গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ
২০২২ সালের দ্বাদশ শ্রেণির সুপ্রিয় এইচএসসি শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সকলে সুস্থ আছো। চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য ৯ম সপ্তাহের রসায়ন অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে- গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করবো। অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম : গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ।
এইচএসসি ২০২২ সালের ৯ম সপ্তাহের রসায়ন ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্টঃ গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ।
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
- ১। গ্যাসের সূত্রসমূহ সমন্বয় করা।
- ২। বাস্তব গ্যাসসমূহের আদর্শ আচরণ করার শর্ত বর্ণনা করা।
- ৩। গ্যাস মিশ্রণের চাপ ও মােল ভগ্নাংশের সম্পর্ক নির্ণয় করা।
- ৪। গ্যাস মিশনের দুটি উপাদান গ্যাসের অণুসমূহের ভরের ভিন্নতার কারণে ব্যাপন হারের পার্থক্যের গাণিতিক ব্যাখ্যা করা।
এইচএসসি ২০২২ সালের ৯ম সপ্তাহের রসায়ন ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা নমুনা সমাধান/ উত্তর
গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ
গ্যাসের সূত্রসমূহ সমন্বয়
চাপ ও উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তনের সূত্রগুলিকে গ্যাসের সুত্র বলে । বয়েলের সূত্র [Boyle’s Law] :- উষ্ণতা স্থির থাকলে, নির্দিষ্ট ভরের যে কোনো গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের চাপের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয় ।
বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপ :
নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন যদি V হয় এবং এর চাপ P হয়, তাহলে বয়েলের সূত্রানুযায়ী V∝1/Pযদি উষ্ণতা স্থির থাকে । অথবা, PV = ধ্রুবক । স্থির উষ্ণতায় কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ যদি P1, P2, P3 ইত্যাদি হয় এবং আয়তন যথাক্রমে V1, V2, V3 ইত্যাদি হয়, তাহলে বয়েলের সূত্রানুযায়ী P1V1 = P2V2 = P3V3 = K (ধ্রুবক).
চার্লসের সূত্র [Charles’ Law’s]:-
চাপ স্থির থাকলে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য ওই গ্যাসের 0oC উষ্ণতায় যে আয়তন হয়, তার 12731273 অংশ যথাক্রমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় । 12731273 ভগ্নাংশটিকে স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।
বাস্তব গ্যাস সমূহের আদর্শ গ্যাসের মত আচরণের শর্ত :
যেসকল গ্যাস আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ pv=nRT মেনে চলে না তাদেরকে বাস্তব গ্যাস বলে। মূলত বাস্তবে প্রাপ্ত সকল গ্যাস বাস্তব গ্যাস। নিম্নলিখিত দুটি ত্রুটির কারণে বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করে না :
১.আয়তন জনিত ত্রুটি :
গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্য অনুসারে কোন সমূহের নিজস্ব আয়তন এদের দ্বারা দখলকৃত আয়তক্ষেত্রের আয়তনের তুলনায় নগণ্য। নিম্নচাপে এবং উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাসের আচরণ সম্পর্কিত এই ধারণাটি সঠিক। তবে এর বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ উচ্চচাপের ও তাপমাত্রার অনুসারে আয়তন মোটেও নগণ্য নয় এই ত্রুটি থাকলে বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে না। কাজেই এই ত্রুটি সংশোধন প্রয়োজন। যদি n অনুর প্রত্যেকে নিজস্ব আয়তন b হয় তবে দখলকৃত আয়তন হবে = পাত্রের আয়তন কণাসমূহের নিজস্ব আয়তন। অর্থাৎ, কার্যকর আয়তন v =nb।
২.চাপ জনিত ত্রুটি :
আদর্শ গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্য অনুযায়ী গ্যাস মধ্যে আকর্ষণ বল নেই। অতি উচ্চ তাপমাত্রায় এবং নিম্নচাপে আকর্ষণ বল অনুপস্থিত মনে হলেও নিম্ন তাপমাত্রা উচ্চচাপে কণাগুলো যখন পরস্পর এর কাছাকাছি অবস্থান করে তখন আকর্ষণ বলের উপস্থিতি বুঝা যায়। আকর্ষণ থাকার কারণে একটি নির্দিষ্ট চাপে গ্যাস কে তরলে পরিণত করা যায় এই ত্রুটি বজায় থাকে বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করবে না। n সংখ্যক গ্যাস অনু v লিটার আয়তন একটি পাত্র বিদ্যমান রয়েছে এবং উক্ত অবস্থায় গ্যাসটির চাপ p গ্যাসের অণুগুলোর আকর্ষণ বল & n2/v2
গ্যাসের তাপমাত্রা যত বেশি হয় এবং চাপ যত কম হয়, গ্যাসের আয়তন তত বেশি হয়। গ্যাসের আয়তন যত বেশি হয় তার তুলনায় গ্যাস অণুসমুহের আয়তন তত কম হয়। সুতরাং গ্যাসের গতিতত্ত্বের প্রথম ভুল দূর হয়। আবার গ্যাসের আয়তন যত বেশি হয়, অণুসমূহের মধ্যকার গড় দূরত্ব তত বেশি হয় । ফলে তাদের মধ্যে গড় আকর্ষণ তত কম হয়। সুতরাং গ্যাসের গতিতত্ত্বের দ্বিতীয় ভুল ও দূর হয়। এ কারণেই যত বেশি তাপমাত্রা এবং কম চাপ ব্যবহৃত হয় ততই বাস্তব গ্যাসের আচরণ আদর্শ গ্যাসের মত হয়।
গ্যাস মিশ্রণের চাপ ও মােল ভগ্নাংশের সম্পর্ক
মনে করি V আয়তনবিশিষ্ট পাত্রে পরস্পর বিক্রিয়াবিহীন তিনটি গ্যাসের যথাক্রমে n1, n2, n3 মোল আছে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা T তবে ঐ সব গ্যাসের আংশিক চাপ যথাক্রমে P1, P2, P3 হয়। আবার গ্যাস মিশ্রণের মোট চাপ Pm এবং মিশ্রণে গ্যাসসমূহের মোট মোলসংখ্যা, (n1+n2+n3)=n হলে, তখন আদর্শ গ্যাস সমীকরণ হতে পাই,
প্রথম গ্যাসের জন্য, P1V=n1RT—–(i)
দ্বিতীয় গ্যাসের জন্য, P2V=n2RT—-(ii)
তৃতীয় গ্যাসের জন্য, P3V=n3RT—-(iii)
গ্যাসমিশ্রণের জন্য, PmV=nRT—-(iv)
সমিকরণ (i) কে সমীকরণ (iv) দ্বারা ভাগ করলে পাওয়া যায়,
P1/Pm = n1/n——(v)
or, P1 = (n1/n) Pm
অনুরূপভাবে,
P2 = (n2/n) ×Pm এবং
P3 = (n3/n) × Pm
আবার কোন মিশ্রণে একটি উপাদানের সংখ্যাকে উক্ত মিশ্রণের সব উপাদান এর মৌলিক সংখ্যার যোগফল দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে সে উপাদানের মোল ভগ্নাংশ বলা হয়। সুতরাং প্রথম গ্যাসের মোল ভগ্নাংশ –
n1/(n1+n2+n3+….)
n1/n
অনুরূপভাবে দ্বিতীয় গ্যাস উপাদানের মোল ভগ্নাংশ-
n2/n
এখন সমীকরণ (v) হতে পাওয়া যাচ্ছে-
P= মোল ভগ্নাংশ × মোট চাপ (Pm)
অর্থাৎ, গ্যাস মিশ্রণের কোন উপাদানের আংশিক চাপ= সে উপাদানের মোল ভগ্নাংশ × মিশ্রণের মোট চাপ।
অথবা,
তরল বা বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অধিক ঘনত্বের অঞ্চল থেকে কম ঘনত্বের অঞ্চলে যাওয়াকে ব্যাপন বলে। কঠিন পদার্থের ব্যাপন ঘটে না। এছাড়াও ‘স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় তাপ ও চাপে কোনো বস্তুর ,তরল কিংবা বায়বীয় মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে ব্যাপন (Diffusion) বলে। যেমন – ঘরের এক কোণে সেন্টের বোতল খোলা মুখে রাখলে তার থেকে সেন্টের সুগন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, এটি হলো গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন। আবার তরল পানিতে কয়েক ফোটা তরল নীল বা তুঁতের দ্রবণ মেশানো হলে তা কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো পানিকে নীল বর্ণে পরিণত করে, এটিও ব্যাপনের উদাহরণ তবে তরল পদার্থের ৷
আর চিনির দ্রবণ হলো কঠিন পদার্থের ব্যাপন (যেহেতু চিনি কঠিন পদার্থ) সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুর সম্মিলনে গঠিত।
এইসব অণুসমূহ সর্বদা গতিশীল অবস্থায় বিরাজমান। তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের চলন অত্যন্ত দ্রুত এবং ক্রমান্বয়ে অণুসমূহ বেশি ঘনত্বের স্থান হতে কম ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অণুগুলোর চলন ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হয় না যতক্ষণ না উভয় পদার্থের অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হয়। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই ব্যাপন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কোন দুইটি স্থানে তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও অণুর ঘনত্ব সমান থাকলে সেখানে ব্যাপন ঘটবে না কারণ সেখানে গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে না। পক্ষান্তরে, যদি তাপ ও চাপগত পার্থক্য নাও থাকে তবুও শুধুমাত্র ঘনত্বের ভিন্নতার ভিত্তিতে ব্যাপন হবে কারণ গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে। আর কোনো বস্তুর অধিক ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার হারকে ব্যাপনের হার বা ব্যাপন হার (The rate of Diffusion) বলে ৷
এটিই তোমাদের এইচএসসি ২০২২ সালের ৯ম সপ্তাহের রসায়ন অ্যাসাইনমেন্ট- গ্যাস সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ।
আপনার জন্য আরও কিছু তথ্যঃ
- এইচএসসি ২০২২ এ্যাসাইনমেন্ট বা দ্বাদশ শ্রেণি ২০২১ নির্ধারিত কাজ পিডিএফ
- ২০২২ এসএসসি ৮ম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট ও সমাধান (১০ম শ্রেণি ২০২১)
- এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ২য় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট
- ২০২২ সালের এইচএসসি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশিত
- ৬ষ্ঠ শ্রেণি ৯ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট বাংলা ও বিজ্ঞান
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।