বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়
৬ষ্ঠ শ্রেণির ১ম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্ট ২০২২- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয় সম্পর্কে এখানে প্রশ্ন এবং উত্তর সহ বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এখান থেকে শুরু হচ্ছে-
৬ষ্ঠ শ্রেণির ১ম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্ট ২০২২
অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনাম : বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়।
নির্দেশক :
- ক. প্রতিবন্ধিতার ধারণা
- খ. তুমি কী কী পারাে আর কী কী পারাে না, তার তালিকা তৈরি
- গ. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অসুবিধাগুলাে চিহ্নিত করা
- ঘ. প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কী করা যায় তার উল্লেখ
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়
প্রতিবন্ধিতার ধারণা
প্রতিবন্ধী অর্থ এমন এক ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং উক্তরুপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে সেইসব শিশুদের বুঝায় সমবয়স্কদের তুলনায় যাদের বুদ্ধি সংবেদন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাব বিনিময় ক্ষমতা ও সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রার কম বা বেশি হয় তাকেই ব্যতিক্রমী শিশু বলে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ যারা সাধারণের বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।
তুমি কী কী পারাে আর কী কী পারাে না, তার তালিকা তৈরি
আমার শ্রেণীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু থাকলে বা সহপাঠী থাকলে তার প্রতি আমার কি রকম আচরণ হওয়া উচিত তা নিচে একটি তালিকার মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করলাম-
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রথম সারিতে বসানোর ব্যবস্থা করতে পারি।
- তাদেরকে কথা বলার বা দেখানোর সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি।
- কিছু না বুঝলে অথবা বুঝতে অসুবিধা হলে বুঝিয়ে দিতে পারি।
- সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় তাদের সাথে কথা বলতে পারে।
- তাদের সাথে সর্বদা ভালো আচরণ করতে পারি।
- তাদেরকে যে কোন সমস্যায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে পারি।
- তাদের কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে বিলম্ব না করে শিক্ষকদের জানাতে পারি।
- তাদেরকে সব সময় হাসিখুশি তথা বিনোদনের মধ্যে রাখতে পারি।
- শ্রেণীর অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও যেন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে সে ব্যবস্থা করতে পারি।
- তাদের সাথে ভাই বোনের মতো আচরণ করতে পারি l
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সহপাঠির আমার আচরণ যেমন হওয়া উচিত নয়-
শ্রেণিকক্ষে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সহপাঠী থাকলে তার প্রতি আমাদের যে রকমের আচরণ করা উচিত নয় তার একটি তালিকা দেয়া হলো-
- তাদেরকে পেছনে রেখে সামনের সারিতে বসা উচিত নয়।
- তাদের সাথে কথা বলা উচিত নয়।
- তাদেরকে কথা বলায় বাধা দেওয়া উচিত নয়।
- তাদের সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করা উচিত নয়।
- তাদেরকে কখনোই প্রতিবন্ধী কিংবা অটিস্টিক বলা যাবে না।
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অসুবিধাগুলাে চিহ্নিত করতে হবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অসুবিধাগুলাে চিহ্নিত করা
এ সকল শিশুরা সিনড্রোম, টার্মিনাল ডিজিজ, গভীর জ্ঞানীয় দুর্বলতা বা মারাত্মক মানসিক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। অন্যান্য শিশুর বিশেষ চাহিদাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে—শিক্ষার অক্ষমতা, খাদ্য অ্যালার্জি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বিলম্ব বা আতঙ্কিত হওয়ার সমস্যাগুলো। এমন শিশুদের চাহিদার চ্যালেঞ্জগুলো সাধারণ শিশুদের থেকে মারাত্মক হয় এবং আজীবন স্থায়ী চ্যালেঞ্জও হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের অতিরিক্ত সহায়তা ও অতিরিক্ত পরিষেবাগুলোর প্রয়োজন হয়। তাঁদের অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা শিক্ষাগত, সামাজিক, সংবেদনশীল ও কখনো কখনো চিকিৎসার মাইলফলক পূরণে সহায়তা করে। আবাসন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও আর্থিক লেনদেনের প্রতিদিনের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় তাঁদের আজীবন দিকনির্দেশনা এবং সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়
প্রতিবন্ধী শিক্ষা আইন ইনডিভিজুয়্যাল উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি এডুকেশন অ্যাক্টের (IDEA) অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই আইনটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আর্লি ইন্টারভেনশন পরিষেবা, বিনা মূল্যে পাবলিক বিশেষ শিক্ষা ও এ সম্পর্কিত পরিষেবায় উপযুক্ত পদক্ষেপগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য আর্লি ইনন্টারভেনশন শিক্ষাগত, আবেগময় ও সামাজিক সম্ভাবনা পূরণে সহায়তা করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর্লি ইন্টারভেনশন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা শুরুতেই চলমান শিশুর বিকাশ ক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশ ও আচরণের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকতে পারে। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখে রাখা ভালো। যেমন—শিশু জন্মের ৬ মাস অবধি যদি কোনো ধরনের শব্দ না করে বা হাসি না দেয়, উচ্চ শব্দে সাড়া না দেওয়া বা শব্দ এবং কণ্ঠস্বরকে অনুসরণ করার চেষ্টা না করা, তিন মাস বয়সের পরও মাথা ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া, কোনো জিনিস বা ব্যক্তিকে চোখ দ্বারা অনুসরণ করতে সমস্যা হওয়া, বাহু বা পা শক্ত থাকা এবং শরীরের ভঙ্গিটি স্বাভাবিক না হওয়া…ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কী করা যায় তার উল্লেখ করা
প্রতিবন্ধী অক্ষম মানুষেরা চিরকালই সমাজে সবলদের দ্বারা উপেক্ষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। অথচ ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ, সাহায্য-সহযোগিতা এবং অন্যদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বিপদ-আপদে সব সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবতা ও ইমানি দায়িত্ব। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অসদাচরণ, উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা ঠাট্টা-তামাশা করা সৃষ্টিকে তথা আল্লাহকে উপহাস করার শামিল। শারীরিক, শ্রবণ, বাক্, বুদ্ধি ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একটি অংশ জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী।
অপর অংশ দুর্ঘটনার কারণে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের দৈহিক কোনো ঘাটতি, পুষ্টিহীনতা বা অসুস্থতা, জন্মের পর বেড়ে ওঠার সময় অপুষ্টি, রোগাক্রান্ত হওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা প্রভৃতিসহ পিতামাতার অমনোযোগ, অযত্ন ও অবহেলার কারণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
একজন মানুষ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের নিশ্চয়ই স্বাভাবিক চলাফেরা করার অধিকার আছে এবং সবারই প্রতিবন্ধীদের অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের বৈষম্য ও দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। তাই ইসলাম শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে দুর্বল অসহায় প্রতিবন্ধীদের অধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও বিনোদন লাভের পূর্ণ অধিকারের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তাদের পিতামাতার প্রিয় সন্তান।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়
তাদের মধ্যেও সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, স্নেহ-ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের অনুভূতি আছে। এ জন্য দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষায়িত কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের পরমুখাপেক্ষিতার পথ থেকে স্বাবলম্বিতার পথে আনা এবং সমাজের আর দশজন কর্মীর মতো তাদের হাতকেও কর্মীর হাতে পরিণত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন অনন্য প্রতিভা। শারীরিক বা যেকোনো প্রতিবন্ধিতা অক্ষমতা নয়, বরং ভিন্ন ধরনের সক্ষমতা। সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও দক্ষতা ও পারদর্শিতার মাধ্যমে অনেক কিছু করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারলে এরা মানবসম্পদে পরিণত হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা গড়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। সমাজের সব থেকে প্রান্তিক অংশ অসহায় প্রতিবন্ধীদের ইসলাম প্রদত্ত অধিকার সুরক্ষা হচ্ছে কি না, তা সবারই দেখা উচিত। মানবাধিকার, উপযুক্ত পরিচর্যা, অনুকূল পরিবেশ, আর্থিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেলে তারা দেশ ও জাতি গঠনে যোগ্য অংশীদার হতে পারে। তাই আসুন না, আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রকাশে অত্যন্ত যত্নবান হই এবং তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হই!
প্রিয় বন্ধুরা, এই ছিল তোমাদের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১ম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্ট সমাধান- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি আমাদের করণীয়।
আরো দেখুন-
তোমাদের প্রতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত আপডেট সবার আগে পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ ডট কম এর এন্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে নাও। এখানে এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পেয়ে যাবে।
এছাড়াও তোমার মনে থাকা যেকোন প্রশ্ন এখানে করার সুযোগ রয়েছে; নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য অ্যাপটি ডাউনলোড করে নাও;