পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমরা কি ৯ম শ্রেণি ১৪ তম অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এর উত্তর সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছো? কিংবা এসাইনমেন্টটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে বলবো তোমরা ঠিক ওয়েবসাইটে এসেছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে- পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয় শীর্ষক প্রতিবেদন।
পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়
সূচনাঃ
আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নাগরিকতা ধারণার উদ্ভব হয়।প্রাচীন গ্রিসে তখন নগরকেন্দ্রিক ছোট ছোট রাষ্ট্র ছিল, সে গুলোকে নগররাষ্ট্র বলা হতো। এসব নগর রাষ্ট্রের যারা প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করত তারা নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদের ভোটাধিকার ছিল।তবে নগর রাষ্ট্রের নারী, বিদ্বেষী ও গৃহভৃত্য এরা নাগরিক ছিল না । সময়ের পরিক্রমায় নাগরিকত্বের ধারণায় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে কোন পার্থক্য করা হয় না। যে ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করে, তাকে রাষ্ট্রের নাগরিক বলে।
নাগরিকের গুণাবলীঃ
নাগরিক হলো ব্যক্তির পরিচয়। যেমন- আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আর রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি যে মর্যাদা ও সম্মান পেয়ে থাকে তাকে নাগরিকতা বলে।
নিম্নে গুণাবলী গুলো দেওয়া হলঃ
১.রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া।
২.স্থায়ীভাবে বসবাস করা।
৩.রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ও আইন মেনে চলা।
৪.সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করা।
৫.রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা।
নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতিঃ
নাগরিকতা অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
- ক) জন্মসূত্র,
- খ) অনুমোদন সূত্র।
ক. জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতিঃ
জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুটি নীতি অনুসরণ করা হয়। যথা- ১।জন্মনীতি ২।জন্মস্থান নীতি।
- জন্মনীতিঃ
এ নীতি অনুযায়ী পিতা-মাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে শিশু যে দেশে যেখানে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন পিতা-মাতা নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। যেমন বাংলাদেশের এক দম্পতি যুক্তরাজ্যে গিয়ে একটি সন্তান জন্ম দিল।এ নীতি অনুসারে ঐ সন্তান বাংলাদেশের নাগরিকতা লাভ করবে কারণ তার পিতামাতা বাংলাদেশের নাগরিক। - জন্মস্থান নীতিঃ
এ নীতি অনুযায়ী পিতা-মাতা যে দেশের নাগরিক হোক না কেন, সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে ঐ রাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করবে। যেমন বাংলাদেশের পিতা-মাতার-সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জন্ম গ্রহণ করলে,সেই সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করবে।এক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নির্ধারণে রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জন্ম নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশে তার মধ্যে একটি। অন্যদিকে, আমেরিকা, কানাডাসহ অল্প কয়েকটি দেশ জন্মস্থান নীতির মাধ্যমে নাগরিকতা নির্ধারণ করে।
খ. অনুমোদন সূত্রে নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতিঃ
কতগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করলে তাকে অনুমোদন সূত্রের নাগরিক বলা হয়। সাধারণত অনুমোদন সূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো হলোঃ
- সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা,
- সরকারি চাকরি করা,
- সততার পরিচয় দেওয়া,
- সে দেশের ভাষা জানা,
- সম্পত্তি ক্রয় করা,
- দীর্ঘদিন বসবাস করা,
- সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। রাষ্ট্রেভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হতে পারে।
সুনাগরিক হিসেবে করণীয় /কর্তব্যঃ
রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুনাগরিক নয়। আমাদের মধ্যে যে বুদ্ধিমান, যে সকল সমস্যার সহজ সমাধান করে, যা বিবেক আছে সে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ বুঝতে পারে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে। আর যে আত্মসংযমী সে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে।এসব গুণসম্পন্ন নাগরিকদের বলা হয় সুনাগরিক।
সুনাগরিকের প্রধানত তিনটি গুণ রয়েছে।যথা-
১। বুদ্ধি,
২। বিবেক,
৩। আত্মসংযম
বুদ্ধিঃ বুদ্ধি নাগরিকের অন্যতম গুণ। বুদ্ধিমান নাগরিক পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের বহুমুখী সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। সুনাগরিকের বুদ্ধির উপর নির্ভর করে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সফলতা। তাই বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। প্রতিটি রাষ্ট্রের উচিত নাগরিকদের যথাযথ শিক্ষা দানের মাধ্যমে বুদ্ধিমান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
বিবেকঃ রাষ্ট্রের নাগরিকদের হতে হবে বিবেক বোধ সম্পন্ন। এগুলোর মাধ্যমে নাগরিক ন্যায়-অন্যায়, সৎ -অসৎ, ভালো-মন্দ অনুধাবন করতে পারে। বিবেকবান নাগরিক একদিকে যেমন রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করে ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকে।যেমন- বিবেকসম্পন্ন নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে আইন মান্য করে যথাসময়ে কর প্রধান করে, নির্বাচনের যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি কে ভোট দেয়।
আত্মসংযমঃ সুনাগরিকের আত্মসংযম থাকা উচিত। এর অর্থ নিজেকে সকল প্রকার লোভ-লালসা ঊর্ধ্বে রেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা। অর্থাৎ সমাজে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার নাম আত্মসংযম। আমাদের মধ্যে যিনি এ গুণের অধিকারী তিনি যেমন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারেন, তেমনি অন্যের মতামত প্রকাশের নিজেকে সংযত রাখেন। এছাড়া, প্রত্যেক নাগরিককে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়।
পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়
সুনাগরিক হিসেবে করণীয়ঃ
১। ভালো মানুষ হওয়া, সবসময় দেশের আইন মেনে চলা।
২। দেশের মঙ্গল কামনা করা ও দেশকে ভালোবাসা।
৩। যথাসময়ে কর প্রদান করা এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করা।
৪। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করা। সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা।
৫। নিজের দেশকে সম্মান করা। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বর ঊর্ধ্বে থাকা।
আমার পরিবারের সদস্যরা নাগরিক হিসাবে যেসব অধিকার ভোগ করে তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ-
অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতগুলো সুযোগ-সুবিধা,যা ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। অধিকার ব্যতীত মানুষ তার ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। অধিকারের মূল লক্ষ্য ব্যক্তির সর্বজনীন কল্যাণ সাধন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য। নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকারঃ
১। নৈতিক অধিকার
২। আইনগত অধিকার
১। নৈতিক অধিকারঃ নৈতিক অধিকার মানুষের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে আসে। যেমন দুর্বলের সাহায্য লাভের অধিকার নৈতিক অধিকার।এটি রাষ্ট্রকর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না যার ফলে এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।তাছাড়া এ অধিকার ভঙ্গ কারি কে কোন শাস্তি দেওয়া হয়না। নৈতিক অধিকার বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন রকম হতে পারে ।
২। আইনগত অধিকারঃ যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত সে গুলোকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-ক) সামাজিক খ)রাজনৈতিক ও গ)অর্থনৈতিক অধিকার।
- ক) সামাজিক অধিকারঃ সমাজের সুখ শান্তিতে বসবাস করার জন্য আমরা সামাজিক অধিকার ভোগ করি। যেমন জীবনরক্ষার, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মতপ্রকাশের, পরিবার গঠনে, শিক্ষার, আইনের দৃষ্টিতে সমান সুযোগ লাভের, সম্পত্তি লাভের ও ধর্মচর্চার অধিকার ইত্যাদি।
- খ) রাজনৈতিক অধিকারঃ নির্বাচনে ভোটাধিকার, নির্বাচিত হওয়া এবং সকল প্রকার অভাব-অভিযোগ আবেদনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া কে রাজনৈতিক অধিকার বলে। এসব অধিকার ভোগের বিনিময় নাগরিকরা রাষ্ট্রপরিচালনায় পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
- গ) অর্থনৈতিক অধিকারঃ জীবনধারণ করা এবং জীবনকে উন্নত ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকারকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে।যেমন-যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার, অবকাশ লাভের অধিকার, শ্রমিক সংগঠনের অধিকার।
উপসংহারঃ
রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা নাগরিকের কর্তব্য। সরকারের গৃহীত কোন কাজ মানেই হলো জনগণের কাজ। সরকারি কর্মকর্তা তদুপরি নাগরিকের সততা ও কাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার ওপর সরকারের সফলতা, উন্নতি ও অগ্রগতির নির্ভর করে। প্রত্যেক নাগরিককেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় অর্জন ও সফলতা এবং সব সময় দেশের মঙ্গল কামনা করা নাগরিকের কর্তব্য। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনি কোন কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। তাহলে সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে।
এই ছিল তোমাদের ৯ম শ্রেণি ১৪ তম অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এর উত্তর- পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার পেতে হলে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয় শীর্ষক প্রতিবেদন।
আরো দেখুন-
তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাংলা নোটিশ ফেসবুক গ্রুপে দেশের বিভিন্ন নামকরা বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আলোচনা করছে।
তুমিও যোগ দিয়ে বিভিন্ন তথ্য পেতে পারো- গ্রুপ লিংক- facebook.com/groups/banglanoticeনিয়মিত বাংলা নোটিশ ডট কম ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেইজ Like & Follow করে রাখুন; ইউটিউবে আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন।