সর্বশেষ আপটেড

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারে সৃষ্ট সমস্যা

দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ সমূহ থেকে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমরা যারা এইচএসসি ২০২১ সালের চতুর্থ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর খুঁজছো, তাদের জন্যই আজকের আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলটিতে রয়েছে এইচএসসি ২০২১ সালের চতুর্থ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর- মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা ও এর সমাধানের উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি

এইচএসসি ২০২১ সালের চতুর্থ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট

উত্তর দেখার পূর্বে দেখা যাক নির্দেশনাসহ মূল অ্যাসাইনমেন্টটি।

এইচএসসি ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনাম:

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা ও এর সমাধানের উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করাে।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • ক) মদিনা সনদ ও এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা;
  • খ) বদর ও উহুদ যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ;
  • গ) ইসলামের প্রসারে হুদায়বিয়ার সন্ধির গুরুত্ব পর্যালােচনা;
  • ঘ) রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ে শান্তি নীতির ধারণা ব্যাখ্যা;

এইচএসসি ২০২১ সালের চতুর্থ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান

এখানে তোমাদের জন্য মূল উত্তরটি প্রদান করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থী বন্ধুরা অবশ্যই লেখার সময় প্রতিবেদন আকারে লিখবে।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা ও এর সমাধানের উপর একটি প্রতিবেদন

ক) মদিনা সনদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মদিনা সনদঃ

মদিনার সনদ (আরবি: صحيفة المدينة‎‎, সাহিফাত আল-মাদিনাহ; or: ميثاق المدينة, মীছাক্ক আল-মাদিনাহ) হলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে (অথবা ১লা হিজরি সালে) মক্কা থেকে মদিনায় গমনের (হিজরত) পর ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রণয়নকৃত শান্তিস্থাপনের একটি প্রাথমিক সংবিধান। এটি মদিনার সংবিধান (دستور المدينة, দাস্তুর আল-মাদিনাহ) নামেও পরিচিত। এটিই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। ইবনে হিশামের মতে এ সনদের ৫৩টি ধারার রয়েছে। উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে, এই সনদের ধারার সংখ্যা ৪৭টি।

মহানবী (সা.) প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করেন। মহানবী (সা.) মদিনার সংহতির চিন্তা করে সেখানকার অধিবাসীদের নিয়ে তথা পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যে এক লিখিত সনদ বা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আর এ সনদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার ঘােষণা দেন। এ সনদকেই ‘মদিনা সনদ বলা হয়। ইসলামের ইতিহাসে এ সনদের গুরুত্ব ‘লীগ অব নেশন্স’, বা ‘জাতিসংঘ’ ‘চার্টার অব হিউম্যান রাইটস বা জেনেভা কনভেনশনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ছিল।

মদিনা সনদের তাৎপর্যঃ

আরবের ইতিহাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুমহান উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য কোনাে ব্যক্তি বা নেতা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেননি। শান্তি প্রতিষ্ঠার বাস্তব উদ্যোগের প্রেক্ষিতে মদিনা সনদ বিভিন্ন দিক দিয়ে বহু গুরুত্ব বহন করে। মহানবী (সা.) যে শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই নন; বরং বিশ্ব ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক বিপ্লবী মহাপুরুষ ছিলেন , তাও এ সনদে প্রমাণিত হয়।

মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত মদিনা সনদ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। এর পূর্বে এরূপ কোনাে। মৈত্রী সংবিধান ছিল না। এটি তৎকালীন যুগেই বরং সর্বযুগে সর্বকালের মহামানবের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। ঐতিহাসিক মুইর বলেন, এ চুক্তি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – এর অসামান্য মাহাত্ম ও অপূর্ব মননশীলতার পরিচায়ক।

ড. হামিদুল্লাহ বলেন, মােট ৪৭ টি ধারাবিশিষ্ট এ সনদ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র। ভ্রাতৃসংঘ ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও মদিনা সনদ’ মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়কে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে হিংসাদ্বেষ ও কলহের অবসান করে এবং বিপদে সবাই একএ নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। মুসলিম ও অন্যদের সাথে সকল প্রকার পার্থক্য নিরসনে এর কার্যকারিতা ধারাগুলাের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারে সৃষ্ট সমস্যা

রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও সে সময় আরবের মানুষদের মধ্যে কোনাে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর জাতি– ধর্ম নির্বিশেষে রক্তের ভিত্তির স্থলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মদিনাবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপিত হয়।

একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর প্রণীত মদিনা সনদই মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সবার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও উদারতা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) ধর্মীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তাঁর প্রণীত মদিনা সনদ মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। মদিনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লােকেরা পরস্পরের ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। – এ শর্ত দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে মহানুভবতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিচয় দেন তা বিশ্বের ইতিহাসে সত্যিই বিরল।

খ) বদর ও উহুদের যুদ্ধের ফলাফলঃ

বদর যুদ্ধের ফলাফলঃ

বদরের যুদ্ধ (আরবি: غزوة بدر‎‎) ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এতে জয়ের ফলে মুসলিমদের ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।

বদর যুদ্ধ ইসলামের সর্বপ্রথম যুদ্ধ এবং অবিস্মরণীয় এক ঘটনা। মুসলিম শক্তি এ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব জয়ের সােপানে আরােহণ করে। এ যুদ্ধে কুরাইশ শক্তিকে পর্যুদস্ত করে মুসলিমরা প্রথম বারের মতাে বিশ্বময় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ। এ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার প্রসারের দিগন্ত উন্মােচিত হয়। বদর যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলিমদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। মুসলিমগণ প্রচুর গনীমত লাভ করে। এতে ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হয়।

বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধ জয়ের ফলে নেতা হিসেবে মুহাম্মাদের কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অন্য আরব গোত্রগুলি মুসলিমদেরকে নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। মদিনার অনেকে এসময় ইসলাম গ্রহণ করে। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলিমদেরকে খুবই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।

অন্যদিকে যুদ্ধে আবু জাহলসহ মক্কার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তির মৃত্যুর ফলে আবু সুফিয়ান নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরবর্তীতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলিম হওয়ার পর আবু সুফিয়ান মুসলিম সাম্রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে তার ছেলে মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।

উহুদ যুদ্ধের ফলাফলঃ

উহুদের যুদ্ধ (আরবি: غزوة أحد‎‎ Ġazwat ‘Uḥud) ৩ হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ[৭] হিজরি ৩ শনিবার) উহুদ পর্বতের সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও আবু সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রধান যুদ্ধসমূহের মধ্যে এটি দ্বিতীয়। এর পূর্বে ৬২৪ সালে এই দুইপক্ষের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মক্কার পক্ষ থেকে এই যুদ্ধের সূচনা করা হয়েছিল। যুদ্ধযাত্রার খবর পাওয়ার পর মুসলিমরাও তৈরী হয় এবং উহুদ পর্বত সংলগ্ন প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

উহুদ যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য ছিল ধৈর্যের অগ্নি পরীক্ষা। একথা সত্য নিরবচ্ছিন্ন বিজয় কোনাে জাতির ভাগ্যেই জুটে না। বিজয়ের আনন্দ ও পরাজয়ের গ্লানি সঙ্গী করেই বৃহত্তর সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে হয়। এজন্য প্রয়ােজন ধৈর্যের। এ পরীক্ষায় মুসলিমগণ ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

ঈমানের দৃঢ়তা ও যুদ্ধোত্তরকালে আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে মুসলিমদের খাঁটি মুমিন হতে এবং হকের ওপর দৃঢ়পদ থাকতে নির্দেশ প্রদান করেন। এ যুদ্ধের ফলে মুসলিমদের ঈমান আরাে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারে সৃষ্ট সমস্যা

সেদিন যুদ্ধের প্রথম দিক জয় লাভ করেও পরবর্তীতে তাদের পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল। তাই পরবর্তী যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলােতে তারা মহানবী (সা.) – এর আদেশ নির্দেশ পুরােপুরি মেনেই যুদ্ধ করেছিলেন। ফলে বলা যেতে পারে, উহুদ যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য ঈমানী পরীক্ষা হিসেবে কাজ করেছিল।

ইহুদিদের মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গের শাস্তি ও ঐতিহাসিক পি.কে.হিট্টি বলেন, ইহুদি বনু নযির ও বনু কায়নুকা গােত্র মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়।

জয় পরাজয়ের অভিজ্ঞতা ও উহুদ রাণাঙ্গনে প্রাথমিকভাবে মুসলিমদের বিজয় এবং সে কারণে উল্লাস ও বিশৃঙ্খলাই। পরবর্তীতে পরাজয়ে পর্যবসিত হয়। অপরদিকে কুরাইশরা আপাত জয়লাভ করলেও এর কোনাে সুফল ভােগ করতে পারেনি; বরং নৈতিক দুর্বলতাহেতু মনােবল হারিয়ে ময়দান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। মুসলিমদের বীরত্ব বৃদ্ধি ও উহুদের পরাজয় মুসলিমদের বীরত্ব অধিকতর বৃদ্ধি করেছিল।

গ) হুদায়বিয়ার সন্ধির গুরুত্ব

হুদাইবিয়ার সন্ধি (আরবি: صلح الحديبية), ষষ্ঠ হিজরীর জ্বিলকদ মাসে (মার্চের ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে) মদিনা শহরবাসী এবং কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই সন্ধিটি একটি দশ বছর শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এবং মুহাম্মদ (সা.) কে পরের বছর হজ্জের সময় মক্কার দিকে আসতে অনুমোদন করে।

হিজরি ৬ষ্ঠ সনের জ্বিলকদ মাসে হুদাইবিয়ার অভিযান সংঘটিত হয়। এই সনে নবী করীম একদা স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মদীনা থেকে মক্কায় চলে গেলেন এবং সেখানে উমরা পালন করলেন। নবীর স্বপ্ন নিছক একটি স্বপ্ন নয়, বরং সেটিও একধরনের ওহী। সুতরাং এরপর তিনি চৌদ্দশ সাহাবীসহ উমরা পালন করার জন্য মক্কা রওনা হলেন। কিন্তু জ়েদ্দা থেকে মক্কাগামী পথের পাশে হুদাইবিয়া নামক স্থানে মক্কার মুশরিকদের দ্বারা তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। ফলে, মক্কায় পৌছে উমরা পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারে সৃষ্ট সমস্যা

পথিমধ্যে হুদাইবা নামক স্থানে উনি তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। এই স্থানের সানিয়াতুল মিরার নামক স্থানে উনার উটনী বসে যায়। অপরদিকে কুরাইশদের পক্ষ থেকে সামরিক অভিযানের হুমকি আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কুরাইশদের পক্ষ থেকে সুহায়ল ইবনে আমরকে দূত হিসাবে পাঠান হয়। সেখানে নিম্ন লিখিত সমযোতা গুলিই হুদাইবার সন্ধি হিসাবে পরিচিত হয়। নবী করীম উমরার জন্য নিয়ে আসা পশুগুলো সেখানে কোরবানী করে মদীনায় ফিরে যান। অতঃপর পবিত্র ক্বোরআনে সুরা ফাতেহ তে ইহাকে প্রকাশ্য বিজয় হিসাবে অভিহিত করা হয়।

হুদায়বিয়ার সন্ধির তাৎপর্য আলােচনা করলে প্রতীয়মান হবে এতে বিধর্মী ও মুসলিমদের মধ্যে অন্ততপক্ষে দশ বছরের জন্য নিরবচ্ছিন্ন শান্তি রক্ষার প্রচেষ্টা করা হয়। যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে কুরাইশ ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সদিচ্ছা প্রকাশ পায়।

কারণ কুরাইশরাও যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এ সন্ধির ফলে তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ব্যবসায় বাণিজ্যে অবাধ গতিবিধির নিশ্চয়তা লাভ করে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এর মহানুভবতা ও দূরদর্শিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ঘ) মক্কা বিজয় ও শান্তি নীতি

ইসলামের নবী মুহাম্মাদ খ্রিস্টীয় ৬৩০ অব্দে রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরী দখল করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় (আরবি: فتح مكة ‎‎ fatḥ makkah) নামে খ্যাত। ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় যদিও আল কুরআনে হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয় দুটিই মুহাম্মাদের অতুলনীয় দূরদর্শীতার ফল।

রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অষ্টম হিজরী সনের ১৮ রমযান রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায় দশ হাজার অনুরক্ত ভক্ত সাথে নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। মুসলিম বাহিনী যথাসময়ে মক্কার নিকটবর্তী মাররুয যাহরান উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে শিবির স্থাপন করে। আরবদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা.) সেনাবাহিনীকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালাবার নির্দেশ দেন, তাতে সমগ্র মরুভূমি ঝলমল করে ওঠে।

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারে সৃষ্ট সমস্যা

কুরাইশ প্রধানগণ এ দৃশ্য দেখে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য হাকিম বিন হিযাম, আবু সুফিয়ান ও বুদায়লকে পাঠায়। তবু প্রহরারত মুসলিম সৈন্যরা আবু সুফিয়ানকে ধরে ফেললেন। তাকে বন্দি করা হয়। পরে আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন।তারপর মহানবী (সা.) আবু সুফিয়ানকে বললেন- আবু সুফিয়ান, তুমি গিয়ে মক্কাবাসীদের অভয় দাও আজ তাদের প্রতি কোনােই কঠোরতা করা হবে না। তুমি আমার পক্ষে নগরময় ঘােষণা করে দাও-

১. যারা আত্মসমর্পণ করবে,

২. যারা কাবায় প্রবেশ করবে,

৩. যারা নিজেদের গৃহদ্বার বন্ধ করে রাখবে। অথবা

৪. যারা আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে, তাদের অভয় দেয়া হলাে।

মক্কায় পৌছে রাসূলুল্লাহ হনুজ নামক স্থানে ঝাণ্ডা উড্ডীন করতে এবং সৈন্যদের নিয়ে হযরত খালিদ (রা)-কে উচ্চভূমির দিকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ করেন। মহানবী (সা.) মুসলিম বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, যতক্ষণ কেউ তােমাদের সাথে লড়াই না করবে , তােমরাও লড়াই করবে না।

কুরাইশদের থেকে ইকরামা ও সাফওয়ান তীর নিক্ষেপ আরম্ভ করে। এতে কুরয ইবনে জাবির ফিহরী ও কুনায়স ইবনে খালিদ ইবনে রবিয়া শহীদ হন। হযরত খালিদ প্রতিশােধ গ্রহণ আরম্ভ করলে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এতে ৭০ জন কাফিরকে হত্যা করে ফেলেন।

বায়তুল্লায় প্রবেশ ও সালাত আদায়ঃ

রাসুলুল্লাহ (সা.) আনসার ও মুহাজিরদের নিয়ে মসজিদে হারাম বায়তুল্লায় প্রবেশ করলেন। ভক্তিভরে তার চারপার্শ্বে তাওয়াফ করলেন ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। হযরত উমর ও আলী (রা:) কে বায়তুল্লাহ হতে ৩৬০ টি মূর্তি অপসারণ করে কাবাঘর পবিত্র করতে আদেশ দিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবাঘরে প্রবেশ করে দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন ও তাকবিরের ধনিতে বায়তুল্লাহ মুখরিত হল। অতঃপর তিনি কাবাঘরের দরজা খুললেন। এইভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয় করলেন এবং শান্তি নীতি স্থাপন করলেন মক্কাতে।

মক্কা বিজয় সূচনার শেষলগ্নে, আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন তিনি স্বীকার করেছেন যে, মক্কার দেবদেবীগণ ক্ষমতাহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, যা হল ইসলামী বিশ্বাসমূলক স্বীকারোক্তির প্রথমাংশ। বিনিময়ে, মুহাম্মাদ আবু সুফিয়ানের ঘরকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন কারণ সে ছিল গোত্রের তৎকালীন সর্দার, এবং সকলেই তার আয়ত্তাধীন এলাকায় জমায়েত হয়েছিল, যা তিনি এভাবে বলেন:

“এমনকি যে আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে সে সেও নিরাপদে থাকবে, যে অস্ত্র সমর্পণ করবে সেও নিরাপদে থাকবে, যে নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে সেও নিরাপদে থাকবে।”

এটিই তোমাদের জন্য নির্ধারিত এইচএসসি ২০২১ সালের চতুর্থ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর- মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মদিনা জীবনে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা ও এর সমাধানের উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি

আরো দেখুন-

সকল স্তরের সব সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমূহের বাছাই করা উত্তরসমূহ দেখার জন্য নিচের বাটনে ক্লিক করে বাংলাদেশের সেরা অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার গ্রুপে যোগ দিন। এখানে দেশের সকল প্রান্তের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান করছেন। 

সকলের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সেরা এসাইনমেন্ট তৈরি করার জন্য সুযোগটি গ্রহণ করুন আপনিও

বাংলা নোটিশ – All Class Assignment and Answer Guideline গ্রুপে যোগ দিন

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ