করোনা ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ ও প্রতিরোধে আমাদের করণীয়
করোনা ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
এই ভাইরাসটি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে এবং সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং ভয়ের শেষ নেই।
সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে। এরমধ্যে খবর পাওয়া গেছে বাংলাদেশের তিনজন লোক কারনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর থেকে সকল মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে মিল রেখে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা নিয়মাবলী প্রকাশ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস যেহেতু নতুন আবিষ্কৃত একটি ভাইরাস সেহেতু এর প্রতিষেধক বা টিকা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
সুতরাং এর প্রতিরোধের চাইতে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে বেশি।
আমাদের সকলকে নিজের অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে।
ধাপে ধাপে আমি আপনাদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করব এবং এর প্রতিকারে আপনার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব-
করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়-
- করোনাভাইরাস একটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে।
- এখন মানুষ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে।
- প্রথমে মনে করা হয়েছিল করো না বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায় কিন্তু বর্তমানে এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর জানা যায় করোনা একটি বিশাল আকৃতির ভাইরাস তাই এটি বাতাসে ছড়ায় না বরং মাটিতে পড়ে থাকে।
- আক্রান্ত কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসলে।
- করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে হাঁচি কাশি কফ থুতু অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।
কিভাবে বুঝবেন করোনা আক্রান্ত কিনা-
- ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় দুই থেকে ১৪ দিন সময় লাগে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণ জ্বর।
- এছাড়া শুকনো কাশি গলাব্যথা হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট অথবা নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
- অনন্য অসুস্থতা যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হূদরোগ, কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যাদি থাকলে অর্গান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে।
প্রতিকার-
- যেহেতু এই ভাইরাস নতুন তাই এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই।
- চিকিৎসা শুধু লক্ষণভিত্তিক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের করণীয়-
- ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন (প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় ২০ সেকেন্ডের বেশি পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুবেন)
- অপরিষ্কার হাতে চোখ নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না
- ইতোমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে
- হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন।
- অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন।
- মাছ মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন।
- অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
- জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময় বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করন।
- অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
সন্দেহভাজন ও আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে করণীয়-
- অসুস্থ রোগীকে ঘরে থাকতে বলুন
- মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে যেতে বলুন
- রোগের জন্য ব্যবহার করতে বলুন
- যোগাযোগের জন্য পূর্ণ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করুন এবং আইইডিসিআরের কন্ট্রোলরুমে ফোন করুন-
করোনা কন্ট্রোল রুম: 01700-705737, হট লাইন নম্বর: 01937-110011, 01937-000011, 01927-711784, 01927-711785
সব সময় করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ আপডেট পেতে এখানে ক্লিক করুন : করোনা আপডেট
ইউনিসেফের প্রাপ্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
- করোনাভাইরাস যেহেতু একটি বিশাল আকৃতির ভাইরাস এর কোষের প্রস্থ ৪০০ থেকে ৫০০ মাইক্রোমিটার সুতরাং যে কোন মুখোশ যেটা এই আকারের বস্তুর প্রতিহত করতে পারে সেটা ব্যবহার করলেই হবে।
কোন ফার্মাসিস্ট এর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
- করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত নয়। আকারে বড় ও ভারী বলে এটা মাটিতে পড়ে থাকে।
- করোনাভাইরাস যখন ধাতব কোন পৃষ্ঠের উপর পড়ে তখন এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
কাপড়ের উপর পড়লে ৯ ঘন্টা আর সরাসরি শরীরে লাগলে ১০ মিনিট পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
তাই সাবান এবং পানি দিয়ে ভালোভাবে জামা কাপড় পরিষ্কার করলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- যদি ভাইরাসটি ২২ ডিগ্রি থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চলে আসে তবে এটি মারা যাবে।
কারণ এটি গরম অঞ্চলে বাস করে না এছাড়াও গরম পানি খেলে এবং সূর্যের আলো থাকলে করোনাভাইরাস কার্যকর হতে পারে না। - আইসক্রিম থেকে দূরে থাকুন এবং ঠান্ডা আবহাওয়া পরিহার করুন।
- উষ্ণ লবণ পানিতে গার্গল করলে করোনাভাইরাস মরে যায় এবং টনসিল ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে না।