ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা
এসএসসি ও দাখিল ২০২২ এর সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য প্রণীত এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এর উত্তর–ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করা হয়েছে। তোমরা যারা সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসমূহের দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত আছো তোমাদের ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছিল। যথাযথ মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে তোমাদের জন্য দশম শ্রেণীর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা একটি নমুনা উত্তর দেওয়া হল।
দশম শ্রেণীর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য প্রণীত এই উত্তরটি/সমাধানটি (ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা) অনুসরণ করে তোমরা মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।
এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
অ্যাসাইনমেন্ট :
তােমার দেখা কোনাে ঐতিহাসিক নিদর্শন (যেমনঃ প্রাচীন মসজিদ/মন্দির,জমিদার বাড়ি, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদি) ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাসপাঠের প্রয়ােজনীয়তা মূল্যায়ন কর।
নির্দেশনাঃ
- ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা;
- ইতিহাস রচনার উপকরণসমূহ (লিখিত, অলিখিত, সাহিত্যিক,প্রত্নতাত্ত্বিক প্রভৃতি) লিপিবদ্ধ করা;
- ইতিহাসের গুরুত্ব বর্ণনা করা;
- বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতিহাস চর্চার প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করা।
এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এর উত্তর
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা
ইতিহাস অর্থ এমনই ছিল বা এরূপ ঘটেছিল। ড.জনসনের মতো, যা কিছু ঘটে তাই ইতিহাস, যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়।অর্থাৎ সমাজে ও রাষ্ট্রে নিরন্তর বয়ে যাওয়া ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস। ই.এইচ.কার এর মতে,ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে অন্তহীন সংলাপ।
গ্রিক শব্দ হিস্টোরিয়া(Historia) থেকে ইংরেজি হিস্ট্রি (History) শব্দের উৎপত্তি, যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। হিস্টোরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ইতিহাসের জনক গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। তিনিই প্রথম তার গবেষণা কর্মের নামকরণের এ শব্দটি ব্যবহার করেন যার আভিধানিক অর্থ হলো উত্তর সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তার মতে, ইতিহাস হল যা সত্যিকারঅর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা।
ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি ইতিহ শব্দ থেকে যার অর্থ ঐতিহ্য। ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস শিক্ষা ভাষা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় ইতিহাস। বর্তমানের সকল বিষয় অতীতের ক্রমবিবর্তন অতীত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আর অতীতের ঐতিহ্য বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ হল ইতিহাস। তবে এখন ইতিহাসের পরিসর সুদূর অতীত থেকে বিরাজমান বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইতিহাস রচনার উপকরণ
যে সব তথ্যের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্য কে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, তাকে ইতিহাসের উপকরণ বলা হয়। সঠিক ইতিহাস লিখতে ঐতিহাসিক উপকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসের উপকরণ দুই ধরনের। ★লিখিত উপকরণ ও ★অলিখিত উপকরণ।
লিখিত উপকরণঃ
ইতিহাস রচনা লিখিত উপকরণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে -সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। প্রাচীন সময়ের কিছু তথ্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মে ও পাওয়া যায়।যেমন- বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কলহনের রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ-উস সিরাজের তবকাত-ই-নাসিরী, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী ইত্যাদি। ৫ থেকে ৭ শতকে চৈনিক পরিব্রাজক ফাহিয়েন, হিউয়েন সাং, ইন্দ্রোজিৎ সিং এর বর্ণনায় এবং পরবর্তীতে ইবনে বতুতা সহ বিদেশী পর্যটকদের বর্ণনায় তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যায়।
সাহিত্য উপকরণঃ-
- ক) জীবনীগ্রন্থঃ সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ইত্যাদি।
- খ) দেশীয় সাহিত্যঃ কলহনের রাজতরঙ্গিনী, কালিদাসের মেঘদূত’ ইত্যাদি।
- গ) বিদেশিদের বিবরণীঃ মেগাস্হিনিসের ইণ্ডিকা,ফাহিয়েনের ফো- কুয়ো-কিং, হিউয়েন সাং এর সিইউ- কি ইত্যাদি।
- ঘ) প্রাচীন ধর্মগ্রন্থঃ রামায়ণ, মহাভারত, পুরান ইত্যাদি।
- ঙ) প্রাচীন পান্ডুলিপিঃ সন্ধিচুক্তি, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি।
অলিখিত উপকরণঃ
যেসব বস্তু বা উপকরণ থেকে আমরা বিশেষ সময় স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পায় সেই বস্তু বা উপকরণ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সমূহ মূলত অলিখিত উপকরণ।
ক) লীপিমালাঃ
- সরকারি লিপিঃ- যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিদান, রাজার আদেশ, রাজা রাজ্যজয়, রাজত্বকাল, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
- বেসরকারি লিপিঃ- এগুলো সাধারণত পাথরের মন্দিরের গায়ে লেখা হতো।
খ) মুদ্রাঃ
মুদ্রায় রাজার নাম, সন- তারিখ, রাজার মূর্তি, নানা দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা থাকতো। যা থেকে রাজার সময়কাল, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সমাজ ব্যবস্থা ও ধর্মবিশ্বাস প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা
গ) স্থাপত্য ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধঃ
প্রত্নকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন সমাধি,স্তম্ভ, স্মৃতিস্তম্ভ, প্রাচীন শিল্পকৃতি,, দেবদেবীর মূর্তি, মৃৎশিল্প, মৃৎপাত্র অতি প্রাচীন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত।
ঘ)প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসবশেষঃ
বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর ইত্যাদি।
ঙ) প্রচলিত বিশ্বাস বা প্রথাঃ
অতিকথন, রূপকথা, গান কাহিনী মালা ইত্যাদি।
চ)পুঁথিঃ
পুঁথি প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন প্রতীক নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ এর ফলে সেসময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ইতিহাসের গুরুত্ব
মানব সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তন এর গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপনের ইতিহাস ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা মানব সমাজ ও ক্রমবিকাশ ও সভ্যতার বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানতে পারি।তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তির প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরী।
জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতেঃ মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য অতীতের সর্বনিষ্ঠ বর্ণনা প্রয়োজনীয়।নিজ দেশ-জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবের মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী, জাতীয়তাবোধ, জাতীয় সংহতি সুদীর্ঘ ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।
সচেতন বৃদ্ধি করেঃ ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে। সভ্যতার বিকাশ ও উত্থান পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো-মন্দ সম্পর্কের সহজে বুঝতে পারে কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারে।
দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয়ঃ ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে অধিক ঘটনাবলীর দৃষ্টান্ত থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে। সে শিক্ষা বর্তমানে প্রয়োজনীয় কাজে লাগাতে পারে। আর এ কারণে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষণীয় দর্শন। সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস পাস করে যে জ্ঞান লাভ হয় তা বাস্তব জীবনে চলার জন্য উৎকৃষ্টতম শিক্ষা।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা
একটি দেশের প্রতিটি সুনাগরিকতার বা সচেতনতা মাত্রই ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমনঃ
১) মানব সভ্যতা ও সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে মানুষ সমাজ থেকে শুরু করে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রা অগ্রগতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে।
২) জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রেঃ ইতিহাস আমাদের অতীত সম্পর্কে জানিয়ে দেয় আর বর্তমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে সঠিক শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার জন্য ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৩) জাতীয় চেতনার বিকাশঃ এটি জাতির ঐতিহ্য ও অতীত গৌরবান্বিত ইতিহাস ঐ জাতিকে বর্তমানে মর্যাদাপূর্ণ কর্মতৎপরতা উদ্দীপিত করে বলে জাতীয় চেতনার উন্মেষ এর ক্ষেত্রে ইতিহাস চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
৪) জাতীয় পরিচয়ঃ আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে জাতীয়তা বোধ গড়ে ওঠে যা দেশ ও সমাজের উন্নতি তথা দেশপ্রেমের জন্য একান্ত অপরিহার্য তাই জাতীয় পরিচয় ক্ষেত্রে ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা
৫) বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণঃ বর্তমানে ঐতিহাসিক ঘটনার সঠিক আলোচনার ফলে ইতিহাস বন্ধনমুক্ত ও সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। আর এ মুক্ত ইতিহাস আমাদের অতীত সবার অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণে সাহায্য করে।
এছাড়াও ইতিহাস একটি জাতীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে সমাজ ও জাতির অগ্রগতির কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে ইতিহাস জ্ঞান শক্তি হিসেবে কাজ করে তাই মানব জীবনের ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
এটিই ছিল তোমাদের জন্য প্রণীত এসএসসি ২০২২ (১০ম শ্রেণি) ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এর উত্তর–ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা।
ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং বিশ্লেষণপূর্বক ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।