কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য করোনা তহবিল থেকে প্রণোদনা ঋণ : নির্দেশনা ও নিয়মাবলী
করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যারা ছোটখাটো চাকরি করত তারাও পড়েছে বিপাকে। সাধারণ মানুষের এই পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক করোনাতো অভিল গঠন করে সেখান থেকে মালিকদের ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
করোন ভাইরাসের প্রভাবে দেশের রফতানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের কাছে এক নিতীমালা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়। সেই সাথে কিভাবে আবেদন করা হবে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কেবল সচ্ছল রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতা পরিশোধ করার নিমিত্তে এই ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
করোনাতো বিল থেকে গৃহীত ঋণ অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
যে সকল প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে সে সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান ওই তিন মাসের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করেনি সেগুলোর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে না। যে সকল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে না সেগুলো কে এই ঋণের সুবিধা দেওয়া হবে না বলে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সেইসাথে পূর্বে ঋণখেলাপি কোন প্রতিষ্ঠান এই ঋণের সুবিধা পাবে না সেটাও নির্দেশনা রয়েছে।
করোনাতো বিল থেকে সংগ্রহীত ঋণ শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৮ কিস্তি পর্যন্ত। এবং এই ঋণের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ঋণগ্রহীতাদের থেকে সুদ আদায় করবে না। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের ট্যাগ থেকে ব্যাঙগুলো 2% হারে শুধুমাত্র সার্ভিস চার্জ আদায় করবে এছাড়া অন্যান্য চার্জ করা যাবে না।
যেসকল প্রতিষ্ঠান তাদের মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে তারা রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে গণ্য হবে। ঋণের আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট খাতে প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র দিতে হবে। রপ্তানিকারকের চলমান রপ্তানি কার্যক্রমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিজ উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিত হবেন।
এই ঋণ গ্রহণ করার জন্য ঋণ আবেদনকারীকে যেই কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহক হতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকে কমপক্ষে তিন মাসে রপ্তানি কার্যক্রম এবং একই সময়ে প্রতিষ্ঠান শ্রমিক কর্মচারী বেতন ভাতাদি প্রদান রেকর্ড থাকতে হবে।
তবে একাধিক ব্যাংকের অফ তানি কার্যক্রম চালু থাকলে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গ্রাহকের পক্ষ থেকে ঋণের আবেদন করতে পারবে।
বেতন-ভাতার মাসিক চাহিদা নির্ধারণ করে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতার শিল্প প্রতিষ্ঠান গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ তিন মাসের বেতন-ভাতার পরীক্ষা করতে পারবে। আবেদন করা ঋণের পরিমাণ কত তিন মাসের বেতন-ভাতার ঘরের বেশী হবেনা।
গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের অর্থ দ্বারা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে সরাসরি অর্থ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শ্রমিক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যাংকগুলো বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রহণ করে পরীক্ষা করবে।
এই অর্থে কোন ধরনের নগদ লেনদেন করা যাবে না। একই সাথে শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব ছাড়া অন্য কোনভাবে লেনদেন করা যাবে না। এ পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ গ্রহীতা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গীকার গ্রহণ করতে পারবে।
কোন শ্রমিক কর্মচারী মোবাইল ব্যাংক বা ব্যাংক হিসাব না থাকলে সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ে যুদ্ধ কেশব শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খোলার নিশ্চিত করতে হবে।
কোন শ্রমিক-কর্মচারী ব্যাংক হিসাব খুলতে চাইলে সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুরোধে শ্রমিক-কর্মচারী জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে ন্যূনতম জমা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করবে।
এ ধরনের ব্যাংক হিসেবে কোন ধরনের সার্ভিস চার্জ আরোপ করা যাবে না।
প্রণোদনার অর্থ তিন কিস্তিতে দেওয়া হবে-
প্রথম কিস্তি পেতে চাইলে 20 এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে এপ্রিলের শেষে অর্থ ছাড় দেওয়া হবে।
মেয় জুন মাসের কিস্তি চাইলে অবশ্যই মে মাসের শুরুতে আবেদন করতে হবে। এপ্রিলের মতোই মাসের শেষে প্রণোদনার ঋণ মঞ্জুর হবে।
এই ঋণের কিস্তি কর্তন শুরু হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। এবং শেষ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এন্ড বাজেটিং বিভাগের তহবিল পরিচালনা করবে-এ তহবিল থেকে ঋণ কার্যক্রম বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান শাখার মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।
উল্লেখ থাকে যে রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর কোন ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার জন্য ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে 5 হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারটি ডাউনলোড করুন