ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের এসএসসি ২০২১ সালের সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমাদের সাথে আজ আলোচনা করবো এসএসসি ২০২১ সালের ৭ম সপ্তাহের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইমেন্টের সমাধান নিয়ে। আজকের আলোচনার নির্ধারিত বিষয়- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ। তোমাদের বোঝার সুবিধার্থে এই আর্টিকেলের প্রথম অংশে অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এবং পরবর্তী অংশে ধারাবাহিকভাবে উত্তর দেয়া হয়েছে।
এসএসসি ২০২১ সালের ৭ম সপ্তাহের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইমেন্টের সমাধান/উত্তর
অ্যাসাইনমেন্ট : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ;
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
অ্যাসাইনমেন্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে:-
ক. মূলধন বাজেটিং এর ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে এবং উদাহরণ হিসেবে নিজেদের পরিচিত ও আশেপাশে অবস্থিত ব্যবসায়ের উল্লেখ করতে হবে;
খ. মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পাঠ্য বই এবং নিজস্ব সৃজনশীলতার প্রকাশ থাকতে হবে;
গ. মূলধন বাজেটিং এর প্রয়ােগ ক্ষেত্রের উদাহরণ ও ব্যাখ্যা থাকতে হবে;
ঘ. মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় যে ধাপগুলাে অনুসরণ করা হয় তার ব্যাখ্যা থাকতে হবে;
ঙ. সবশেষে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও টিকে থাকার সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ সংশ্লিষ্ট মতামত থাকবে। উপযুক্ত বিষয়গুলাের যথাযথ ব্যাখ্যাসহ অনধিক ২৫০ শব্দের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে;
(ক) মূলধন বাজেটিং এর ধারণা ব্যাখ্যা এবং উদাহরণ হিসেবে নিজেদের পরিচিত ও আশেপাশে অবস্থিত ব্যবসায়ের উল্লেখ
মূলধন বাজেটিং:
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে মোট মুনাফা এবং মোট মুনাফা থেকে কর বাদ নিট মুনাফা পাওয়া যায় । আবার নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায় । এই আন্তপ্রবাহের সাথে প্ররম্ভিক বিনিয়োগ বা নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করে যদি আন্তপ্রবাহ বহিঃপ্রবাহ থেকে বেশি হয় তাহলে বিনিয়োগটি লাভজনক প্রতীয়মান হয় এবং গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় ।এ প্রক্রিয়াকে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া বলা হয়।
একটি আধুনিক সেলুন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও চুল কাটার মেশিন কেনার চিন্তা করছেন । এখানে মুদির দোকানের ফ্রিজ , দর্জি ব্যবসার সেলাই মেশিনে এবং সেলুনের হুইল চেয়ার এবং চুল কাটার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত একেকটী দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধন্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে বা আদৌ লাভজনক হবে কি না.সে জন্য ফিন্যান্সের একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োজন । মূলধন বাজেটিং এরূপ একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া । এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের বা প্রকল্পের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়।
এখানে আয় বলতে বিক্রয় থেকে অর্জিত অর্থ এবং ব্রয় বলতে কাচাঁমাল খরচ, বিক্রয় খরচ এবং অবচয়সহ অন্যান্য খরচকে বুঝায়।অতএব বলা যায়, মূলধন বাজেটিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠা নের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োদি সিদ্ধাত্নের সাথে জড়িত একটি প্রক্রিয়া । এ প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পওি যেমন: জমি, দালানকোঠা, যন্তপাতি,আসবাবপএ ইত্যাদি ক্রয় থেকে শুরু করে এসব সম্পওির প্রতিস্থাপন, ব্যবস্র সম্প্রসারণ যেমন: নতুন মেশিন স্থাপন, উৎপাদন পদ্ধতির আদিুনিকায়ন এবং অন্যান্য দর্ঘিমেযাদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে সম্ভাব্য লাভজনকতা বিশ্নেষণ করে তদনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়।
(খ) মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্ব
মূলধন বাজেটিং অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি। মূলধন বাজেটিং বাস্তবসম্মত ও সঠিক হলে কারবার সরাসরি উপকৃত হয়। মূলধন বাজেটিং ব্যর্থ হলে কারবারটর সাধারণত ব্যর্থ হয়। তার দায়িত্ব অর্থ ব্যবস্থাপককে নিতে হয়। মূলধন বাজেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ হবার কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো :
মুনাফা সংক্রান্ত :
একটি প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। মুনাফা অর্জনে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোম্পানি সাধারণত নগদ প্রবাহ পাবার আসায় তার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ যোগ্য তহবিল উপার্জনকারী সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে। ফলে প্রতিষ্ঠান মুনাফা অনেকটা নির্ভর করে মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের ওপর। মুদির দোকানে ফ্রিজ কেনার ফলে স্বাভাবিক ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে কারবারের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দোকানের আশেপাশের লোকজন যদি ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খেতে অভ্যস্ত না হয় সে ক্ষেত্রে ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠান জন্য কোন সুবিধা আনবে না। সুতরাং ভালো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যেমন কারবারের জন্য পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত করতে পারেনা।অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের কারণে কারবাটি লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। তাই বলা যায় মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত একটি কারবারের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বিনিয়োগের বিশাল আকার :
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় সংযোজন আধুনিকায়ন এবং প্রতিস্থাপন প্রভৃতি মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণত বড় অংকের তহবিল প্রয়োজন হয়। ফলে কোনো কারণে সিদ্ধান্ত ভুল হলে সেটি সংশোধন করার সাধারণত সুযোগ থাকে না এবং আর সংসদের সুযোগ থাকলেও বড় অংকের মাশুল দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি কোম্পানি ঢাকার দূরে একটি জায়গায় তাদের কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এই ভেবে যে সেখানে সময়মতো বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবাহ পাবে। কিন্তু কারখানা স্থাপনের পর দেখা গেল সরকার নতুন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন অবস্থায় কারবার টিপস কারখানার উৎপাদন আরম্ভ করতে পারবেনা কিন্তু কার বাটি হয়তো এই কারণে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে যার সুদ ব্যাংকের নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। ফলে এরকম একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারনে কারবারটিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে অল্প টাকার ব্যাপার হলে অন্য কোথাও থেকে হয়তো অর্থ সংকুলান করা যেত কিন্তু বড় বিনিয়োগ বলে তেমন সুযোগও নেই। এখন যদি প্রকল্প টি বিক্রয় করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেখানে উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাবে না। কারণ প্রকল্প টি ইতিমধ্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বারটিকে বড় অংকের মাশুল দিতে হবে।
ঝুঁকির ভিত্তিতে :
মূলধন বাজেটিং এর অধিকাংশ আনুমানিক ভবিষ্যতের উপর নির্ভরশীল। একটি স্থায়ী সম্পত্তি যেমন মেশিনটিতে বিনিয়োগ করা উচিত কিনা এই সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে এই মেশিনটির উৎপাদিত পণ্য ভবিষ্যতে কত টাকা করে এবং কি পরিমাণে বিক্রয় হবে কত টাকার পণ্য উৎপাদন হবে ইত্যাদির ওপর। ভবিষ্যতে এই তথ্য-উপাত্ত অনুমাননির্ভর বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে সুতরাং মূলধন বাজেটিং সর্বদায় যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত।
যেমন বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে আশঙ্কা করে ছাতা প্রস্তুতকারী তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন মেশিন কিনে অধিক ছাতা উৎপাদন করেন। উৎপাদনকারী প্রাক্কলন অনুযায়ী বর্ষাকালে বৃষ্টি না হলে আশা অনুরূপ ছাতার বিক্রি হবে ন। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ঝুঁকি নিরূপণ ও যোগ্যতা যাচাই প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(গ) মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সবক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রসার, ব্যবসার আধুনিকায়ন স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত সকল প্রকার বিনিয়োগ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ রয়েছে। মূলধন বাজেটিং প্রয়োগের কয়েকটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো :
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় :
যে কোন কোম্পানির নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে স্থায়ী সম্পত্তি যেমন জমি দালানকোঠা যন্ত্রপাতি আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ মুদিদোকানিকে তার ব্যবসা শুরু করার সময় ফ্রিজ তাকিয়া ওজন মাপার স্কেল ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে হয। রেস্টুরেন্ট মালিক কে তার ব্যবসা শুরুর সময় চেয়ার-টেবিল হাড়ি পাতিল রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এসব সম্পত্তি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। কারবার চলতে চলতে বিভিন্ন সময়ে সব স্থায়ী সম্পত্তি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করে কোম্পানির সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্যবসার পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে সম্প্রসারণ :
চলমান কোন প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে তার ব্যবসা শুরু করার পর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোম্পানির নতুন মেশিন ক্রয় এর প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ দর্জির দোকানে তার বর্তমান ব্যবসায় একটি সেলাই মেশিন থাকা সত্বেও ভোক্তাদের ঈদের চাহিদার কথা চিন্তা করে নতুন আরেকটি সেলাই মেশিন কেনার চিন্তা করতে পারেন। এজন্য দোকানিকে নতুন মেশিন ক্রয় বাবদ কত ব্যয় হবে।কারবারের আয় তাতে করে কত বাড়বে ইত্যাদি প্রাক্কলন করে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
পণ্য বৈচিত্রায়ন :
কোম্পানি তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য চলমান পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ কোন কোম্পানির পণ্যের বৈচিত্র আনার জন্য আমের জুস এর পাশাপাশি কমলার জুস বা আপেলের জুস বাজারে ছাড়া চিন্তা করতে পারে নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে নতুন পণ্যের আয়ুষ্কাল পণ্যের উৎপাদন খরচ বাজার চাহিদা পরিচালনা খরচ এবং সম্ভাব্য আয় প্রাক্কলন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়ন :
ব্যবসার প্রয়োজনে উৎপাদন পদ্ধতির প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়ন প্রয়োজন হয়. উদাহরণস্বরূপ দর্জির দোকানে পাঁচালী তো সেলাই মেশিন এর পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত সেলাই মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদন খরচ কমানো এবং এর মাধ্যমে ব্যবসার লাভ বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে কোম্পানির পুরাতন উৎপাদন পদ্ধতির সাথে নতুন পদ্ধতির তুলনায় প্রয়োজন হয়। উভয় পদ্ধতিতে কোম্পানি আয় পরিচালনা ব্যয় আয়ুষ্কাল ইত্যাদি হিসেব করে নিট নগদ প্রবাহ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। অতএব উৎপাদন পদ্ধতির প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নে মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
(ঘ) দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সিদ্ধান্তই মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার প্রয়োগের জড়িত ধাপগুলো
- ক. নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন
- খ. বাট্টা হার নির্ধারণ
- গ. মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচন ও প্রয়োগ
নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন :
যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যেমনি স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় ব্যবসা সম্প্রসারণ উৎপাদন পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণে এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তের সাথে নগদ প্রবাহ জড়িত। মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া প্রয়োগের প্রথম ধাপ হচ্ছে নগদের আন্তঃপ্রবাহ বহিঃপ্রবাহ প্রাক্কলন করা। প্রতিষ্ঠান নগদ প্রবাহ করতে প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় পূর্বানুমান চলতি খরচ পূর্বানুমান মূলধনী ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে।
বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানে নগদ আন্তপ্রবাহ ঘটে এবং চলতি খরচ মূলধনী ব্যয় নির্ধারণ এবং অন্যান্য খরচ পূর্বানুমান থেকে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে।এখানে বিক্রয় অনুমান চলতি খরচ মূলধনী ব্যয় প্রত্যেকটি বিষয়ে অতি সতর্কতার সাথে নির্ধারণ করতে হয়। একটি প্রতিষ্ঠান মোট বিক্রয় অনুমান করতে হলে প্রতিটি পণ্যের ভবিষ্যতে বিক্রয় মূল্য এবং প্রতি বছর কতগুলো পণ্য বিক্রি হবে তা পূর্বানুমান করতে হয়। এগুলো পূর্বানুমানের ওপর প্রতিবছর বিক্রি থেকে মোট অর্জিত আয় পাওয়া যায়। এই অর্জিত আয় থেকে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়। অতএব বলা যায় নগদ প্রবাহের সঠিক প্রাক্কলন নির্ভর করে পণ্যের ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে বিক্রয় মূল্য এবং কতগুলো পণ্য বিক্রয় হবে তার ওপর।
বাট্টা হার :
নগদ প্রবাহ নির্ধারণ করার পর সে গুলোকে নগদ মূল্যে রূপান্তর করার জন্য বাটার করার প্রয়োজন হয়। অর্থের সময় মূল্য অনুযায়ী নগদ প্রবাহ যতদেরিতে পাওয়া যায় সেটি মূল বর্তমান মূল্য তত কম। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প থেকে যেহেতু বেশ কয়েক বছর ধরে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায় সেহেতু মূলধন বাজেটিং এর মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ সুযোগ নিতে হলে ভবিষ্যতে আগত নগদ প্রবাহ গুলোর বর্তমান মূল্য নির্ণয় করতে হয়। বাট্টাকরণ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহ কে বর্তমান মূল্য রূপান্তর করা হয়। এ কারণে বাটা হার এর প্রয়োজন হয়।
মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ :
নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন এবং বাটপার হার নির্ধারণের পর মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচন করতে হয়। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প মূল্যায়ন এর জন্য মূলধন বাজেটিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রত্যেকটি পদ্ধতির সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রত্যেকটি পদ্ধতির কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের ধরন ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করতে হয়।
(ঙ) ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও টিকে থাকার সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্বপূর্ন সর্ম্পক রয়েছে । কারন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার শুরুতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র,মেশিন ইত্যাদি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়াই হলো মূলধন বাজেটিং। মূলধন বাজেটিং একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত ।প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদের ক্রয় থেকে শুরু করে সম্পদ স্থাপন ব্যবসার সম্পসারন যেমন মেসিন স্থাপন,উৎপাদন পদ্ধুতি আধুনিকায়ন,এবং অন্যান্য দির্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয়প্রাক্কলন করে মূলধন বাজেটিং এর দ্বারা।
মূলধন বাজেটিং অথায়নের সাফাল্যর চাবিকাঠি । মূলধন বাজেটিং বাস্তবসম্মত ও সঠিক হলে কারবার সরাসরি উপকৃত হয়। মূলধন বাজেটিং ব্যর্থ হলে কারবারটি সাধারনত ব্যর্থ হয় । মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ গুলো লক্ষ্য করে ব্যবসায় উন্নতি করা যায় । প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী সম্পদ প্রতিস্থাপন করার জন্য মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ লক্ষ্য করতে হয়।ব্যবসায় পন্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য মূলধন বাজেটিং এর প্রয়োগ লক্ষ্য করতে হয়। উৎপাদন পদ্ধতি প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নে মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। অতএব বলা যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
এটিই তোমাদের এসএসসি ২০২১ সালের ৭ম সপ্তাহের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যাসাইমেন্টের সমাধান– ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও স্থায়ীত্বের সাথে মূলধন বাজেটিং এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ।
এসএসসি ২০২১ সালের ৭ম সপ্তাহের অন্যান্য এসাইনমেন্টের উত্তরগুলো দেখুন-
[ninja_tables id=”11370″]আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।