সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা
২০২১ সালের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ পঞ্চম সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা বিশ্লেষণ নিয়ে আজকে হাজির হলাম।
আজকের আলোচনার সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পঞ্চম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদানকৃত সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।
আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র এসাইনমেন্টের দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।
এইচএসসি ২০২১ পঞ্চম সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট : সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা;
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি) :
- ক) সমাজকাঠামাের ধারণা ও উপাদান ব্যাখ্যা করতে হবে;
- খ) সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যাখ্যা করতে হবে;
- গ) সমাজকাঠামাে এবং সামাজিক স্তরবিন্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে হবে;
- ঘ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা করতে হবে;
- ঙ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ বর্ণনা করতে হবে;
সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা
ক) সমাজকাঠামাের ধারণা ও উপাদান ব্যাখ্যা
সমাজবিজ্ঞানে সমাজকাঠামাে মৌলিক প্রত্যয় হিসেবে বিবেচিত। সমাজকাঠামাে ছাড়া সমাজের সামগ্রিক ধারণা তথা সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয় । তাই বলা হয় সমাজকাঠামাে হল সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় । সহজ ভাষায় সমাজকাঠামাে হলাে যে ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাই। যারা প্রথম সমাজকাঠামাের ধারণা ব্যবহার করেন হার্বাট স্পেন্সার তাদের অন্যতম । তিনি সমাজকাঠামাের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জৈব কাঠামাে, বিবর্তন ইত্যাদি জীববিদ্যায় ব্যবহৃত ধারণার সাহায্য নেন ।
পরবর্তীকালে অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীগণ সমাজকাঠামাের সংজ্ঞা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন কিন্তু তবুও এ বিষয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি । ইংরেজ সামাজিক নৃবিজ্ঞানী র্যাডক্লিফ ব্রাউন ব্যক্তিতে – ব্যক্তিতে সৰ সম্পর্ককেই সমাজকাঠামাের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেন । তিনি বলেন , “ সমাজকাঠামাের পাঠের সময় আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছুসংখ্যক মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন সূত্র হিসেবে বিদ্যমান প্রকৃত সম্পর্কের বাস্তব অবস্থাটিকে অনুধাবন করতে চাই । ” অনেক সমাজবিজ্ঞানীই সমাজের কাঠামােগত রূপকে সমাজকাঠামাে হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানী মরিস গিন্সবার্গ সমাজকাঠামােকে সমাজ অভ্যন্তরস্থ মুখ্য গােষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানসমূহের যৌগ হিসেবে দেখেছেন । তার এ সংজ্ঞায় বিমূর্ত সামাজিক সম্পর্ক ও তার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক গােষ্ঠীসমূহের পারস্পরিক সম্বন্ধের ওপর গুরুত্বারােপ করা হয়েছে । অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সামাজিক নৃবিজ্ঞানী এস . এফ . নাদেল সামাজিক ভূমিকার ধারণার ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজকাঠামাের একটি সীমিত সংজ্ঞা দেন । তার ভাষায় , “ বাস্তব জনসমষ্টি ও তার আচরণ থেকে বিমূর্ত করে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালনরত ব্যক্তির মধ্যে ভূমিকাগত পারস্পরিক সম্বন্ধের ভিত্তিতে যে সম্পর্কের বিন্যাস অথবা ব্যবস্থা পাওয়া যায় সেটিই সমাজের কাঠামাে ।
মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারশন্স মনে করেন সমাজব্যবস্থার কাঠামাে সংস্কৃতির ধরনের দ্বারা গঠিত হয় । এই বােধ থেকে অগ্রসর হয়ে তিনি সংস্কৃতির ধরনকে চারভাগে ভাগ করেন । যথা :
- (ক ) ব্যক্তির ভূমিকা পালনের প্রয়ােজনে অন্য ব্যক্তির থেকে যা আশা করা
- (খ ) সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বহুমুখী ভূমিকা তথা সমষ্টিবদ্ধ মানুষের ভূমিকা হিসেবে যেটি গড়ে উঠে
- (গ ) ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে সমাজে ব্যক্তির অধিকার ও দায়িত্বের ধরন এবং
- (ঘ ) কোনো কিছুকে আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে তার প্রতি মানুষের অধিকার অর্থাৎ কাঠামােগত ক্রিয়াবাদ ব্যক্তির ভূমিকার ভিত্তিতে একে অপরের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং যে সম্পর্কটি একটি মান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ও একে অপরের প্রতি ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে সমঝােতার ভিত্তিতে যে নিয়ন্ত্রিত কাঠামাে গড়ে ওঠে , তাকেই সমাজকাঠামাে হিসেবে বােঝাতে চাইছে ।
সমাজকাঠামাের উপাদান: সমাজকাঠামাে সমাজের নানাবিধ উপাদান দ্বারা গঠিত । শেফারের মতে , সমাজ কাঠামাের উপাদানগুলাে হলাে- মর্যাদা , সামাজিক ভূমিকা, গােষ্ঠী , সামাজিক নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি । সমাজকাঠামােয় নিম্নলিখিত প্রধান প্রধান উপাদান বিদ্যমান-
১. সামাজিক প্রাণি :
সমাজকাঠামাের মৌলিক উপাদান সমাজ । আর সমাজ গঠিত হয় সামাজিক মানুষ নিয়ে । সামাজিক মানুষ জন্মের পর সমাজের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় আচার – আচরণ , রীতিনীতি , আদর্শ – মূল্যবােধ শিক্ষা লাভ করে থাকে । সমাজ বহির্ভূত কোনাে মানুষ নিয়ে সমাজকাঠামাে অধ্যয়ন করে না । প্রত্যেক মানুষেরই সমাজে একটা অবস্থান বা ভূমিকা আছে । আর মানুষের এ অবস্থানের জন্যই তাকে সামাজিক জীব বলা হয় । ব্যক্তির সামাজিক আচার আচরণ , ভূমিকা , আদর্শ- মূল্যবােধ , মর্যাদা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্যক্তি / মানুষ সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়।
২. স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান:
সমাজ কতকগুলাে প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত। এ প্রতিষ্ঠানগুলাে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী হয়ে থাকে । স্থায়ী সংগঠনগুলাে সমাজের মানুষকে রক্ষা করার জন্য গড়ে ওঠে । এছাড়া মানুষ তার প্রয়ােজন মেটানাের জন্যও সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে । সমাজে কোনাে ব্যক্তি যদি সমাজ বহির্ভূত কাজ করে তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সংগঠনের বা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে । সুতরাং মানুষের আচার – আচরণ , আদর্শ – মূল্যবােধ ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সামাজিক সংগঠনের প্রয়ােজন । আর এ সামাজিক সংগঠনই সমাজকাঠামাের অন্যতম প্রধান উপাদান ।
৩. সামাজিক প্রথা – প্রতিষ্ঠান :
প্রতিটি সমাজই কতকগুলাে রীতিনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ । পৃথিবীর প্রতিটি বিষয়ই সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী আবর্তিত হয় । তেমনি সমাজও বিভিন্ন প্রথা অনুযায়ী অগ্রসর হয় । সুতরাং সমাজের মধ্যে যে সমস্ত নিয়ম – কানুন , প্রথা , রীতি থাকে তা সমাজকাঠামাের উপাদান হিসেবে বিবেচিত ।
৪. সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ :
আদর্শ ও মূল্যবােধ সমাজকাঠামাের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । সমাজের প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু আদর্শ – মূল্যবােধ ও রীতিনীতি থাকে । আবার সমাজেরও একটা নিজস্ব মূল্যবােধ বিদ্যমান থাকে । ব্যক্তি যেমন তার মূল্যবােধ দ্বারা সমাজকে প্রভাবিত করে , তেমনি সমাজও ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে । তাই সমাজে টিকে থাকার জন্য মূল্যবােধের প্রয়ােজন ।
(খ) সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যাখ্যা
সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় । ভূ – ত্বত্ত্বে Status প্রত্যয়টি মাটি বা শিলার বিভিন্ন স্তর বােঝাতে ব্যবহৃত হয় । ভূ – ত্বত্ত্বের এ বিষয়টি সমাজের উঁচু – নীচু বিভিন্ন শ্রেণি বা মর্যাদার মানুষকে বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানে গৃহীত হয়েছে । প্রত্যয়টিকে সিঁড়ি বা ধাপের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । স্তরবিন্যাস বলতে বুঝায় যেখানে স্তরগুলাে সজ্জিত বা বিন্যস্ত । অতএব সামাজিক স্তরবিন্যাস হলাে সমাজের বিভিন্ন গােষ্ঠী বা শ্রেণির উচু – নীচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থা । অন্যভাবে বলা যায় , সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গােষ্ঠীকে মর্যাদা , শ্রেণি ও অন্যান্য কতক বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয় ।
সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ও নিমকফ সামাজিক স্তরবিন্যাসকে নিয়ন্ত্রিত অসমতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । তাদের মতে , “ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি ও গােষ্ঠী কম বা বেশি স্থায়ী ভেদাভেদ হয় তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস । ” ৪৮ acafeta oferah fofofaa icin ( Sorokin ) -43 160. ” Social stratification is the differentiation of a given population into hierarchically superimposed classes . ” অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাস হলাে একটি নির্দিষ্ট জনসমষ্টির ওপর চাপিয়ে দেয়া মানুষের উঁচু – নীচু ভেদাভেদ ।
সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা
জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস এর মতানুসারে- “ অর্থনীতির মানদণ্ডে সমাজের মানুষের যে ভেদাভেদ সেটাই সামাজিক স্তরবিন্যাস অথবা উৎপাদনের উপকরণের মালিকানার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ সেটাই সামাজিক স্তরবিন্যাস । ” আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী মেরিল তার Society and Culture গ্রন্থে সামাজিক স্তরবিন্যাসের সংজ্ঞায় বলেন , “ কোনাে গােষ্ঠী যদি অন্যদের তুলনায় ভালাে সুযােগ , চাকরি , ক্ষমতা ইত্যাদি বেশি মাত্রায় ভােগ করে তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস । ”
উপরের সংজ্ঞাগুলাে বিশ্লেষণ করে বলা যায় , সামাজিক স্তরবিন্যাস হলাে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিভিন্ন আর্থ – সামাজিক , রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুযােগ সুবিধার ভিত্তিতে সমাজে বিদ্যমান জনসংখ্যাকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা যায় । সামাজিক স্তরবিন্যাস হলাে সমাজের ভেদাভেদের চিত্র । সমাজের বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের সাথে মানুষের যে পার্থক্য , মূলত তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস । সামাজিক স্তরবিন্যাসের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো;
১. সামাজিক স্তরবিন্যাস সামাজিক ব্যাপার , প্রাকৃতিক নয় ।
২. সকল সমাজেই স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায় যদিও এর ধরন সমাজ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে ।
৩. স্তরবিন্যাস বিভিন্নমুখী হয়ে থাকে ।
৪ , সংস্কৃতি স্তরবিন্যাসকে প্রতিফলিত করে ।
৫. স্তরবিন্যাসকে একটি সর্বজনীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ।
৬. সামাজিক স্তরবিন্যাস সামাজিক মান ও রীতির নিয়ামক ।
গ)সমাজকাঠামো এবং সামাজিক স্তর বিন্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক
সমাজকাঠামো বলতে সমাজের গঠন প্রণালিকে বোঝায়। সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন দল ও অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানে সম্পর্কসহ সব ধরনের সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই সমাজকাঠামো গড়ে ওঠে। রাডক্লিপ ব্রাউন ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সব ধরনের সামাজিক সম্পর্ককেই সমাজকাঠামো বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে জিন্সবার্গ বলেন, সমাজকাঠামো হলো সমাজকে রূপায়ণ করে এমন প্রধান প্রধান সামাজিক গোষ্ঠী অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের যৌগিক সমন্বয়। মূলত সমাজকাঠামো হলো সামাজিক সম্পর্কের সমন্বিত রূপ।
পক্ষান্তরে সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে অর্থ, সম্পদ, মেধা, বংশ, শিক্ষা, বয়স, পেশা, লিঙ্গ, ক্ষমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজের বিদ্যমান জনসংখ্যাকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা হয়। জন্মসূত্রে সকল মানুষ সমান এমন মানবতাবাদী দর্শন পৃথিবীতে চালু থাকলেও বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে এমন কোন সমাজ পাওয়া যাবেনা যেখানে মানুষে মানুষে পার্থক্য নেই। সামাজিক স্তরবিন্যাস সর্বজনীন। সব যুগে সব কালে সব সমাজই স্তরায়িত। নিন্মে সমাজ কাঠামো এবং সমাজ স্তরবিন্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখানো হলো :
১. জীবনযাত্রার মান :
জীবনধারার পরিবর্তনের কারণেই সমাজে সামাজিক গতিশীলতার গতি অব্যাহত থাকে । বস্তুত সমাজব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত থাকে সামাজিক গতিশীলতার মূল কারণ । তবে সমাজজীবন বহির্ভূত উপাদান বা কারণসমূহের কার্যকারিতাও এ ক্ষেত্রে কম – বেশি থাকে ।
২. কাজের সামর্থ্য :
অনেক সময় দেখা যায় , উচ্চস্তরের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অনেকে নানা কারণে সংশ্লিষ্ট স্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম বা সফল হয় না । এরকম পরিস্থিতিতে তাদের সামাজিক মান – মর্যাদার হানি ঘটে এবং তারা সামাজিক গতিশীলতার নিম্নস্তরে অবনমিত হয় ।
৩. জীবন যাপন রীতি :
সমাজের অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু স্তরে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে উচ্চতর স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের আচার – ব্যবহার , রীতি – নীতি প্রভৃতি জীবন – যাপনের রীতি অনুকরণে আগ্রহী হতে পারে । এভাবে সৃষ্টি হয় উধ্বমুখী উলম্ব গতিশীলতা । আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে । যেমন : সমাজের উঁচু স্তরে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গ যদি সেই স্তরের আচার আচরণ থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটে এবং এরকম ক্ষেত্রে অধােমুখী সামাজিক গতিশীলতার জন্ম দেয় ।
৪. শ্রমবিভাগের মাত্রা ( Degree of division of labour) :
কোনাে জাতি বা গােষ্ঠীতে শ্রম বিভাজনের মাত্রা সামাজিক গতিশীলতাকেও প্রভাবিত করে থাকে । শ্রম বিভাজন যদি উন্নত মানের হয়, তাহলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে গমনের সুবিধা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আবার যে সমাজব্যবস্থায় জাতিভেদ প্রথা কঠোরভাবে অনুসৃত হয় এবং প্রতিটি জাতির জন্য ঐতিহ্যগত পেশা নির্দিষ্ট থাকে , সেখানে অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুকূল অবস্থার অস্তিত্ব সত্ত্বেও সামাজিক গতিশীলতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ।
৫. সামাজিক পরিবর্তনের হার :
বিপ্লবের মতাে দুত সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান উলম্ব সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তা করে । বিপরীত দিকে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সুযােগ যেখানে কম , সেখানে সামাজিক গতিশীলতার সম্ভাবনাও কম । অর্থনৈতিক বিকাশ ও বিস্তার।সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সমাজ কাঠামো সম্পর্ক দেখানো হলো।
(ঘ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তির কতকগুলাে ভূমিকা ও কর্তব্য থাকে । সমাজে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ সামাজিক নিয়ম – কানুন মেনে চলে বিধায় সামাজিক ভারসাম্য বা সামাজিক সংহতি রক্ষা সম্ভব হয় । কিন্তু ব্যক্তি সব সময় সামাজিক নিয়ম – কানুন দ্বারা পরিচালিত হয় না বা সব সময় যুক্তিযুক্তভাবে আচরণ করে । ফলে সমাজ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আচরণ করতে বাধ্য করে । সমাজে বসবাসকারী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার এ প্রক্রিয়াকে সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন ।
বস্তুত সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজ ব্যক্তিকে সমাজ স্বীকৃত রীতি – নীতির মাধ্যমে আচরণ করতে বাধ্য করে এবং তাকে সমাজে বসবাস করার উপযুক্ত করে তােলে । সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন , “ By social control is meant the way in which the entire social order coheres and maintains itself , how it operates as a whole , as a changing equilibrium . ” অর্থাৎ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে এমন একটি পন্থাকে বুঝায় যার মাধ্যমে সমাজের শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে ও নিজেকে বজায় রাখে এবং সামগ্রিকভাবে একটি পরিবর্তনশীল ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারে ।
সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা
সমাজবিজ্ঞানী টি , বি . বটোমাে বলেন , সমাজজীবনে ব্যক্তির কিংবা গােষ্ঠীর আচরণ দু’ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে- বল প্রয়ােগ দ্বারা , অথবা সমাজস্থ বাই বাধ্যতামূলক আচরণের নিয়ম ‘ হিসেবে কম – বেশি মান্য করতে প্রস্তুত এমন মূল্যবােধ ও নীতিমানের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে । দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রেই সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ‘ পরিভাষাটি ব্যবহার করে থাকেন । এতে বৃহত্তর সমাজের অখণ্ডতাকে অটুট রাখতে মূল্যবােধ ও নীতিবােধের কাছে আবেদনের মাধ্যমে ব্যক্তিতে – ব্যক্তিতে এবং গােষ্ঠীতে – গােষ্ঠীতে দ্বন্দ্ব – সংঘাতের নিরসন অথবা উত্তেজনার প্রশমন করতে চাওয়া হয় ।
আবার যেসব ব্যবস্থার দ্বারা এসব মূল্যবােধ ও আদর্শ সংবাহিত ও সঞ্চারিত হয়ে থাকে সেই মাধ্যমগুলাে বােঝাতেও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ শব্দটি ব্যবহার করা হয় । সমাজবিজ্ঞানী ডেভিড ড্রেসলার এর মতে , সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হলাে সেই শক্তি যা ব্যক্তিকে সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত ও স্বীকৃত পন্থায় আচরণ করতে উৎসাহিত করে । সব মিলিয়ে বলা চলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সংহতি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে যথােপযুক্ত নীতি ও মূল্যবােধকে সমাজের সদস্যদের মধ্যে যুক্ত এবং সঞ্চারিত করা হয় তাই – ই সামাজিক নিয়ন্ত্রণ । বস্তুত ব্যক্তি স্বার্থের সাথে গােষ্ঠী স্বার্থের বিরােধের কারণেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়ােজন দেখা দেয় । সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন শ্রেণি বিভাগ রয়েছে । বিভিন্ন সমাজ ও মনােবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
হাঙ্গেরিয়ান সমাজবিজ্ঞানী কার্ল ম্যানহেইম সামাজিক নিয়ন্ত্রণকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
- ক. প্রত্যক্ষ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : এ ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কোনাে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে । যেমন : পুলিশ , আদালত ও জেলখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সামাজিক নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
- খ . পরােক্ষ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : পরােক্ষ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সামাজিক ঐতিহ্য , সংস্কৃতি ও সভ্যতা দ্বারা হয়ে থাকে । তাই পরােক্ষ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সামাজিক আদর্শ , মূল্যবােধ , সংস্কৃতি , শিক্ষা ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে ।
আমেরিকান সমাজ মনােবিজ্ঞানী কিম্বল ইয়ং ব্যবহারিক দিক থেকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন । যথা :
- ক . ইতিবাচক নিয়ন্ত্রণ : সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুরস্কার , সুপারিশ , উপদেশ , স্নেহ – মমতা ও মিলন ইত্যাদি কৌশলকে কাজে লাগানাে হয় । এ সকল কৌশল ইতিবাচক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবে বিবেচিত হয় ।
- খ . নেতিবাচক নিয়ন্ত্রণ : জেল , হুমকি , জুলুম , বাধ্যবাধকতা , শক্তি , নির্দেশ ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হলাে নেতিবাচক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ।
এছাড়া আরাে কয়েক প্রকারের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । যেমন—
- ক . আনুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সৃষ্ট আইন কানুন , সরকার ইত্যাদি হচ্ছে আনুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ।
- খ . অনানুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : কতগুলাে বিশ্বাস , আচার অনুষ্ঠান , লােকাচার , লােকরীতি ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণকে অনানুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে ।
- গ . উদ্দেশ্যমূলক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : বিশেষ কোনাে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সমাজস্থ ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণকে উদ্দেশ্যমূলক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে ।
- ঘ . সহজাত সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : সহজাত গুণ যেমন : অত্যাচারীর প্রতি ঘৃণা , বিপদের সময় সহানুভূতি , অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা , ন্যায়ের প্রতি আগ্রহ , সত্যের প্রতি সমর্থন ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করাকে সহজাত সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে
ঙ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ
সমাজজীবনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে শৃখলা থাকা প্রয়ােজন । এ প্রয়ােজন মেটাতেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিটি সমাজে প্রচলিত থাকে । সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মূলত দুটি মাধ্যমে তথা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে হতে পারে । সামাজিক ঐতিহ্য , প্রথা , রীতি – নীতি , মূল্যবােধ , লােকাচার ইত্যাদি অনানুষ্ঠানিক বিষয়গুলাে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ।
আদিম ও ঐতিহ্যবাহী সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ মাধ্যমের গুরুত্ব সর্বাধিক । অপরপক্ষে বিধিবদ্ধ আইন , বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্যা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত । সাধারণত অগ্রসরমান আধুনিক সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি বেশি গুরুত্ববহ । নিচে সংক্ষেপে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম বা বাহনসমূহ আলােচনা করা হলাে:
১. পরিবার :
সমাজের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেশিল্পকলা ও সাহিত্য, শিল্পকলা ও সাহিত্যের মাধ্যমে শিল্পী যেমন সমাজজীবনের নানা দিক তুলে ধরেন , তেমনি সংগীতের মাধ্যমে সামাজিক নানা অসঙ্গতিকে তুলে ধরা সম্ভব । ফলে শিল্পকলা ও সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের আবেগ ও চেতনা জাগ্রত হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বিগত বছরগুলােতে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহকে কেন্দ্র করে রচিত গানসমূহ প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হলে তা মানুষকে ব্যথিত করে ও নানা ধরনের সাহায্য – সহযােগিতার হাত বাড়াতে অনুপ্রেরণা যােগায় । তেমনি জয়নুল আবেদীনের দুর্ভিক্ষের উপর আঁকা ছবিসমূহ দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের আবেগকে জাগিয়ে তােলে।
২. শিক্ষা :
সামাজিক নিয়ন্ত্রণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলাে শিক্ষা । শিক্ষা মানুষকে ন্যায় – অন্যায় , ভালাে মন্দের ভেদাভেদ শেখায় এবং তার পারিবারিক ও সামাজিক আদর্শ – মূল্যবােধ সম্পর্কে সচেতন করে তােলে । ফলশ্রুতিতে মানুষের সামাজিক আচার – আচরণ , রীতিনীতি সমাজ কাঙ্ক্ষিত পন্থায় গড়ে ওঠে।
৩. ধর্ম :
ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । প্রতিটি ধর্মেরই সর্বজনীন আবেদন থাকে যা মানুষকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতে এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকতে উৎসাহ যােগায় । পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় সব ধর্মেই ইহজগতে সৎকর্মের মাধ্যমে পরজগতে অনন্ত সুখের ধারণা দেয়া হয়েছে । সাথে সাথে অসং কর্মের শাস্তিও বর্ণিত আছে । ফলে পরজগতে সুখের প্রত্যাশা ও শাস্তির ভয় মানুষকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত আচার – আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে ।
৪. বিবাহ :
একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহ মানুষের সামাজিক জীবনকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম । যৌনতার মতাে সহজাত প্রবৃত্তি এবং সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা ও ভাবাবেগগত আচরণ বিবাহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । ফলে সমাজে ভারসাম্য টিকে থাকে ।
৫. লােকাচার ও লােকরীতি :
প্রতিটি সমাজেই সংঘবম্বরূপে বসবাসকালীন নিজস্ব একটি আচার – আচরণ ধারা গড়ে ওঠে । আচরণের এ সাধারণ রীতিগুলােই লােকাচার । লােকাচার মেনে না চললে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজে নিন্দা বা ভৎসনার মুখােমুখি হতে হয় । অন্যদিকে সমাজে লােকাচারগুলাে যখন অবশ্য পালনীয় রূপে স্বীকৃতি পায় তখন এগুলাে লােকরীতিতে পরিণত হয় । গােষ্ঠী ও সামাজিক জীবনের নৈতিকসূত্রে তথা লােকরীতি মানুষের সমাজজীবনকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাবিত করে । যার দ্বারা মানুষের সামাজিক আচার – আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় ।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ পঞ্চম সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর– সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা ।
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লে-স্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।
[ninja_tables id=”10994″]