পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমন এর ক্ষেত্রে ১৮০° দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা
বন্ধুরা আমরা আজ ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮ম সপ্তাহে ভূগোল ও পরিবেশ পাঠ্য বই থেকে নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমন এর ক্ষেত্রে ১৮০° দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করবো। এখান থেকে তোমরা এসএসসি ২০২২ ৮ম সপ্তাহ ভূগোল ও পরিবেশ অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবে।
প্রথমে আমরা ৮ম সপ্তাহে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার মানবিক বিভাগের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখে নিব এবং এর পর নির্দেশনা ও মূল্যায়ন রুবিক্সগুলো অনুসরণ করে পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমন এর ক্ষেত্রে ১৮০° দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা এর অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করা চেষ্টা করবো।
২০২২ এসএসসি ৮ম সপ্তাহ ভূগোল ও পরিবেশ অ্যাসাইনমেন্ট
নিচের ছবিতে তোমাদের জন্য ৮ম সপ্তাহে ২০২২ এসএসসি ভূগোল ও পরিবেশ অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্নটি উল্লেখ করা হলো-
অ্যাসাইনমেন্টঃ ক. পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমনের ক্ষেত্রে ১৮০°দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা কর; খ. যুক্তরাজ্যে সকাল ৮টা হলে তখন। বাংলাদেশের সময় নিরূপণ;
নির্দেশনা (সংকেত/পরিধি/ধাপ): • গুরুত্বপূর্ণ রেখাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব বর্ণনা • অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা দ্বারা অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করা। • আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ব্যবহার করে সময় নিরূপণ করা।
২০২২ এসএসসি ৮ম সপ্তাহ ভূগোল ও পরিবেশ অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান বা উত্তর
তোমাদের জন্য মূল্যায়ন রুবিক্সগুলো যথাযথ অনুসরণ করে ক. পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমনের ক্ষেত্রে ১৮০°দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা কর; খ. যুক্তরাজ্যে সকাল ৮টা হলে তখন। বাংলাদেশের সময় নিরূপণ; প্রশ্ন সমূহের উত্তর প্রদান করা হলো।
প্রশ্ন-ক. গুরুত্বপূর্ণ রেখাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব বর্ণনা;
প্রশ্ন-ক এর উত্তর
দ্রাঘিমা রেখা, অক্ষরেখা, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার ব্যাখ্যাঃ
পৃথিবী পৃষ্ঠে একটি নির্দিষ্ট স্থানের সঠিক অবস্থান ও উক্ত স্থানের সঠিক সময় জানবার জন্যে ভূ-বিজ্ঞানীগণ সমগ্র পৃথিবীকে মোট দুই ধরনের রেখা দ্বারা বিভক্ত করেছেন। এই রেখাসমূহ অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা নামে পরিচিত।
অক্ষরেখা: ভূ-পৃষ্ঠের যে কোনো স্থানে নিরক্ষরেখার সাথে পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দুতে সৃষ্ট কৌণিক দূরত্বকে অক্ষাংশ বলে এবং যে কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে একে প্রকাশ করা হয়, তাকে অক্ষরেখা বলে। পৃথিবীকে উত্তর দক্ষিণে সমভাবে দুইভাগে বিভক্তকারী বৃত্তাকার রেখাটি নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা নামে অভিহিত।
এটি সর্ববৃহৎ অক্ষাংশ রেখা। নিরক্ষরেখার (০°) উত্তর ও দক্ষিণে এই অক্ষরেখা সমূহের আকার ক্রমশ ছোট হতে হতে দুই মেরুতে একেবারে বিন্দুতে পরিনত হয়। অর্থাৎ অক্ষরেখাগুলো নিরক্ষরেখার সাথে কৌণিক দুরত্বে কল্পিত কতিপয় সমাক্ষরেখা (সমদূরত্বে অবস্থিত রেখা)।
২৩.৫০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখাসমূহ যথাক্রমে কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকর ক্রান্তি রেখা নামে অভিহিত হয়। ৬৬.৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখাসম অভিহিত হয়। যথাক্রমে সুমেরু বৃত্ত ও কুমেরু বৃত্ত নামে।
দ্রাঘিমারেখা: দ্রাঘিমা রেখা, দ্রাঘিমাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ দ্রাঘিমা রেখা ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানে মূল মধ্যরেখার সাথে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে সৃষ্ট কৌণিক দূরত্বকে দ্রাঘিমাংশ বলে। যে কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে দ্রাঘিমাংশ প্রকাশ করা হয়, তাকে দ্রাঘিমা রেখা বলে।
অর্থাৎ পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুসংযোগকারী কাল্পনিক রেখাসমূহ দ্রাঘিমা রেখা। প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা একেকটি অর্ধবৃত্ত। দ্রাঘিমা রেখাসমূহ পরস্পরের সাথে সমদূরত্বে অবস্থিত নয়, অর্থাৎ মেরুদ্বয়ে এই রেখাগুলো পরস্পরের সর্বাপেক্ষা নিকটে অবস্থান করে এবং নিরক্ষরেখা বরাবর সর্বাপেক্ষা দূরে অবস্থান করে।
আন্তর্জাতিক তারিখরেখাঃ ১৮০° দ্রাঘিমারেখা বরাবর বিস্তৃত যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের দিন বা তারিখ নির্নয় করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা বলে। ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে পূর্ব বা পশ্চিম দিক থেকে অতিক্রম করলে একদিন বেড়ে বা কমে যায় বলে এই রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হিসাবে গ্রহন করা হয়েছে।
এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অতিক্রম করে পূর্ব গোলার্ধে প্রবেশ করলে একদিন বেড়ে যায় এবং পশ্চিম গোলার্ধে প্রবেশ করলে একদিন কমে যায়।
প্রশ্ন-খ. অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা দ্বারা অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করা;
প্রশ্ন-খ এর উত্তর
দ্রাঘিমা রেখা,অক্ষরেখা ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার গুরত্বঃ
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখার গুরুত্ব:
১. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়। একই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা বিশিষ্ট স্থান ভূপৃষ্ঠে কেবল একটিই হতে পারে।
২. অক্ষাংশ দ্বারা তাপমাত্রার পরিমাপ জানা যায়। নিরক্ষরেখা হতে ক্রমশ উত্তর ও দক্ষিণে তাপ হ্রাস পায়। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের তাপমাত্রা সাধারণত একই হয়।
৩. অকূল সমুদ্রে বিপদাপন্ন জাহাজ বেতারের সাহয্যে তার অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানিয়ে দিলে সহজেই তার সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়।
৪. অবস্থান নির্ণয়: দ্রাঘিমার দ্বারা (অক্ষাংশের সাহায্যে) ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়। যেমন- কোন স্থানের অক্ষাংশ ২৫° উত্তর ও দ্রাঘিমা ৩৫° পূর্ব বলা হলে বোঝা যাবে যে, ঐ স্থানটি ২৫° উত্তর সমাক্ষরেখা ও ৩৫° পূর্ব দ্রাঘিমার সংযোগস্থলে অবস্থিত।
৫. স্থানীয় সময় নির্ধারণ: একই দ্রাঘিমায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময় একই। এ ছাড়া দ্রাঘিমান্তর থেকে দুটি দেশের সময়ের পার্থক্য জানা যায়।
৬. বিপদাপন্ন জাহাজকে সাহায্যে প্রদান: অকূল সমুদ্রে বিপদাপন্ন জাহাজ বেতারের সাহয্যে তার অবস্থানগত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানালে সহজেই তার অবস্থান জেনে সাহায্য পাঠানো যায়
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা:
দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সাথে স্থানীয় সময়ের যে পরিবর্তন হয়, তাতে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করার সময় বা ভূপ্রদক্ষিণ করার সময় স্থানীয় সময়ের পার্থক্য এবং দিনের হিসেবের অসুবিধা হয়ে থাকে।
এ সমস্যা প্রকট হয় যখন কোন নির্দিষ্ট স্থান হতে কোন বিমান/সমুদ্রগামী জাহাজ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখাকে অবলম্বন করে জলভাগের ওপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত একটি রেখা কল্পনা করা হয়। কাল্পনিক এ রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা (International Date Line সংক্ষেপে (IDL) বলে।
উল্লেখ্য যে, উত্তর-দক্ষিণ দিকে ভ্রমণ করলে সময় বা দিনের কোন রকম অসুবিধা হয় না। কিন্তু পূর্ব পশ্চিম দিকে ভ্রমণ করলে সময় বা দিন গণনায় অসুবিধা হয়।
আন্তর্জাতিক তারিখরেখার প্রয়োজনীয়তা – মূলমধ্যরেখার বিপরীত দিকে রয়েছে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা।
এই মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিকে প্রতি ১ ডিগ্রি তে ৪ মিনিট করে সময় বেড়ে যায় এবং পশ্চিম দিকে প্রতি ১ ডিগ্রি তে ৪ মিনিট করে সময় কমে যায়। ফলে মূলমধ্যরেখা থেকে ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব বা পশ্চিমে ভ্রমন করলে সময় বা বার নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা যায়।
যেমন – যদি লন্ডনের গ্রিনেচে রবিবার সকাল ৮ টা হয়, তখন ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় সময় হবে = সকাল ৮ টা + ১২ ঘণ্টা = রবিবার রাত্রি ৮ টা (১৮০✖৪ = ৭২০ মিনিট বা ১২ ঘণ্টা) এবং ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমায় সময় হবে = সকাল ৮ টা – ১২ ঘণ্টা = শনিবার রাত্রি ৮ টা।
১৮০ ডিগ্রি পূর্ব ও ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিম একই দ্রাঘিমারেখা হওয়া সত্ত্বেও গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী ওই স্থানের সময়ের পার্থক্য হয় ২৪ ঘণ্টা। সময় ও বার নিয়ে এই সমস্যা দূর করার জন্য ১৮৮৪ সালে অধ্যাপক ডেভিডসন এর উদ্যোগে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হিসাবে স্থির করা হয়।
প্রশ্ন-গ: আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ব্যবহার করে সময় নিরূপণ করা;
প্রশ্ন-গ এর উত্তর
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার মাধ্যমে সময় নিরূপণঃ
আন্তজার্তিক তারিখ রেখা ব্যবহার করে সময় নিরূপণ:
জানা আছে,
বাংলাদেশের (ঢাকা) দ্রাঘিমা = ৯০° পূর্ব
যুক্তরাষ্ট্রের (ওয়াশিংটন ) দ্রাঘিমা = 77.050636° পশ্চিম
দ্রাঘিমার পার্থক্য = ( 77.050636° + 90°) = 167.050636°
১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য =৪ মিনিট
সুতরাং 167.0506৩৬° দ্রাঘিমার পার্থেক্যর জন্য সময়ের পার্থক্য = (১৬৭.050636°x৪) মিনিট
= ৬৬৮.২০২৫৪৪ মিনিট
=১১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট।
বাংলাদেশ (ঢাকা) অবস্থান পূর্বে হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সময় যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বেশি।যুক্তরাষ্ট্রের সময় সকাল ৮ টা হলে বাংলাদেশের সময়=(৮টা+১১ঘন্টা ১৩মিনিট) =সন্ধ্যা ৭টা ১৩মিনিট
বন্ধুরা এই ছিল তোমাদের জন্য ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ৮ম সপ্তাহের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্বে গমনাগমন এর ক্ষেত্রে ১৮০° দ্রাঘিমা রেখায় তারিখ, বার ও সময়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা।
উত্তরদাতা, শাখাওয়াত হোসেন, ফেনী।
এসএসসি ২০২২ অষ্টম সপ্তাহ সকল অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
[ninja_tables id=”11463″]আপনার জন্য আরও কিছু তথ্যঃ
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।