সর্বশেষ আপটেড

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা

এসএসসি ২০২২ এর সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য প্রণীত এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এর উত্তরসৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। তোমরা যারা সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত আছো তোমাদের ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছিল। যথাযথ মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে তোমাদের জন্য দশম শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা একটি নমুনা উত্তর দেওয়া হল।

দশম শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য প্রণীত এই উত্তরটি/সমাধানটি (সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন) অনুসরণ করে তোমরা মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

অ্যাসাইনমেন্ট :

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন।

নির্দেশনা:

  • আখিরাতের ধারণা
  • আখিরাতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা
  • আখিরাতে বিশ্বাসীদের করণীয়
  • আখিরাতের বিশ্বাসের প্রভাব

এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি)৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এর উত্তর

তারিখ: ২২ আগস্ট, ২০২১

বরাবর,

প্রধান শিক্ষক,

‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা

বিষয় : সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা।

জনাব,

স্মারক নং-আ.উ.বি/৩৭/২০২১ জনাব, আপনার আদেশক্রমে (স্মারক নং-আ.উ.বি/৩৭/২০২১) সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা বিশ্লেষণ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন আপনার কাছে উপস্থাপন করছি।

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা

আখিরাতের ধারণা :

আখিরাত (আরবি: الآخرة‎‎) একটি ইসলামী শব্দ; যেটির দ্বারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বোঝানো হয়। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী আখিরাত বা পরকালের জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। আখিরাতে মানুষের দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে এবং অতঃপর ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে।

মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়। মানবজীবনের দুটি পর্যায় রয়েছে। ইহকাল ও পরকাল। ইহকাল হলো দুনিয়ার জীবন। আর মৃত্যুর পরে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তার নাম পরকাল বা আখিরাত। আখিরাত অনন্তকালের জীবন। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এটি মানুষের চিরস্থায়ী আবাস। আখিরাতে মানুষের দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। অতঃপর ভালো কাজের পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত এবং মন্দ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে।

আখিরাতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা:

আখিরাত ইমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামি জীবনদর্শনে আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন অপরিহার্য। এ বিশ্বাসের গুরুত্বও অপরিসীম। আখিরাতে বিশ্বাস ছাড়া মুমিন ও মুত্তাকি হওয়া যায় না। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-

“আর তারা (মুত্তাকিগণ) আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪)

তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের পাশাপাশি আখিরাতেও বিশ্বাস করা অত্যাবশ্যক। আখিরাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। পরকালীন জীবনের সফলতা ও জান্নাত লাভ করার জন্যও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আখিরাতে বিশ্বাস না করলে মানুষ সত্যপথ থেকে দূরে সরে যায়, পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“আর কেউ আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ এবং আখিরাত দিবসের প্রতি অবিশ্বাস করলে সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৩৬)

আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং পুণ্য কাজ করতে উৎসাহ যোগায়। কেননা আখিরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তি জানে যে, পরকালে তাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, দুনিয়ার সব কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। ফলে বিশ্বাসী ব্যক্তি দুনিয়াতে সৎকাজে উৎসাহিত হয় এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকে। এভাবে মানুষ অসৎচরিত্র বর্জন করে সৎচরিত্রবান হয়ে ওঠে। অপরদিকে আখিরাতে যে অবিশ্বাস করে সে সুযোগ পেলেই পাপাচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কেননা সে পরকালীন জবাবদিহিতে বিশ্বাসী নয়। এভাবে আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস মানবসমাজে অত্যাচার ও পাপাচার বৃদ্ধি করে। আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ কখনো পাপাচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হতে পারে না।

আখিরাতে বিশ্বাসীদের করণীয়

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন হলাে আখিরাত। আখিরাত হলাে অনন্ত, চিরস্থায়ী জীবন। অন্যদিকেনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। মানবজীবন গঠনের জন্য আখিরাতে বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাদ আছেঃ “দুনিয়া হলাে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।” মানুষ যেমন চাষাবাদ করে, বীজ বপন করে, যেভাবে পরিচর্যা করে; ঠিক সেরূপই ফল লাভ করে। তেমনি দুনিয়াতে ভালাে। কাজ করলে আখিরাতে মানুষ তার পুরস্কার অবশ্যই পাবে।

অতএব আখিরাতে বিশ্বাসীদের করণীয়গুলাে হলােঃ মানুষ যেমন চাষাবাদ করে, বীজ বপন । করে, যেভাবে পরিচর্যা করে; ঠিক সেরূপই ফল লাভ করে। তেমনি দুনিয়াতে ভালাে কাজ করলে আখিরাতে মানুষ তার পুরস্কার অবশ্যই পাবে। অতএব আখিরাতে বিশ্বাসীদের করণীয়গুলাে হলােঃ

  • সবসময় সত্যপথে থাকতে হবে।
  • মিথ্যাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
  • পাপাচার করা যাবে না।
  • অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকতে হবে।
  • পবিত্র জীবন-যাপন করতে হবে।
  • অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।
  • সচ্চরিত্রবান হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • সবসময় ইসলামের পথে থাকতে হবে।
  • সৎ নীতি ও আদর্শ ধারণ করতে হবে।
  • আল্লাহর প্রতি সবসময় বিশ্বাস রাখতে হবে।
  • আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করতে হবে।
  • লােভ-লালসা বর্জন করতে হবে।
  • নৈতিক জীবন বেছে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলেও আল্লাহ্ তা দেখতে পাবে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী যে ব্যক্তি ইমান আনে, সৎকর্ম করে সে আখিরাতে শান্তিময় জীবন লাভ করবে।

আখেরাতের বিশ্বাস এর প্রভাব

আখিরাতে বিশ্বাস মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানবজীবনকে কলুষমুক্ত, পবিত্র ও সুন্দর করে তোলে। সুতরাং পরকালের সফলতা অর্জনের জন্য মানুষের আখেরাতের বিশ্বাস এর প্রভাব অনেক। নিচে আখিরাতের জীবনের কয়েকটি স্তরের বর্ণনা দেওয়া হলো:

ক. মৃত্যু :

আখিরাত বা পরকালীন জীবনের শুরু হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। সুতরাং মৃত্যু হলো পরকালের প্রবেশদ্বার। আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি বলেন –

প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ”(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)

দুনিয়ার কোনো প্রাণীই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, সুস্থ-অসুস্থ, শাসক শাসিত কেউই মৃত্যুকে এড়াতে পারবে না। যত বড় ক্ষমতাধারীই হোক আর যত সুরক্ষিত স্থানে বসবাস করুক সবার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু হবেই। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীরও মৃত্যু অনিবার্য। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন—

“তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৭৮)

মৃত্যুর সাথে সাথে আখিরাতের জীবন শুরু হয়। পুণ্যবান মানুষের মৃত্যু হয় আল্লাহ তায়ালার রহমতের সাথে। আর পাপীদের মৃত্যু খুব কষ্টকর হয়।

খ. কবর :

মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়কে কবরের জীবন বলা হয়। এর অপর নাম বারযাখ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“আর তাদের সামনে বারযাখ থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।” (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১০০)

দুনিয়াতে মানুষকে মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হয়। এসময় মুনকার-নাকির নামক দুজন ফেরেশতা কবরে আসেন। তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করেন। এগুলো হলো :
১. তোমার রব কে?
২. তোমার দ্বীন কী?
৩. তোমার নবি কে? অথবা, (রাসুল (স.) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়) এই ব্যক্তি কে?

যাদের কবর দেওয়া হয় না তাদেরও এ প্রশ্ন করা হবে। দুনিয়াতে যারা ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনা করবে তারা এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তাদের জন্য কবরের জীবন হবে শান্তিময়। আর যারা ইসলাম অনুসরণ করবে না তারা এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। তারা বলবে ‘আফসোস। আমি জানি না।’ কবরের জীবনে তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।

গ. কিয়ামত :

আকাইদ শাস্ত্রে কিয়ামত বলতে দুটি অবস্থাকে বোঝানো হয়। প্রথমত: কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়। আল্লাহ তায়ালা এ গোটা বিশ্ব মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন গোটা বিশ্বে মহান আল্লাহর ইবাদত করার মতো কেউ থাকবে না। এমনকি আল্লাহ নাম নেওয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যাবে না। সকল মানুষ গোমরাহি ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়বে। সেসময় আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী ধ্বংস করে দেবেন। তাঁর নির্দেশে হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে চন্দ্র-সূর্য ও তারকারাজি খসে পড়বে, পাহাড় পর্বত তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে, ভূগর্ভস্থ সবকিছু বের হয়ে যাবে, সকল প্রাণী মৃত্যু বরণ করবে এবং গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সময় শুধু আল্লাহ তায়ালা থাকবেন। আর কেউ বিদ্যমান থাকবে না। পৃথিবী ধ্বংসের এ মহাপ্রলয়ের নাম কিয়ামত।

দ্বিতীয়ত: কিয়ামতের অন্য অর্থ দাঁড়ানো। পৃথিবী ধ্বংসের বহুদিন পর আল্লাহ্ তায়ালা আবার সকল জীব ও প্রাণীকে জীবিত করবেন। আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফিল (আ.) পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। তখন মানুষ পুনরায় জীবিত হয়ে কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে হিসাব নিকাশের জন্য সমবেত হবে। ঐ সময়ে কবর থেকে উঠে দাঁড়ানোকে বলা হয় কিয়ামত। একে ‘ইয়াওমুল’ বা ‘আছ’ বা পুনরুত্থান দিবসও বলা হয়। কিয়ামতের এ উভয়বিধ অবস্থা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে যাদের আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখনই তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে।” (সূরা আয্-যুমার, আয়াত ৬৮)

ঘ. হাশর :

হাশর হলো মহাসমাবেশ। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সকল মানুষ ও প্রাণীকুল মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবে। সকলেই সেদিন একজন আহবানকারী ফেরেশতার হাশরের ময়দানে সমবেত ময়দান বিশাল ও সুবিন্যস্ত। পৃথিবীর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষই সেদিন একত্রিত হবে। মানুষের এ মহাসমাবেশকেই হাশর বলা হয়। হাশরের ময়দান হলো হিসাব নিকাশের দিন, জবাবদিহির দিন। এদিন আল্লাহ তায়ালা হবেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“তিনি (আল্লাহ) বিচার দিবসের মালিক।” (সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত ৩)

সেদিন সকল মানুষের সমস্ত কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। হাশরের ময়দানে মানুষের আমলনামা দেওয়া হবে। যাঁরা পুণ্যবান তারা ডান হাতে আমলনামা লাভ করবেন। আর পাপীরা বাম হাতে আমলনামা পাবে।

হাশরের ময়দান ভীষণ কষ্টের স্থান। সেদিন সূর্য মাথার উপর একেবারে নিকটে থাকবে। মানুষ প্রচণ্ড তাপে ঘামতে থাকবে। সেদিন আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। সাত শ্রেণির লোক সেদিন আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। এদের মধ্যে একশ্রেণি হলো সেসব ব্যক্তি যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদত করেছে।

হাশরের ময়দানে পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। একমাত্র হাউজে কাউছারের পানি থাকবে। আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) সেদিন তাঁর খাঁটি উম্মতগণকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন। পাপীরা সেদিন তৃষ্ণায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করবে। বস্তুত পুণ্যবানগণ হাশরের ময়দানে নানাবিধ সুবিধাজনক স্থান লাভে ধন্য হবেন। পক্ষান্তরে পাপীরা হাশরের ময়দানেই কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।

ঙ. মিযান :

মিযান অর্থ পরিমাপক যন্ত্র বা দাঁড়িপাল্লা। হাশরের ময়দানে মানুষের আমলসমূহ ওজন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে পাল্লা প্রতিষ্ঠা করবেন তাকে মিযান বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন –

আর আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)

মিযানের পাল্লায় মানুষের পাপ পুণ্য ওজন করা হবে। যার পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার পাপের পাল্লা ভারী হবে সে হবে জাহান্নামি।

চ. সিরাত :

সিরাত এর শাব্দিক অর্থ পথ, রাস্তা, পুল, সেতু ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের ভাষায় সিরাত হলো হাশরের ময়দান হতে জান্নাত পর্যন্ত জাহান্নামের উপর দিয়ে চলমান একটি উড়াল সেতু। (তিরমিযি)

এ সেতু পার হয়ে নেক আমলকারী বান্দা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আখিরাতে সকল মানুষকেই এ সেতুতে আরোহণ করে তা অতিক্রম করতে হবে। সিরাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

“এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে, এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।” (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৭১)

এ সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন,

“জাহান্নামের উপর সিরাত স্থাপিত হবে।” (মুসনাদে আহমাদ)

নেক আমলকারী বান্দাগণকে মহান আল্লাহ জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেবেন। জান্নাতিগণ সিরাতের উপর দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। নেককারদের জন্য তাঁদের আমল অনুসারে সিরাত প্রশস্ত হবে। ইমানদারগণ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী সিরাত অতিক্রম করবেন। কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ ঝড়ের গতিতে, কেউ ঘোড়ার গতিতে, কেউবা দৌড়ের গতিতে, কেউ হেঁটে হেঁটে আবার কেউ কেউ হামাগুড়ি দিয়ে সিরাত পার হবেন।

সিরাত হলো অন্ধকার পুল। সেখানে মুমিন ও নেক আমলকারী ব্যক্তির জন্য আলোর ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু যারা ইমানদার নয় এবং পাপী তাদের জন্য কোনো আলোর ব্যবস্থা থাকবে না। সুতরাং দুনিয়ায় যে দৃঢ় ইমান ও বেশি নেক আমলের অধিকারী সিরাত তাঁর জন্য সবচেয়ে বেশি আলোকিত হবে। ইমানের আলোতে সে সহজেই সিরাত অতিক্রম করবে।

অন্যদিকে যারা ইমানদার নয় এবং পাপী মহান আল্লাহ তাদের জাহান্নামে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। জাহান্নামিদের জন্য সিরাত অত্যন্ত ভয়াবহ স্থান। তাদের জন্য সিরাত হবে চুলের চাইতেও সূক্ষ্ম এবং তরবারি অপেক্ষা ধারালো। এ অবস্থায় সিরাতে আরোহণ করে তারা কিছুতেই তা অতিক্রম করতে পারবে না। বরং তারা করুণভাবে জাহান্নামে পতিত হবে।

ছ. শাফাআত :

শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের সকল কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। তখন মহান আল্লাহ পুণ্যবানগণকে জান্নাতে ও পাপীদের জাহান্নামে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এ সময় আল্লাহর দরবারে শাফাআত করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হবে। এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আবার অনেক পুণ্যবানের জন্যও এদিন শাফাআত করা হবে। ফলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা

কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত করা হবে। সেদিন সূর্য খুব নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে। এ সময় তারা হযরত আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.) এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফাআত করতে অনুরোধ করবে। তাঁরা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবেন। এ অবস্থায় সকল মানুষ মহানবি (স.)-এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন।

অন্যদিকে কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হবে। নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলেম, হাফিয এ শাফাআতের সুযোগ পাবেন। আল-কুরআন ও সিয়াম (রোযা) কিয়ামতের দিন শাফাআত করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিয়ামতের দিন নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা এসব শাফাআত কবুল করবেন এবং বহু মানুষকে জান্নাত দান করবেন। তবে শাফাআতের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকবে আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর অধিকারে। তিনি নিজেই বলেছেন-

আমাকে শাফাআত করার অধিকার) দেওয়া হয়েছে।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন-

পৃথিবীতে যত ইট ও পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি লোকের জন্য কিয়ামতের দিন শাফাআত করব।” (মুসনাদে আহমাদ)

শাফাআত একটি বিরাট নিয়ামত। মহানবি (স.)-এর শাফাআত ব্যতীত কিয়ামতের দিন সফলতা, কল্যাণ ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না।

জ. জান্নাত :

জান্নাত অর্থ উদ্যান, বাগান, সুশোভিত কানন ইসলামি পরিভাষায় পরকালীন জীবনে পুণ্যবানগণের জন্য পুরস্কার স্বরূপ যে আরামদায়ক স্থান তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে বলা হয় জান্নাত।

জান্নাতে সবধরনের নিয়ামত বিদ্যমান। মুমিনগণ সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। তাঁরা সেখানে তাঁদের পুণ্যবান মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হবেন। তাঁরা যা চাইবেন তাই সাথে সাথে লাভ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।” (সূরা হা-মিম আস-সাজদা, আয়াত ৩১-৩২)

বস্তুত জান্নাতের সুখ-শাস্তি ও নিয়ামত অফুরন্ত। এর বর্ণনা শেষ করা যায় না। একটি হাদিসে কুদসিতে স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,

“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোেখ দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন তা শুনেনি এবং কোনো মানব হৃদয় কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।” (সহিহ বুখারি)

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য আটটি জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো হলো- (১) জান্নাতুল ফিরদাউস; (২) দারুল মাকাম, (৩) দারুল কারার, (৪) দারুস্সালাম, (৫) জান্নাতুল মাওয়া, (৬) জান্নাতুল আদন, (৭) দারুন নাইম ও (৮) দারুল খুলদ।

জান্নাত চরম সুখের আবাস। দুনিয়াতে যারা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে চলবে তারা পরকালে জান্নাত লাভ করবে। সকল কাজকর্মে আল্লাহ তায়ালার আদেশ ও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করলে জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)

ঝ. জাহান্নাম :

জাহান্নাম হলো শাস্তির স্থান। পরকালে মুমিনগণের জন্য যেমন জান্নাতের ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি পাপীদের জন্য রয়েছে শাস্তির স্থান। আর জাহান্নামই হলো সে শান্তির জায়গা। জাহান্নামকে (নার) বা আগুনও বলা হয়।

জাহান্নাম চির শাস্তির স্থান। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের পাপের পরিমাণ অনুসারে শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। জাহান্নামের আগুন অত্যন্ত উত্তপ্ত। রাসুলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন

“তোমাদের এ পৃথিবীর আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র।” (সহিহ বুখারি)

এ আগুনে মানুষের হাড়, চামড়া, গোশত সবকিছুই পুড়ে যাবে। কিন্তু তাতে তার মৃত্যু হবে না। বরং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পুনরায় তার দেহ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পুনরায় তা পুড়ে দগ্ধ হবে।
এভাবে পুনঃপুনঃ চলতে থাকবে।

জাহান্নাম বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছুর আবাসস্থল। সেখানকার খাদ্য হলো বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ হবে জাহান্নামিদের পানীয়। মোটকথা জাহান্নাম অতি যন্ত্রণাদায়ক স্থান। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা কুফরি করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, ফলে তাতে তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত হয়ে যাবে, আর তাদের জন্য থাকবে লৌহমুদ্র। যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর তাদের বলা হবে, আস্বাদন কর দহন-যন্ত্রণা।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ১৯-২২)

পাপীদের শাস্তি দানের জন্য আল্লাহ তায়ালা ৭টি দোযখ তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো হলো- (১) জাহান্নাম, (২) হাবিয়া, (৩) জাহিম, (৪) সাকার, (৫) সাইর, (৬) হুতামাহ এবং (৭) লাযা। জাহান্নাম হলো ভীষণ শাস্তির স্থান। কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকরা তথায় চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।

সৎকর্মশীল ও নৈতিকজীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা:

আখিরাত হলো পরকাল। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়। আখিরাত হলো মানুষের অনন্ত জীবন। এটি চিরস্থায়ী। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। বস্তুত দুনিয়ার জীবন হলো আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্র। বলা হয়েছে -“দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।” (প্রবাদ)

মানুষ শস্যক্ষেত্রে যেরূপ চাষাবাদ করে, বীজ বপন করে, যেভাবে পরিচর্যা করে; ঠিক সেরূপই ফল লাভ করে। যদি কোনো ব্যক্তি তার শস্যক্ষেত্রের পরিচর্যা না করে তবে সে ভালো ফসল লাভ করে না। তদ্রূপ দুনিয়ার কাজকর্মের প্রতিদান আখিরাতে দেওয়া হবে। দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে আখিরাতে মানুষ পুরস্কৃত হবে। আর মন্দ কাজ করলে শাস্তি ভোগ করবে।

কবর, হাশর, মিযান, সিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি আখিরাত জীবনের এক একটি পর্যায়। ইসলামি বিশ্বাস মোতাবেক, যে ব্যক্তি ইমান আনে, সৎকর্ম করে সে আখিরাতে শান্তিময় জীবন লাভ করবে। কবর থেকে শুরু করে আখিরাতের প্রতিটি পর্যায়ে সে সুখ, শান্তি ও সফলতা লাভ করবে। অন্যদিকে দুনিয়াতে যে ব্যক্তি অবাধ্য হবে, পাপাচার করবে সে আখিরাতের সকল পর্যায়ে কষ্ট ভোগ করবে। তার স্থান হবে জাহান্নাম।

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা

মানবজীবন গঠনের জন্য আখিরাতে বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে জীবন পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করতে বাধ্য করে। যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে সে প্রত্যহ তার প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেই নিয়ে থাকে। এভাবে দৈনন্দিন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ তার ভুল-ত্রুটি শোধরিয়ে নিয়ে সৎচরিত্রবান হিসেবে গড়ে ওঠে।

আখিরাতে পুণ্যবানকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হবে। জান্নাত হলো চিরশাস্তির স্থান। জান্নাত লাভের আশা মানুষকে দুনিয়ার জীবনে সৎকর্মশীল করে তোলে। মানুষ জান্নাত ও তার নিয়ামত প্রাপ্তির আশায় নেক আমল করে, ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হয়। কেননা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সৎকর্ম ব্যতীত জান্নাত লাভ করা যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। এটাই মহাসাফল্য।” (সূরা আল-বুরূজ, আয়াত ১১)

এভাবে পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভের আশা মানুষকে সৎকর্মশীল হতে সাহায্য করে। জাহান্নাম অতি কষ্টের স্থান। এতে রয়েছে সাপ, বিচ্ছু ও আগুনের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। দুনিয়ার জীবনের পাপী, অবাধ্য ও মন্দ আচরণের লোকদের পরকালে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৩৭-৩৯)

জাহান্নামের শাস্তির ভয়ও মানুষকে অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার আদেশ না মানা, পার্থিব লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে অন্যায় অনৈতিক কাজ করা ইত্যাদি জাহান্নামিদের কাজ। সুতরাং জাহান্নামের ভয়ে মানুষ এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করে।

সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা

আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে বড় বড় অন্যায় এবং অনৈতিক কাজের পাশাপাশি ছোট ছোট পাপ ও অসৎ কাজ থেকেও বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন

কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখবে।” (সূরা আল-যিলযাল, আয়াত ৭-৮)

আল্লাহ তায়ালা পরকালে মানুষের সামান্যতম ভালো বা মন্দ কাজ সবই প্রদর্শন করবেন। অতঃপর এগুলোর পুরস্কার বা শাস্তি দেওয়া হবে।

সুতরাং, আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত রাখে এবং পাপমুক্ত, সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রতিবেদকের নাম : খাদিজাতুল স্বর্ণা
প্রতিবেদনের ধরন : প্রাতিষ্ঠানিক
প্রতিবেদনের শিরোনাম : সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা।
প্রতিবেদন তৈরির স্থান : ‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
তারিখ : ২২.০৮.২০২১ ইং

এটিই ছিল তোমাদের এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এর উত্তরসৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাস এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

এখানে দেশের সকল প্রান্তের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান করছেন। 

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ