একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি তোমরা খুবই ভালো আছো। তোমরা কি ৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছো? কিংবা এসাইনমেন্টটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে বলবো তোমরা ঠিক ওয়েবসাইটে এসেছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে ৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান- একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা।
মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৯তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের নিকট জমা দিবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরা মূল্যায়ন করে যথাযথ নিয়মে সংরক্ষণ করবেন। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে ৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান।
৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ:
যৌক্তিকতা নিরুপন
মনে কর তোমার মা/বাবা সম্প্রতি স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন। তোমার মা/বাবার লক্ষ্য হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা। উক্ত লক্ষ্য অর্জনে তিনি কীভাবে সফল হতে পারেন নিচের বিষয়বস্তুর আলোকে তার যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।
সংকেত:
- সদাচরণ
- পরোপকার
- শালীনতার অপরিহার্যতা
- আমানতের বাস্তবায়ন
- শ্রম ও শ্রমিকের মূল্যায়ন
একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা
আপনি যদি এই অ্যাসাইনমেন্টে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই খুব সুন্দর ভাবে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে হবে এবং আপনার অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর অবশ্যই সঠিক হতে হবে। অতএব, আমি আপনাকে বলছি যে সঠিক নির্ভুলতা যাচাই করার পরে আমরা আপনার কাঙ্খিত উত্তর এখানে প্রকাশ করেছি।
উত্তর দেখুন-
সম্প্রতি আমার বাবা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তার লক্ষ্য হচ্ছে, একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। এই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে তিনি যে কাজগুলাে করতে পারেন তা নিচে আলােচনা করা হলােঃ
সদাচরণ
ইসলাম সদাচরণের ওপর জোর তাগিদ দিয়েছে। আর মানুষের সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বড় পাওনাদার হলেন আপন পিতা-মাতা।এরপর স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন এমনকি আল্লাহতায়ালার সব সৃষ্টিই সদাচরণ পাওয়ার দাবিদার।
পিতা-মাতার সাথে সন্তানের আচরণ এবং সন্তানের সাথে পিতা-মাতার আচরণ, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আচরণ, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, অধীন চাকর-চাকরানী, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে মানুষের সাথে আচার-আচরণের ব্যাপারে ইসলাম নিরপেক্ষ নয়। ইসলাম মানুষের সাথে ব্যবহার কেমন হবে তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা উভয়ই বা কোনো একজন বার্ধক্যে উপনীত হলে উহ্ শব্দটি উচ্চারণ করো না। ’
সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার খেদমতের সুযোগ পাওয়া বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। সহজ জান্নাতপ্রাপ্তির গ্যারান্টি। পিতা-মাতার জন্য দোয়া করার ভাষাও আল্লাহতায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন এবং সেখানে শৈশবে পিতা-মাতা সন্তানকে যে স্নেহ-যত্ন ও আদর দিয়ে লালন-পালন করেছেন, সেটা স্মরণ করেই আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করতে বলেছেন।
পিতা-মাতা ছাড়াও সব মানুষের সাথে সদাচরণের বিষয়ে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। মনে রাখতে হবে, ইসলাম মনে করে, শুধু মানুষ নয়- সব সৃষ্টিই ভালো আচরণ পাওয়ার দাবি রাখে। অপ্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াও পছন্দনীয় নয় ইসলামে। তাই তো ইসলাম ভারবাহী পশুকে অতিরিক্ত বোঝা দেয়া অপরাধ বলে গণ্য করেছে।
কোনো পশু-পাখিকে আটকে রেখে ক্ষুধায় কষ্ট দেয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ। দেখুন, পশু-পাখির সাথে আচরণ যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহর প্রতিনিধিদের সাথে কেমন আচরণ ইসলাম দাবি করতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়। ইসলাম মনে করে, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার তো স্বয়ং আল্লাহর সাথেই দুর্ব্যবহার। এ বিষয়ে আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে যারা রয়েছে তাদের সঙ্গে সদাচরণ করো তাহলে আসমানে যিনি রয়েছেন তিনিও তোমাদের সঙ্গে সদাচরণ করবেন। ’
পরোপকার
মানবজাতি পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জাতি। বিবেক বুদ্ধি ও অনুভুতির বিবেচনায় মানুষের পর্যায়ে পৃথিবীতে আর কোন মাখলুক নেই। মানুষ সংঘবদ্ধ ও সামাজিক জীব। মানুষের মধ্যে সে সকল মানুষই শ্রেষ্ঠ যারা সকল মানবীয় গুণে গুনান্বিত। পরোপকার মানবীয় মহৎ গুণ। সমাজ জীবনে একজন মানুষ অপর মানুষের সাথে চাল চলনে, কথা বার্তায়, লেনদেনে নিয়োজিত হতে হয়। মানুষ সমাজ জীবনে পরষ্পরের সুখে দুঃখে পরস্পর সহযোগী। বিপদে একজন অপরজনকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। মানুষের সাথে মানুষের এ সহযোগীতামুলক কাজকে পরোপকার বলা হয়। একটি আদর্শ সমাজ, আদর্শ রাষ্ট্র গড়তে হলে সকলকে পরোপকারের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। পরোপকারে নিজেকে শামিল করতে হবে।
পরোপকার বিষয়ে পবিত্র কোরআন :
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও শান্তির ধর্ম ইসলাম তার সকল অনুসারীকে পরোপকার করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের (পরোপকারের) জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা আলে-ইমরান: আয়াত: ১১০)।
পবিত্র কুরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহপাক পরোপকার সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘ এবং সালাত কায়েম করো আর যাকাত পরিশোধ করো। তোমাদের নিজেদের (আখিরাতের) জন্যে যে কোনো ভালো কাজই অগ্রিম পাঠাবে, তা অবশ্যি ওখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যে আমলই করোনা কেন, অবশ্যি তা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। (সুরা আল বাকারা: আয়াত: ১১০)।
তিনি আরো বলেন, ‘ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে – শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (সুরা আল বাকারা: আয়াত: ১৭৭)। তিনি আরো বলেন, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (সুরা হাদিদ: আয়াত: ১১)।
শালীনতার অপরিহার্যতা
শালীনতা অর্থ মার্জিত, সুন্দর, শোভন, সভ্য ইত্যাদি। কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও চলাফেরায় ভদ্র, সভ্য ও মার্জিত হওয়াকে শালীনতা বলে। শালীনতার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। যা বহু নৈতিক গুণের সমষ্টি। ভদ্রতা, নম্রতা, সৌন্দর্য, সুরুচি, লজ্জাশীলতা ইত্যাদি গুণাবলীর সমন্বিত রূপের মাধ্যমে শালীনতা প্রকাশ পায়। শালীনতার বিপরীত হলো অশ্লীলতা। গর্ব, অহংকার, ঔদ্ধত্য, কুরুচি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি শালীনতাবিরোধী অভ্যাস। ইসলাম সৌন্দর্যের ধর্ম। ইসলাম সব মানুষকে সুন্দর, সুরুচিপূর্ণ শালীন জীবনযাপনে উৎসাহিত করে।
বিকশিত মানুষ গড়ে তোলা ইসলামের মূল শিক্ষা। তাই শালীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কথা বলা যায় যে, শালীনতাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। যেসব কাজ শালীনতাবিরোধী ইসলাম সেসব কাজ নিষিদ্ধ করেছে।
কেননা, অশ্লীল ও অশালীন কাজকর্ম মানবিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ বিনষ্ট করে দেয়। মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্বের অভ্যাস গ্রহণ করে। যার কারণে সমাজে অনাচার, ব্যভিচার, অশ্লীলতা, ইভ টিজিংয়ের মতো অশালীন কাজ প্রকাশ পায়। যা সমাজ ধ্বংসের কারণ। মহান আল্লাহতায়ালা শালীনতার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘আর তোমরা (নারীরা) নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা আল আহযাব : ৩৩)
শালীনতা অর্জনের জন্য লজ্জাশীলতা পরিপূরক বিষয়। লজ্জাশীলতা মানুষকে শালীন হতে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়। (মুসলিম) অন্য এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন- লজ্জাশীলতা ইমানের একটি শাখা। (নাসাই)রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেন, অশ্লীলতা যে কোনো জিনিসকে খারাপ করে। লজ্জাশীলতা যে কোনো জিনিসকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। (তিরমিজি)
সুতরাং চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তা, আচার-আচরণে লজ্জাশীল হওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত শালীনতা বজায় রেখে চলা। অশালীন কাজ পরিত্যাগ করা। মহান আল্লাহ আমাদের শালীন ও মার্জিত জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আমানতের বাস্তবায়ন
আমানত আরবি শব্দ। এর অর্থ বিশ্বস্ততা, নিরাপত্তা, গচ্ছিত রাখা, জমা রাখা ইত্যাদি। এর বিপরীত শব্দ খিয়ানত, যার অর্থ বিশ্বাসঘাতকতা। যিনি গচ্ছিত বস্তু যথাযথভাবে হিফাজত করেন এবং প্রকৃত মালিক চাওয়া মাত্র তা ফেরত দেন তাকে আমিন বা বিশ্বস্ত বলা হয়।
আমানতের বিষয়বস্তু :
আমানত শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিষয়বস্তু ব্যাপক। ব্যবসায়-বাণিজ্য, চাকরি, সরকারি-বেসরকারি দাফতরিক কাজকর্ম, শিক্ষকতা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ব, মজুরি ইত্যাদি সবই আমানতের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ মানুষের সুস্থ বিবেক, হাত-পা, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ঠোঁট ইত্যাদি প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যক্তির কাছে আমানতস্বরূপ।
এগুলোর ব্যবহার প্রসঙ্গে বিচার দিবসে জিজ্ঞেস করা হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘চোখের খিয়ানত এবং অন্তর যা গোপন রাখে তা তিনি (আল্লাহ) জানেন’ (সূরা আল মুমিন : ১৯)। তদ্রুপ শরিয়তের ফরজ কাজ, সতীত্বের হিফাজত, অপবিত্রতার গোসল, নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ ইত্যাদি আমানত। এ কারণে বেশির ভাগ মনীষী বলেন, দ্বীনের যাবতীয় কর্তব্য আমানতের অন্তর্ভুক্ত (তাফসিরে কুরতুবি, ১৪তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৯)।
আমানতের বিধান :
আমানতের খিয়ানত করা কবিরা গুনাহ ও মুনাফিকের পরিচায়ক, আর আমানত রক্ষা করা ঈমানদারের পরিচায়ক। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই, আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার দ্বীন নেই’ (সুনানে বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, মিশকাত, পৃষ্ঠা ১৫)।
রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র বলেছেন, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি-
- ১. কথা বললে মিথ্যা বলে;
- ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে;
- ৩. আমানত রাখলে খিয়ানত করে’ (বুখারি, বাবু আলামাতিল মুনাফিকি ৩২, মুসলিম বাবু বায়ানি খিচালিল মুনাফিক ৮৯)। সুতরাং আমানতের খিয়ানতকারী মুনাফিক।
আমানতদারিতার গুরুত্ব :
আমানতদারিতা এমন এক মহৎ গুণ যার ওপর জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। আল্লাহর বাণী ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ তার প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সূরা আন নিসা : ৫৮)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত করো না। অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জানো’ (সূরা আনফাল : ২৭)।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যখন দুই পক্ষ মিলে যৌথ কোনো কাজ করে, আমি তখন তাদের (সঙ্গে) তৃতীয় পক্ষ হই। যে পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে খিয়ানত তথা বিশ্বাসঘাতকতা না করে’ (সুনানে আবু দাউদ, হাকেম)। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে তোমাকে বিশ্বাস করে তার বিশ্বাস রক্ষা করো, আর যে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তুমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।’ রাসূল সা: অন্যত্র বলেছেন, ‘মুমিনের মধ্যে আর যত দোষই থাক, খিয়ানত তথা বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যাচার থাকতে পারে না’ (মুসনাদে আহমদ)।
হজরত ইবন মাসুদ রা: বলেন, ‘আমানতের খিয়ানতকারীকে কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, তোমার আমানত ফেরত দাও। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে ফেরত দেবো? দুনিয়া তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে যে জিনিসটি আমানত রাখা হয়েছিল, সে জিনিসটিকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থলে হুবহু দেখানো হবে। অতপর বলা হবে, তুমি সেখানে নেমে পড়ো এবং একে নিয়ে আসো। অতপর সে নেমে যাবে এবং জিনিসটি ঘাড়ে করে নিয়ে আসবে।
শ্রম ও শ্রমিকের মূল্যায়ন
মানুষ জীবনধারণের জন্য যেসব কাজ করে, তাকে শ্রম বলে। ধনি-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড়, নারী-পরুষ নির্বিশেষে সব মানুষই কোনো না কোনো কাজ করে। আর কাজ করতে প্রয়োজন হয় শ্রমের। এ দিক দিয়ে পৃথিবীর সবাই শ্রমিক। শ্রম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু শ্রম দিয়ে থাকি।
আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও শ্রমিকের কাজ করেছেন। জুতা মেরামত করেছেন। কাপড় সেলাই করেছেন। এমনকি পাহাড়ের পাদদেশে বকরী চড়িয়েছেন। আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন। দাউদ (আ.) বর্ম তৈরি করতেন। আল্লাহর নবী হজরত মুসা (আ.)ও শ্রম দিয়েছেন। হজরত উতবাহ ইবনুল নুদ্দার (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি সুরা তা-সীন-মীম পাঠ করলেন। শেষে মুসা (আ.)-এর ঘটনা পর্যন্ত পৌঁছে তিনি বলেন, মুসা (আ.) আট অথবা দশ বছর যাবত নিজেকে শ্রমিকরূপে নিয়োজিত রেখেছিলেন নিজের লজ্জাস্থান হেফাজতের (বিবাহ) ও পেটের আহারের বিনিময়ে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২৪৪৪)
হজরত আলী (রা.) মজদুরীর তালাশে ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন। আর রাত্র পর্যন্ত কোনো ইহুদির ক্ষেতে কাজ করে কিছু খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে আসতেন। কিন্তু কখনো ভিক্ষার হাত বাড়াননি। নবী দুলহান হজরত ফাতেমা (রা.) পানি বইতে বইতে তাঁর বুকে-পিঠে দাগ পড়ে যেত। যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে হাতে ফোসকা পড়ে যেত, তবুও শ্রমবিমুখ হননি।
হজরত উমর (রা.) অনেক সময়ই অত্যন্ত জোর দিয়ে বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যেন মেহনত করে অর্থ উপার্জনের কাজ বন্ধ না করে দেয় এবং এই বলে বেকার বসে না থাকে, হে খোদা! তুমি আমার খাবার দাও। কারণ, তোমারা ভালো করেই জান আকাশ থেকে সোনা-চাদি ঝরে পড়ে না!’ (ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃ.-৫৫)
একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রমের মূল্যায়ন ও ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি অনীহা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা কেউ দড়ি নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাবে, লাকড়ি জমা করে পিঠে বোঝা বয়ে এনে তা বিক্রি করবে। আর এমনিভাবে আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন। দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার জন্য ঘুরে করুণা ও লাঞ্ছনা পাওয়ার চেয়ে অনেক ভালো।’(সহিহ বুখারি)
হজরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কেউ মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতে চাইতে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে তার মুখমণ্ডলে গোেতর কোনো টুকরা অবশিষ্ট থাকবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২২৮৬) অন্য হাদিসে ভিক্ষাকে জাহান্নামের আগুনের সাথে তুলনা করা হয়েছে! হজরত হুবশী বিন জুনাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত; আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাব না থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে (আহার করলো), সে ব্যক্তি যেন জাহান্নামের অঙ্গার খেলো।’ (সহিহ তারগীব হাদিস নং-৮০২)
ইসলাম একজন শ্রমিকের যথার্থ মর্যাদা দিয়েছে। শ্রমিকের সাথে সদ্যব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা শ্রমিকই হলো সব উন্নয়ন ও উৎপাদনের চাবিকাঠি। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। শ্রম আল্লাহ্ প্রদত্ত মানবজাতির জন্যে এক অমূল্য শক্তি ও সম্পদ।
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা বালাদ, আয়াত-৩) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘অতঃপর যখন নামাজ শেষ হবে, তখন তোমরা জমিনের বুকে ছড়িয়ে পড় এবং রিযিক অন্বেষণ কর।’ (সুরা জুমা, আয়াত-১০)
একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা শ্রমকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করেছে। যারা দামি গাড়িতে করে গিয়ে বড় দালানে শ্রম দেয়। মাস শেষে মোটা অংকের মাইনা পায়, তাদের শ্রমকেই কেবল মূল্যায়ন করা হয়। আর যারা সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে খেতে খামারে অথবা রিক্সা চালিয়ে শ্রম দেয় আমাদের সমাজব্যবস্থা তাদের খুব বাঁকা চোখে দেখে। মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও তাদের পাওয়ানা পরিষদ করা হয় না।
বরং উল্টা তাদের সাথে অসাধাচারণ করা হয়। ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢেলে পরতে হয়। অথচ, হাদিসে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরি দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৪৩)
এই ছিল তোমাদের ৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান- একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা।
আরো দেখুন-
- ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১৯তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ বিজ্ঞান এর বাছাইকরা সমাধান
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান
- ৭ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের বিজ্ঞান এসাইনমেন্টের সমাধান বা উত্তর
- ৮ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর বা সমাধান
- ৯ম শ্রেণির ১৯তম সপ্তাহের গণিত অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
- ৯ম শ্রেণির উচ্চতর গণিত ১৯তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২১
- ১৯তম সপ্তাহের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৯ম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১
- ৯ম শ্রেণি ১৯তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ অর্থনীতি বিষয় এর উত্তর বা সমাধান
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।