করোনা মোকাবেলায় ঘরে বসেই বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাড়িয়ে নিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সমগ্র জাতি। শুধুমাত্র বাঙালি নয় সারা বিশ্বেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। মানব সভ্যতা যেন ক্ষুদ্র ভাইরাস এর কাছে মাথা নত করে নিয়েছে।
সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীগণ যেন হার মেনে নিয়েছে। কোন প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এই নিয়ে সমগ্র পৃথিবীর মানব জাতি আজ শঙ্কায়।
প্রতিষেধক তৈরি করা না গেলেও বিজ্ঞানীগণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা গেছে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারাই করো না ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার সক্ষমতা রাখে। মহান আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে এবং আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে এই মরণঘাতী ভাইরাসে থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
চলুন আজকে জেনে নিব আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়াবেন।

নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা:

করোনা ঠেকাতে নিয়মিত ব্যায়াম
ছবি : নিয়মিত ব্যায়াম (সংগৃহিত)

নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া কমায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের সাত রক্তকণিকা আরো দুধ সঞ্চালন করতে সহায়তা করে এবং এন্টিবডি তৈরি করে। নিয়মিত ব্যায়াম স্ট্রেস হরমোন কমায়। ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অস্থায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি নির্দিষ্ট ব্যক্তি এবং ভাইরাসকে দুর্বল বা হত্যা করতে পারে। সুতরাং আপনার উচিত নির্ধারিত নিয়মে প্রতিদিন পরিমিত ব্যায়াম করা। তাহলেই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

হোম কোয়ারান্টিনে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে করণীয়: বাসার ভেতরে অথবা বাসার ছাদে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন অথবা ব্যায়াম করুন। মনে রাখবেন কোন ভাবেই বাইরে হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে যাবেন না। বাসার ভেতরে ইয়োগা করা একটি সহজ পদ্ধতি। মনে রাখবেন অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না।

খাবার এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

করোনা ঠেকাতে পুষ্টিকর খাবার
ছবি : পরিমিত পুষ্টিকর খাবার (সংগৃহিত)

খাবারের গুণগত মান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ধারণ করবে। পরিমিত পরিমাণ সুষম খাবার আপনার আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কিভাবে কি করবেন: প্রতিদিন অতিরিক্ত দুই গ্লাস পানি পান করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিনের খাবারের মেনুতে প্রতিটিতে একটি ফল ও একটি শাকসবজি বেশি খান। ভাজাপোড়া খাবার অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। সম্ভব হলে সাদা প্রসেস করা আটা খাবেন না, প্রসেস বিহীন আটা খাবেন।
কোন ধরনের মিষ্টি যুক্ত পানীয় খাবেন না। চিপস না খেয়ে বাদাম খেতে পারে।

শরীরে ভিটামিন ডির বিষয়টি নিশ্চিত করুন:

ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যে সকল খাবারে
ছবি : ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার (সংগৃহিত)

শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকলে শরীরের অভিযোগ প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে যায়। এটা শরীরের স্বয়ংক্রিয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ ভ্যাক্সিনেশন এর পেছনে কাজ করে।

কি করবেন: প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে যান। চশমা পড়তে যারা অভ্যস্ত তারা চশমা খুলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্যের আলোর জন্য আপনার চোখের উন্মুক্ত করে দিন। সম্ভব হলে মাছ ডিম ও মাশরুম খান।

মেডিটেশন করতে পারেন:

ধর্মীয় মেডিটেশন
ছবি : ধর্মীয় মেডিটেশন (সংগৃহিত)

মেডিটেশন শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই প্রক্রিয়াটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে। প্রত্যেকেরই মেডিটেশন প্রক্রিয়ায় ব্যায়াম করা উচিত।

কি করবেন: প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিটের জন্য হলেও মেডিটেশন করুন। যদি সেটা এক ঘণ্টা বা তার বেশি দিল করতে পারেন তবে সেটা আপনার জন্যই মঙ্গল। বিনা শব্দে এবং স্বাচ্ছন্দে বসে কিছু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড সংগীত দিয়ে চর্চা করতে পারেন। ধর্মীয়ভাবে যারা মুসলমান তারা জিকির দোয়া দুরুদ পাঠ তসবি পাঠ অন্যান্য ধর্মের মধ্যে মেডিটেশন হতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম:

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
ছবি: পর্যাপ্ত ঘুম (সংগৃহিত)

স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একজন মানুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে আপনার অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার দেহে সাইটোকাইন তৈরি করতে সহযোগিতা করে।

কোন প্রকার অ্যালকোহল পান করবেন না:

ছবি: কোন প্রকার অ্যালকোহল নিষেধ (সংগৃহিত)

অ্যালকোহল শরীরে অন্ত্রের মাইক্রো বায়ন এবং রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমের মাঝে যোগাযোগ নষ্ট করে দেয়। এ ধরনের পানীয় অন্ত্রের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। অ্যালকোহল ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধের কোষগুলো কার্যকারিতা নষ্ট করে আর করোনা ভাইরাস দ্বারা ফুসফুসের কোষগুলো সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। সুতরাং করনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আপনাকে অবশ্যই অ্যালকোহল পানীয় থেকে বিরত থাকতে হবে।

ধূমপান করবেন না:

সিগারেটের ধোঁয়া ধূমপায়ীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকে অত্যন্ত দুর্বল করে ফেলে। মানব শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ওপর ধূমপানের প্রভাব আছে, যার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো ধরনের ধূমপান শ্বাসনালী সেগুলোর জন্য সরাসরি ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত। সুতরাং করো না প্রাদুর্ভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং পরিবারের অন্যদের কে রক্ষা করতে অবশ্যই আপনার ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।

সর্বোপরি মহান আল্লাহর সহযোগিতা ছাড়া এই মহামারীর সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। যতটা সম্ভব মহান আল্লাহ নিকট সহযোগিতা প্রার্থনা করুন। সেইসাথে নিয়মকানুনগুলো মেনে চলুন। আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক তথ্য নিয়ে সুস্থ থাকুন।

দেশের বিদেশের সকল খবর সঠিকভাবে সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপপেইজ এ লাইক দিন

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *