সর্বশেষ আপটেড

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন

২০২১ সালের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন নিয়ে আজকে হাজির হলাম।

এই আলোচনা সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সপ্তম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদানকৃত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান/ উত্তর খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র এসাইনমেন্টের দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।

এইচএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১; বিভাগ: মানবিক; বিষয়: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র ; বিষয় কোড:২৬৭;

অ্যাসাইনমেন্ট : মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন করো।

নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি)

  • ক). বিদায় হজের ভাষণের পটভূমি ব্যাখ্যা
  • খ). বিদায় হজের ভাষণের ধর্মীয় উপদেশাবলী বিশ্লেষণ
  • গ). বিদায় হজের ভাষণের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে পালনীয় বিষয়াবলির পর্যালোচনা
  • ঘ). বিদায় হজের ভাষণের আর্থ-সামাজিক উপদেশগুলো জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহ

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর

তারিখঃ ০৯-০৯-২০২১ ইং
বরাবর
অধ্যক্ষ
হাজী মনির আহমদ কলেজ
ফুলগাজী,ফেনী

বিষয় : মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন।

জনাব, বিনীত নিবেদন এই যে, আপনার আদেশ নং ম.উ.বি ৯১৭-৪ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ অনুসারে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদনটি নিম্নে পেশ করছি।

ক) বিদায় হজ ভাষণের পটভূমিঃ

মক্কা বিজয় এর দ্বিতীয় বৎসরে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ্জ পালন করেন। এটি বিদায় হজ্জ নামে অভিহিত। এর পূর্ববর্তী বৎসরে তিনি হজ্জ করেন নি। মক্কা বিজয়ের পরবর্তী বৎসরে ইসলামের প্রথম খলীফা আবুবকর (রাঃ) এর নেতৃত্বে হজ্জ সম্পাদিত হয়। পরবর্তী বৎসরে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) হজ্জের নেতৃত্ব দান করেন। বিদায় হজ্জ-এর মাধ্যমে তিনি আদর্শরূপে হজ্জ পালনের নিয়মাবলী উল্লেখ এবং প্রদর্শন করেন। এই হজ্জ্বের সময় তিনি আরাফাতের ময়দানে যে ভাষন বা খুৎবা প্রদান করেন তা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ।অন্যভাবে বিদায় হজ হলো আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর শেষ হজ। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ হিজরি দশম বছর হজরত মুহাম্মদ সা: মনে করলেন যে তার জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে আসছে। তার ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব ‘ইসলাম প্রচার’ তা পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে। তাই তিনি জীবনের শেষ হজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এটিই ইসলামের ইতিহাসে ‘বিদায় হজ’ নামে খ্যাত।

খ) বিদায় হজ ভাষণের ধর্মীয় উপদেশাবলিঃ

ভাষণ থেকে-

হে মুসলিমগণ ! মনোযোগ সহকারে আমার কথা শোন । কারণ আবার তোমাদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ আল্লাহ আমাকে নাও দিতে পারেন। এ দিন, এ মাস, সকলের জন্য যেরূপ পবিত্র, সেরূপ তোমাদের জীবন ও সম্পদ মহা প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ আল্লাহ আমাকে নাও দিতে পারেন। এ দিন, এ মাস, সকলের জন্য যেরূপ পবিত্র, সেরূপ তোমাদের জীবন ও সম্পদ মহা প্রভুর সাথে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত পরস্পরের নিকট পবিত্র ও হস্তক্ষেপের অনুপযুক্ত।

  • স্মরণ রেখো, দুনিয়ার প্রত্যেক কাজের জন্য অনুপযুক্ত।
  • স্মরণ রেখো, দুনিয়ার প্রত্যেক কাজের জন্য একদিন আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
  • তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করো না, অন্যের দ্রব্য আত্মসাৎ ও অন্যায়ভাবে নরহত্যা করো না এবং কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না ।
  • পথপ্রদর্শক হিসেবে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কালাম (কুরআন মাজীদ) ও তার প্রেরিত সত্যবাহক রাসূলের চরিত্রাদর্শ (হাদীস) রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটির অনুশাসন মেনে চলবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না ।

এখান থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি :

১. শিরকী জাহেলিয়াতের সাথে তাওহীদের চিরদিনের মত বিচ্ছেদ ঘোষণা করা।

২. কুরআন ও সুন্নাহর বাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য কর্তব্য।

এছাড়া আরো বলেছেন চারটি বিশেষ নসীহত এর কথা। চারটি বিষয় বিশেষ করে স্মরণ রেখো!

  • (১) কখনো শিরক করো না,
  • (২) অন্যায়ভাবে নরহত্যা করো না,
  • (৩) অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করো না,
  • (৪) কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না।

সাবধান, কারো অসম্মতিতে তার সামান্য সম্পদও গ্রহণ করো না। জুলুম করো না। জুলুম করো না! কোনো মানুষের ওপর জুলুম করো না।

কুরআন-সুন্নাহ মুক্তির পথ :

আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, যত দিন তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখবে, পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাত।

শয়তান সম্পর্কে সাবধান বানী :

হে লোকেরা! শয়তান এ ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে, সে তোমাদের দেশে আর উপাসনা পাবে না। কিন্তু সাবধান! অনেক এমন বিষয়কে তোমরা ক্ষুদ্র বলে জ্ঞান করো, অথচ শয়তান তারই মাধ্যমে তোমাদের সর্বনাশ করে ছাড়ে। সে বিষয়গুলো সম্পর্কে খুবই সাবধান থাকবে।

স্ত্রীদের ব্যপারে সতর্কবানী :

হে লোকসকল! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। এদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় আল্লাহর দন্ড সম্পর্কে নির্ভয় হয়ো না। নিশ্চই তাদের তোমরা আল্লাহর জামিনে গ্রহন করেছ এবং তাঁরই বাক্যের মাধ্যমে তাদের সাথে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে। জেনে রাখ, তাদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের প্রতি তাদেরও আধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমারা আমার নসীহত গ্রহণ কর।

দাস-দাসীদের প্রতি সদাচরণ :

তোমরা তোমাদের অধীন¯’দের সম্পর্কেও সতর্ক হও। নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওযাবে; নিজেরা যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে। সাবধান, তাদের ওপর কখনো জুলুম করবে না

আত্মপরিচয় অস্বীকারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা :

সন্তান হল বিবাহিত দম্পত্তির। ব্যাভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই। আর সকল হিসাব নিকাশ আল্লাহর উপর ন্যস্ত। যা ব্যাক্তি নিজের পিতার ¯’লে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহর লা’নথ।

ইবাদত-বন্দেগী :

শোন, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমযানে রোযা পালন করবে, স্বে”ছায় ও খুশী মনে তোমাদের সম্পদের যাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়াতুল্লাহর হজ্জ পালন করবে আর আমীরের ইতা’আত করবে; তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

কুরআনের বাণী প্রচার :

“আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা সে কিতাব অবলম্বন করে চলবে, তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আজ যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার এসব পয়গাম অনুপস্থিতিদের কাছে পৌঁছে দেবে। হতে পারে উপস্থিত কারো কারো থেকে অনুপস্থিতি কেউ কেউ এর দ্বারা বেশি উপকৃত হবে।”

অতঃপর রাসুল (সা.) আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন,“হে আল্লাহ, আমি কি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি- আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করেছি?” তখন উপস্থিত জনতার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, “নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই।” তখন মুহাম্মদ (সা.) বলেছিলেন,“হে আল্লাহ, তুমি শোনো, সাক্ষী থাকো, তোমার বান্দারা স্বীকার করছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাকো।

গ) বিদায় হজের ভাষণের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে পালনীয় বিষয়াবলির পর্যালোচনাঃ

হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবনসায়াহ্নে হজ্জ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে যে অভিভাষণ প্রদান করেছিলেন, ইসলাম ও মানবতার ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ বাণীতেই ইসলামী রাজনীতি,অর্থনীতি, সমাজনীতি ও মানব অধিকারের মূলনীতি বিঘোষিত হয়েছে। এতে মানব জীবনের আধ্যাত্মিক ও বাস্তব উভয় শিক্ষাই বর্তমান রয়েছে। এ শিক্ষা মানব জাতিকে সত্যিকারের মুক্তি ও শান্তির সন্ধান দিয়েছে । মহানবী (সা.)- এর ভাষণের সকল দিক বাস্তবায়িত হলে আজকের এ সংঘাতময় মানব জীবন সবাত্মক সাথক ও সুন্দর হয়ে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ভাষণের শুরুতে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে বিশ্ব – প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সমবেত জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলেন :

হে প্রিয় সাহাবীগণ! তোমাদের সহধর্মিণীদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে, তোমাদের ওপরও তাদের তেমন অধিকার রয়েছে। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছে এবং তারই আদেশমত তাদের তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। হে আমার উম্মতগণ, যারা এখানে সমবেত হয়েছ, তারা অনুপস্থিত মুসলিমদের কাছে আমার কথা পৌঁছে দেবে । যারা অনুপস্থিত তাদের আমার উপদেশের কথা জানাবে। কখনো কখনো উপস্থিত ব্যক্তিদের চেয়ে অনুপস্থিত ব্যক্তিরা অধিক স্মরণ রাখতে সক্ষম হয়।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “হে মানবজাতি। তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার।” তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে। সকল বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে।ইসলামে জাতি, শ্রেণিভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের উপর কোনো আজমের আজমের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার উপর কালোর বা কালোর উপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবল তাকওয়া। আল্লাহর ঘরের হেফাজত, সরক্ষণ ও হাজিগণের পানি পান করানোর ব্যবস্থা পূর্বের মতো এখনো বহাল থাকবে। হে কুরায়েশ সম্প্রদায়ের লোকগণ! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাজির না হয়। আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনো উপকারই করতে পারব না।

শুনে রাধ, তোমরা শীঘ্রই আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তিনি তোমাদের সকলকেই তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। অপরাধের দায়িত্ব কেবল তার ঘাড়েই বর্তায়। পিতা তারা পুরোর জন্য আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়। তোমরা তোমাদের অধীনদের সম্পর্কে সতর্ক হও। নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওয়াবে নিজেরা যা পরবে, তা পরাবে।

তাদেরও হে লোক সকল! শুনে রাখ মুসলিমরা পরস্পরের ভাই। সাবধান। আমার পরে তোমরা একজনকে হত্যা করার মতো কুফরি হে লোক সকল! আল্লাহ প্রত্যেককেই তার যথাযথ অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং উত্তরাধিকারীর জন্য কোনো রূপ ওসিয়ত কাজে লিপ্ত হয়ো না। কার্যকর হবে না। সন্তান হলো বিবাহিত দম্পতির ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই। আর সকলের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর উপর ন্যস্ত।

যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহর লানত। ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন প্রণয়ন

কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয় তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়। সুতরাং তোমরা একজন অপরজনের উপর জুলুম করবে না। এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ছাড়া কাউকে দেয়া হালাল নয়। যদি কোনো নাক-কান কাটা হাবশি দাসকেও তোমাদের আমির বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সে যতদিন আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, ততদিন অবশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। শোন, তোমরা তোমাদের প্রভুর এবাদত করবে। পাঁচ ওয়া সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের সম্পদের যাকাত দেবে তোমাদের রবের ঘরে হজ করবে আর আমিরের ইতা’আত করবে। তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবি নেই। আর তোমাদের পর আর কোনো উম্মত নেই। আমি তোমাদের কাছে দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ হবে না। সে দুটো হলো আল্লাহর কিতাব আল কুরআন ও রাসুলের সুন্নাহ আল হাদিস।

এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে, সে ভাতে সন্তুষ্ট হবে। সুতরাং তোমাদের দীনের বিষয়ে তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেক। শোন তোমরা যারা এ সভায় উপস্থিত আছ, তারা অনুপস্থিত লোকদেরকে আমার বাণী পৌঁছে দিও। উপস্থিত ব্যক্তিদের চেয়ে অনুপস্থিত ব্যক্তিরাই অধিক সংরক্ষণকারী হয়।জীবনে পালনীয় বিষয় সহ সবদিক উল্লেখ করা হলো।

শিক্ষাঃ

১. নারী ও পুরুষের পারস্পরিক হক ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখা।

২. কারু প্রতি যুলুম না করা এবং কেউ খুশীমনে না দিলে তার মাল গ্রহণ না করা। নারী সমাজের প্রতি সহৃদয় ব্যবহার ও সম্মানজনক আচরণ, সর্বোপরি নারী পুরুষের সমানাধিকার প্রশ্নে সচেতন হওয়ার জন্য সবাইকে মহানবী (সা.) এ ভাষণে উপদেশ দিয়েছেন ।

ঘ) বিদায় হজের ভাষণের আর্থ-সামাজিক উপদেশগুলো জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহ

আরাফাতের মাঠে মহানবি (স.)-এর অভিভাষণ বিশ্বমানবতা প্রতিষ্ঠায় একটি অসামান্য দলিল। ইসলামের সুমহান মর্যাদা ও উপারতার দ্বারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বসবাসের লক্ষ্যে এক সুখকর পরিবেশ রচনার ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপত্র। এ অমূ ভাষণে তিনি একটি আদর্শ মুসলিম সমাজ ব্যবস্থার চিত্র জনগণের নিকট তুলে ধরেন। তাদেরকে তিনি তমসাযুগের অসাম্য, প্রতিহিংসা, নিষ্ঠুরতা, শ্রেণিবৈষম্য ও সুদ প্রথার মাধ্যমে শোষণ-নির্যাতন, নারী দাস-দাসীর প্রতি অন্যায়-অবিচার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রাচীন রীতিনীতি প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপের অবসান ঘটিয়ে মানবতাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটান।” মানুষের অধিকার ও ভালোবাসার পবিত্র দিকগুলো তার অভিভাষণে বিদ্যমান। এতে অপরের সম্পদ সম্মানের নিরাপত্তা ও নাগরিক কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে একটি সুন্দর পৃথিবী রচনার নানাদিক প্রস্ফুটিত হয়েছে।

মহানবি (স.)-এর বিদায় হজের ভাষণ ইসলামি রাজনীতিতে, সমাজনীতি, অর্থনীতি ও মানবিক অধিকারের মূলনীতি বিঘোষিত কর্মসূচি। এ ভাষণে মানব জীবনের আধ্যাত্মিক ও বাস্তব শিক্ষার সুস্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে। বস্তুত এই শিক্ষাতেই মানব জাতির মুক্তি ও শান্তি নিহিত। এই ভাষণের মর্মকথা যথাযথভাবে পালিত হলে সব ধরনের দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি থেকে মানবগোষ্ঠী তাদের স্ব স্ব সত্তাকে রক্ষা করে পৃথিবীকে একটি শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে এবং পরকালীন জীবনের অনস্ত কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে পৌছতে পারবে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। আজও আমরা এ অভিভাষণকে উপজীব্য করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের নানা সমস্যা সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারি।

সাম্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা :

ধর্ম, জাতি, বর্ণবৈষম্যের কারণে হারিয়ে যায় মানবিক মূল্যবোধ। শুরু হয় মানুষের মধ্যে হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি। আজকের বিশ্বে তা কেবলই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসবের অবসানকল্পে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের রব একজন। তোমাদের আদি পিতা একজন। প্রত্যেকেই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির তৈরি। আল্লাহ তায়ালা পারস্পরিক পরিচিতির সুবিধার্থে বিভিন্ন সমাজ ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছেন। আরবের ওপর যেমন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি অনারবের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই আরবের। একইভাবে শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের আর কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বা বৈশিষ্ট্য নেই। শ্রেষ্ঠত্ব, বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া তথা আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে।’

দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা :

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে পৃথিবীর রাতগুলোকে যতই দিনের আলোর মতো জ্বলজ্বল করে তোলার চেষ্টা চলছে, ততই মানুষের অন্তঃকরণ ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র আজ হত্যা, লুণ্ঠন, ছিনতাই, সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ভূলুণ্ঠিত মানবতা নিভৃতে কাঁদছে। মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম করা হলো যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহরে রক্তপাত করা হারাম বা নিষিদ্ধ।’

ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা :

আমাদের সমাজে অপরাধী শক্তিশালী হওয়ার দরুন, ঘুষের বিনিময়ে অথবা স্বজনপ্রীতি করে নিরীহ ব্যক্তির ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একজনের অপরাধের কারণে তার পরিবার, বংশ, পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ঢালাওভাবে মন্তব্য করার হীন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শুনে রাখো, অপরাধীর দায়িত্ব কেবলই তার ওপর বর্তাবে। পিতা তাঁর পুত্রের জন্য আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।’

নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক :

এক শ্রেণির লোক বলে বেড়ায়, ‘ধর্ম হলো শোষণের হাতিয়ার!’ নারীর অধিকার রক্ষার সস্তা স্লোগানধারী কিছু মানুষ বলে থাকে, ‘নারী নির্যাতনের জন্য ধর্ম ও ধর্মীয় মতামতই (ফতোয়া) দায়ী!’ তারা কি রাসুল (সা.)-এর এ কথাগুলো পড়ে দেখেছে? ‘হে মানবমণ্ডলী! নারীদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তোমরা তাদের আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই কালেমার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জেনে রেখো, তাদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমরা আমার অসিয়ত (অন্তিম উপদেশ) গ্রহণ করো।’

শ্রেষ্ঠতম শ্রমনীতি ঘোষণা :

বর্তমান বিশ্বে শ্রমিক সমস্যা সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাসুল (সা.) শ্রমনীতি ঘোষণা করেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে- এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শ্রমনীতি। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের অধীনদের সম্পর্কে সতর্ক হও। তারা তোমাদের ভাই। তোমরা নিজেরা যা খাও তা তাদের খাওয়াবে। তোমরা নিজেরা যা পরিধান করো তা তাদের পরিধান করাবে। তাদের ওপর সাধ্যাতিরিক্ত শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেবে না। যদি কোনো কারণে চাপিয়ে দিতে হয়, তবে তুমিও তাতে অংশীদার হও।’

নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা যাবে না :

মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের ভিত মজবুত করা ও নিরপরাধ মানুষ হত্যা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল! শুনে রাখো, মুসলমান জাতি পরস্পর ভাই ভাই। আমার অবর্তমানে তোমরা পরস্পর মারামারি ও হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে কাফির হয়ে যেও না। মনে রেখো! শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে, যারা নামাজ আদায় করে তারা শয়তানের পূজারি হবে না। তবে হ্যাঁ, সে তোমাদের বিভিন্ন রকমের চক্রান্তের উসকানি দেবে।’

মানব সভ্যতাবিরোধী সব বর্বরতা নিষিদ্ধ :

মানব সভ্যতা, নৈতিকতাবিরোধী সব অপকর্ম, রক্তপাত, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের আগুন পৃথিবী থেকে চিরতরে নির্বাপিত করার জন্য মহানবী (সা.) ঘোষণা দেন, ‘শুনে রাখো, জাহেলি ও বর্বর যুগের সব প্রথা আজ আমার পায়ের নিচে পদদলিত। জাহেলি যুগের রক্তের দাবিও আজ থেকে রহিত করা হলো

সুদবিহীন অর্থনীতি প্রণয়ন :

পুঁজিবাদী সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট আজকের মানবসমাজ। সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চিরতরে মূলোৎপাটন করে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহানবী (সা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগের সুদব্যবস্থা রহিত করা হলো। এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম আমি আমার চাচা হজরত আব্বাসের সুদ মাফ করে দিলাম, আর সেই সঙ্গে গোটা সুদব্যবস্থা আজ থেকে রহিত করা হলো।’

যার যার প্রাপ্য তাকে দিয়ে দিতে হবে :

প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা মানবতাকে ধ্বংস করছে। অন্যের অধিকার হরণ করে যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনের চিন্তা সমাজের সমস্যাগুলোকে বহু গুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঋণ অবশ্যই আদায় করতে হবে। প্রত্যেকের আমানত (প্রাপ্য অধিকার) তার হকদারের কাছে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।’

অন্যের অর্থ আত্মসাৎ ও জুলুম-নির্যাতন নিষিদ্ধ :

আঁধার-আলো, রৌদ্র-ছায়া, রাত-দিন, সবল-দুর্বল নিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবী। তাই শক্তিমত্তা ও ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে কারো সম্পদ গ্রাস করা ও কারো ওপর নির্যাতনের খৰ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা জুলুম করবে না; সাবধান!! তোমরা জুলুম করবে না, সাবধান!!! তোমরা জুলুম করবে না। আর কোনো মুসলমানের ধন-সম্পত্তি থেকে তার সম্মতি ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়।’

আদর্শিক দ্বন্দ্বে পরমতসহিষ্ণু হতে হবে :

প্রত্যেক জাতি ও ধর্মাবলম্বীর রয়েছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শ। বহুধাবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় বহুদল-উপদল ও নানা মতের মানুষ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংঘাত ও বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সংঘাতের পথ বেছে নিও না। এই বাড়াবাড়ির ফলেই অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।’

শাসক নিকৃষ্টমানের হলেও রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করা যাবে না :

শাসক যদি কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো কাজ না করে, তাহলে রাষ্ট্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া নাগরিকের কর্তব্য- শাসক যতই নিকৃষ্টমানের হোক না কেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো কর্তিত নাশিকাবিশিষ্ট হাবসি ক্রীতদাসকেও (নীচু প্রকৃতির মানুষ) তোমাদের নেতা বা শাসক বানিয়ে দেওয়া হয় এবং সে যদি কোরআন-সুন্নাহ অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তবে অবনত মস্তকে তার আদেশ মেনে চলবে

ভবিষ্যৎ আগত সমস্যার সমাধান :

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর রাসুল (সা.) হলেন শেষ নবী। তাই সমস্যাসংকুল পৃথিবীতে ইসলাম নিত্যনতুন যুগজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে পারে। তারই সমাধানকল্পে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এ দুটো জিনিস আঁকড়ে থাকবে, তত দিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি বস্তু হলো- আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ।’ (তবে সুরা নিসার ৫৭ নম্বর আয়াত মতে, ‘উলুল আমর’ বা রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞ ফকিহদের মতামতও মান্য করতে হবে।)

ধর্মের মর্মবাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে :

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা হলে উত্তম জাতি, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবতার কল্যাণে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, ১১০)
তাই ধর্মের মর্মবাণীগুলো বিশেষত বিদায় হজের ভাষণের বার্তা বিশ্ব মানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ সাহাবি আপন বাসস্থান ত্যাগ করে ছড়িয়ে পড়েছিলেন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। ঘরে ঘরে আজ পেঁৗছে গেছে ইসলামের শান্তির বাণী। 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যারা আজ এখানে উপস্থিত আছ, তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যারা আজ উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার এই আদেশ-উপদেশগুলো পৌঁছে দেওয়া।’ সমস্যায় জর্জরিত ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফিরে যেতে হবে সেই চৌদ্দ শত বছর আগে। জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে বিদায় হজের ভাষণের সুমহান আদর্শে।

প্রতিবেদকের নামঃ ইমন হোসেন
প্রতিবেদন তৈরির সময়ঃ সকাল ১০ টা

এই ছিল তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিদায় হজের ভাষণে উদার ধর্মীয়, মানবতাবাদী চেতনা ও সমাজ সংস্কার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলনের উপায়সমূহের বর্ণনামূলক প্রতিবেদন

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ