মে, SSC পরীক্ষার ফলাফল দিবে বোর্ড, এসময়ে সন্তানদের মানসিক চাপ দিবেন না।
প্রতি বছর SSC ও HSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবার পরে দেশে বহু সংখ্যক কিশোর কিশোরী আত্মহত্যা করে! কিছু কিছু পরীক্ষার্থী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়! কোন কোন পরিবারে আবার চলে ঝগড়া বিবাদ!
হয়তো দেখা যাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় পাস করবে। কেউ কেউ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করবো।
- আরও পড়ুন:
কিন্তু আমরা যতই শুভকামনা করি না কেন কিছু পরীক্ষার্থী ফেল করবেই। আবার অনেকে প্রত্যাশিত A+ পাবে না, কেউ অন্যান্য গ্রেডেও মনপুত ফলাফল না-ও পেতে পারে।
তবে সত্য হলো শুধু একটি পরীক্ষার ফলাফলই জীবনের সবকিছু নয়।
পরীক্ষার ফলাফলে খারাপ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার পেছনে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক, অর্থনৈতিক অবস্থা ও সাংস্কৃতিগত দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি কারণ অনেকাংশে দায়ী।
তবে এ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল তার পরিবার। সেখান থেকে অভিভাবকদের বিরূপ আচরণ কোমলমতি শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দেয় যা তার আত্মহত্যার সরাসরি কারণ।
- আরও পড়ুন:
সন্তান A+ না পাওয়ায় বা ফেল করায় অনেক মা কেঁদে কেঁদে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেন;
বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ করে না খেয়ে রাত কাটান! কোন কোন পিতা ঘরে এসে রেজাল্ট শুনে জিনিসপত্র ভাংচুর শুরু করে দেন, কেউ আবার বলেন, ফেল করলে/ A+ না পেলে বাড়িতে জায়গা হবে না ;
এমন সন্তান থাকার চেয়ে, না থাকা ভালো; ফেল করলে পড়াশুনা শেষ করে দিবে, বিয়ে দিয়ে দেব ইত্যাদি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা শুধু মনের ক্ষোভ বা রাগ থেকে এমনটা বলেন যা তিনি পরবর্তীতে আদৌ করবেন না! কিন্তু তার আগেই মানসিক চাপে পড়া সন্তানরা আত্মহত্যা করে বসে।
আপনি আপনার সন্তানের পেছনে এক বা একাধিক প্রাইভেট টিউটর নিয়োগ দিয়েছেন, অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন। আপনার সন্তানের থেকে ভালো ফলাফল আশা করার অধিকার আপনার অবশ্যই আছে।
কিন্তু আপনার সন্তানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আপনার সচেতন থাকতে হবে।
পরীক্ষার আগে সারা বছর সে রুটিন ফলো করে লেখাপড়া করেছে কি-না, ক্লাস করেছে কি-না, সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল ইম্প্রুভ হচ্ছে কি-না, ঘরে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন কি-না, কোন কোন বিষয়ে সে দুর্বল, লেখাপড়া নিয়ে সে মানসিক চাপে ভোগে কি না ইত্যাদি বিষয়ে আপনার কি শতভাগ পরিচর্যা ছিলো ?
- আরও পড়ুন:
শুধু পয়সা ঢেলে সন্তানের ভালো ফলাফলের জন্য চাপ দেওয়া একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার অন্যায় আবদার, অথবা বলতে পারেন সন্তানের প্রতি অবিচার।
সন্তানদের অন্যের সাথে তুলনা করে ওদের অন্তরে হিনোমন্যতা ঢুকিয়ে দিবেন না। এতে ওদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হবে। ওদেরকে ওদের মত তৈরি করুন।
রেজাল্ট যা-ই হোক ; পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করে সেখানে ওদের শতভাগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন পড়াশোনায় এতই খারাপ ছিলেন যে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল! স্কুল থেকে দেয়া চিঠিতে লেখা ছিল, “টমাস পড়াশোনায় খুবই অমনোযোগী এবং তার মেধাও ভালো নয়।
এ ধরনের ছাত্রকে স্কুলে রাখা সম্ভব না।”
কিন্তু টমাসের মা চিঠিটা খুলে ছেলেকে পড়ে শুনিয়েছিলেন, “টমাসের মেধা সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে অনেক বেশি। এমন মেধাবী ছাত্রকে পড়ানোর ক্ষমতা সাধারণ স্কুলের নেই।
অতএব, তাকে যেন বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করানো হয়।”
- আরও পড়ুন:
মায়ের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে টমাস জটিল জটিল বিষয় পড়া শুরু করেন। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি দশ হাজার বারেরও বেশি বার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তা আবিষ্কার করেন, থেমে যান নি।
কারণ, তার মা তার মধ্যে এ বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে কোন কিছুই অসম্ভব নয়!
মায়ের মৃত্যুর বহুপর টমাস স্কুলের সেই চিঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন। চিঠিটি পড়ে তিনি ডায়েরিতে লিখেছিলেন, “টমাস ছিল একজন মেধাহীন শিশু।
একজন অসাধারণ মায়ের অনুপ্রেরণায় সে হয়ে উঠে যুগের সেরা মেধাবী।”
অতএব, অমনোযোগী ছেলেমেয়েদের বার বার পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝান। তাদেরকে উৎসাহিত করুন। পড়াশোনা করে যারা সফল হয়েছেন তাদের উদাহরণ দিন।
পড়াশোনা না করে যারা কষ্টে ও অভাবে আছেন তাদের উদাহরণ দিন। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের বই রাখুন। সময়ে সময়ে নতুন বই কিনুন।
আপনিও বই পড়ুন। এতে বইয়ের প্রতি আপনার সন্তানের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। আপনি সুযোগ পেলেই ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবেন, টিভির সিরিয়াল আর রান্নার অনুষ্ঠান দেখবেন আর আপনার সন্তান বই প্রেমিক হবে এমন আশা করা যায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে, মারধর করে শিশু-কিশোরদের পড়াশোনায় আগ্রহী করা যায় না। তাই অভিভাবকদের কাছে বিনীত অনুরোধ, উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত না করে শুধু ফলাফলের সময়ে সন্তানদের শারীরিক-মানসিক চাপ দিবেন না।
এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
- আরও পড়ুন:
প্রিয় ফলাফল প্রত্যাশী ছাত্রছাত্রী, SSC বা HSCতে A+ মিস করেও ডাক্তার হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, গবেষক হয়েছেন, সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন এমন উদাহরণ অসংখ্য।
এবার হয়তো তুমি তোমার প্রত্যাশিত ফলাফল পাবে না। হয়তো ফেল করবে।
তবে হাল ছেড়ো না। লোকে কি বলে সেটা ভেবে নিজেকে আড়াল করতে যেও না।
এ জিবনটা তোমার। একে সুন্দরভাবে তৈরি করার জন্য নিজেকে আবার তৈরি করো। ভালো ফলাফল করতে না পারলে মনখারাপ তো হবেই। তাতে কী! দু’একদিন ধৈর্য ধটো।
তারপর নিজের সমস্যা, সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো কাগজে লিখে দেখো। সমাধানের পথ বের হয়ে আসবেই। দিনের অধ্যয়নের সময়কে রুটিনমাফিক ভাগ করে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরিশ্রম কর।
দেখবে, সফলতা আসবেই।
- আরও পড়ুন:
বাধা যত বিশাল, বিজয়ের আনন্দও তত বাঁধভাঙা! নেলসন ম্যান্ডেলা বলেন, “আমাকে আমার সফলতা দ্বারা বিচার করো না। ব্যর্থতা থেকে কতবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি তা দিয়ে আমাকে বিচার করো।”
আহসান টিটু
প্রভাষক, কাজি আজহার আলি কলেজ।
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন।
ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন।
আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন
দেশের অন্যতম প্রিয় অনলাইন পোর্টাল সর্বদাই সত্য ও বস্তুনির্ভর তথ্য প্রকাশে বদ্ধপরিকর। আপনার যেকোন অভিযোগ আপত্তি ও পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
ক্যাটাগরি ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখুন–
- বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ইএফটি তথ্য সংগ্রহ ফরম ও নিয়মাবলী
- অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি নতুন সময়সূচী ২০২৪
- নতুন এমপিও আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনলাইন আবেদনের নিয়ম
- মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান আয়োজন
- আনন্দধারা: সবাই মিলে বনভোজন আয়োজন