জন্ম ও মৃত্যুহার তারতম্যের বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব বর্ণনা
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি তোমরা খুবই ভালো আছো। তোমরা কি ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছো? কিংবা এসাইনমেন্টটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে বলবো তোমরা ঠিক ওয়েবসাইটে এসেছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান– জন্ম ও মৃত্যুহার তারতম্যের বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব বর্ণনা।
মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২০তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের নিকট জমা দিবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরা মূল্যায়ন করে যথাযথ নিয়মে সংরক্ষণ করবেন। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের অ্যাসাইমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ :
জন্ম ও মৃত্যহার তারতম্যের বিভিন্ন কারণের সাথে মিল রেখে একটি সচিত্র পোস্টার উপস্থাপন করো। পোস্টারে প্রতিটি চিত্রের পাশে তার কারণ ও প্রভাব সংক্ষেপে লিখতে হবে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান
জন্মহার :
সাধারণত জন্মহার বলতে কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (এক বছরে) প্রতি হাজার নারী মোট কত সংখ্যক জীবিত সন্তান জন্ম দিয়েছে সে সংখ্যাকে বোঝায়। জন্মহার বৃদ্ধি জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে জন্মহার বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে জন্মহার কম।
জন্মহার তারতম্যের কারণ ও প্রভাব :
পৃথিবীর সব দেশে জনসংখ্যা সমান নয়। কোনো দেশে জনসংখ্যা বেশি আবার কোনো দেশে জনসংখ্যা কম। দরিদ্র দেশে জন্মহার বেশি আবার ধনী দেশে জন্মহার কম হয়ে থাকে। কেন এমন হয়? জন্মহার কম বা বেশি হলে তা সমাজ ও অর্থনীতির উপর কী প্রভাব ফেলে এ পাঠে আমরা তা জানব।
জন্মহার তারতম্যের কারণ-
বিভিন্ন কারণে জন্মহারের তারতম্য বা হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে। যেমন
জলবায়ু :
শীত প্রধান দেশের তুলনায় গ্রীষ্ম প্রধান দেশের জনগণের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বেশি। এখানে জনগণ অল্প বয়সে সন্তান জন্মদান করতে সক্ষম হয়। তাই শীত প্রধান দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম আর গ্রীষ্ম প্রধান দেশে এই হার বেশি ।
শিক্ষা :
শিক্ষার অভাবে সাধারণ মানুষ হয় অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও রক্ষণশীল। ফলে জন্মহার বৃদ্ধির কুফল বুঝতে তারা অক্ষম হয়। জন্মহার বৃদ্ধি রোধ কঠিন হয়ে পড়ে। উন্নত দেশে শিক্ষার হার বেশি। শিক্ষিত জনগণ আয়-ব্যয় ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন থাকে, তাই তারা কম সন্তান নেয়। কাজেই শিক্ষার হার বেশি হলে জন্মহার কম হয়।
বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ :
কোনো সমাজে বাল্যবিবাহ প্রচলিত থাকলে দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে জন্মহার বেশি হয়। বহুবিবাহও জন্মহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জন্ম ও মৃত্যুহার তারতম্যের বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব বর্ণনা
অনুন্নত জীবনযাত্রা :
দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা মানসম্মত হয় না। সন্তানের ভরণপোষণ,শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদিতে তাদের বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এ কারণে বেশি সন্তান জন্ম দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না।
নবজাতকের মৃত্যুহার :
যেখানে নবজাতকের মৃত্যুহার বেশি সেখানে মা-বাবা জীবিত সন্তানের আশায় অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। তাই নবজাতকের মৃত্যুহার বেশি হলে জন্মহারও বেশি হয়। এছাড়াও বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার অভাব, পুত্র সন্তান কামনা ইত্যাদি জন্মহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
জন্মহার তারতম্যের প্রভাব
জন্মহারের হ্রাস-বৃদ্ধি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। একটি দেশের ভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় যদি জন্মহার বেশি হয় তাহলে দেশটির ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বাড়বে। মানুষের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হবে। আবার বাড়তি চাহিদা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন, দেশের জাতীয় আয় কমে যায়। খাদ্য ঘাটতি, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা, পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। জীবনযাত্রার মান হয় নিম্ন।
মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কেননা, জন্মহার বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হয়ে জীবাণু দ্রুত ছড়ায়। সুতরাং ভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জন্মহার বেশি হলে তা যেকোনো দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। অপরদিকে একটি দেশে যে পরিমাণ ভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ থাকে, তার তুলনায় যদি জন্মহার কম হয় তবে কম জনসংখ্যার জন্য দেশের সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় না। অর্থাৎ দেশের সম্পদের তুলনায় জন্মহার কম তাও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। এজন্য দেশের সম্পদের কথা বিবেচনা করে জন্মহার নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
মৃত্যুহার :
সাধারণত জীবনের নিঃশেষকে মৃত্যু বলে। মৃত্যুহারও প্রতি হাজারে পরিমাপ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট বছরে নির্দিষ্ট বয়সের লোক প্রতি হাজারে কতজন মারা যায় তা দ্বারা মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয়। মৃত্যুহার কমে যাওয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মৃত্যুহার তারতম্যের কারণ
বিভিন্ন কারণে মৃত্যুহারের তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন-
ভৌগোলিক কারণ :
ভৌগোলিক অবস্থান ও উপাদান মৃত্যুহারকে প্রভাবিত করে। যেসব দেশ বা এলাকার অবকাঠামো, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু চরমভাবাপন্ন নয়, সেসব দেশ বা এলাকায় মৃত্যুহার কম।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা :
যেসব স্থানে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, খরা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী প্রভৃতি বেশি সেসব স্থানে মৃত্যুহার বেশি। আবার যেসব এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ বা বিভিন্ন নির্মাণ কাজে সাবধানতা অবলম্বনের অভাব রয়েছে সেসব এলাকাতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুহার বেশি।
বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি :
যেসব এলাকায় কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, হুপিংকাশি, হাঁপানি ও বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের (যেমন-জিকা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, মার্কস ভাইরাস ইত্যাদি) প্রকোপ বেশি সেসব এলাকায় মৃত্যুহার বেশি।
বয়স :
বয়স কাঠামো মৃত্যুহারকে প্রভাবিত করে। যে সমাজে অল্প বয়সী (শিশু) ও অধিক বয়সী (বৃদ্ধ) লোক বেশি, সে সমাজে মৃত্যুহার বেশি।
দারিদ্র্য :
দরিদ্র জনগণ পুষ্টিসম্মত খাবার খেতে পারে না। উন্নত স্বাস্থ্যসেবাও নিতে পারে না। জীবনযাত্রার মান থাকে নিম্ন। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি সহজেই তাদেরকে আক্রমণ করে এবং মারাও যায় বেশি। এজন্য উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে মৃত্যুহার বেশি।
যুদ্ধবিগ্রহ :
বিশ্বের যেসব দেশে যুদ্ধবিগ্রহ বেশি সেসব দেশে মৃত্যুহার বেশি। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু এলাকায় যুদ্ধবিগ্রহের কারণে প্রচুর লোক মারা যাচ্ছে।
মৃত্যুহার তারতম্যের প্রভাব
মৃত্যুহার তারতম্যে জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটে থাকে। শিশুমৃত্যু, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুসহ নানা ধরনের অপরিণত বয়সের মৃত্যু দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনের ব্যাপক ক্ষতি করে। উচ্চ শিশু মৃত্যুহারের কারণে মা-বাবা আরও বেশি সংখ্যক ছেলে-মেয়ে জন্মদানে উৎসাহিত হয় । মৃত্যুহার বেশি হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়।
পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে জীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। মোটকথা অধিক মৃত্যুহার যে কোনো দেশের জন্য খারাপ ফল বয়ে নিয়ে আসে। অন্যদিকে নিম্ন মৃত্যুহার জনসংখ্যার গঠন, বয়স, বণ্টন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সহায়তা করে। একসময়ে আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুহার ছিল খুবই বেশি। বর্তমানে শিশু মৃত্যুহার অনেক নিচে নেমে এসেছে।
জন্ম ও মৃত্যুহার তারতম্যের বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব বর্ণনা
আরো দেখুন-
- ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি ২০তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১
- Son of the Soil – Class 6 20th week English assignment solution
- সপ্তম শ্রেণির ২০তম সপ্তাহের ইংরেজি এসাইনমেন্টের উত্তর; Class 7 20th week English assignment solution
- A letter to my friend telling her how I feel when I listen to Bangabandhu’s historic 7 March Speech.
- Class 9 Assignment 20th Week English Answer
- কোষ বিভাজনকালে ক্রোমজোমে পরিবর্তনের সবগুলো ধাপ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।