তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ
২০২২ সালের এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য এইচএসসি, আলিম শ্রেণির ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট অর্থনীতি ১ম পত্রের বাছাইকৃত নমুনা উত্তর- (তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ) প্রস্তুত করা হয়েছে। এইচএসসি ও আলিম ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট অর্থনীতি প্রথম পত্রের নির্ধারিত কাজে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য এই উত্তরটি তোমাকে সহযোগিতা করবে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি বেসরকারি মাদ্রাসা ও কলেজ সমূহে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের চতুর্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজ ও মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চতুর্থ সপ্তাহে অর্থনীতি ১ম পত্রের এসাইনমেন্ট এর একটি বাছাইকরা নমুনা উত্তর তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে দেয়া হলো।
আলিম ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট অর্থনীতি ১ম পত্র
অ্যাসাইনমেন্টঃ (দ্বিতীয় অধ্যায়: ভোক্তা ও উৎপাদকের আচরণ)
অ্যাসাইনমেন্টঃ রমিজ বাজার থেকে প্রতি কেজি পেয়ারা ৮০ টাকা, ৭০টাকা ও ৬০ টাকা হলে যথাক্রমে ১৫ কেজি, ২০ কেজি ও ২৫ কেজি পেয়ারা ক্রয় করতে আগ্রহী। অন্যদিকে পেয়ারা বিক্রেতা উক্ত দামে বাজারে পেয়ারা সরবরাহ করতে চায় যথাক্রমে ২৫ কেজি, ২০ কেজি ও ১৫ কেজি। উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ কর।
শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ
- চাহিদার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- চাহিদা বিধিকে সূচি এবং রেখাচিত্রে রূপ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- যােগানের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- যােগানবিধিকে সূচি ও রেখাচিত্রে রূপ দিতে পারবে।
- সূচি, রেখাচিত্র এবং গাণিতিকভাবে ভারসাম্য দাম ও পরিমাপ নির্ধারণ করতে পারবে।
নির্দেশনা (সংকেত ধাপ পরিধি): চাহিদা ও যােগানের ধারণা, চাহিদা ও যােগানের সূচি, চাহিদা ও যােগানের চিত্রাঙ্কন, ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ, তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ (উদ্দীপকের তথ্যসমূহ হতে রেখাচিত্র অঙ্কন করা প্রয়ােজন)।
এইচএসসি, আলিম শ্রেণির ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট অর্থনীতি ১ম পত্রের বাছাইকৃত নমুনা উত্তর
অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান এর একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অফুরন্ত– এই মৌলিক পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য৷ অর্থনীতি শব্দটি ইংরেজি ‘Economics’ শব্দের প্রতিশব্দ। Economics শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Oikonomia’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ গৃহস্থালী পরিচালনা।
তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ
চাহিদার ধারণা (Concept of Demand)
সাধারন অর্থে, কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা বা ইচ্ছাকে চাহিদা বলে। কিন্তুু অর্থনীতিতে চাহিদা বলতে ভোক্তার কোন দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার আকাঙ্খার সাথে সাথে তা ক্রয়ের অর্থ, সামর্থ্য এবং ব্যয় করার ইচ্ছা থাকলে তবেই ঐ আকাঙ্খাকে চাহিদা বলে। ধরা যাক, রহিম আর্থিকভাবে অসচ্ছল। সে একটি মোটর গাড়ী কেনার জন্য আকাঙ্খা প্রকাশ করল কিন্তুু তা ক্রয় করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। কাজেই, এক্ষেত্রে রহিমের মোটর গাড়ির জন্য আকাঙ্খাকে চাহিদা বলা যাবে না। আবার একজন ধনী অথচ কৃপণ লোকের গাড়ী কেনার ইচ্ছাকে চাহিদা বলা যাবে না। কেননা তার ক্রয়ক্ষমতা থাকলেও অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা নেই। সুতরাং অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে নিম্নোক্ত তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণীয়। শর্ত তিনটি হলো :
(১) কোন দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্খা;
(২) দ্রব্যটি ক্রয় করার প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য; এবং
(৩) প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে দ্রব্যটি ক্রয় করার ইচ্ছা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কোন ক্রেতা বা ভোক্তার একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্খা, আর্থিক সামর্থ্য বা ক্রয়ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট দামে ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলে তবে তাকেই অর্থনীতিতে চাহিদা (Demand) বলে।
যােগানের ধারণা (Concept of Supply)
সাধারণ অর্থে যােগান বলতে কোন দ্রব্যের সরবরাহকে নির্দেশ করে। কিন্তু অর্থনীতিতে যােগান বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পণ্যে বিক্রেতাগণ কোন দ্রব্যের যে পরিমাণ বাজারে বিক্রয় করতে রাজি থাকে তাকে যােগান বলে। কোন দ্রব্যের যােগান সাধারণত: উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। দ্রব্যের যােগান দাম ও সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়।
তাই চাহিদার ন্যায় যােগানের ক্ষেত্রেও অন্যান্য বিষয়কে স্থির বিবেচনা করে যােগানকে শুধুমাত্র দামের সাথে একটি ক্রিয়া বা অপেক্ষক বিবেচনা করা হয়। সুতরাং, কোন বিক্রেতা বা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দামে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করতে প্রস্তুত থাকে তাকে অর্থনীতিতে যােগান (Supply) বলে।
যােগানের নির্ধারকসমূহ (Determinants of Supply)
আমরা জানি, কোন দ্রব্যের যােগান কতকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যে সব বিষয়ের উপর কোন দ্রব্যের যােগান নির্ভরশীল ঐসব বিষয়কে যােগানের নির্ধারক বলে। যােগানের নির্ধারকগুলাে যােগানের অপেক্ষকের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
- চাহিদা সূচি : অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায় কোন দ্রব্যের দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ককে যে সারণির মাধ্যমে দেখানো হয়, তা হচ্ছে চাহিদা সূচি।
- যোগান সূচি : চাহিদা সূচির মত যোগান সূচিকে একটি ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় যা দ্রব্যের দাম ও যোগানের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়।
সারণি-১ এ পেয়ারার চাহিদা সূচি দেখানাে হয়েছে। প্রতিটি দামে ভােক্তা যে পরিমাণ পেয়ারা ক্রয় করে তা নির্ধারণ করতে পারি। সারণিতে, প্রতি কেজি ৪০ টাকা দমে ভােক্তা প্রতি মাসে ১৫ কেজি পেয়ারা ক্রয় করে, ৭০ টাকা দামে। ২০ কেজি (পয়ারা ক্রয় করে এবং ৬০ টাকা দামে ২৫ কেজি (পয়ারা ক্রয় করে। এভাবে সারণি থেকে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেয়ারার দাম যত কমছে পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ তত বাড়ছে। চাহিদা সূচি অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে চাহিদার অন্যান্য নির্ধারক স্থির থাকা অবস্থায় দ্রব্যের দামের উপর দ্রব্যটির প্রকৃত পরিমাণ নির্ভর করে।
তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ
রেখাচিত্রের মাধ্যমে চাহিদা সূচির প্রকাশই হচ্ছে চাহিদা রেখা। [চিত্র ১ এ OY বা লম্ব অক্ষে পেয়ারার দাম ও OX বা ভূমি অক্ষে পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ দেখানাে হয়েছে। DD হচ্ছে ভােক্তার পেয়ারার চাহিদা রেখা। এই রেখার a, b, c বিন্দুগুলােতে বিভিন্ন দামে চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণ প্রকাশ পায়। যেমন, a বিন্দু দ্বারা বােঝা যায়, ৪০ টাকা দামে ভোক্তার পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ ১৫ কেজি। আবার c বিন্দুতে ৬০ টাকা দামে পেয়ারার চাহিদা পরিমাণ ২৫ কেজি। অর্থাৎ দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। দাম কমার সাথে সাথে চাহিদার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং চাহিদা রেখাটি বাম থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়ে থাকে।
সারনি ২ এ দেখা যাচ্ছে যে, পেয়ারার দাম বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে পেয়ারার যােগানের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন অন্যান্য বিষয় (যা বিক্রেতার বিক্রির পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে) অপরিবর্তিত থাকে।
রেখাচিত্রের মাধ্যমে যােগান সূচির প্রকাশই হচ্ছে যােগান রেখা।
চিত্র-২ এ OY বা লম্ব অক্ষে পেয়ারার দাম ও OX বা ভুমি অক্ষে পেয়ারার যােগান পরিমাণ দেখানাে হয়েছে।
Ss হচ্ছে বিক্রেতার পেয়ারার যােগান রেখা। এই রেখার a, b, c, বিন্দুগুলোতে বিভিন্ন দামে যােগানের বিভিন্ন পরিমাণ প্রকাশ পায়। যেমন, c বিন্দু দ্বারা বােঝা যায়, ‘৮০ টাকা দামে বিক্রেতার পেয়ারার যোগানের পরিমাণ ২৫ কেজি। আবার a বিন্দুতে ৬০ টাকা দামে পেয়ারার যােগানের পরিমাণ ১৫ কেজি। অর্থাৎ নাম ও যোগানের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। দাম বাড়ার সাথে সাথে যােগানের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং যােগান রেখাটি বাম থেকে ডানদিকে উর্ধ্বগামী হয়ে থাকে।
ভারসাম্য দাম ও পরিমাণঃ
যে কোনাে দ্রব্য বা সেবা সামগ্রীর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে দামে চাহিদা ও যােগানের পরিমাণ সমান হয়, তাকে ভারসাম্য দাম বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় যে পরিমাণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা দাম ও যােগান দাম সমান হয়, তাকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়। কোন প্রতিযােগীতামূলক বাজারে কোন দ্রব্যের বিক্রয় নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দর কষাকষি হয়। ক্রেতারা কম দাম দিতে চায় আর বিক্রেতারা তার দ্রব্যকে বেশী দামে বিক্রয় করতে চায়। এই দর কষাকষির মাধ্যমে এমন একটি দামে দ্রব্যটি ক্রয়-বিক্রয় হয়। যেখানে দ্রব্যের চাহিদা ও যােগানের পরিমাণ পরস্পর সমান হয়। এই দামকে ভারসাম্য দাম এবং ঐ বিক্রয়ের পরিমাণকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়। ভারসাম্য দাম ও পরিমাণের এই স্থিতিবস্থা বাজার ভারসাম্য বলে পরিচিত।
সাধারণত: নিম্নোক্ত দুই ভাগে বাজার ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ হয়ে থাকে। যথা:
- সূচি ও রেখা চিত্রের সাহায্যে,
- গাণিতিক/ বীজগাণিতিক মডেলের সাহায্যে।
চিত্রে বাজার চাহিদা রেখা (DD) ও বাজার যোগান রেখা (SS) পরস্পরকে e বিন্দুতে ছেদ করেছে। এই e বিন্দুতে বাজার ভারসাম্য বিদ্যমান। ভারসাম্য হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি নির্দিষ্ট দামে চাহিদার পরিমাণ ও যােগানের পরিমাণ সমতায় পৌঁছে। চাহিদা ও যােগানের ছেদবিন্দুতে যে দাম বিদ্যমান তা হচ্ছে ভারসাম্য দাম এবং দ্রব্যের পরিমাণ হচ্ছে ভারসাম্য পরিমাণ।
যখন বাজার দাম ভারসাম্য দামের সমান না হয় তখন কি হতে পারে? প্রথমে ধরে নেই, বাজার দাম ভারসাম্য দামের চেয়ে বেশি। চিত্রে বাজার দাম যখন ৮০ টাকা তখন পেয়ারার যােগানের পরিমাণ ২৫ কেজি এবং পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ ১৫ কেজি। অর্থাৎ, পেয়ারার উদ্বৃত্ত ১০ কেজি। এখানে যােগানদার যে পরিমাণ দ্রব্য যােগান দিতে ইচ্ছুক চলতি দামে তার সবটুকু বিক্রি করতে পারে না। উদ্বৃত্ত অবস্থাকে অতিরিক্ত যােগান (excess supply) বলা হয়।
অর্থাৎ দ্রব্যের দামের উর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। যখন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় তখন দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং যােগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবে বাজার পুনরায় ভারসাম্য অবস্থায় ফিরে আসে। ক্রেতা ও বিক্রেতার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বাজার দাম ভারসাম্য দামে উপনীত হয়। ভারসাম্য অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সন্তুষ্ট থাকে এবং দামের উপর উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী কোন ধরনের চাপ থাকে না।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি, আলিম শ্রেণির ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট অর্থনীতি ১ম পত্রের বাছাইকৃত নমুনা উত্তর- তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ।
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।