প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন
এইচএসসি ২০২২ সেশনের সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সকলেই সুস্থ আছো। ২২ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তারই সূত্র ধরে তোমাদের মধ্যে অনেকেই এইচএসসি ২০২২ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের মানসম্মত ও নির্ভুল উত্তর খুঁজছো। তোমাদের এই অন্বেষণের কথা মাথায় রেখেই আজকের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। আজকের আলোচনায় থাকছে এইচএসসি ২০২২ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর। আলোচনার বিষয়বস্তু- প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন।
আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ এর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র এসাইনমেন্টে দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব, যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ এর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র এসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট : প্রাচীন মিসরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি) :
১. প্রাচীন সভ্যতা সমূহের (মিসর, সুমেরীয়, গ্রিক, হিব্রু, রোমান) সংক্ষিপ্ত পটভূমি উল্লেখ
২. সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যা
৩. প্রাচীন সভ্যতা সমূহের ধর্মীয় বিশ্বাস উল্লেখ
৪. মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের প্রভাব ব্যাখ্যা।
এইচএসসি ২০২২ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর
বাছাইকরা নির্ভুল নমুনা উত্তরটি দেখুন-
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
একটি সভ্যতা (Civilization) হল কোন জটিল সমাজব্যবস্থা যা নগরায়ন, সামাজিক স্তরবিন্যাস, প্রতীকী যোগাযোগ প্রণালী (উদাহরণস্বরূপ, লিখন পদ্ধতি), উপলব্ধ স্বতন্ত্র পরিচয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণের মত গুণাবলি দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। সভ্যতাকে প্রায়শই আরও কিছু সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয় যেগুলোর উপর সভ্যতা নির্ভরশীল, আর সেগুলো হল কেন্দ্রীকরণ, মানুষ এবং অন্যান্য জীবের আবাসন, শ্রমের বিশেষায়িতকরণ, সাংস্কৃতিকভাবে সৃষ্ট উন্নয়ন আদর্শ, আধিপত্য স্থাপন, ভাস্কর্যের অনুরূপ স্থাপত্য, কর বা খাজনা আরোপ, কৃষির উপর সামাজিক নির্ভরশীলতা, এবং সম্প্রসারণের প্রবণতা।
প্রাচীন সভ্যতা সমূহের সংক্ষিপ্ত পটভূমি
সভ্যতার ইংরেজি শব্দ হল civilization যা ল্যাটিন শব্দ civis থেকে আগত যার অর্থ নগরে বসবাসরত কোন ব্যক্তি। এর কারণ হল, যখন কোন স্থানের মানুষ সভ্য হয়, তখন তারা কোন ছোট গোত্র বা যৌথ পরিবারের মত দলে নয় বরং নগরীর ন্যায় একটি বৃহৎ সুসংগঠিত আকারের দলে একত্রে বসবাস করে।
মিশরীয় সভ্যতার পটভুমি : Background of Egyptian civilization
মিশরীয় সভ্যতা উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা। নীল নদের নিম্নভূমি অঞ্চলে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। বর্তমানে অঞ্চলটি মিশর রাষ্ট্রের অধিগত। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে এই সভ্যতা এক সুসংহত রূপ লাভ করে। এরপর তিন সহস্রাব্দ কাল ধরে চলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশপর্ব। তিনটি মহাদেশ দ্বারা ঘিরে থাকা মিশরের ভৌগােলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরােপ মহাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে লােহিত সাগর, পশ্চিমে সাহারা মরুভূমি,দক্ষিণে সুদান ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশ। এর মােট আয়তন প্রায় চার লক্ষ বর্গমাইল।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস একাধিক স্থায়ী রাজ্য-এর ইতিহাসের একটি সুশৃঙ্খলিত ধারা। মধ্যে মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর্ব দেখা দিয়েছিল। এই পর্বগুলি অন্তর্বর্তী পর্ব নামে পরিচিত। নতুন রাজ্যের সময়কাল এই সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশপর্ব। এর পরই ধীরে ধীরে মিশরীয় সভ্যতার পতন আরম্ভ হয়। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের শেষ পর্বে একাধিক বৈদেশিক শক্তি মিশর অধিকার করে নেয়। ফারাওদের অধীনে মিশর প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেযােগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে আদি রোমান সাম্রাজ্য মিশর অধিকার করে এই দেশকে একটি রোমান প্রদেশে পরিণত করলে ফারাওদের শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।
সুমেরীয় সভ্যতার পটভূমি : Background of Sumerian civilization
মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে আক্কাদ ও দক্ষিণাংশে সুমের। এ সুমেরকে কেন্দ্র করেই আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ নাগাদ মেসোপটেমিয়ায় এক উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। জাতিতে অসেমিটিক সুমেরবাসীই আদি মেসোপটেমিয়ার জনক। আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেমিটিক জাতির একটি শাখা দজলা ফোরাত (বর্তমানে টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) উপত্যকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। সুমেরীয়রা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিল। তাদের প্রধান দেব-দেবী ছিল শামাস, এনলিল, ইশতার, নারগল ও এনকি।
সুমেরীয়দের সমাজে অর্থনৈতিক কাঠামো জটিলতার বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল না বরং সহজ-সরল ছিল। বাণিজ্য ছিল সুমেরীয়দের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক উৎস। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দু’ধরনের বাণিজ্যই চালু ছিল। বাণিজ্যে বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হতো সমুদ্র ও স্থল পথে সুমেরীয়রা নীল কান্তমনি, লালপাথর ও অন্যান্য পাথর এবং কাঠ আমদানি করতো। বয়নজাত দ্রব্য, অলংকার, যুদ্ধের অস্ত্র, প্রভৃতি রপ্তানি করতো।
হিব্রু সভ্যতার পটভূমি : Background of Hebrews civilization
হিব্রু সভ্যতার উৎস ভূমি মধ্যপ্রাচ্যে। এ সভ্যতা আজকের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল অঞ্চল কেন্দ্রিক গড়ে ওঠেছিল। জাতিগত ভাবে হিব্রুরা ছিল একটি মিশ্রিত জাতি। কুটনীতি, স্থাপত্য এবং চিত্রকলার দিক থেকে হিব্রুরা সভ্যতার ইতিহাসে খুব অল্পই ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু নৈতিকতা ও ধর্মীয়ক্ষেত্রে বিশ্বসভ্যতায় হিব্রুদের অবদান ছিল যুগান্তকারী।
হিব্রুদের মূল নামের উৎপত্তিগত শব্দ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রচলিত একটি মতে, খাবিরু বা হাবিরু নাম থেকেই হিব্রু হয়েছে। হিব্রু অর্থ বিদেশী, নিম্নবংশীয় বা যাযাবর। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতেই হিব্রুদের আদিবাস ছিল আরবভূমিতে। তাদের প্রথম বসতি গড়ে ওঠে উত্তর-পশ্চিম মেসোপটেমিয়াতে। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দে ইব্রাহীম (আ:) এর নেতৃত্বে হিব্রুদের একটি দল এখানে বসতি গড়ে তোলে। পরবর্তীতে ইব্রাহীম (আ:) এর ছেলে ইসমাইল (আ:) এর নেতৃত্বে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় থেকে তারা ইসরাইলি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
গ্রীক সভ্যতার পটভূমি : Background of Greek civilization
গ্রিসের ইতিহাস বলতে বোঝায় গ্রিক জাতি এবং অতীতে তাদের দ্বারা বিজীত অঞ্চল তথা বর্তমান গ্রিস রাষ্ট্রের ইতিহাস সংক্রান্ত অধ্যয়ন। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রিস জাতি অধ্যুষিত ও শাসিত অঞ্চলের সীমারেখায় নানা পরিবর্তন এসেছে। এই কারণে গ্রিসের ইতিহাসেও বিভিন্ন প্রকার বহিরাগত উপাদান এসে মিশেছে। গ্রিসের ইতিহাসের প্রতিটি যুগের সুনির্দিষ্ট লিখিত বিবরণ বিদ্যমান।
প্রথম আদি গ্রিক উপজাতিটি মাইসেনিয়ান নামে পরিচিত। এরা খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের শেষ ভাগে এবং দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে গ্রিসে মূল ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করে। মাইসেনিয়ান উপজাতি যখন এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছিল, তখন এখানে একাধিক অ-গ্রিকভাষী ও দেশীয় আদি-গ্রিক উপজাতিগুলি বাস করত। এরা খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম সহস্রাব্দ থেকে এই অঞ্চলে কৃষিকার্য করে আসছিল।
ভৌগোলিক বিস্তারের মধ্যগগনে গ্রিক সভ্যতা গ্রিস থেকে মিশর ও পাকিস্তানের হিন্দুকুশ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। এই সময় থেকেই গ্রিক সংখ্যালঘুরা পূর্বতন গ্রিক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে (যেমন: তুরস্ক, ইতালি, ও লিবিয়া, লেভ্যান্ট ইত্যাদি অঞ্চলে) বসবাস করছেন। বর্তমানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রিক অভিনিবেশকারীদের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে অধিকাংশ গ্রিকেরা ১৮২১ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত গ্রিস দেশ ও সিরিয়ায় বসবাস করেন।
রোমীয় সভ্যতার পটভূমি : Background of Romanian civilization
গ্রিসের সভ্যতার অবসানের আগেই ইতালিতে টাইবার নদীর তীরে একটি বিশাল সম্রাজ্য ও সভ্যতা গড়ে ওঠে। রোমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা রোমান সভ্যতা নামে পরিচিত। প্রথম দিকে রোম একজন রাজার শাসনাধীন ছিল। এ সময় একটি সভা ও সিনেট ছিল। রাজা স্বৈরাচারী হয়ে উঠলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ৫১০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ রোমে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রোমান সভ্যতা প্রায় ছয়শ বছর স্থায়ী হয়েছিল।
সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যা
মিসরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যা করা হলো-
মিসরীয় সভ্যতা
ইতিহাসের জনক হেরোডেটাস মিশরকে বলেছেন ‘নীলনদের দান’। কেননা নীলনদকে ঘিরেই গড়ে ওঠে মিশরীয় সভ্যতা। মিশরীয়দের প্রধান দেবতা ছিল সূর্যদেবতা, নাম ‘আমন’। মিশরীয় রাজা ফারাওদের ধারণা, তারা সূর্য দেবতার বংশধর। তাই তারা অমর এবং এই বিশ্বাসের দরুন তারা মৃত্যুর পর নিজেদের দেহ মমি করে রাখতো।
আরেকজন দেবতা ছিলেন ‘ওসাইরিস’, তিনি প্রাকৃতিক শক্তি, শস্য ও নীলনদের দেবতা ছিলেন। ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ বহু দেবতার বদলে এক দেবতা অর্থাৎ সূর্যদেবতার পূজা করার প্রচলন করেন। তিনি সূর্যদেবতার নাম বদলে ‘আতেন’ রাখেন এবং দেবতার নামের সাথে মিলিয়ে নিজের নাম দেন ‘আখেনাতেন’।
মূর্তি নির্মাণে মিশরীয়রা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আখেনাতেন ও রানী নেফারতিতির চুনাপাথরের মূর্তি দেখলে এখনো তাদের জীবন্ত মনে হয়। মিশরের চিত্রলিপির নাম ‘হায়ারোগ্লিফিক’, এটি গ্রিকদের দেয়া নাম, যার অর্থ ‘পবিত্র লিপি’। নলখাগড়া জাতীয় ঝোপ ‘প্যাপিরাস’ থেকে কাগজ তৈরি করে লেখা হতো। সম্রাট নেপোলিয়ন মিশরীয় সভ্যতার ‘রোজেটা’ নামক পাথর খুঁজে পান, যা থেকে পরবর্তীতে হায়ারোগ্লিফিক ভাষার পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুনিয়ায় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রের বিকাশ ছিল মিশরীয়দের প্রথম সাফল্য। পাশাপাশি মিশরীয়রা পাটিগণিত ও জ্যামিতির উদ্ভাবন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। কারণ ত্রিকোণ পিরামিড তৈরিতে জ্যামিতির জ্ঞান থাকা জরুরি ছিল।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
সুমেরীয় সভ্যতা
গ্রিক শব্দ ‘মেসোপটেমিয়া’র অর্থ ‘দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি’। মেসোপটেমিয়ার পূর্বদিকে টাইগ্রিস বা দজলা নদী, এবং পশ্চিমে ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদী। মেসোপটেমিয়ার অনেকগুলো সভ্যতার মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা সবচেয়ে প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে এর জন্ম। এ সভ্যতার লিখন পদ্ধতির নাম ‘কিউনিফর্ম’ (Cuneiform), যা কাদামাটির নরম শ্লেটে লেখা হতো। সুমেরের প্রাচীন শহর নিপ্পুরের এক মন্দিরে চার হাজার মাটির চাকতির একটি লাইব্রেরি পাওয়া গেছে। সুমেরীয়রা অনেক দেবতায় বিশ্বাস করলেও তাদের মধ্যে পরকালের ধারণা ছিল না, তাই এ সভ্যতা থেকে কোনো মমি পাওয়া যায় না। এদের প্রধান দেবতা ছিলেন সূর্যদেব ‘শামাশ’।
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে সুমেরীয়রা পিকটোগ্রাফিক নামে লিখন পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটায়। তারা বছরকে ১২ মাসে, দিন-রাত্রিকে ঘন্টায় এবং ঘণ্টাকে মিনিটে বিভক্ত করেছিল। দিন ও রাতের সময় নিরূপণের জন্য সুমেরীয়রা পানিঘড়ি ও স্বর্ণঘড়ি আবিষ্কার করে। তারাই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ১দিন ও ৭ দিনে ১ সপ্তাহ নিয়ম প্রবর্তন করে। সুমেরীয়রা সূর্য ও চন্দ্রের আপেক্ষিক অবস্থিতি নির্ণয় করেছিল এবং গ্রহের সময় নিরূপণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
হিব্রু সভ্যতা
বর্তমান প্যালেস্টাইন অঞ্চল ঘিরে প্রাচীনকালে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা। হিব্রু একটি সেমেটিক ভাষা। এই ভাষায় কথা বলা লোকেরাই হিব্রু নামে পরিচিত। হিব্রুরা সারা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এরাই প্রথম সারা পৃথিবীকে একেশ্বরবাদের ধারণা দেয়। সারা দুনিয়ার সমস্ত ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের সূতিকাগার বলা চলে এই হিব্রু সভ্যতাকে।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
গ্রিক সভ্যতা
ভৌগলিক দিক থেকে গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও ধর্মের কারণে সকলের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল। মানুষ ও পৃথিবীর উৎস সম্বন্ধে ভাবতে গিয়ে গ্রিসে ‘সফিস্ট’ (Sophist) নামের একশ্রেণীর যুক্তিবাদী দার্শনিকের উদ্ভব হয়। বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিস এই সফিস্টদের দ্বারাই অনুপ্রাণিত ছিলেন।
বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসকে ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শাসকগোষ্ঠী হেমলক লতায় তৈরি বিষ খাইয়ে হত্যা করে। তার ছাত্র দার্শনিক প্লেটো ‘রিপাবলিক’ বইটি লেখেন এবং সক্রেটিসের বক্তব্য ও শিক্ষা নিয়ে লেখেন ‘ডায়ালগস অব সক্রেটিস’ নামের আরেকটি গ্রন্থ। নাট্যকার এসকাইলাস লেখেন ‘প্রমিথিউস বাউণ্ড’ এবং ‘আগামেমনন’ নামের দুটি নাটক। একশোটিরও বেশি নাটক লেখেন সফোক্লিস। হেরোডেটাস হয়ে ওঠেন ইতিহাসের জনক। চিকিৎসাবিজ্ঞানী ছিলেন ‘হিপোক্রেটাস’। চাঁদ যে সূর্যের আলোতেই আলোকিত হয় এই ধারণা দেন এনাক্সোগোরাস। আর ছিলেন এরিস্টটল, পিথাগোরাস এবং টলেমির মতো মহাত্মারা। এ সভ্যতায়ও প্রচুর জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হতো।
রোমীয় সভ্যতা
রোমান সভ্যতা প্রায় ৬০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। রোম শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, স্থাপত্য সর্বক্ষেত্রে গ্রিকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সে যুগে সাহিত্যে অবদানের জন্য বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার মলিয়ে প্লুটাস ও টেরেন্সের বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা মিলনান্তক নাটক রচনায় কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। রোমান দর্শনে সিসেরো, লুক্রেটিয়াস (খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৯৮-৫৫) তাঁদের সুচিন্তিত দার্শনিক মতবাদ দ্বারা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রুমে স্টোইকবাদী দর্শন যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। ১৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ রোডস দ্বীপের প্যানেটিয়াস এই মতবাদ রোমে প্রথম প্রচার করেন।
প্রাচীন সভ্যতা সমূহের ধর্মীয় বিশ্বাস
মিসরীয় ধর্ম বিশ্বাসঃ
প্রাচীন মিশরীয় সমাজে ধর্মের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব ছিল অত্যন্ত প্রকট। রাজা বা ফারাও ছিল প্রধান ধর্মীয় নেতা। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল “আমন রে’ (Ammon Re)। নীলদের দেবতা নামে খ্যাত ছিল ওসিরিস (Osiris)। মিশরীয়রা আল্লু অবিনশ্বরতা ও পূনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিল। তাদের ধারণা ছিল দেহ ছাড়া আত্মঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভে বঞ্চিত হবে। এজন্যই তারা ফারাও বা সম্রান্ত ব্যক্তিদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য। বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে মমি প্রস্তুত করত। মমিকে যুগ পরস্পরায় অক্ষত রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় সমাধি স্তম্ভ পিরামিড তবে ধর্ম বিশ্বাসে ন্যায় অন্যায়ের বা পাপ-পূণ্যের বিশ্বাস ও জড়িত ছিল। মিশরীয় সমাজে পুরােহিতদের দৌরাত্মছিল ব্যাপক। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭৫ অব্দে রাজা চতুর্থ আমেনহােটেপের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। তিনি প্রধান পুরােহিতদের মন্দির থেকে বহিস্কার করে একক দেবতা এটন (Aton) (বা একেশ্বর) এর পূজা করার নির্দেশ দেন।
সুমেরীয় ধর্ম বিশ্বাসঃ
সুমেরীয়রা অনেক দেব দেবীতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাদের এক একটি দেবতা এক একটি নামে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত দেবতা শামাশ (সূর্যদেবতা), এনলিল বৃষ্টি ও বায়ুর দেবতা এবং ইশতা নারী জাতির দেবতা নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তাদের প্রধান দেবতা ছিল নাগাল। সুমেরীয় সভ্যতায় মিশরীয় সভ্যতার অনেক প্রভাব থাকলেও মিশরীয়দের। মতাে তাদের মধ্যে পরকালের ধারণা বা পুর্নরুজ্জীবন, (স্বর্গ-নরক) ধারণার জন্ম লাভ করেনি। সম্ভবতঃ এই কারণে সুমের অঞ্চলে মৃতদেহকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার অট্টালিকা, সমাধি বা মমির প্রবণতা দেখা যায় না। তারা মৃতদেহকে কবর দিতাে।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
হিব্রু ধর্ম বিশ্বাসঃ
প্যালেস্টাইনকে কেন্দ্র করে হিব্রু জাতির উত্থান সভ্যতার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা। হিব্রু ধর্মের (ইহুদী জাতির) ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা ওল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament)। মুসা (আ) এর নেতৃত্বে তারা একেশ্বরবাদের প্রতীক হিসেবে যেহােভা’র আরাধনায় আকৃষ্ট হয়। মুসার মৃত্যুর পর হিব্রু ধর্ম কুসংস্কারে পতিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দে পারস্যের হাতে জেরুজালেমের পতন ঘটলে হিব্রুরা পারস্যের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্দীদশায় থাকার পর এক পর্যায়ে হিব্রুদের মধ্যে নব চেতনার উদ্ভব হয়। এ যুগে ইহুদীরা জরথুস্ত্র ধর্মের প্রভাবে আসে এবং আবার একেশ্বরবাদে আকৃষ্ট হয়। তাই ইসলামের মতাে ইহুদী ধর্মও একেশ্বরবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
গ্রীক ধর্ম বিশ্বাসঃ
গ্রীকদের কোন পবিত্র বই, বা ধর্মতত্ত্ব, বা ধর্মীয় এবং নৈতিক আদেশ ছিল না। যাজকরা এখানে একটি শক্তিশালী কর্পোরেশন গঠন করেননি এবং উদাহরণস্বরূপ মিশরে যেমন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেননি। যদি মিশরীয় পাদ্রিরা এমন পরিবেশে ছিল যেখানে ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তা, ঔষধ, গণিতের চাষাবাদ করা হতো, যদি ইসরাইলি পাদ্রীরা মানুষের নৈতিক শিক্ষার জন্য লড়াই করত, তাহলে গ্রীক পুরোহিতরা ছিল শুধুমাত্র অনুষ্ঠান, বানানকারক এবং ত্যাগের সংগঠক। অতএব, এখানে অনেক ধর্মীয় ধারণা শব্দের প্রকৃত অর্থে ধর্মতাত্ত্বিকদের দ্বারা নয়, কবিদের দ্বারা প্রণীত হয়েছিল – প্রাথমিকভাবে হোমার এবং হেসিওড।
হেরোডোটাস পরে লিখেছিলেন যে হোমারের আগে গ্রীকদের দেবতা, তাদের জীবন, সম্পর্ক এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এইভাবে, কেউ এক ধরনের ঘটনার কথা বলতে পারে – “হোমেরিক ধর্ম”, যার জন্য আইওনিয়ান গায়িকার কবিতাগুলি একটি পবিত্র বইয়ের মতো কিছু হিসাবে কাজ করেছিল।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
রােমীয় ধর্ম বিশ্বাসঃ
রােমানরা গণপ্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে শাসনকার্যে ধর্মীয় প্রভাব বা পুরােহিত তন্ত্র পাকাপােক্ত হয়ে বসতে পারেনি। তাদের দেবদেবীর মধ্যে গ্রীকদের মতাে মানবিক গুণাবলী আরােপিত হয়। এক্ষেত্রে গ্রীক ধর্মের সঙ্গে রােমীয় ধর্মের বৈসাদৃশ্য থেকে সাদৃশ্যই বেশী পরিলক্ষিত হয়। বিখ্যাত গ্রীক দেবতা জিউস রােমানদের নিকট তা আকাশের দেবতা জুপিটার হিসেবে খ্যাত। গ্রীক দেবতা এথেনার জায়গায় রােমীয় দেবতা মির্নাভা স্থান দখল করে। রােমের প্রেমের দেবতা ছিলেন ভেনাস। বাতাস এবং সমুদ্রের দেবতা নেপচুন রােমানদের নিকট খুবই জনপ্রিয় ও শক্তিশালী ছিল। রােমীয় ধর্ম চর্চা ছিল রাজনৈতিক ও জাগতিক।
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের প্রভাব ব্যাখ্যা
মিসরীয় সভ্যতা
প্রাচীন সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। ধর্ম, চিন্তা, শিল্প, ভাস্কর্য, লিখন পদ্ধতি, কাগজের আবিষ্কার, জ্ঞান বিজ্ঞানচর্চা—সবকিছুই তাদের অবদানে সমৃদ্ধ। মিশরীয়দের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তাদের জীবন ধর্মীয় চিন্তা ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রাচীন মিশরীয়দের নানান কৃতিত্বগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য খনি থেকে অট্টালিকাদি নির্মাণের জন্য পাথর খনন, সমীক্ষণ ও নির্মাণ কৌশলের দক্ষতা। এরই ফলস্রুতি ঐতিহাসিক মিশরীয় পিরামিডসমূহ, মন্দির, ওবেলিস্কসমূহ, মিশরীয় গণিত ব্যবস্থা, একটি ব্যবহারিক ও কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেচব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন কৌশল, প্রথম জাহাজ নির্মাণ, মিশরীয় চীনামাটি ও কাঁচশিল্পবিদ্যা, একটি নতুন ধারার সাহিত্য এবং বিশ্বের ইতিহাসের প্রাচীনতম শান্তিচুক্তি ( হিট্টাইটদের সাথে)। প্রাচীন মিশর এক দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারকে পিছনে ফেলে যায়।
সুমেরীয় সভ্যতা
মানব সভ্যতার বিকাশে সুমেরীয়দের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। মেসােপটেমিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেই তারা যে মানবসভ্যতা গড়ে তুলেছিল তা বিশ্ব মানবসভ্যতার ইতিহাসে অমর কিংবদন্তি হয়ে আছে। আইন প্রণয়নে সুমেরীয় সভ্যতার বিশেষ অবদান হলাে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আইন ব্যবস্থা প্রণয়ন। সরকার ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সুমেরীয়রা একটি যথাযথ ও সুসংগঠিত সমাজভিত্তিক আইন অবকাঠামাে গড়ে তােলে।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
হিব্রু সভ্যতা
খ্রিস্টধর্মের পটভূমি তৈরিতে হিব্রুধর্মের ভূমিকাই ছিল বেশি। সৃষ্টিতত্ব, ঈশ্বরের একাত্ম, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আইনপ্রণেতা, ও পরম বিচারক হিসেবে ঈশ্বরের অবস্থান সম্পর্কিত বাইবেলের দুই তৃতীয়াংশে রয়েছে হিব্রু ধর্মের প্রভাব। আইন প্রণয়নেও হিব্রুদের অবদান রয়েছে। প্রাচীন কেনাইট ও ব্যাবিলনীয় আইনদ্বারা প্রভাবিত হয়ে হিব্রু আইন প্রণীত হয়েছিল।
ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে হিব্রু আইনের বিভিন্ন ধারা জানা যায়। হিব্রু সাহিত্য প্রাচ্যের যে কোন প্রাচীন সাহিত্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট ছিল। তাদের সাহিত্যে ধর্মের প্রভাব ছিল প্রবল। ওল্ড টেস্টামেন্ট মূলত বিভিন্ন সাহিত্য কর্মের সংকলন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হিব্রুদের তেমন অবদান নেই। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা কিছু অবদান রেখেছে। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে রোগ যন্ত্রনাকে ঈশ্বরের অভিশাপ বলা হয়েছে।
গ্রীক সভ্যতা
গ্রীকরা প্রথম বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত করে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে। পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অংকন করেন গ্রীক বিজ্ঞানীরা। তারাই প্রথম প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়। গ্রীক জ্যোতির্বিদরা সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। বজ্র ও বিদ্যুতের কারণে নয়, প্রাকৃতিক কারণে ঘটে এই সত্য তারাই প্রথম আবিষ্কার করেন। জ্যামিতির পন্ডিত ইউক্লিড পদার্থবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস, চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিপোক্রেটসের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল।
গ্রীক শিল্পের বিশেষ করে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিশেষ উন্নতি হয়েছিল। গ্রীক চিত্র শিল্পের নিদর্শন মৃৎপাত্রতে আঁকা চিত্রের মাধ্যমে দেখা যায়। স্থাপত্যের সুন্দর সুন্দর নিদর্শন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। বড় বড় স্তম্ভের উপর তারা প্রাসাদ তৈরি করত। আর প্রাসাদের স্তম্ভগুলো অপূর্ব কারুকার্যখচিত থাকতো। পার্থেনন মন্দির বা দেবী এথেনার মন্দির স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এথেন্সের স্থাপত্যের নিদর্শন এর ভগ্নাবশেষ এখনো চোখে পড়ে। গ্রিক ভাস্কর্য পৃথিবীর শিল্পকলার ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগের জন্ম দিয়েছিল। সে যুগের প্রখ্যাত ভাস্ক শিল্পী ছিল মাইরন, ফিডিয়াস ও প্রাকসিটেলেস।
রোমীয় সভ্যতা
রোম শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, স্থাপত্য সর্বক্ষেত্রে গ্রিকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তারা এইসব বিষয়ে গ্রিকদের অনুসরণ ও অনুকরণ করেছে। রোমান স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর বিশালতা। সম্রাট হাড্রিয়ান এর তৈরি ধর্ম মন্দির প্যান্থিয়ন রোমানদের স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। ৮০ খ্রিস্টাব্দ রোমান সম্রাট টিটাস কর্তৃক নির্মিত কলোসিয়াম নাট্যশালা ছিল যেখানে একসঙ্গে ৫৬১০ জন বসতে পারতো স্থাপত্যকলার পাশাপাশি রোমিও ভাস্কর্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। রোমিও ভাস্করগণ দেবদেবী, সম্রাট, দৈত্য, পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের মূর্তি তৈরি করতেন মার্বেল পাথরের।
বিজ্ঞানে রোমানরা তেমন কোন অবদান রাখতে না পারলেও বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে বড় প্লিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে বিশ্বকোষ প্রণয়ন করেন। এতে প্রায় ৫০০ বিজ্ঞানীর গবেষণাকর্ম স্থান পেয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের রোমনীয়দের অবদান ছিল। বিজ্ঞানী chelsea’s চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর বই লেখেন। তাছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে গ্যালেন রুফাসে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
এটিই ছিল তোমাদের জন্য নির্ধারিত এইচএসসি ২০২২ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর- প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন।
প্রাচীন মিসরীয় সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।