নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
২০২২ সালের সুপ্রিয় এইচএসসি পরিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সকলে সুস্থ আছো। চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান- নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে ব্যাখ্যা করো।
শিখনফল
- নাগরিক অধিকারের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
- তথ্য অধিকার এর ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
- অধিকারের সাথে কর্তব্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে
- নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আগ্রহী হবে
- মানবাধিকারের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
নির্দেশনা
- অধিকার ও কর্তব্যের ধারণা
- তথ্য অধিকার ও মানবাধিকারের ধারণা
- অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক
এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
অধিকার ও কর্তব্যের ধারণা
অধিকার বিশ্লেষণঃ
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ যেসব সুযোগ – সুবিধা ভোগ করে , তাকে অধিকার বলা হয় । অধিকার হলো ব্যক্তির সেই সকল সুযোগ – সুবিধা যা উপভোগের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে । অধিকার হলো সমাজ জীবনের এমন কতকগুলো শর্তাবলি যার অনুপস্থিতিতে কোনো মানুষের পক্ষে নিজস্বতা বা স্বকীয়তার প্রকাশ , বিকাশ বা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । তাই সুসভ্য জীবনের সাথে নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । অধিকার উপভোগের মাধ্যমে সুস্থ – সুন্দর ও সুখী জীবন সম্ভব করে তোলাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য । অধ্যাপক লাস্কি ( Prof. Laski ) বলেন , “ রাষ্ট্র অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আত্মবিকাশে সাহায্য করে । রাষ্ট্র মানুষে জন্য অধিকারের সৃষ্টি করে এবং সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে । অধিকার রাষ্ট্রীয় চরিত্র মূল্যায়নের চাবিকাঠি । ” এজন্য অধ্যাপক , লাস্কি ( Prof. Laski ) আরও বলেন , “ প্রত্যেক রাষ্ট্রই এর প্রদত্ত অধিকারসমূহের দ্বারা পরিচিতি লাভ করে। ” ( ” Every state is known by the rights that it maintains .” )
অধিকারের বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of rights ) :
অধিকার সম্পর্কিত উপরিউক্ত ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করলে অধিকারের কিছু বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে উঠে । বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
- ১. অধিকার একটি সামাজিক ধারণা । মানুষ সামাজিক জীব । সমাজের সদস্য হিসেবে অধিকারগুলো উপভোগ করা যায় ।
- ২. অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট ।
- ৩. অধিকার একটি আইনগত ধারণা । রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে অধিকারের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ।
- ৪. ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য । অধিকার আত্মবিকাশ ও আত্মোপলব্ধির সহায়ক ।
- ৫. অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল শ্রেণি পেশার তথা ধর্ম , বর্ণ , গোত্র , নারী – পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমানভাবে ভোগের সুযোগ পায় ।
- ৬. অধিকারের সাথে সমাজের সার্বিক কল্যাণ জড়িত বিধায় অধিকার কখনো সমাজের স্বার্থ বিরোধী হতে পারে না ।
- ৭. অধিকার পরিবর্তনশীল । সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারায় অধিকারও পরিবর্তিত হয় । প্রাচীনকালের অধিকার এবং আধুনিককালের অধিকারের মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে ।
- ৮. সর্বোপরি , অধিকার উপভোগের বিষয়টি কর্তব্য পালনের সাথে সম্পর্কিত। কর্তব্য পালনের মাধ্যমে অধিকারের উপভোগ অর্থবহ হয়ে ওঠে।
অধিকারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Rights) :
অধিকারের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে অধিকারকে প্রথমত দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
- ১। নৈতিক অধিকার (Moral rights) ও
- ২। আইনগত অধিকার ( Legal rights ) ।
নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে অধিকারের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো-
কর্তব্যের ধারণাঃ
কর্তব্য( Duty) অধিকার ও কর্তব্য পাশাপাশি অবস্থান করে । মানুষ যখন রাষ্ট্রসৃষ্ট অধিকার উপভোগের সুযোগ লাভ করে তখন তার উপর রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বাধ্যবাধকতা এসে পড়ে । রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করা নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব । কেননা কর্তব্য পালন ব্যতীত অধিকার উপভোগ ‘ অর্থবহ হয় না । মানুষের সমাজবোধ থেকেই কর্তব্যবোধের সৃষ্টি হয় । এসব কর্তব্য পালনের মাধ্যমে নাগরিক রাষ্ট্রীয় জীবনকে শান্তিপূর্ণ ও গৌরবময় করে তুলতে পারে ।
কর্তব্যের ধারণা ( Concept of duties ) :
নাগরিকের কর্তব্য বলতে রাষ্ট্রের প্রতি করণীয় কাজকে বোঝায় । অর্থাৎ রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে অবশ্যই কিছু করণীয় কাজ করতে হয় । আমরা যেমন রাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিকার দাবি করি , রাষ্ট্র তেমনি আমাদের কাছ থেকে কিছু কর্তব্য বা দায়িত্ব পালন প্রত্যাশা করে । তাছাড়া কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই অধিকার ভোগ করা যায় । অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর সম্পৃক্ত । মূলকথা , রাষ্ট্র স্বীকৃত অধিকার উপভোগের মাধ্যমে ব্যক্তি , সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গলের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করাই হলো কর্তব্য । কর্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । অধ্যাপক লাস্কি ( Prof. Laski ) বলেন , “ কর্তব্য বলতে ব্যক্তি , সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য কোনো কিছু করা বা না করার দায়িত্বকে বোঝায় । ”
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
আর . সি . আগারওয়াল ( R. C. Agarwal) – এর মতে , ” কর্তব্য হলো সমাজ বা রাষ্ট্রের সদস্যের প্রতি এক ধরনের বাধ্যবাধকতা , যা সমাজে বাধ্যবাধকতারূপে পালন করা হয় । ” ( ” A duty is an obligation to a member of a society or state to observe this obligation of society ” .) ম্যাকেঞ্জী বলেছেন , ” কর্তব্য হলো এমন এক ধরনের বিশেষ কাজ , যা আমাদেরকে পালন করা উচিত । ” ( Duty is one kind of special work which we should observe . )
অধ্যাপক হবহাউস ( Prof. Hobhouse ) বলেছেন , “ ধাক্কা না খেয়ে পথ চলার অধিকার যদি আমার থাকে তবে অপরের কর্তব্য হলো আমার প্রয়োজনমত জায়গা ছেড়ে দেয়া । ” ( If I have the right to walk also the street without being Pashed off the Pavement , your duty is to give me reasonable room . ) উইলিয়াম এ . ফ্রাঙ্কেনা ( William A. Frankena ) – এর মতে , ” কর্তব্য হচ্ছে এমন এক নীতিনিষ্ঠ আচরণ বা সকল সময়ই মানুষ পালন করতে বাধ্য থাকে । ” এ . সি . কাপুর ( A. C. Kapur ) কর্তব্যের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেন , “ আইনের দ্বারা স্বীকৃত অধিকার ভোগের বিনিময়ে নাগরিক যে সকল দায়িত্ব পালন করে তাই কর্তব্য । ”
উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করে বলা যায় , অধিকার ভোগের বিনিময়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নাগরিকগণকে রাষ্ট্রের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে কর্তব্য বলে ।
কর্তব্যের শ্রেণিবিভাগ ( Classification of duties )
কর্তব্যকে প্রথমত দুভাগে ভাগ করা যায় ; যথা :
১। নৈতিক কর্তব্য ও
২। আইনগত কর্তব্য ।
১. নৈতিক কর্তব্য ( Moral duties) :
নাগরিক নীতিবোধ ও বিবেকবোধ থেকে নৈতিক কর্তব্যের জনু । নাগরিক স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ও সমাজের কল্যাণে যেসব করণীয় বলে মনে করে বা সম্পাদন করে তাকে নৈতিক কর্তব্য বলা হয় । যেমন— দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য , বন্যা , খরা , দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো , অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া ইত্যাদি নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করা হয় । তবে নৈতিক কর্তব্য কেউ পালন না করলে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না ।
আইনগত কর্তব্য ( Legal duties) :
রাষ্ট্রীয় আইন ধারা জনগণের জন্য অবশ্য পালনীয় হিসেবে যেসব দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া , তাকে আইনগত কর্তব্য বলা হয় । এসব কর্তব্য পালন না করলে নাগরিকদের শাস্তি পেতে হয় । যেমন- আইন মেনে চলা , নিয়মিত কর প্রদান করা ইত্যাদি।
তথ্য অধিকার ও মানবাধিকারের ধারণা
নাগরিকের তথ্য অধিকার (Information Rights of Citizen):
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকদের যে সকল মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো চিন্তা , বিবেক ও বাক্স্বাধীনতা । তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা , বিবেক ও বাকস্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ । যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক , সেহেতু জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন । সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সরকার ‘ তথ্য অধিকার আইন ‘ নামে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস করেছে । এই আইন পাসের মাধ্যমে (আইনের বিধানানুযায়ী ) যেকোনো নাগরিক দেশের সরকারি , আধা – সরকারি , স্বায়ত্তশাসিত , বেসরকারি যেকোনো সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখে। তথ্যের অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা গেলে সরকারি – বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে , দুর্নীতি হ্রাস পাবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন ( Information rights act in Bangladesh ) তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে তথ্য অধিকার আইন , ২০০৯ পাস হয় , যা বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা সোমবার , ৬ এপ্রিল , ২০০৯ প্রকাশিত হয় । উক্ত আইনের উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
- যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা , বিবেক ও বাস্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা , বিবেক ও বাস্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ;
- এবং যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক ;
- যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারি , স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে , দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে ;
- এবং যেহেতু সরকারি , স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় ;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন : এই আইন তথ্য অধিকার আইন , ২০০৯ নামে অভিহিত হইবে । ‘ তথ্য ‘ অর্থে কোনো কর্তৃপক্ষের গঠন কাঠামো ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত যেকোনো স্মারক , বই , নকশা মানচিত্র , চুক্তি , তথ্য – উপাত্ত , লগ বহি , আদেশ , বিজ্ঞপ্তি , দলিল , নমুনা পত্র প্রতিবেদন , হিসাব বিবরণী প্রকল্প প্রস্তাব , আলোকচিত্র , অডিও , ভিডিও , অঙ্কিত চিত্র , ফিল্ম , ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যে কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট , যান্ত্রিকভাবে পাঠযোগ্য দলিলাদি এবং ভৌতিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে অন্য যে কোনো তথ্যবহ বস্তু বা উহাদের প্রতিলিপিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে তবে শর্ত থাকে যে , দাপ্তরিক নোট সিট বা নোট সিটের প্রতিলিপি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না; তথ্য অধিকার ‘ অর্থ কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার ।
২। আইনের প্রাধান্য : প্রচলিত অন্য কোনো আইনের তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলি এই আইনের বিধানাবলি দ্বারা ক্ষুণ্ন হইবে না ; এবং তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলি এই আইনের বিধানাবলির সহিত সাংঘর্ষিক হইলে , এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে ।
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
৩। তথ্য অধিকার এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে , কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোনো নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে ।
৪। তথ্য সংরক্ষণ- ( ১ ) এই আইনের অধীন তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ এবং ইনডেক্স প্রস্তুত করিয়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিবে । ( ২ ) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ যে সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলে মনে করবে সে সকল তথ্য , যুক্তিসংগত সময় সীমার মধ্যে , কম্পিউটারে সংরক্ষণ করবে এবং তথ্য লাভের সুবিধার্থে গোটা দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এর সংযোগ স্থাপন করবে । (৩ ) তথ্য কমিশন তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রবিধান দ্বারা , কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করবে । সকল কর্তৃপক্ষ এসব নির্দেশনা অনুসরণ করবে ।
৫। তথ্য প্রকাশ-
- ( ১ ) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকাণ্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয় , এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে ।
- (২) অধীন তথ্য , সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না ।
- ( ৩ ) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে , যার মধ্যে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে , যথা : ( ক ) কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোর বিবরণ , কার্যক্রম কর্মকর্তা – কর্মচারীগণের দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিবরণ বা পদ্ধতি ; প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে (খ) কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম – কানুন , অধ্যাদেশ , বিধিমালা , প্রবিধানমালা , প্রজ্ঞাপন , নির্দেশনা , ম্যানুয়াল ইত্যাদির তালিকাসহ রক্ষিত তথ্যসমূহের শ্রেণিবিন্যাস ; ( গ ) কর্তৃপক্ষের নিকট হতে কোনো ব্যক্তি যে সকল শর্তে লাইসেন্স , পারমিট , অনুদান , বরাদ্দ , সম্মতি , অনুমোদন বা অন্য কোনো প্রকার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন , এর বিবরণ এবং উক্তরূপে শর্তের কারণে তার সাথে কোনো প্রকার লেনদেন বা চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজন হলে সে সকল শর্তের বিবরণ । ( ঘ ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রদত্ত সুবিধাদির বিবরণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম , পদবি , ঠিকানা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফ্যাক্স নম্বর ও ই – মেইল ঠিকানা ।
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
- (৪ ) কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিবে এবং প্রয়োজনে , ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমর্থনে যুক্তি ও কারণ ব্যাখ্যা করিবে ।
- ( ৫ ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদন বিনামূল্যে সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য সহজলভ্য করতে হবে এবং এর কপি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয়ের জন্য মজুদ রাখতে হবে ।
- ( ৬ ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত সকল প্রকাশনা জনগণের নিকট উপযুক্ত মূল্যে সহজলভ্য করিতে হইবে ।
- ( ৭ ) কর্তৃপক্ষ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো পন্থায় প্রচার বা প্রকাশ করিবে ।
- ( ৮ ) তথ্য কমিশন প্রবিধান দ্বারা , কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য প্রকাশ , প্রচার ও প্রাপ্তির জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ তা অনুসরণ করবে ।
৬। কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয় এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন , কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো নাগরিককে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে না । যথা :
- ( ক ) কোনো তথ্য প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা , অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হইতে পারে এইরূপ তথ্য ;
- ( খ ) পররাষ্ট্রনীতির কোনো বিষয় যাহার দ্বারা বিদেশি রাষ্ট্রের অথবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বা আঞ্চলিক কোনো জোট বা সংগঠনের সহিত বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হইতে পারে এইরূপ তথ্য ;
- ( গ ) কোনো বিদেশি সরকারের নিকট হইতে প্রাপ্ত কোনো গোপনীয় তথ্য ;
মানবাধিকারের ধারণা Concept of Human Rights :
মানবাধিকারের ধারণা অত্যন্ত সুপ্রাচীন । আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই ধারণা বেশ গুরুত্ব লাভ করেছে । বর্তমানে মানবাধিকার বিশ্বমানবতা ও সভ্যসমাজ কর্তৃক স্বীকৃত । মৌলিক অধিকারই মানবাধিকারের ভিত্তি । তবে মানবাধিকার মৌলিক অধিকার থেকে লাভ করলেও এর বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপী । ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত ও ঘোষিত হয় । শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ওরেন কেসিনো মানবাধিকারসমূহ প্রণয়ন করেন । এদিকে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণায় বলা হয় , অধিকারের প্রশ্নে মানুষ সর্বদা স্বাধীন ও সাম্য অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং সবসময় সেভাবেই থাকতে চায় ( Men are born and always continue free and equal in respect to their rights . ) ।
জাতিসংঘের ঐ ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয় , মানবাধিকার ভোগের ক্ষেত্রে জাতি , ধর্ম , বর্ণ , নারী – পুরুষ , ধনী – গরিব যে ধরনের নাগরিক হোক না কেন , রাজনৈতিক মতামত – পদমর্যাদাই হোক না কেন , যে দেশের নাগরিক হোক না কেন , অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য করা যাবে না । জাতিসংঘের মানবাধিকারের এ সর্বজনীন ঘোষণাই মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ । ব্যক্তি সমাজ জীবনে , রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেসব সুযোগ – সুবিধার দাবিদার হয় এবং যা ব্যতীত তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না তাই মানবাধিকার । অধ্যাপক আপাদোরিয়া ( Prof. Appadoria ) বলেন , “ মানবাধিকার প্রকৃতির শাশ্বত ও সর্বজনীন রূপ যা মানবিকতার পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন । ” এস . পি . হান্টিংটন ( S. P. Hungtington ) বলেন , “ মানবাধিকার মানুষের সহজাত , সমান সুযোগ সৃষ্টি করে এবং ফলে মানুষের মানবিকতা পরিপূর্ণতা লাভ করে । ” ( ” The human right are interest , producing equal opportunity a perfect one . ” )
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
জাতিসংঘের মতে , “ মানবজীবনের জন্য যেসব সুযোগ – সুবিধা ভোগের দাবি করা হয় , যা ছাড়া ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না তাই মানবাধিকার । ” Encyclopeia Britanica- তে মানবাধিকারকে প্রাকৃতিক আইনের আওতায় প্রাপ্য মানুষের অধিকার হিসেবে অভিহিত করে বলা হয়েছে- “ Rights thought to belong to the individual under natural law as a consequence of his being human . ” অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে মানব পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সহজাত , সর্বজনীন ও অহস্তান্তরযোগ্য কিছু অধিকারই হলো মানবাধিকার । অবাধ ও মুক্তচিন্তা , স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ , প্রতিবাদের অধিকার মানবাধিকারের মূলকথা । মানবাধিকার একই সাথে জন্মগত ও প্রাকৃতিক অধিকার । অর্থাৎ মানুষ হিসেবে ব্যক্তি যে সম্মান , শ্রদ্ধা , অধিকার ও নিরাপত্তা লাভ করে তাই মানবাধিকার । বস্তুত বিশ্বমানবের সংগঠন জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত অধিকারসমূহ মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত । এখানে উল্লেখ্য যে , নাগরিক অধিকার বা মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সীমিত ।
আর মানবাধিকার সমাজ , রাষ্ট্র ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিস্তৃত । মানবাধিকার ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার । এ অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয় । মানবাধিকার সর্বজনীন । মানবাধিকার অলঙ্ঘনীয় ।মানবাধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব সমাজ এবং রাষ্ট্রের । মানবাধিকার মানুষের জন্মগত ও প্রাকৃতিক অধিকার । জাতি , ধর্ম , বর্ণ , গোত্র , নারী – পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য এ অধিকার অপরিহার্য ।
অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক নিম্নরূপ:
১৷ অভিন্ন উৎস: অধিকার ও কর্তব্যের উৎস রাষ্ট্র অধিকার ও কর্তব্যের সংরক্ষক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র থেকে অমির অধিকার পাই এবং বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করি। কাজেই রাষ্ট্রের মধ্যেই। অধিকার ও কর্তব্য নিহিত।
২। একই বন্ধুর দুটো দিক অধিকার ও কর্তব্য হচ্ছে একই বর। দুটো দিকের মত। অধিকার ভােগের সাথে সাথে নাগরিককে কর্তব্য পালন করতে হয়৷ কারণ অধিকার ভােগের মাধ্যমে নাগরিকগণ । রাষ্ট্রের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করে, তাকে কর্তব্য বলা হয়৷ উদাহরণস্বরূপ : শিক্ষালাভ করা নাগরিকের অধিকার, আবার। সন্তানদের শিক্ষিত করা কর্তব্য।
৩। একজনের অধিকার অন্যের কর্তব্য অধিকার সংরক্ষণের। জন্য কর্তব্য পালন অবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা একজন নাগরিকের অধিকার; এক্ষেত্রে অন্য সবার। কর্তব্য হচ্ছে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া। অধ্যাপক হবহাউস। (Hobhouse) তাই বলেছেন, ধাক্কী না খেয়ে পথ চলার অধিকার। যদি অমাির থাকে, তাহলে তোমার কর্তব্য হল আমাকে প্রয়োজন মতাে পথ ছেড়ে দেয়া।
নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে
8৷ অধিকারের পরিধি কর্তব্যবোধ দ্বারা সীমাবদ্ধ: অধিকার অবাধ ও সীমাহীন হলে স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম হবে৷ ফলে সবল অধিকার ভােগ করবে, আর দুর্বল বঞ্চিত হবে। কাজেই একজনের অধিকার, অন্যান্য সকলের কর্তব্যবােধ দ্বারা সীমাবদ্ধ।।
৫। নৈতিক অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক নৈতিক অধিকার ভােগ করলে, নৈতিক কর্তব্য পালন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, পিতামাতা সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা দেয়। আবার পিতা-মাতা। যখন বৃদ্ধ হন সন্তানরা তাঁদের সেবা-যত্ন করে।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২২ ১০ম সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান- নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের সহায়তা করে ব্যাখ্যাকরণ।
আরো দেখুন-
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।