পাপুল এর ঘণিষ্ট্য সহচর ভিসার দালাল ‘রিফাত’ খপ্পরে সর্বস্ব হারিয়েছেন স্কুল শিক্ষক!
কুমিল্লা জেলার, নাঙ্গলকোট উপজেলার একটি স্কুল চাকুরি করেন আনসার আহমেদ। পাশাপাশি একটি কম্পিউটার ব্যবসা পরিচালনা করে ভালোই দিন চলে যাচ্ছিল তার। গত ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে পাশের বাড়ীর এক ভাতিজার মাধ্যমে পরিচয় হয় কুয়েতে অবস্থানরত রায়পুর নিবাসী রিফাত আহমদ (৩৫), পিতা-আবুল হাশেম এর সঙ্গে।
ঐ ভাজিতার সাথে বিভিন্ন কারনে ভাল সম্পর্ক হওয়ায় রিফাত আহমদ (৩৫) সাথে কথা বার্তা হতে থাকে তার। আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে রিফাত নিজেকে কুয়েতে অবস্থিত মারাফিয়া-কুয়েতিয়া কোম্পানীর বড় কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং তাকে (আনসার) কে কুয়েতে নিয়ে গিয়ে উচ্চ বেতন আর উন্নত চাকুরি দেওয়া প্রস্তাব দেয়। কিন্তু দেশে নিজের চাকুরি আর ব্যবসা থাকায় সে কুয়েত যেতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু রিফাত বিভিন্নভাবে নানা প্রলোভন দেখানো শুরু করে এবং কুয়েত যাওয়ার জন্য রাজী করানোর চেষ্টা করে।
আনসার দেশে ভাল আয় উপার্জন করতে বলে বার বার সে প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে। তবুও বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে আনসারকে কুয়েত যাওয়ার বিষয়ে রাজী করায়। অনেক কথা-বার্তা হওয়ায় এবং ভাতিজার সাথে সম্পর্ক থাকায় আনসার তার প্রস্তাবে রাজি হয়। ভিসার প্রক্রিয়া করার আগে আনসার বার বার তাকে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলে সত্যিই যদি ভাল কিছু না হয় তাহলে ভিসার প্রয়োজন নাই। কিন্তু রিফাত তাকে বাংলাদেশ থেকে বহুগুন বেশি টাকা উপার্যন ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ভিসার নেওয়ার জন্য প্রলুদ্ধ করে।
ফেসবুক ও বিভিন্ন মাধ্যমে কুয়েতে এর ভিসা বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ এই তথ্য রিফাত-কে জানালে সে লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী মোঃ শহীদুল ইসলাম পাপুল এর বরাত দিয়ে বলে- কুয়েতে আমরাই একমাত্র কোম্পানী যারা ভিসা বের করতে পারে। এবং নিজে কোম্পানীর এমডি তথা কাজী মোঃ শহিদুল ইসলাম পাপুল এর ঘনিষ্ট লোক দাবি করে। এক পর্যায়ে আনসার গত ২৭ মে ২০১৮, রিফাত এর দেওয়া মোহছেনা খাতুন নামে এক মহিলার ব্যাংক একাউন্টে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফেনী শাখার এর মাধ্যমে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জমা প্রদান করে। এর পর থেকে টানা একবছর গত হয়ে যায় কিন্তু রিফাত ভিসা দেওয়ার খবর নাই।
ভিসা দিতে দেরি হওয়ায় রিফাত-কে প্রশ্ন করা হলে রিফাত বলে- ক্লিনার ভিসা হলে এক সপ্তারের মধ্যে ভিসা দেওয়া সম্ভব, কিন্তু সে আনসারের জন্য উর্পযুক্ত ভাল ভিসার চেষ্টা করছে তাই ভিসা দিতে দেরি হচ্ছে। এই সকল কথা বলে সে কয়েকবার আনসার এর কাছ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের কপিগুলো নিয়ে যায়। এতে আনসার কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বলে ভাল ভিসা না হলে ভিসার দরকার নাই। রিফাত তাকে আবারও আশ্বস্ত করে আনসারকে সে ঠকাবে না।
যাই হোক, নানা টালবাহানার পর রিফাত ১০ জানুয়ারি ২০১৯ একটি ভিসার কপি দিয়ে আনসার-কে জরুরী ১,২০,০০০/- (একলক্ষ বিশ) হাজার টাকা দিতে বলে। সে অগ্রণী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রিফাত এর চাহিত ১,২০,০০০/- (একলক্ষ বিশ হাজার) টাকা সানোয়ারা বেগম নামিয় এক ব্যাংক একাউন্টে ২০ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে সোনালী ব্যাংক, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা শাখা থেকে প্রদান করে। এই টাকা প্রদান করার ১ মাস পর সে আরও একটি ভিসা কপি পাঠিয়ে আনসার কে মেডিকেল ও ভিসা প্রসেস করার জন্য ঢাকার মগ বাজারে অবস্থিত জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি অফিসে গিয়ে ভিসার কার্যক্রম করার জন্য বলে।
সেখানে শুরু হয় নতুন প্রতারণা- জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এর কর্মচারী শিমুল নামীয় এক লোক আনসার কে প্রাথমিক সাক্ষাতের পর টেষ্ট মেডিকেল করতে পাঠায়। টেষ্ট মেডিকেল কেন করতেক হবে এই মর্মে জানতে চাইলে সে মূল মেডিকেল এর ফলাফল খারাপ আসতে বিদেশ যেতে পারবেনা বলে ভয়-ডর দেখিয়ে টেস্ট মেডিকেল করতে বাধ্য করে। কোন সমস্যা না থাকলেও টেষ্ট মেডিকেল করার জন্য ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা নিয়ে যায় যার রিসিট শিমুল নামীয় লোকটি জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল থেকে কেটে দেয়। বিষয়টি দৃষ্টি কটু হলেও বিদেশ যাওয়ার স্বার্থে বিষয়টি এড়িয়ে যায় সে। টেষ্ট মেডিকেল করার পর রিপোর্ট দেওয়া হয় এক্সরে তে সমস্যা দেখিয়ে। কিন্তু পরে অন্য মেডিকেল এ এক্সরে করার পর কোন সমস্যাই ধরা পড়েনা। বিষয়টি রিফাতকে জানালে সে অফিস যেভাবে যা করতে বলে তাই করার নির্দেশনা দেয়। সম্পর্কের খাতিরে এবং প্রবাসে যাওয়ার উত্তেজনায় আনসার তার সব কথা মেনে নেয়। এবার আসে মূল মেডিকেল এর পালা।
গামকা কর্তৃক মেডিকেল করার স্লিপ আসে মাসকট মেডিকেল, বনানীতে। এখানে মাসকট মেডিকেল এক মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও মেডিকেল রিপোর্ট দেয়না এবং গামকার ওয়েবসাইটেও কোন প্রকার আপডেট না দেওয়ায় চিন্তিত হয়ে জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এর লিটন নামের এর কর্মকর্তার মেডিকেল পাস করিয়ে দেওয়ার নাম করে ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা দাবি করে। এবারও রিফাতকে বললে রিফাত অফিসের নির্দেশনা মানার জন্য বলে। আনসার এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ভিসা বাতিল করে দেওয়ার ভয় দেখায়।
অগত্যা উপায়ন্তর না দেখে জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এর সেই কর্মকর্তার নিকট ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা নগদ প্রদান করে। কিন্তু পরে মেডিকেল রিপোর্ট আনতে গিয়ে দেখা যায় মাসকট ইন্টারন্যাশ এর কর্মকর্তারা ভিসার মধ্যে মেডিকেল ফিট এর তথ্য প্রিন্ট করতে গিয়ে অন্য কোন একটি কাগজ প্রিন্ট করে ফেলে যাতে ভিসাটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। যার মাসুল গুনতে হয়েছে আনসার কে। যাক, তারপরও উন্নত জীবনের আসায় সকল কিছুই মেনে নিয়েছে সে।
এরপর আসে চুড়ান্ত পেমেন্ট এর পালা। মেডিকেল এর সমস্যাটি সমাধান করার পর রিফাত বার বার টাকা পরিশোধ এর জন্য তাগাদা দিতে থাকে। এই দিকে আনসার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য হন্নে হয়ে ঘুরে শেষ পর্যন্ত আরও ৫,১০,০০০/- (পাঁচলক্ষ দশ হাজার) টাকা ব্যাংক লোন এর ব্যবস্থা করে রিফাত এর দেওয়া শিরিনা খাতুন নামে এক মহিলা ব্যাংক একাউন্টে পাঠায়। টাকা পাওয়ার পর রিফাত টাকা পাওয়ার উল্লাসে একটি ছবিও পাঠায় যা প্রচ্ছদে দেওয়া আছে।
২৭ এপ্রিল ২০১৯ বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কেটে আনসারকে ফোন করে বলা হয় টিকিট এবং এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট এর জন্য ৩৫,০০০ (পয়ত্রিশ হাজার) টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। যদিও এসকল টাকাই রিফাত এর দেওয়ার কথা। কিন্তু সে এই কোনটাই দেয় নাই। এরপর সেই কাঙ্খিত দিনটি আসে। ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে করে কুয়েত যায় আনসার। কুয়েত পৌছার পর নতুন বিড়ম্বনার স্বীকার- ভিসার মধ্যে অনাকাঙ্খিত প্রিন্ট দেখে এয়ারপোর্টের কর্মকর্তারা তাকে ছাড়তে চায়না। নানাভাবে বুঝিয়ে তারপর কোন রকমে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয় সে। কিন্তু হায় কে, তাকে রিসিভ করবে কেউতো নেই। রিফাত আসার কথা থাকলেও সে আনসারকে নিজ দায়িত্বে তার কোন আত্মীয়ের নিকট পৌছার কথা বলে। শুরু হয় রিফাতের গা ছাড়া ভাব।
এরপর শ্রিলংকান এক লোকের সহায়তার পাশের বাড়ীর ভাতিজাকে ফোন করে তাকে নেওয়ার অনুরোধ করলে সেই ভাতিজা তাকে গাড়ী ভাড়া করে কোম্পানী ব্যারাকে পৌছে দেয়। কোম্পানীর ব্যারাকে পৌছানোর পর কি খাবে, কোথায় থাকবে কিছুই কোন নির্দেশনা না দিয়ে চলে যায় সেই ভাতিজা। এ দিকে চরম বিপাকে আনসার। রিফাতকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছেনা। নিজের কাছে পর্যাপ্ত টাকাও নেই যে রিফাতকে ফোন করবে। অন্য বাঙ্গালীদের সহায়তায় তাকে কয়েকবার ফোন করার পর কর্কষ ভাষায় অপেক্ষা করতে বলে লাইন কেটে দেয়। এদিকে থাকার কোন রকম ব্যবস্থা হলেও খাওয়ার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠে আনসার।
পুরো তিন দিন কোন রকমে রুটি থেকে বা না খেয়ে থেকে শেষে কয়েকজন সহৃদয়বান বাঙ্গালী বিষয়টি লক্ষ্য করে তাদের সাথে খাওয়ার জন্য বলে। বিপদ এখানেই শেষ নয়। রিফাত চার দিন পর একটু সময়ের জন্য এসে তার পাসপোর্ট ও ভিসার কপি নিয়ে যায় সিভিল আইডি করার কথা বলে। চাকুরির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে এত তারাহুরা না করার জন্য বলে গাড়ী নিয়ে চলে যায়। অসহায় আনসার পড়ে থাকে। এই দিকে চরম অনিশ্চয়তা দেখে সে বার বার রিফাতের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে রিফাত বার বার এড়িয়ে যায়। আনসার বুঝতে পারে সে দালালের খপ্পরে পড়েছে। এই দিকে দেশ থেকে এত টাকা ব্যাংক লোন আর পরিবার পরিজনের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু এই প্রবাসে কে শুনবে তার কষ্ট। এক মাস কেটে যায়- কোন প্রকার চাকুরির ব্যবস্থা করেনা রিফাত। ফোন দিলেও কেটে দেয়।
সহৃদয়বান সেই বাঙ্গালীদের সহায়তার খাবার চলছে ঠিকই কিন্তু দেশের ব্যাংক লোনের চিন্তায় সে অস্থির। এরপর রিফাত কে বাদ দিয়ে কোম্পানীর লোকদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সে। এক পর্যায়ে মারাফি-কুয়েতিয়া কোম্পানীর এর কর্মকর্তার সহায়তায় মারাফির আহমদি হসপিটালের ক্লিনিং সার্ভিস প্রজেক্ট এ একটি কাজ পায়। অবশেষে আশার আলো দেখতে পায় আনসার। একমাস কাজ করার পর আশায় গুড়ে বালি পড়ে। হসপিটালের কর্তৃপক্ষ তারজন্য যা বেতন নির্ধারণ করেছে তার চারভাগের তিনভাগই মারাফি কুয়েতি কোম্পানী কেটে রাখে আর একভাগ শুধু তাকে দেয়। সবার সাথে আলোচনার পর বুঝতে কুয়েতে এই কোম্পানী সবার সাথেই এমন করে। সব বাঙ্গালীই তাদের লোভের স্বীকার। আর বুঝতে বাকী থাকেনা। আনসার এর যে সে একটি ভিসার দালাল চক্রের দ্বারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রিফাত এর সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সে আর সাড়া দেয়না।
আনসার রিফাতকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে বাড়ী থেকে সে অনেক টাকা ব্যাংক লোন করে এসেছে এখন এই টাকা কে পরিশোধ করবে। কিন্তু রিফাত এড়িয়ে চলে। ফোন দিলে ফোন রিভিস করেনা। এক পর্যায়ে জানা যায় রিফাত নামের এই ভিসার দালাল অনেক লোকের সাথে এমনটা করেছে। উপায়ন্তর না দেখে, অনিশ্চিত জীবনের হাত থেকে মুক্তি পেতে তিন মাসের মাথায় সিভিল আইডি পাওয়ামাত্র টিকিট এর টাকা ধার করে বাংলাদেশে চলে আসে আনসার। রিফাতকে কিছু টাকা ফেরত দিতে বললে সে সকল মাধ্যম থেকে আনসারকে ব্লক করে দেয়। প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে নিজের সবর্স্ব হারিয়ে আজ দিশেহারা আনসার।
তারমত হাজারও তরুণ রিফাত এর মত ভিসার দালাল এর খপ্পরের পরে নিজেদের জীবন নষ্টের পথে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়েতে বাঙ্গালীর জন্য সকল ভিসাই বন্ধ। এবং যে ধরণের ভিসায় আনসারের মত বাঙ্গালীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেসকল ভিসা বিনামুল্যে কুয়েত সরকার দিয়ে থাকে। কিন্তু রিফাত এর মত কিছু অর্থলোভী নিজের স্বার্থের জন্য অন্যকে পথে বসাতেও দ্বীধা করেনা।
Great info, thank you! I’ll try to make something cool right now 🙂
Informed me what you have done