কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে যেভাবে প্রভাবিত করছে
৯ম শ্রেণির সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা কেমন আছো? আশা করছি ভালো আছো। আজ তোমাদের নবম শ্রেণি ১৮তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান/ উত্তর নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো। অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম হবে- কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে যেভাবে প্রভাবিত করছে এবং এ ধরনের প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে কার্যকর করার উপায়।
নবম শ্রেণি ১৮তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট :
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে কীভাবে প্রভাবিত করছে? এ ধরনের প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে কার্যকর করার উপায় উল্লেখ কর।
নির্দেশনা :
১. সামাজিকীকরণের ধারণা ব্যাখ্যা করবে।
২. সামাজিকীকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখ করবে।
৩. কি কারণে সামাজিকীকরণে বর্তমান পরিবেশ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে তা উল্লেখ করবে।
৪. চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো উল্লেখ করবে (এজন্য পত্র-পত্রিকা/ অনলাইন মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারে)।
৫. এ বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও নিজস্ব পর্যবেক্ষণ/ মতামত প্রদান করবে।
৬. উপসংহার।
নবম শ্রেণি ১৮তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান/ উত্তর
সামাজিকীকরণের ধারণা ব্যাখ্যা
সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, ‘সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। একান্তই ইন্দ্রিয় সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানব শিশুর জন্ম। ইন্দ্রিয় দ্বারা তাড়িত হলেও ধীরে ধীরে সে নানা ভাবে নানা প্রক্রিয়ায় একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরোপুরি সামাজিক মানুষ হিসেবে পরিণত হয়।
এই প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিস এর সংজ্ঞাটি যথার্থ – ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে এক জন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।” সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা মানব শিশু ক্রমশ ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, ‘সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশার সামাজিক মূল্য বজায় রাখে।’সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াকে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলা হয়।
সামাজিকীকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে সামাজিকীকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা আলোচনা করা হলো।
পরিবার : সামাজিকীকরণের কতগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক, পার্থিব ও অপার্থিক যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা যায়, তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে।
খেলার সঙ্গী : শিশুর সামাজিকীকরণে তার সঙ্গী বা খেলার সঙ্গীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। শিশু তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি পরিস্ফুট হয়। সে স্বাবলম্বী হতে শেখে।
ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। এককথায়, ধর্মীয় আচর-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সভ্যরা যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য প্রত্যেক সমাজ প্রতিটি সভ্যকে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের শিক্ষাদান করে। সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে যেভাবে প্রভাবিত করছে
গণমাধ্যম : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যমগুলো হলো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। তবে এগুলো সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ ভূমিকা পালন করে।মন্তব্য : বিবৃত আলোচনাকে বিচার ও বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে পরিবার, খেলার সঙ্গী, ধর্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর গণমাধ্যমগুলো সামাজিকীকরণে গৌণ ভূমিকা পালন করে।
যে সকল প্রতিষ্ঠানে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সাধিত হয় তার মধ্যে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবার। নিচে পরিবারের ভূমিকার বিবরণ দেওয়া হল:-
- বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান যোগায়, সংস্কৃতির নকশা অঙ্কন করে এবং পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে।
- একটি শিশু তার দৈহিক, মানসিক এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন পরিবার থেকেই মেটায়। পরিবারেই শিশুর চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠিত হয়। একটি শিশুর সুকোমল বৃত্তিগুলি এবং সুপ্ত প্রতিভা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে।
- শিশু পরিবার থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও গ্রহণ করে, পরিবার থেকেই একটি শিশু আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে।
যে কারণে সামাজিকীকরণে বর্তমান পরিবেশ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে
করোনাকালে ব্যক্তি, বিশেষ করে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, বিগত প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে এমনটি ঘটেনি। করোনাভাইরাস পৃথিবীব্যাপী মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এ রোগের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, স্বাস্থ্যগত ও মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাত নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার ওপর এর অভিঘাত নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়েছে বলে জানা নেই।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা, প্রকাশিত সংবাদ ও সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন বা শাটডাউন ঘোষণা, অফিস-আদালতসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার কারণে অনেকেই ঘরে থাকতে বাধ্য। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে, অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এসব থেকে সৃষ্ট ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপের বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবার ও ছেলেমেয়েদের ওপর।
১. পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা যেহেতু শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম স্থান; সেই পরিবারেই যদি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, ঝগড়া, দ্বন্দ্ব কাজ করে, তাহলে তার প্রভাব শিশুর ওপর পড়তে বাধ্য। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরিবারে এখন উপরোক্ত সমস্যগুলো বিরাজমান। সুতরাং, শিশুর স্বাভাবিক যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া, করোনাকালে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এ ছাড়া এ সময়ে যেসব নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, তারাও যথোপযুক্ত সামাজিকীকরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একমাত্র বাবা-মা ছাড়া অন্য কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় ঘটছে না এতে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের আবেগ-অনুভূতি ও স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাজেই এদিক থেকে বলা যায়, নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রেও সামাজিকীকরণ ব্যাহত হচ্ছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে যেভাবে প্রভাবিত করছে
২. শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সামাজিকীকরণে তাদের সঙ্গী বা খেলার সাথীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে শিশু বা ছেলেমেয়েরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা আগের মতো একত্রে খেলাধুলা করা বা অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে যোগ দিতে পারছে না। এর ফলে তাদের যথাযথ সামাজিকীকরণে ব্যাঘাত ঘটছে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো শিশুর সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময় ও মিথস্ক্রিয়া হয় এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখে, যা তার সামাজিকীকরণে সহায়ক হয়। সমাজের সদস্য হিসাবে যাতে সামাজিক মূল্যবোধ, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ শিক্ষাই শিক্ষা দেয়। কিন্তু প্রায় দেড় বছরকাল ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
৪. ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবন নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী, সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। এক কথায়, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু করোনাকালে অধিকাংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এবং কোনো কোনো সময় করোনার দ্রুত বিস্তার রোধে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বিধিনিষেধ আরোপ করায় এর প্রভাব ছেলেমেয়েদের ওপর পড়েছে, যা তাদের যথাযথ সামাজিকীকরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
৫. সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা লক্ষ করা যায়। গণমাধ্যম হলো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। তবে এগুলো সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম, বিশেষ করে টেলিভিশনে করোনা সংক্রান্ত খবর দেখে ও শুনে ছেলেমেয়েদের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ পড়ছে, যা তাদের প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতির মধ্যে রাখে এবং তাদের স্বাভাবিক সামাজিকীকরণে বাধা দিচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন
চলমান কোভিড পরিস্থিতিতে সামাজিক জীবনে নেতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি রয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন। যেমন-
জরুরি কাজে বাইরে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করার নির্দেশ আসে। জীবন যাত্রার সাথে যুক্ত হয় নতুন কিছু অভ্যাস। যার মধ্যে রয়েছে বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, চোখে-মুখে-নাকে হাত না দেয়া ইত্যাদি। এগুলো তো গেলো নিতান্তই ব্যক্তিগত জীবনের কিছু পরিবর্তন। এছাড়াও এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যা হয়তো এক মাস আগে মানুষ চিন্তাও করতো না। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাড়িতে বসে অফিস করে। বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে দ্রব্যাদি জীবাণুমুক্ত করা, এবং যে বাইরে যায় তাকেও গোসল করতে হয়- এই পরিবর্তনগুলোই অনেক বেশি চোখে পড়ার মতো। যার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি অনুসরণীয় হচ্ছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে সামাজিক জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ-
- সামাজিক দূরত্ব সচেতনতা,
- দারিদ্র্য বিমোচন,
- ধর্মীয় রীতি-নীতির সম্প্রসারণ তথা প্রয়োগ,
- অপরকে সহযোগিতার মনোভাব,
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,
- স্বাস্থ্য সচেতনতা,
- তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার,
- প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও নিজস্ব পর্যবেক্ষণ/ মতামত প্রদান
বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার ছাড়া সামাজিকীকরণে কোনো উপাদান ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও গণমাধ্যমে সবাই জড়িয়ে পড়ছে কিন্তু তা তাদের নেতিবাচক সামাজিকীকরণের বিস্তার করছে। এক্ষেত্রে একটি শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের জন্য সকল উপাদানকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আবার, বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বলা যায়, এটি একেবারেই অসম্ভব। কারণ করোনা ভাইরাসের কারনে সবাই ঘরের মধ্যে আবদ্ধ। তাই, তাদের সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থে অন্যান্যা উপাদান নিজ থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে সামাজিকীকরণের প্রভাব ব্যাপক বিস্তার করে। তাই, যতদূর সম্ভব তা খুলে দিয়ে তাদের বিকাশের কথা বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু তা যদি সম্ভব না হয়, বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে।
উপসংহার
সামাজিকীকরণ সমাজতাত্ত্বিক ও মনোবৈজ্ঞানিক একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিকে তার জন্মের পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে বাবা-মা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, খেলার সাথী ও সমবয়সি দল, বন্ধু, প্রতিবেশী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, কর্মস্থান এবং চেনা-অচেনা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজস্ব ভাষা, পারিবারিক নিয়ম-কানুন, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক শৃঙ্খলা, প্রথা-পদ্ধতি, মূল্যবোধ ইত্যাদি আয়ত্ত করে সমাজের উপযোগী একজন সদস্য হয়ে ওঠেন। জীবনব্যাপী চলতে থাকা এ শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে সামাজিকীকরণ বলে। সামাজিকীকরণ যথাযথ না হলে শিশু বা ব্যক্তির মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে অনেক অসামাজিক আচরণ করতে পারে। ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটলে তার প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে।
এই ছিল তোমাদের নবম শ্রেণি ১৮তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান/ উত্তর– কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের সামাজিকীকরণকে যেভাবে প্রভাবিত করছে এবং এ ধরনের প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে কার্যকর করার উপায়।
আপনার জন্য আরো কিছু তথ্য-
- Bangladesh can reach in the level of developed countries by making unskilled people to skilled workforce
- নবম শ্রেণি ১৭তম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট ও সমাধান
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।