সর্বশেষ আপটেড

সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান- সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা।

নির্দেশনা

  • সহানুমান
  • সহানুমানের গঠন
  • মধ্যপদ এর ভূমিকা
  • সহানুমানের নিয়মাবলী, মধ্যপদ এর ব্যাপ্যতার নিয়ম

সমাধান দেখুন-

সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা

সহানুমান

যে মাধ্যম অবরোহ অনুমানে সিদ্ধান্তটি দুটি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, তাকে সহানুমান বলে। উদাহরনঃ

সকল পাখি হয় দিষ্পদ
সকল কাক হয় পাখি
সুতরাং ,সকল কাক হয় দিষ্পদ।

সহানুমানের এই যুক্তিটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উল্লিখিত দৃষ্টান্তটিতে সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য দুটির যেকোনো একটি থেকে অনুমিত হয়নি। যুক্তভাবে উভয় যুক্তিবাক্য থেকেই অনুমিত হয়েছে।

সহানুমানের সংজ্ঞা ও উদাহরণ (Definition and Example of Syllogism) :

যুক্তিবিদ্যক পরিভাষা সহানুমানের ইংরেজি syllogism শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ Sullogismos থেকে।

Sullogisnos শব্দের অর্থ হলাে একত্রিত অবস্থায় যৌক্তিক চিন্তা করা (to reason together) বা যৌক্তিক চিন্তা করার জন্য বচনগুলােকে একত্রিত করা (to put statements together into a pattern of reasoning) পরবর্তীকালে syllogism শব্দটি একটি বিশেষ অনুমান প্রক্রিয়ার পরিভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। এ প্রকিয়ায় দু”টি আশ্রয় বাক্যের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়।

তাহলে সহানুমান হলাে এমন একটি মাধ্যম অবরােহ অনুমান যেখানে যুক্তভাবে দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে একটি সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে অনুমিত হয়। যুক্তিবিদ জেমসূ ওয়েল্টন (James Welton) তাঁর Manual of Logic বইয়ে বলেন, “যে অববােহ মাধ্যম অনুমানে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দু”টি আশ্রয়ক্যের ভিত্তিতে অনিবার্যভাবে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় তাকে সহানুমান ৰলে।”

যুক্তিবিদ এইচ ডব্লিউ বি যােসেফ (H, W,B, Joseph) তার tutroduction to logic বইয়ে বলেন যে, সহানুমান হলাে। এমন যুক্তিপ্রক্রিয়া যেখানে দুটি পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তৃতীয় কোনাে পদের উদ্দেশ্য ও বিধেয় আকারের অনিবার্য সম্পর্কের ভিত্তিতে। যুক্তিবিদ আই, এম, কপি (L, M, Copi) এবং কার্ল কোহেন (Carl Cohen) সহজ ভাষায় সহানুমানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ সহানুমান হলাে এমন একটি অবরােহ যুক্তিপ্রক্রিয়া যেখানে দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত অনুমান করা হয়। (A syllogism is a deductive argument in which a conclusion is inferred from two premises.)!

সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা

পাটিক জে, হার্লি (Patrick J. |urley) আরাে সরলভাবে সহানুমানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে: সহানুমান হলাে দুটি আশ্রয় ও একটি সিন্ধান্ত নিয়ে গঠিত একটি অৰৱােই অনুমান (A syllogist is a deductive argument consisting of tow premises and one conclusion.)

উপযুক্ত আলােচনার আলােকে আমরা সহানুমানের সংজ্ঞায় বলতে পারি যে, মাধ্যম অবরােহ অনুমানে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে একটি সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিন্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য দুটির মধ্যেই নিহিত থাকে তাকে সহানুমান বলে। যেমন: সকল জ্ঞান-প্রেমিক হয় বিচক্ষণ ব্যক্তি সকল শিক্ষক হয় জান-প্রেমিক সকল শিক্ষক হয় বিচক্ষণ ব্যক্তি এ সহানুমানটিতে আশ্রয়বাক্য দুটি হলাে- ‘সকল জ্ঞান-প্রেমিক হয় বিচক্ষণ ব্যক্তি ও সকল শিক্ষক হয় জান-প্রেমিক এবং সিদ্ধান্তটি হলাে সকল শিক্ষক হয় বিচক্ষণ ব্যক্তি’ |

আশায়বাক্য দুটির মধ্যে সাধারণ পদ হলাে ‘আন প্রেমিক। এ পদটির জন্যই আশ্রয়বাক্য দুটির মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এ সম্পর্কের ফলে অনিবার্যভাবে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়েছে।

সহানুমানের গঠন

সহানুমানের গঠন বলতে বোঝায় যুক্তিতে বাক্য ও পদের বিন্যাসকে , যার উপর এ অনুমানের বৈধতা অনেকাংশে নির্ভরশীল । আর সহানুমানের যুক্তি গঠনে এর অন্তর্গত বাক্য ও পদকে দুটি দিক থেকে বিন্যস্ত করা হয়েছে । পদের দিক থেকে সহানুমানের একটি যুক্তিতে তিনটি পদ থাকে । যথা— প্রধান পদ , অপ্রধান পদ ও মধ্যপদ বা হেতু পদ । + ) বাক্যের দিক থেকে সহানুমানের একটি যুক্তি তিনটি বাক্য নিয়ে গঠিত হয় । যথা- প্রধান আশ্রয়বাক্য , অপ্রধান আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত । এ ক্ষেত্রে প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্য হচ্ছে প্রদত্ত বাক্য এবং সিদ্ধান্ত হচ্ছে আশ্রয়বাক্যদ্বয় থেকে অনুমিত বাক্য । পদ ও বাক্যের সমন্বয়ে সহানুমানের গঠনবিন্যাস উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে একটি যুক্তিবাক্য গঠিত হয় ।

এ হিসাবে সহানুমানের অন্তর্ভুক্ত বাক্য তিনটিতে ছয়টি পদ থাকার কথা । কিন্তু পদ যেহেতু তিনটি , তাই প্রতিটি পদ সমগ্র যুক্তিতে দুবার করে ব্যবহৃত হয় । যেমন: প্রধান পদ প্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে এবং অপ্রধান পদ অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে ব্যবহৃত হয় । আর মধ্যপদ সিদ্ধান্তে থাকে না , কিন্তু প্রধান পদ ও অপ্রধান পদ উভয় আশ্রয়বাক্যেই ব্যবহৃত হয় ।

এবার আমরা পদ ও বাক্যগুলোর স্বরূপ উল্লেখ করে এদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সুস্পষ্ট করব ।

  • ক ) প্রধান পদ ( Major term ) : যে পদটি প্রথম বাক্যে অর্থাৎ প্রধান আশ্রয়বাক্যে অবস্থান করে এবং পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তের বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রধান পদ বলে । বস্তুত সিদ্ধান্তের বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বিধেয়র ইংরেজি Predicate শব্দটির প্রথম অক্ষর P দ্বারা প্রধান পদকে চিহ্নিত করা হয় ।
  • খ ) অপ্রধান পদ ( Minor term ) : যে পদটি দ্বিতীয় বাক্যে অর্থাৎ অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে অবস্থান করে এবং পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাকে অপ্রধান পদ বলে । বস্তুত সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় উদ্দেশ্যের ইংরেজি Subject শব্দটির প্রথম অক্ষর S দ্বারা অপ্রধান পদকে চিহ্নিত করা হয় ।
  • গ ) মধ্যপদ ( Middle term ) : যে পদটি সিদ্ধান্তে থাকে না , কিন্তু প্রধান ও অপ্রধান উভয় আশ্রয়বাক্যেই অবস্থান করে তাকে মধ্যপদ বলে । এ পদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যে প্রধান পদের সাথে এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে অপ্রধান পদের সাথে সম্পর্কিত হয় । আর এরই মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্তে প্রধান ও অপ্রধান পদের মধ্যে একটি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ।

বস্তুত মধ্যপদের ইংরেজি Middle term- এর প্রথম অক্ষর M দ্বারা মধ্যপদকে চিহ্নিত করা হয় ।

  • ক ) প্রধান আশ্রয়বাক্য ( Major premise ) যে বাক্যটি প্রধান পদ ও মধ্যপদ নিয়ে গঠিত তাকে বলে প্রধান আশ্রয়বাক্য । এ বাক্যটি যুক্তির প্রথম বাক্য হিসেবে অবস্থান করে । এতে প্রধান পদ থাকার কারণেই মূলত একে প্রধান আশ্রয়বাক্য নামে অভিহিত করা হয় ।
  • খ ) অপ্রধান আশ্রয়বাক্য ( Minor Premise ) : যে বাক্যটি অপ্রধান পদ ও মধ্যপদ নিয়ে গঠিত তাকে বলে অপ্রধান আশ্রয়বাক্য । এ বাক্যটি যুক্তির দ্বিতীয় বাক্য হিসেবে অবস্থান করে। এতে অপ্রধান পদ থাকার কারণেই মূলত একে অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নামে অভিহিত করা হয় ।
  • গ ) সিদ্ধান্ত ( Conclusion ) : যে বাক্যটি প্রধান ও অপ্রধান পদ নিয়ে গঠিত তাকে বলে সিদ্ধান্ত । এটি যুক্তির তৃতীয় , অর্থাৎ শেষ বাক্য হিসেবে অবস্থান করে । এ বাক্যটি মূলত প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং মধ্যপদের মধ্যস্থতায় প্রধান ও অপ্রধান পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

দৃষ্টান্ত : সকল পাখি হয় দ্বিপদ । দৃষ্টান্তের প্রতীকী রূপ : সকল M হয় P সকল বক হয় পাখি । সকল S হয় M সকল S হয় P . সকল বক হয় দ্বিপদ ।

উল্লেখ্য যে অপ্রধান পদ সিদ্ধান্তের দুই প্রান্তে অবস্থান করে বলে এদের একত্রে প্রান্ত প্রদত্ত বাক্য বলা হয় অনুমানের যথার্থতার জন্য সঠিক যুক্তি প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। এর জন্য প্রয়োজন যুক্তির সঠিক গঠনবিন্যাস । এ কারণেই যুক্তির গঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি । আর এদিক থেকেই সহানুমানের গঠনপ্রণালি সঠিক অনুমানপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আমাদের এ সম্পর্কিত যথাযথ জ্ঞান প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে ।

মধ্যপদ এর ভূমিকা

সহানুমানে মধ্যপদের ভূমিকা : সহানুমানের গঠন ও প্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সহানুমানে যে দুটি | আশ্রয়ক্য থাকে তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আশ্রয়বাক্যের মধ্যে এ প্রয়ােজনীয় সম্পর্ক স্থাপন করে মধ্য পদ। মধ্যপদ উপস্থিত না থাকলে আশ্রয়বাক্যদ্বয়ের মধ্যে কোনাে সম্পর্ক স্থাপিত হয়না।

মধ্যপদ, প্রধান আশ্রয়বাক্যের প্রধান পলের সাথে, আর অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে অপ্রধান পদের সাথে উপস্থিত থাকার ফলে প্রধান ও অপ্রধান। আবাক্যের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। উভয় আশ্রয়বাক্যের মধ্যে এরূপ একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কারণেই আশ্রয়বাক্য দুটি থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, মধ্যপদ না। থাকলে আশ্রয়বাক্য দুটির মধ্যে কোনাে সম্পর্ক সৃষ্টি হতাে না।

সেক্ষেত্রে আশায়বাক্য দু’টি থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হওয়া সম্ভব হতাে না। তাই দেখা যায়, সহানুমানে মধ্যপদই আশ্রয়বাক্য দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই সিন্ধান্ত অপরিহার্য ভাবে অনুমিত হয়।

সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা

উপরের যুক্তিটিতে মধ্যপদ ‘ মানুষ ‘ আশ্রয়বাক্যদ্বয়ে সাধারণ ( Common ) হিসেবে বর্তমান , যা প্রধান আশ্রয়বাক্যে প্রধান পদ ‘ মরণশীল ‘ – এর সাথে সম্পর্কিত হয়েছে এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে অপ্রধান পদ ‘ কবি ‘ – এর সাথে সম্পর্কিত হয়েছে । ফলে ‘ মানুষ ‘ – এর মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্তে ‘ কবি ‘ ও ‘ মরণশীল ‘ এ দুটি বিচ্ছিন্ন পদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে মধ্যপদ হচ্ছে সহানুমানের ভিত্তি । কারণ , একে ছাড়া কোনোভাবেই সহানুমানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে না । বস্তুত মধ্যপদের কারণেই সহানুমান মাধ্যম অনুমান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে । এ পরিপ্রেক্ষিতেই সহানুমানে মধ্যপদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আর মধ্যপদের এই ভূমিকার কথা ব্যক্ত করতে গিয়েই যুক্তিবিদ বোসাংকোয়েট বলেছেন , “ মধ্যপদকে গণ্য করা যায় একটি সংযোজক বা ধারক হিসেবে , যা সিদ্ধান্তকে একই সাথে ধারণ করে , সুস্পষ্ট করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করে ।

সহানুমানের নিয়মাবলী, মধ্যপদ এর ব্যাপ্যতার নিয়ম

Rules of Syllogism: আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তে অনুগমনের ক্ষেত্রে সহানুমানকে কতিপয় নিয়ম অনুসরণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয় অন্যথায় যুক্তি ভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আর যুক্তির এরূপ ভ্রান্তিকে বলা হয় অনুপপত্তি । বস্তুত সহানুমানের যথার্থ যুক্তি গঠনের লক্ষ্যে এর বৈধতা পরীক্ষার মাধ্যমে অনুপপত্তির সম্ভাবনা এড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যায় দশটি সাধারণ নিয়মের উল্লেখ রয়েছে , যেগুলোর প্রয়োগে যুক্তি বৈধ হয় এবং অপপ্রয়োগে যুক্তি ভ্রান্ত হয় । উল্লেখ্য যে , এ নিয়মগুলো সহানুমানের যুক্তির অন্তর্গত বিভিন্ন দিকের ভিত্তিতে প্রণীত । যেমন : ১ নং ও ২ নং নিয়ম যুক্তির গঠনবিন্যাসের ভিত্তিতে , ৩ নং ও ৪ নং ব্যাপ্যতাসংক্রান্ত বিষয়ের ভিত্তিতে , ৫ নং , ৬ নং ও ৭ নং নিয়ম বাক্যের পরিমাণগত দিকের ভিত্তিতে , ৮ নং ও ৯ নং নিয়ম বাক্যের গুণগত দিকের ভিত্তিতে এবং ১০ নং নিয়ম পরিমাণ ও গুণ উভয় দিকের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে । এবার আমরা এই নিয়মগুলোর প্রয়োগ এবং অপপ্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করব ।

সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ করা

নিয়ম -১ :

সহানুমানের একটি যুক্তিতে কেবল তিনটি পদ থাকবে , কম বা বেশি নয় । ( Argument of Syllogism must have only three terms , no more or less.) আলোচ্য নিয়মটি সহানুমানের গঠনবিন্যাসের সাথে জড়িত । বস্তুত সহানুমানের একটি যুক্তি সর্বক্ষেত্রেই প্রধান , অপ্রধান ও মধ্য এই তিনটি পদ নিয়ে গঠিত হয় এবং এই পদগুলোর প্রতিটি সমগ্র যুক্তিতে দুবার করে ব্যবহৃত হয় । প্রধান পদ প্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে অবস্থান করে , অপ্রধান পদ অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে অবস্থান করে এবং মধ্যপদ প্রধান ও অপ্রধান উভয় আশ্রয়বাক্যে অবস্থান করে । বস্তুত নিরপেক্ষ সহানুমানের সিদ্ধান্তে দুটি পদের মধ্যে একটি নিশ্চিত সম্পর্ক ঘোষিত হয় । আর সিদ্ধান্ত যথার্থ হয় কেবল যদি সিদ্ধান্তের পদ দুটির সাথে তৃতীয় একটি পদের সম্পর্ক আশ্রয়বাক্যদ্বয়ে পৃথকভাবে ঘোষিত হয় । আর আশ্রয়বাক্যদ্বয়ে যদি তৃতীয় পদটির সাথে সিদ্ধান্তের পদ দুটির কোনো সংযোগ স্থাপিত না হয় , তাহলে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যদ্বয় থেকে যথাযথভাবে নিঃসৃত হয় না।

নিয়ম -২ :

সহানুমানের একটি যুক্তিতে কেবল তিনটি বাক্য থাকবে , কম বা বেশি নয় । ( Argument of syllogism must have only three proposition , no more or less.) আলোচ্য নিয়মটিও সহানুমানের গঠনবিন্যাসের সাথে জড়িত ।

নিয়ম -৩ :

সহানুমানের আশ্রয়বাক্যদ্বয়ে মধ্যপদকে কমপক্ষে একবার ব্যাপ্য হতে হবে । ( The middle term in syllogism must be distributed at least once in the premises.) আলোচ্য নিয়মটি সহানুমানের অন্তর্গত বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত পদের ব্যাপ্যতাসংক্রান্ত বিষয়ের সাথে জড়িত । বস্তুত সহানুমানের একটি যুক্তিতে প্রধান , অপ্রধান ও মধ্য এ তিনটি পদ থাকে । এর মধ্যে প্রধান ও অপ্রধান পদের মধ্যে সিদ্ধান্তে একটি সংযোগ স্থাপিত হয় ।

নিয়ম -৪ :

সহানুমানে আশ্রয়বাক্যের কোনো অব্যাপ্য পদকে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য করা যাবে না । ( No term in syllogism be distributed in the conclusion , if it is undistributed in the premise.) আলোচ্য নিয়মটিও সহানুমানের অন্তর্গত বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত পদের ব্যাপ্যতাসংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট । বস্তুত সহানুমান অবরোহ অনুমানের একটি অন্যতম প্রকরণ।

নিয়ম -৫ :

সহানুমানের দুটি আশ্রয়বাক্যই নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত অনুসৃত হয় না । ( No valid conclusion follows , if the both of premises in syllogism be negative.) আলোচ্য নিয়মটি সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের গুণগত প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট । গুণগত দিক থেকে যুক্তিবাক্য সদর্থক ও নর্থক হয়ে থাকে । সাধারণত নঞর্থক যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে কোনোরূপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় না ।

নিয়ম -৬ :

সহানুমানে একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তও নঞর্থক হবে এবং বিপরীতক্রমে সিদ্ধান্ত নঞর্থক হলে একটি আশ্রয়বাক্য অবশ্যই নঞর্থক হবে । ( If one premise in syllogism be negative , the conclusion must be negative , and conversely , if the conclusion be negative , one of the premises must be negative ) আলোচ্য নিয়মটিও সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের গুণগত প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট । গুণগত দিক থেকে যুক্তিবাক্য সদর্থক ও নঞর্থক হয়ে থাকে । সহানুমানের পূর্ববর্তী ৫ নং নিয়ম অনুসারে দুটি আশ্রয়বাক্যই নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না । কাজেই সহানুমানের বৈধ যুক্তি গঠনের লক্ষ্যে একটি আশ্রয়বাক্যকে নঞর্থক হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে ।

নিয়ম -৭ :

সহানুমানের দুটি আশ্রয়বাক্যই সদর্থক হলে সিদ্ধান্তও সদর্থক হবে এবং বিপরীতক্রমে সিদ্ধান্ত সদর্থক হলে উভয় আশ্রয়বাক্যই সদর্থক হবে । ( If two premises in syllogism be affirmative , the conclusion must be affirmative , and conversely if the conclusion be affirmative , both of the premises must be affirmative . ) আলোচ্য নিয়মটিও সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের গুণগত প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট । যদি কোনো যুক্তির দুটি আশ্রয়বাক্যই গুণগত দিক থেকে সদর্থক হয় , তাহলে ধরে নিতে হবে , মধ্যপদ উভয় আশ্রয়বাক্যেই অন্য পদ দুটির সাথে সম্পর্কিত হয়েছে । সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে অন্য পদ দুটির মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো বাধা নেই । আর এরূপ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি হবে সদর্থক । আবার সিদ্ধান্তটি যদি সদর্থক হয় , তাহলে এতে প্রধান ও অপ্রধান পদ পরস্পর সম্পর্কিত হবে ।

নিয়ম -৮ :

সহানুমানের দুটি আশ্রয়বাক্যই বিশেষ হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত অনুসৃত হয় না । ( No valid conclusion follows , if the both of premises in syllogism be particular . ) আলোচ্য নিয়মটি সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের পরিমাণগত প্রকৃতির সাথে জড়িত । পরিমাণগত দিক থেকে যুক্তিবাক্য সার্বিক ও বিশেষ হয়ে থাকে । আর যুক্তির দুটি আশ্রয়বাক্যই যদি বিশেষ হয় , তাহলে এর অন্তর্গত বেশির ভাগ পদই আংশিক অর্থে ব্যবহৃত হয় । অর্থাৎ পদগুলো থাকে অব্যাপ্য । যার ফলে এরূপ আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যাপ্যতাসংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাপ্যতা সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুপপত্তির উদ্ভব ঘটে ।

নিয়ম -৯ :

সহানুমানের একটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তও বিশেষ হবে । ( If one premise in syllogism be particular , the conclusion must be particular.) আলোচ্য নিয়মটিও সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের পরিমাণগত প্রকৃতির সাথে জড়িত । পরিমাণগত দিক থেকে যুক্তিবাক্য সার্বিক ও বিশেষ হয়ে থাকে । সহানুমানের পূর্ববর্তী ৮ নং নিয়ম অনুসারে দুটি আশ্রয়বাক্যই বিশেষ হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না । কাজেই সহানুমানের বৈধ যুক্তি গঠনের লক্ষ্যে একটি আশ্রয়বাক্যকে বিশেষ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে । যেহেতু সহানুমান গঠিত হয় কেবল দুটি আশ্রয়বাক্য দ্বারা , সেহেতু ধরে নেওয়া যায় , একটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ হলে অন্যটি অবশ্যই সার্বিক হবে ।

নিয়ম -১০ :

সহানুমানের প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নর্থক হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না । ( From a particular major premise and a negative minor premise , in syllogism , no valid conclusion follows . ) আলোচ্য নিয়মটি সহানুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্যের গুণ ও পরিমাণ উভয় প্রকৃতির সাথে জড়িত । সহানুমানের নবম নিয়ম অনুসারে , প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ হলে অপ্রধান আশ্রয়বাক্য হবে সার্বিক । একইভাবে সহানুমানের ষষ্ঠ নিয়ম অনুসারে , অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে প্রধান আশ্রয়বাক্য হবে সদর্থক । কাজেই প্রধান আশ্রয়বাক্য হবে বিশেষ সদর্থক , অর্থাৎ I বাক্য এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য হবে সার্বিক নঞর্থক।

উল্লেখ্য যে , ভ্রান্তির সম্ভাবনা এড়িয়ে যথার্থ যুক্তি প্রণয়নের ক্ষেত্রে উপরে আলোচিত সহানুমানের দশটি নিয়মের যথাযথ অনুসরণ অত্যন্ত জরুরি ।

এটিই আপনাদের এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান- সহানুমান গঠনে মধ্যপদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান– বিশ্লেষণ

আরো দেখুন-

সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ