ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কি এবং এর কারণ ও ফলাফল
নবম শ্রেণির কোমলমতী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজ এসেছি তোমাদের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের চতুর্থ অধ্যায় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গঠন থেকে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কাকে বলে এবং এসবের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা করবো। এছাড়াও সপ্তম অধ্যায় জনসংখ্যা থেকে স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের পদ্ধতি এবং জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব বিশ্লেষণ করবো। এই আলোচনা শেষে তোমরা, উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে পারবে।
এই আলোচনা শেষে তোমরা ৯ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের ৫ম এসাইনমেন্ট এর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে পারবে-
১। ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কাকে বলে ? ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।
২। স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের পদ্ধতি লিখ। জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
১.
ভূমিকম্প :
পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ প্রাকৃতিক কোনো কারনে কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য
হঠাৎ কেঁপে উঠে, ভূত্বকের এরূপ আকস্মিক কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
আগ্নেয়গিরি :
ভূত্বকের শিলাস্তর সর্বত্র একই ধরনের কঠিন বা গভীর নয়। কোথাও নরম আবার
কোথাও কঠিন। কোন কোন সময় ভূগর্ভের চাপ প্রবল হলে শিলাস্তরের কোন দুর্বল অংশ ফেটে
যায় বা সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের দুর্বল অংশের ফাটল বা সুরঙ্গ দিয়ে ভূগর্ভের উষ্ণ বায়ু,
গলিত শিলা, ধাতু, ভস্ম, জলীয়বাষ্প, উত্তপ্ত পাথরখণ্ড, কাদা, ছাই প্রভৃতি প্রবলবেগে উৎক্ষিপ্ত হয়।
ভূপৃষ্ঠে ওই ছিদ্রপথ বা ফাটলের চারপাশে ক্রমশ জমাট বেঁধে যে যে উঁচু মোচাকৃতি পর্বত
সৃষ্টি করে, তাকে আগ্নেয়গিরি বলে।
ভূমিকম্পের প্রধান কারণগুলো হলো :
১।পৃথিবীর উপরিভাগ কতগুলো পলক বা প্লেট দ্বারা গঠিত।
এই প্লেট সমূহের সঞ্চালন প্রধানত ভূমিকম্প ঘটিয়ে থাকে।
২।অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্লেট সমূহের উপর ভূমিকম্পন সৃষ্টি হয়।
অপ্রধান কারণসমূহ :
১। শিলাচ্যুতি বা শিলা থেকে ভাঁজের সৃষ্টি : কোন কারণে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে বড় ধরনের
শিলাচ্যুতি ঘটলে বা সিলেটের সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। ১৯৩৫ সালে বিহারে এবং
৯৫০ সালে আসামে এই কারণেই ভূমিকম্প হয়।
২। তাপ বিকিরণ : ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে
ফাটল ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
৩। ভূগর্ভস্থ বাষ্প : পৃথিবীর অভ্যন্তরে অত্যধিক তাপের কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হয়।
এই বাস্তব ভূত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেওয়ার ফলে প্রচন্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়।
৪। ভূগর্ভস্থ চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস : অনেক সময়ে ভূগর্ভে হঠাৎ চাপের হ্রাস বৃদ্ধি হলে
তার প্রভাবে ভূমিকম্প হয়।
৫। হিমবাহের প্রভাব : হঠাৎ করে হিমবাহ পর্বত গাত্র থেকে নিচে পতিত
হলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে উঠে এবং ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের ফলাফল :
ভূকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং
বহু ধ্বংসলীলা সাধিত হয়। ঘরবাড়ি, ধন-সম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়।
এতে জীবনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। নিচে ভূমিকম্পের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১।ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের মধ্যে অসংখ্য ভাজ, ফাটল বা ধ্বসের
সৃষ্টি হয়। নদীর গতিপথ পাল্টে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ১৭২৭ সালে আসামে
ব্যাপক ভূমিকম্প হয়। তাতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়।
ফলে নদী তার গতিপথ পাল্টে বর্তমানে যমুনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে।
২।ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় সমুদ্রতল উপরে উত্থিত হয়,
পাহাড় পর্বত বা দ্বীপের সৃষ্টি করে। আবার কোথাও স্থলভাগের অনেক স্থান
সমুদ্র তলে ডুবে যায়। ১৮৯৯ সালে ভারতের কচ্ছ উপসাগর উপকূলে প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার
স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়।
৩।ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তন হয় বা কখনো
কখনো বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো নদী শুকিয়ে যায়। আবার সময় সময়
উচ্চভূমি অবনমিত হয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে
দিবং নদীর গতি পরিবর্তন হয়।
৪।ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় পর্বতগাত্র থেকেই হিমানী সম্প্রপাত
হয় এবং পর্বতের উপর শিলা পাত হয়।
৫।ভূমিকম্পের ফলে হঠাৎ করে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর কারণ :
১। ভূত্বকে দুর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরে গলিত ম্যাগমা,
ভস্ম, ধাতু প্রবল বেগে বের হয়ে অগ্নুৎপাত ঘটায়।
২।যখন ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে যায় তখন ভূগর্ভের শিলা সমূহ স্থিতিস্থাপক অবস্থা
থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয়। এতে শিলার আয়তন বৃদ্ধি পায় ।
৩। কখনো ভূত্বকের ফাটল দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল এবং সমুদ্রের পানি
ভূগর্ভে প্রবেশ করলেও প্রচন্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়। ফলে আয়তন বৃদ্ধি
পেয়ে ভূত্বক ফাটিয়ে দেয়। তখন ওই পাথরের ভিতর দিয়ে পানি, বাষ্প, তপ্ত
ও প্রভৃতি নির্গত হয়ে অগ্নুৎপাত ঘটায়।
৪। ভূগর্ভে নানা রাসায়নিক ক্রিয়া ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে
প্রচুর তাপ বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাতে ভূঅভ্যন্তরের
চাপ বৃদ্ধি পায় এবং অদ্ভুত অগ্নুৎপাত ঘটায়।
৫। ভূ-আন্দোলনের সময় পার্শ্বচাপে এ ভূত্বকের দুর্বল
অংশ ভেদ করে উত্তপ্ত লাভা উপরে উত্থিত হয়।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর ফলাফল :
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক পরিবর্তন
সাধিত হয়। অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন স্থানে এর
দ্বারা সামান্য সুফলও পাওয়া যায়। নিম্নে আগ্নেয়গিরির ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো :
১। অনেক সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত পদার্থ চারদিকে
সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে। ভারতের দক্ষিণাত্যের
কৃষ্ণ মৃত্তিকাময় মালভূমি এরূপ নির্গত লাভা দিয়ে গঠিত।
২। সমুদ্র তলদেশের অনেক আগ্নেয়গিরি আছে। এ থেকে
নির্গত লাভা সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এভাবে সৃষ্টি একটি আগ্নেয় দ্বীপ।
৩। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠে কোন অংশ ধ্বসে গভীর গহ্বরের
সৃষ্টি হয়। ১৮৮৩ সালে সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের মধ্যবর্তী
অংশে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এক বিরাট গহবর দেখা যায়।
৪। মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পানি জমে সৃষ্টি করেআগ্নেয় হ্রদের
সৃষ্টি করে। আলাস্কার মাউন্ট আডাকামা, নিকারাগুয়ার কসেগায়না এই ধরনের হ্রদ।
৫। আগ্নেয়গিরির নির্গত লাভা, শিলা দ্রব্য প্রভৃতি দীর্ঘকাল ধরে একটা
স্থানে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি করে। এই ধরনের পর্বত
কে আগ্নেয় পর্বত বলে। যেমন- ইতালির ভিসুভিয়াস।
৬। অনেক সময় আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চিত হতে হতে বিস্তৃত
এলাকা নিম্ন সমভূমি তে পরিণত হয়। যেমন-উত্তর আমেরিকার স্নেক নদীর লাভা সমভূমি।
২.
স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের পদ্ধতি :
স্বাভাবিক জন্মহার নির্ণয়ের একটি বহুল প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য
পদ্ধতি হচ্ছে স্থূল জন্মহার নির্ণয়। এ পদ্ধতি হাজারে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
কোন একটি স্থান বা দেশের মোট জনসংখ্যা এবং ওই বছরের জন্মিত সন্তান
ও জনসংখ্যা জানা থাকলে স্থূল জন্মহার বের করা সহজ।
স্থূল জন্মহার=(কোনো বছরে জন্মিত সন্তানের মোটসংখ্যা)/(বছরের মধ্যকালীন মোটসংখ্যা)×১০০০
জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব বিশ্লেষণ করা হলো :
জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভূমির উপর।
একটি দেশের ভূমি সীমিত হাওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
সেই দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। বেশি খাদ্য
উৎপাদনের জন্য ভূমি অধিক ব্যবহার করা হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির
সঙ্গে সঙ্গে ভূমির ব্যবহার নিম্নোক্তভাবে দেখানো যায়-
ভূমির অধিক ব্যবহার, খন্ডিত করন প্রভৃতি কারণে দিন দিন উৎপাদন
যোগ্য ভূমি কমে যাচ্ছে। বসতি বিস্তার এর ফলে উন্মুক্ত স্থান, জলাশয়
প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। মাটিতে যেসকল অণুজীব, ক্ষুদ্র জীব বাস করে তা
বাধাগ্রস্ত হয়। দূষিত মাটিতে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। ফলে ভূমি
মরুকরণ হতে থাকে। তাই যে কোন দেশের ভূমি ব্যবহার সঠিকভাবে
করার জন্য জনসংখ্যার ভারসাম্য থাকা দরকার।
এই ছিল ৯ম শ্রেণির বিষয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের ৫ম এসাইনমেন্ট
এর আনুমানিক উত্তর। আশা করি তোমরা ৫ম এসাইনমেন্ট এর উত্তর করতে পারবে।
তোমাদের জন্য এই তথ্যটি দিয়েছে, খাদিজাতুল স্বর্ণা, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ।
নিয়মিত বাংলা নোটিশ ডট কম ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেইজ Like & Follow করে রাখুন; ইউটিউবে আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন।
Thank you