করোনাভাইরাস: রমজান মাসে ইফতার ও তারাবির নামাজ নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
নোবেল করোনাভাইরাস। আতঙ্কের এই নামটি পৃথিবীর সবকিছুই স্থবির করে দিয়েছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
পৃথিবীর সমস্ত দেশে সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ ইসলামিক বিধি নিষেধ এবং সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন বিধি-নিষেধ নির্ধারণ করে দিয়েছে দেশগুলোর সরকার।
তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া, জুমার নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
কিন্তু রমজান মাসে ইফতার ও তারাবির নামাজ নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না এখনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
তবে যমুনা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শায়খ আহমাদুল্লাহ তারাবির নামাজ ও ইফতার নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।
তিনি বলেন- অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে রমজান মাস একজন ঈমানদার মুসলমানের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্য সময়ের ইবাদতের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া যায় এই মাসে। এইজন্য রমজান মাসকে আমলের ভরা বসন্ত বলা হয়। সমগ্র পৃথিবীর সকল মুসলমান এই জন্য রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য অতিরিক্ত মেহনত করে থাকে।
করণা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে আমাদেরকে আরো বেশি থেকে বেশি ইবাদত বন্দেগী করতে হবে। আল্লাহর প্রতি আরো বেশি মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ আমরা সারা পৃথিবীর মানুষ যে কঠিন বিপদের মুখোমুখি থেকে কেবল আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা উদ্ধার করতে পারেন।
এই মহামারী বিপদ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পেতে আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করা উচিত। অতএব এই বছর আমরা পূর্বের তুলনায় আরও বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে।
তবে সেই সাথে মনে রাখতে হবে- বিশেষজ্ঞগণ আমাদেরকে করোনাভাইরাস এর বিস্তার রোধে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মেন্টেন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই কারণে যে সকল এবাদত বন্দেগিতে জনসমাগম করতে হবে সেই সকল ইবাদত বন্দেগী করা আমাদের কোনো অবস্থাতেই জায়েজ হবে না। অন্তত করোনাভাইরাস কালীন এই সময়।
ইফতার আয়োজন কিভাবে হবে:
ইফতার আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন- যেহেতু নোবেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জনসমাগম রোধ করতে বলা হয়েছে, সেহেতু- মসজিদগুলোতে ইফতার আয়োজন করা যাবে না এবং বিভিন্ন দলের মাধ্যমে যে ইফতার পার্টি গুলো করা হয় তাও করা যাবে না।
তবে অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের ইফতার এবং রমজান মাসে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে ইফতার আয়োজন বাসায় নিয়ে দিয়ে আসা অথবা অন্য কোন বিকল্প পদ্ধতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রমজান মাসের সহযোগিতা করার পথ খুঁজতে হবে।
কারণ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেছেন-তোমরা নিজেদেরকে এবং অন্যদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিও না।
তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনা করে আমাদের ইফতারের সমাগম না করা উচিত।
এই বছর তারাবির নামাজ কিভাবে পড়া উচিত:
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেখানে জনসমাগম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে তারাবির নামাজ নিয়ে চিন্তায় আছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি গণ।
তারাবির নামাজ আদায় প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরামগণ কোনরকম সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে, তারাবির নামাজ সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা-
তারাবির নামাজ একটি সুন্নত নামাজ। এটি ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ নয়। তারাবির নামাজ বাসাবাড়িতে একাকী না পরে মসজিদে জামাতের সাথে পড়া উত্তম। তবে কেউ যদি বাসাবাড়িতে নিয়মমাফিক তারাবির নামাজ আদায় করে তবে তা তারাবির নামাজ সম্পূর্ণভাবেই আদায় হয়ে যাবে।
- আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির দোয়া
এই বিষয়ে সারা পৃথিবীর কোন আলেমের কোন প্রকার দ্বিমত নেই। বিশেষ অজর বাপ বিশেষ পরিস্থিতিতে যে কেউ তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিষয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে তা যদি বহাল থাকে তাহলে আমাদেরকে তারাবির নামাজ বাসায় আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কখনোই কঠিন ভাবে কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে চান। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন- দ্বীন পালনে তোমাদের জন্য কোন সমস্যা হয় এমন কোন কিছু আল্লাহ রাখেন নি।
অন্য আরেকটি আয়াতে তিনি বলেছেন- আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তোমাদের জন্য সবকিছু সহজ করতে চান তিনি কঠিন করতে চান না।
অতএব আল্লাহ তায়ালার উপর ও শেষ ভরসা রেখে আমরা পবিত্র রমজান মাসের ইবাদত বন্দেগী চালিয়ে যাব। জনসমাগম থেকে মুক্ত থাকবে এবং যতটুকু সম্ভব অসহায় দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ।