সর্বশেষ আপটেড

পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ

আজকের আলোচনায় থাকছে এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জীবন অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান/উত্তর- পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ। মূল উত্তর দেখার পূর্বে নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্টটি দেখা যাক।

এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জীবন অ্যাসাইনমেন্ট

এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জীবন অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/ পরিধি) :

ক) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য ব্যাখ্যা

খ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্যের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।

গ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা

ঘ) পূর্ব বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নে বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা

ক) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্যঃ

রাজনৈতিক অসমতা সম্পাদনা

জনসংখ্যার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রাখে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতার বণ্টন পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূল হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তান এক ইউনিট তত্ত্ব নামে এক অভিনব ধারণার সূত্রপাত করে, যেখানে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ভোটের ভারসাম্য আনা। মজার ব্যাপার হল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাঞ্জাব প্রদেশ প্রস্তাব করে পাকিস্তানে সরাসরি জনসংখ্যার বণ্টনের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হোক, কারণ পাঞ্জাবিরা ছিল সিন্ধি, পশতুন, বালুচ বা পাকিস্তানের অন্য যেকোন গোত্রের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।

একেবারে শুরু থেকেই পাকিস্তানে শাসনের নামে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, আর এই ষড়যন্ত্রে মূল ভূমিকা পালন করে সামরিক বাহিনী। যখনই পূর্ব পাকিস্তানের কোন নেতা, যেমন খাজা নাজিমুদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বগুড়া, অথবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতেন, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানিরা কোন না কোন অজুহাতে তাদের পদচ্যুত করত। নানারকম টালবাহানা করে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেন এবং দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পাকিস্তানে তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের এই অনৈতিক ক্ষমতা দখল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েই চলে।

পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী।

“এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে চার দফা দাবি পেশ করেন:

  • অবিলম্বে মার্শাল ল’ প্রত্যাহার করতে হবে।
  • সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
  • নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করতে হবে।
  • ২৫শে মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড় সম্পাদনা

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলার ঘূর্ণিঝড় পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করে, সেই সাথে জোয়ারের কারণে প্রায় ৩,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও এটিকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হারিকেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারা মারা যায় খাবার আর পানির অভাবে।

ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীকার করেন যে, সরকার দুর্যোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারার কারণেই ত্রাণকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪ নভেম্বর এক সভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে গৃহযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

খ) পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার মধ্যকার প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্যঃ

প্রশাসনিক বৈষম্য

পাকিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিল সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তাগণ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের মন্ত্রণালয়গুলোতে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ১৪৫ জনের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ১১৯ জন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২,০০০ কর্মকর্তার মধ্যে বাঙালির সংখ্যা ছিল মাত্র ২.৯০০। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে করাচিতে রাজধানী হওয়ায় সরকারি অফিস-আদালতে পশ্চিমপাকিস্তানিরা ব্যাপক হারে চাকরি লাভ করে। বস্তুত পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সকল উচ্চপদে পশ্চিমপাকিস্তানিদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। সরকারের সব দপ্তরের সদর দপ্তর ছিল পশ্চিমপাকিস্তানে।

ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে বাঙালির পক্ষে সেখানে গিয়ে চাকরি লাভ করা সম্ভব ছিল না। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বাঙালি ছাত্রদের সাফল্য সহজ ছিল না। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব ও পশ্চিমপাকিস্তানের গেজেটেড কর্মকর্তা ছিল যথাক্রমে ১৩৩৮ ও ৩৭০৮ জন এবং ননগেজেটেড কর্মকর্তা ছিল যথাক্রমে ২৬,৩১০ ও ৮২,৯৪৪ জন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ফরেন সার্ভিসে পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল মাত্র ২০.৮%। বিদেশে ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জনই ছিলেন পশ্চিমপাকিস্তানি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এমনি ভয়াবহ বৈষম্য পূর্ববাংলা তথা পূর্বপাকিস্তানের দুর্বিষহ যন্ত্রণার কারণ হয়ে পাড়ায় সারণি ১, ২৩৩ দ্রষ্টব্য)।

সারণি-১: ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পূর্ব ও পশ্চিমপাকিস্তানের তুলনামূলক অবস্থান :

সামরিক বৈষম্য

পূর্বপাকিস্তানের ওপর পশ্চিমপাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক শাসনের আর একটি ক্ষেত্র ছিল সামরিক বৈষম্য। সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব ছিল অতি নগণ্য। প্রথম থেকেই সামরিকবাহিনীর শীর্ষ পদ পাঞ্জাবিরা দখল করে রেখেছিল। তারা বাঙালিদের সামরিকবাহিনী থেকে দূরে রাখার নীতি পরিগ্রহ করে সামরিকবাহিনীর নিয়োগের ক্ষেত্রে

যে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাতে ৬০% পাঞ্জাবি, ৩৫% পাঠান এবং মাত্র ৫% পশ্চিমপাকিস্তানের অন্যান্য অংশ ও পূর্বপাকিস্তানের জন্য নির্ধারণ করা হয়। বাঙালির দাবির মুখে কিছুটা বাড়লেও তা ছিল অতি নগণ্য। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের এক হিসাবে দেখা যায়, সামরিকবাহিনীর মোট ২২১১ জন কর্মকর্তার মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ৮২ জন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে সামরিকবাহিনীর ১৭ জন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ১ জন ছিল বাঙালি। এ সময় সামরিক অফিসারদের মধ্যে ৫% ছিল বাঙালি।

পাকিস্তানের মোট ৫ লক্ষ সেনাসদস্যের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ২০ হাজার। অর্থাৎ মাত্র ৪%। সামরিক বাজেটের ক্ষেত্রেও পূর্বপাকিস্তানকে গ্রাহ্য করা হতো না। আইয়ুব খানের শাসনামলে মোট বাজেটের ৬০% সামরিক বাজেট ছিল। যার সিংহভাগ দায়ভার বহন করতে হতো পূর্বপাকিস্তানকে। অথচ পূর্বপাকিস্তানের প্রতিরক্ষার প্রতি অবহেলা দেখানো হতো।

উপরিউক্ত ২১১৭.৮১ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা মাত্র 16% ব্য়য় হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরাট প্রতিরক্ষা বাজেট পূর্বপাকিস্তান থেকে কর জানালো এবং তা পশ্চিমপাকিস্তানে ব্যয় করার এক এভাবে বাজেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি বছর পূর্বপাকিস্তানের সম্পদের এক বৃহৎ অংশ পশ্চিমপাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো।

গ) আর্থ-সামাজিক বৈষম্যঃ

অর্থনৈতিক বৈষম্য

পূর্বপাকিস্তান পশ্চিমপাকিস্তান কর্তৃক সর্বোচ্চ বৈষম্যের শিকার হয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের শোষণের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। ফলে পূর্বপাকিস্তান কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কেন্দ্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পূর্বপাকিস্তানের সকল আয় পশ্চিমপাকিস্তানে চলে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক, বিমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ছিল পশ্চিমপাকিস্তানে। ফলে সহজেই সকল অর্থ পশ্চিমপাকিস্তানে পাচার হয়ে যেত। পূর্বপাকিস্তানের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছিল পশ্চিমপাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। উদ্বৃত্ত আর্থিক পশ্চিমপাকিস্তানে জমা থাকত বিধায় পূর্বপাকিস্তানে কোনো মূলধন গড়ে ওঠেনি।

‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের সকল পরিকল্পনা প্রণীত হতো কেন্দ্রীয় সরকারের সদর দপ্তর পশ্চিমপাকিস্তানে সেখানে পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধি না থাকায় পশ্চিমপাকিস্তানের শাসকরা পূর্বপাকিস্তানকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত। জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানে তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়। প্রথমটিতে পূর্ব ও পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১১৩ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি, দ্বিতীয়টিতে বরাদ্দ ছিল ১৫০ কোটি পূর্বপাকিস্তানের জন্য ১৩৫০ কোটি রুপি পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য। তৃতীয়টাতে পূর্ব ও পশ্চিমের জন্য বরান্দ যথাক্রমে ৩৬% ও ৬৩%।

পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ।

রাজধানী উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বায় বেশির ভাগ ছিল পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে করাচির উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় ৫৭০ কোটি টাকা, যা সরকারি মোট ব্যয়ের ৫৬.৪%। সে সময় পূর্বপাকিস্তানের মোট সরকারি ব্যয়ের হার ছিল ৫.১০%। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর ঢাকার জন্য বায় করা হয় ২৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তান পায় মাত্র ২৬.৬%। ১৯৪৭ ১৯৭০ পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্বপাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। অথচ রপ্তানি আয় বেশি করলেও পূর্বপাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় ছিল কম অর্থাৎ মাত্র ৩১.১%।

রপ্তানির উদ্বৃত্ত অর্থ পশ্চিমপাকিস্তানের আমদানির জন্য ব্যয় করা হতো। শিল্পকারখানার প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের কাঁচামাল সস্তা হলেও শিল্পকারখানা বেশিরভাগ গড়ে উঠেছিল পশ্চিমপাকিস্তানে। পূর্বপাকিস্তানে কিছু শিল্প গড়ে উঠলেও সেগুলোর বেশিরভাগ মালিক ছিল পশ্চিমপাকিস্তানিরা। ফলে শিল্পক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানকে নির্ভরশীল থাকতে হতো পশ্চিমপাকিস্তানের ওপর।

সারণি-৬: ১৯৪৭ – ৫৫ সময়কালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদেশভিত্তিক ব্যয়ের পরিমাণ:

সামাজিক বৈষম্য

পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। সরকারের অর্থনৈতিক এবং পরিকল্পনাগত বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম থেকেই বঞ্চনার শিকার হয়। পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে দু’ধরণের সমাজ জীবন পরিচালিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসীরদের জীবন যাপন উন্নতমানের হলেও পূর্ব বাংলার মানুষ ছিল বৈষম্যের শিকার। বাঙালিরা যাতে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারে এজন্য তাদেরকে অভাব অনটন ও রোগগ্রস্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যেও দামের পার্থক্য থাকতো, যাতে তা বাঙালিদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেবার জন্য অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠলেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের জীবনযাত্রার মান ছিল অনেক উন্নত।

ঘ) পূর্ব বাংলায় শিক্ষা সংস্কৃতি উন্নয়নে বৈষম্যঃ

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য

শিক্ষাক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পশ্চিমপাকিস্তানিরা বাঙালিদের নিরক্ষর রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পক্ষান্তরে পশ্চিমপাকিস্তানে শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ফলে পূর্বপাকিস্তানে শিক্ষার উন্নয়নে কোনো চেষ্টা তারা করেনি। এছাড়া বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে শিক্ষার মাধ্যম করা বা আরবি হরফে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানতে চেয়েছিল। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের প্রতি চরম বৈষম্য দেখানো হয়।

১৯৫৫ থেকে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের মধ্যে পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৮৪ মিলিয়ন রুপি এবং পূর্বপাকিস্তানের জন্য ছিল ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি পাকিস্তানের সর্বমোট ৩৫টি বৃত্তির ৩০টি পেয়েছিল পশ্চিমপাকিস্তান এবং মাত্র ৫টি বরাদ্দ ছিল পূর্বপাকিস্তানের জন্য।

সারণি-৮: ১৯৪৭ ৪৮ থেকে ১৯৬৮ ৬৯ সময়কালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকস্তিানে শিক্ষার অগ্রগতি :

সাংস্কৃতিক বৈষম্য

দুই অঞ্চলের ভাষা সাহিত ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্বপাকিস্তানের অধিবাসী ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬%। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল হাজার বছরের পুরনো। অপরদিকে ৪৪% জনসংখ্যার পশ্চিমপাকিস্তানে বিভিন্ন ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। উর্দুভাষী ছিল মাত্র ৩.২৭%। অথচ তা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষা ও সুসমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত হয় পশ্চিমা শাসকরা।

প্রথমেই তারা বাংলা ভাষাকে নির্মূল করার চেষ্টা করে এবং বাংলা ভাষাকে আরবি বর্ণে লেখার ষড়যন্ত্র শুরু করে। বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথের সংগীত, নাটক ও সাহিত্য। বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানার জন্য রবীন্দ্রসংগীত রচনাবলি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। পহেলা বৈশাখ পালনকে হিন্দু প্রভাবজ বলে উল্লেখ করে সেখানেও বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। এভাবে বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে সাংস্কৃতিক বৈষম্য সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়।

এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জীবন অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান/উত্তর- পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ।

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ