মূল্যবােধ ও নৈতিকতা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যকে প্রভাবিত করে

২০২১ সালের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- মূল্যবােধ ও নৈতিকতা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যকে প্রভাবিত করে- তাৎপর্য বিশ্লেষণ নিয়ে আজকে হাজির হলাম।

আজকের আলোচনার সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার চতুর্থ সপ্তাহের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদানকৃত পৌরনীতি ও সুশাসন অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।

আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্টের দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট

এইচএসসি ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহ পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনাম:

মূল্যবােধ ও নৈতিকতা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যকে প্রভাবিত করে’- তাৎপর্য বিশ্লেষণ;

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

ক) মূল্যবােধ ও নৈতিকতার ধারণা;

খ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা;

গ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গুরুত্ব;

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট

উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে আমরা ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট এর সমাধান করব এবং এটি অনুসরণ করে তোমরা অ্যাসাইনমেন্ট লিখলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

ক)মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ধারণা

মূল্যবােধের ধারণাঃ

মূল্যবোধ হচ্ছে সমাজ কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান। শাব্দিক অর্থে values বা মূল্যবোধ অর্থ তুলনামূলক অর্থমূল্য বা দাম বা অন্তর্নিহিত গুণাবলী। মূল্যবোধ হল মানুষের সমাজ স্বীকৃত এমন কার্যক্রম বা আচরণ, যা সামগ্রিকভাবে প্রশংসিত হয়।এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। স্থান এবং সময়ভেদে মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ মূল্যবোধ হল আপেক্ষিক। যেমন- আমাদের দেশের প্রচলিত মূল্যবোধ অনুযায়ী ধূমপান করা, বিশেষত বড়দের সামনে ধূমপান একটি অন্যায় কাজ । কিন্তু অনেক দেশে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। সুতরাং বলা যায়-

  • ১. মূল্যবোধ হল ভালো বা মন্দ সম্পর্কে সামাজিক ধারণা
  • ২. কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে সমাজের বিশ্লেষণমূলক রায়।
  • ৩. সমাজের মানুষের সাধারণ আচরণ যাতে আবেগ বিদ্যমান।

মূল্যবােধ মানবচরিত্রের একটি নৈতিক গুণাবলী। এটি একজন মানুষের নীতি নৈতিকতা ও বিবেকবােধের উপর নির্ভরশীল যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। এটি মূলত অর্জনের বিষয়। অর্থাৎ মানবিক গুণাবলি ও সঠিক বিবেকবুদ্ধির বহিঃপ্রকাশই মূল্যবােধ।

সমাজবিজ্ঞানী এইচ.এম.জনসন, এর মতে, “সামাজিক মূল্যবােধ হলাে একটি মানদণ্ড”। সমাজবিজ্ঞানী এফ ই মেরিলের মতে, “সামাজিক মূল্যবােধ হলাে বিশ্বাসের একটি প্রকৃতি বা ধরণ, যা গােষ্ঠীগত কল্যাণে সংরক্ষণ করাকে মানুষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।”

নৈতিকতার ধারণাঃ

সাধারণ অর্থে নৈতিকতা হলো নীতি মূলক নীতি সম্বন্ধীয়। নৈতিকতা মূলত একটি সামাজিক ব্যাপার। যে সমাজের বাইরে বাস করে তার কোনো নৈতিকতার প্রয়োজন নেই। তাই নৈতিকতাকে বুঝতে হলে এর সামাজিক প্রেক্ষিতটিকে আগে বুঝতে হবে।
সমাজ মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে তার অনুমোদন কিংবা অনুমোদনকে সাধারণত ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, সঠিক বেঠিক, সৎ অসৎ, মূল্যবান মূল্যহীন প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ করে থাকে। এসব শব্দগুলি এবং তাদের সংযোগে গঠিত বাক্য বা অবধারণের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটে তাকে এক কথায় বলা হয় মূল্যবোধ। আর মানুষের এ মূল্যবোধের আরেক নাম হচ্ছে নৈতিকতা।

নৈতিকতা বলতে আমরা এমন এক আদর্শকে বুঝি, যা নৈতিক অর্থে ভালো বা ন্যায়কে বোঝায়। নৈতিকতা বিকাশের লালন ক্ষেত্র হলো সমাজ। নৈতিকতা মূলত ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও পছন্দ থেকে উদ্ভূত। নৈতিকতা অভ্যাস ও চর্চার ব্যাপার এবং এ নৈতিকতা গঠনে ব্যক্তির নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। নৈতিকতা বিষয়ক সমাজের চিন্তাচেতনা যেসব অবধারণের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাদেরকে আমরা এক কথার নৈতিক অবধারণ বা নীতিবাক্য বলতে পারি। এসব নীতিবাক্য’ চুরি করা অন্যায়’, ‘মিথ্যা বলা ভালো নয়’ ইত্যাদি আকারে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হয়।

এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়। মূলত একজন ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলির সমষ্টিই নৈতিকতা। সততা, সত্যবাদী, সৌজন্যমূলক আচরণকারী, প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তিকে নৈতিক ব্যক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি বলা হয়। এ রকম ব্যক্তি সমাজের জন্য কোনটি ভালাে-মন্দ, সঠিক-ভুল তা যাচাই করতে পারেন। ভালােমন্দের মতে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারাটাই হলাে ব্যক্তির নৈতিকতা।

খ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা

আইনঃ

আইন শব্দের উৎপত্তি ফারসি শব্দ থেকে হয়েছে যার পারিভাষিক অর্থ সুনির্দিষ্ট নিয়ম। মানুষ সামাজিক জীব এ সমাজে বসবাসের জন্য কিছু প্রচলিত বিধি-বিধান মেনে চলতে হয় সে সকল বিধিবিধানের সমষ্টি হল সামাজিক আইন। বিভিন্ন দার্শনিক নিজের অভিমত অনুসারে আইন কে সংজ্ঞায়িত করেছেন। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের মতে, আইন হলাে পক্ষপাতহীন চুক্তি। অন্যদিকে আইন বিজ্ঞানের মতে সার্বভৌম শক্তির আদেশেই হচ্ছে আইন।

আইনের উৎসঃ

অধ্যাপক হল্যান্ড আইনের ৬ টি উৎসের কথা বলেছেন। যথা-

  • ১. প্রথা,
  • ২.ধর্ম,
  • ৩. বিচারকের রায়,
  • ৪.বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বা আইনবিদদের গ্রন্থ,
  • ৫.ন্যায়বোধ,
  • ৬.আইনসভা

নিম্নে আইনের উৎস সম্পর্কে আলােচনা করা হলােঃ

  • ১। প্রথাঃ প্রথা হল আইনের এক সুপ্রাচীন উৎস। প্রত্যেক সমাজেই সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রথা ও রীতিনীতি প্রচলিত। এ সমস্ত প্রথা ও রীতিনীতি সমাজ জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। সমাজ জীবনের প্রয়ােজনীয়তা ও কল্যাণের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যখন এগুলাের প্রতি সমর্থন জানায় তখন এ সব প্রথা ও রীতিনীতি আইনে পরিণত হয় । অতএব এভাবেই সমাজ জীবনে প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতি আইনের উৎস রূপে গণ্য হয়।
  • ২। ধর্মঃ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ধর্ম। বিশ্বে প্রচলিত প্রত্যেক ধর্মের অনুশাসন মর্যাদা সহকারে পালিত হয়ে থাকে। ধর্মীয় এ সমস্ত অনুশাসনের যেগুলাে সমাজ জীবনকে বিকশিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে থাকে সেগুলাে পরবর্তিতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের স্বীকৃতি পেয়ে আইনের মর্যাদা লাভ করে। মুসলিম, খ্রিষ্টীয় ও হিন্দু আইন এর উপযুক্ত উদাহরণ।
  • ৩। বিচারকের রায়ঃ বিচারকগণ অনেক সময় নিজেদের বিবেক ও অভিজ্ঞতা থেকে নতুন আইন সৃষ্টি, প্রচলিত আইনের ব্যাখ্যা বা যথার্থতা বিশ্লেষণ করেন। ফলে আইনের নতুন নতুন সূত্র সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বিচারক পরবর্তী সময়ে আইনের এসব নতুন সূত্রকে বিচারের ক্ষেত্রে অনুসরণ করেন ।
  • ৪। ন্যায়বিচারঃ যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রচলিত আইন যখন অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে কিংবা নতুন সমস্যার সমাধান প্রচলিত আইনের মধ্যে না পাওয়া যায়, তখন বিচারকগণ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের বিচারবুদ্ধি ও ন্যায়বােধ প্রয়ােগ করেন। এভাবে নতুন আইন সৃষ্টি হয় এবং আইন যুগােপযােগী হয়।
  • ৫। বিজ্ঞানসম্মত আলােচনাঃ যুগে যুগে আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা, ব্যাখ্যা ও মতামত বিচারালয় কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। এতে আইনের প্রকৃত অর্থের প্রকাশ ঘটে। ফলে আইনজ্ঞদের এসব আলােচনা ও সিদ্ধান্ত আইনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • ৬। আইনসভাঃ আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভাই হচ্ছে আইনের প্রধানতম উৎস। আইনসভা সমাজের প্রয়ােজনের সাথে সংগতি রেখে নতুন নতুন আইন তৈরি করে, আইনের রদবদল ও সংশােধন করে থাকে। আইনসভাই হচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক পরিষদ। তাই আইনসভা জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে আইন প্রণয়ন করে থাকে।
  • সুতরাং, আইনসভাই হচ্ছে আইন প্রণয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই ছয়টি উৎস ছাড়াও কেউ কেউ জনমতকে আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অপেনহেম (Oppenheim) বলেন, ‘জনমত আইনের অন্যতম উৎস। জনমতের প্রভাবে সরকার অনেক আইন তৈরি করে।

স্বাধীনতাঃ

স্বাধীনতা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Liberty; যা ল্যাটিন শব্দ থেকে উৎপত্তি। ল্যাটিন শব্দ liver অর্থ মুক্তি বা স্বাধীন। সুতরাং উৎপত্তির দিক থেকে স্বাধীনতা বলতে যা খুশি তাই করার অধিকার কে বােঝায়। কিন্তু পৌরনীতিতে অবাধ স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই এখানে নিজের ইচ্ছামতাে খুশি মতে কোন কিছু করা যায় না।

পৌরনীতিতে স্বাধীনতা বলতে অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ না করে নিজের কাজ সুষ্ঠুভাবে করাকে বুঝায়। স্বাধীনতা মানে যৌক্তিক ও আইনসিদ্ধ ভাবে কোন কিছু করাকে বুঝায়। অর্থাৎ সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সব কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়ােজন যায় মানে স্বাধীনতাকে বােঝায়।

স্বাধীনতার মূল বিষয় বস্তুঃ

সাধারণ ভাষায় স্বাধীনতা বলতে মানুষের ইচ্ছামত কোনাে কিছু করা বা না করার অধিকারকে বােঝায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে অধীনতামুক্ত অবস্থাই স্বাধীনতা। লেখক ও চিন্তাবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বাধীনতার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

জল স্টুয়ার্ট মিল তার ‘Essay on Liberty’ গ্রন্থে বলেছেন, “মানুষের মৌলিক শক্তির বলিষ্ঠ, অব্যাহত ও বিভিন্নমুখী প্রকাশই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অর্থ মানুষ কর্তৃক নিজস্ব উপায়ে কল্যাণ অনুধাবন করা।

”হার্বাট স্পেনসার বলেন, “স্বাধীনতা বলতে খুশিমত কাজ করাকে বােঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা উপভােগে বাধার সৃষ্টি না করা”।

  • ১. গণতন্ত্র (Democracy): স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হল গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক সরকার তাদের কার্যাবলীর জন্যে জনগণের কাছে দায়ী থাকে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এ সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভােট আধিক্যে সরকার গঠিত হয়। সুতরাং বলা হয় যে, গণতন্ত্র জনমতের সরকার। তাই সরকারকে জনগণের অধিকারের প্রতি যত্নশীল থাকতে হয়। ফলে এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় থাকে।
  • ২. আইন (Law): আইন স্বাধীনতার শর্ত ও রক্ষক। আইন আছে বলেই স্বাধীনতা ভােগ করা সম্ভব হয়। আইনবিহীন সমাজে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। রাষ্ট্রদার্শনিক লকের (Locke) মতে, যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।”
  • ৩. মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights): সংবিধানে উল্লেখিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ স্বাধীনতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ। মৌলিক অধিকারগুলাে সংবিধানে লিপিবদ্ধ হলে তা সাংবিধানিক আইনের মর্যাদা লাভ করে। ফলে সরকার কিংবা অন্য কোন কায়েমী স্বার্থবাদী মহল সেগুলাে ভঙ্গ করতে পারে না।
  • ৪. আইনের শাসন (Rule of Law): আইনের শাসন জনগণের স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ বলে স্বীকৃত। আইনের শাসন বলতে আমরা বুঝি আইনের প্রাধান্য, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে আইন সমানভাবে প্রযােজ্য হবে বিনা বিচারের কাউকে আটক না করা। ব্যক্তি স্বাধীনতা আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। যে সমাজে আইনের শাসন কার্যকরী থাকে, স্বাধীনতা সেখানে পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করে।
  • ৫. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ (Separation of Power): ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। একই ব্যক্তি বা একই বিভাগের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ আবশ্যক। মন্টেস্কু ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ বলে বর্ণনা করেছেন।
  • ৬. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of Powers): ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। ফলে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা পায়।
  • ৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (Independence of Judiciary): বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যক্তিস্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ। বিচার বিভাগ আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারলে জনগণের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
  • ৮. দায়িত্বশীল সরকার (Responsible Government): দায়িত্বশীল সরকারকে স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ বলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। এরূপ শাসনব্যবস্থায় একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকায় সরকারি দল ক্ষমতা হারাবার ভয়ে কখনই স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না
  • ৯. প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি (Direct Democratic System): গণভােট, গণউদ্যোগ, পদচ্যুতি ইত্যাদি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিসমূহ প্রয়ােগের মাধ্যমে জনগণ নিজেদের অধিকার সংরক্ষণ করে এবং শাসকগােষঠীর স্বৈরাচার প্রতিরােধ করে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি স্বাধীনতার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ।
  • ১০. সুসংগঠিত দল ব্যবস্থা (Well-organized Party system): সুসংগঠিত দল ব্যবস্থা স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলগুলাে সরকারের কার্যাবলীর প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রাখে এবং জনস্বার্থ বিরােধী কাজের তীব্র সমালােচনা করে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করে।

সাম্যঃ

সাম্য অর্থ সমান। কিন্তু সমাজে সকলে সমান হতে পারে না সেটা সম্ভব নয়। যদি সকলের সমান হয়ে যায় তাহলে সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকবে না। পৌরনীতির মতে সাম্য বলতে সকলকে সমান করে নেওয়ার প্রক্রিয়া কে বােঝায়। অর্থাৎ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান। সমাজের সকলের সমান অধিকার রয়েছে। অধ্যাপক লাস্কির মতে, সাম্য অর্থ- বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি, যথার্থ ও যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দ্রব্যের সমভাবে বন্টন।

গ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গুরুত্ব

আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক সংক্রান্ত পরস্পর বিরােধী দুটি মতবাদ প্রচলিত রযেছে। কেউ মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং স্বাধীনতা আইনের ওপর নির্ভরশীল। এরিস্টটল, মন্টেস্কু, রিচি, উইলােবিবার্কার, লক প্রমুখ মনীষী এই মতের সমর্থক। বার্কারের ভাষায়, ‘স্বাধীনতা ও আইনের বিরােধ নেই।

আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী। জন স্টুয়ার্ট মিল, হার্বাট স্পেনসার, এ. ভি. ডাইসি, গডউইন প্রমুখ মনীষী এই দলের সমর্থক। ডাইসির মতে, “একটি বেশি হলে, অপরটি কমে যায়।”

আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উভয় মতবাদেই অযৌক্তিক অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত, অবাধ স্বাধীনতা একদিকে যেমন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর তেমনি সকল আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে না। গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পরবিরােধী নয়, বরং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

উভয় যুক্তির সম্পর্ক নিম্নরূপ-

  • ১. আইন স্বাধীনতার শর্ত ও ভিত্তিঃ আইন স্বাধীনতাকে সহজলভ্য করে তােলে। আইনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া যথার্থভাবে স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। আইনের অবর্তমানে সবলের অত্যাচারে দুর্বলের অধিকার বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। আইন না থাকলে সমাজজীবনে ভয়াবহ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতার রাজত্ব শুরু হয়। উইলােবি বলেছেন, “নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতা রক্ষা পায়”।
  • ২. আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচঃ আইন আছে বলে স্বাধীনতা ভােগ করা_ যায়। আইনের কর্তৃত্ব আছে বলেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠে। সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধ থাকার কারণে সরকার বা অন্য কোনাে কর্তৃপক্ষ জনগণের স্বাধীনতা হরণ করতে পারে না। স্বাধীনতা লঙ্ঘন ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে সাংবিধানিক ও সাধারণ আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা চলে। এ জন্যই লক বলেছেন যে, “যেখানে আইন থাকে না সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে ।
  • ৩. আইন স্বাধীনতার অভিভাবকঃ আইন শাসকগােষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করে। আইন সংযত ও নিদিষ্ট সীমারেখার গণ্ডিতে সকলকে আবদ্ধ রেখে স্বাধীনতা বজায় রাখে। আইন আছে বলেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমাজ বিরােধী কার্যকলাপের ফলে স্বাধীনতা-বিঘ্নিত হয় না।
  • ৪. আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেঃ আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরিধি সম্প্রসারিত হয়। রাষ্ট্র আইনের দ্বারা এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে যেখানে সুন্দর, সভ্য জীবনযাপনের অনুকূল অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আইন ও স্বাধীনতার এরুপ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ করেই রিচি বলেছেন, “স্বাধীনতা বলতে যদি আত্মবিকাশের জন্য প্রযােজনীয় সুযােগ-সুবিধা বােঝায় তা হলে তা নিশ্চিতভাবেই আইনের দ্বারা সৃষ্টি হয়।

স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমানঃ

আইন সাম্যকে অর্থবহ করে তােলে। রাষ্ট্র আইন প্রয়ােগ করে অসাম্যকে দূর করতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে যুগে যুগে অনেক আইন সহায়তা করছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন করে বর্ণভেদ প্রথা দূর করা হয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই আইন করে সকল প্রকার অসাম্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনাে হচ্ছে। সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার প্রয়ােজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না হলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। আবার স্বাধীনতাকে ভােগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধায় পরিণত হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সাথে বিরাজ না করলে গণতান্ত্রিক অধিকার ভােগ করার প্রশ্নই ওঠে না। সাম্য উচু নীচুর ভেদাভেদ দূর করে, আর স্বাধীনতা সমাজের সুযােগ সুবিধাগুলাে ভােগ করার অধিকার দান করে।

আর. এইচ. টনি- এর মতে “স্বাধীনতা বলতে যদি মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ বােঝায়, তাহলে সেই স্বাধীনভা সাম্যভিত্তিক সমাজেই শুধু সম্ভব”। এজন্যই অধ্যাপক গােলার্ড বলেছেন যে, “স্বাধীনতার সমস্যার একটিমাত্র সমাধান রয়েছে। তা সাম্যের মাঝেই নিহিত।”

সুতরাং বলা যায় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য থাকলে ব্যক্তি তথা সমাজ জীবন পূর্ণর্তা প্রাপ্ত হয় না। স্বাধীনতা ও সাম্য বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এজন্যই বলা হয় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বি-মাত্রিক সম্পর্ক।

আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে সম্পর্কটি অনেকটা সামগ্রিক। আইন স্বাধীনতার রক্ষক ও অভিভাবক। আইন না থাকলে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আইনের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা যায়। আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে।আইন সাম্যকেও সার্থক করে তোলে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অসাম্যকে দূর করা যায়। সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসামান্য দূর করতে আইনই মানুষকে সহায়তা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারতের আইন করে সতীদাহ প্রথা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলো আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদ নিষিদ্ধ করা।

অন্যদিকে,সাম্য ও স্বাধীনতা একটি অন্যটি ছাড়া অচল। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না করা হলে সাম্য কেবল মরীচিকায় থেকে যায়। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা এর পূর্বশর্ত। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধার হাতিয়ারে রূপান্তরিত হবে। সাম্য উঁচু-নিচুর পার্থক্য দূর করে, আর স্বাধীনতা সমাজের সুযোগ-সুবিধাগুলোকে সবার ভোগ করার অধিকার দান করে। কোল এজন্যই বলেন, অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন । আইন স্বাধীনতা ও সাম্য এত ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত যে এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে কল্পনা করা যায় না।

এই ছিল তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- মূল্যবােধ ও নৈতিকতা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যকে প্রভাবিত করে- তাৎপর্য বিশ্লেষণ

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লে-স্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *