আদিম যুগের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের সাথে বর্তমান সময়ের তুলনা
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমরা একটি বিষয়ে অবগত আছো যে, ইতিমধ্যেই তোমাদের ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট প্রকাশিত হয়েছে। এমতবস্থায় তোমরা ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট সমাধান নিয়ে চিন্তিত! তোমাদের চিন্তার অবসান ঘটাতে ধারাবাহিকভাবে আজ আলোচনা করছি এইচএসসি ২০২২ পঞ্চম সপ্তাহের চারু ও কারুকলা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান। আজকের আলোচনায় থাকছে- আদিম যুগের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের সাথে বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের তুলনামূলক বিবরণ।
নমুনা উত্তর দেখার আগে চলো প্রথমে দেখে নিই কি কি থাকছে এইচএসসি ২০২২ পঞ্চম সপ্তাহের চারু ও কারুকলা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্নপত্রে-
অ্যাসাইনমেন্ট-০১; শিল্পকলা ও চিত্রকলা ; অধ্যায়-প্রথম
অ্যাসাইনমেন্ট :
আদিম যুগের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের সাথে বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের তুলনামূলক বিবরণ।
শিখনফল ও বিষয়বস্তু:
- শিল্পকলা কি এবং কেন?
- শিল্পকলা বিষয়ের স্বরূপ বর্ণনা করতে পারবে।
- নিজের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে।
- চিত্রাংকন, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য বিষয়ে সারাবিশ্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিবৃতি করতে পারবে।
- আদিম মানুষের অঙ্কিত ছবির বর্ণনা দিতে পারবে।
নির্দেশনা/সংকেত/ধাপ/পরিধি–
- শিল্পকলার স্বরূপ বর্ণনা করবে
- আদিম ও বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করবে
- আদিম ও বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের ছবি সহ উদাহরণ লিখবে
- উপসংহার লিখবে
এইচএসসি ২০২২ পঞ্চম সপ্তাহের চারু ও কারুকলা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
শিল্পকলা বলতে বিশ্বের বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিদ্যমান বহুবিধ কিছু মানব কর্মকাণ্ডকে বোঝায়, যেগুলিতে দেখা, শোনা বা পড়ার যোগ্য কিংবা পরিবেশন করার মতো এমন বিশেষ কোনও কিছু (বস্তু, পরিবেশ বা অভিজ্ঞতা) সৃষ্টি করা হয়, যার মাধ্যমে সৃষ্টিকারীর কল্পনাশক্তি বা কারিগরি দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং দর্শক, শ্রোতা বা পাঠক বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ও বুদ্ধি দিয়ে মানসিকভাবে যার সৌন্দর্য ও আবেগ উদ্রেককারী ক্ষমতার তারিফ করে।
শিল্পকলার স্বরূপ বর্ণনা
কোনও মানব কর্মকাণ্ড ও তার সৃষ্টিকে শিল্প বলে গ্রহণ করা হবে কি না, তা প্রায়শই স্থান, কাল, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সম্প্রদায় এমনকি ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধ ও আবেগ-অনুভূতির উপরে নির্ভর করে। আবার স্থান, কাল, সংস্কৃতির সীমানা ছাড়িয়ে সিংহভাগ মানুষের সৌন্দর্যবোধ ও আবেগকে নাড়া দেয়, এমন শিল্পকর্মও রয়েছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে এসে আবেগ ও সৌন্দর্যের চিরায়ত সংজ্ঞার বাইরে গিয়ে সমসাময়িক শিল্পীসমাজ, শিল্পের সমালোচক ও বোদ্ধাসমাজ এবং শিল্পকর্ম ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দ্বারা সমাদৃত যেকোনও কিছুকেই শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হতে পারে, যা সাধারণ জনগণের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। শিল্পকলামূলক কর্মকাণ্ডের পরিধি সতত পরিবর্তনশীল। নতুন প্রযুক্তি, নতুন উপাদান, নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতি, ইত্যাদি নতুন নতুন শিল্পকলার জন্ম দিচ্ছে।
শিল্পের প্রধান শাখাগুলি হল দৃশ্যকলা (যার প্রশাখাগুলির মধ্যে স্থাপত্য, মৃৎশিল্প, রেখাঙ্কন, চিত্রাঙ্কন, চলচ্চিত্র নির্মাণ, আলোকচিত্রকলা ও ভাস্কর্য অন্তর্ভুক্ত), সাহিত্যিক কলা (যার প্রশাখাগুলির মধ্যে কল্পকাহিনী, নাটক, কবিতা ও গদ্য অন্তর্ভুক্ত) ও পরিবেশন কলা (যার প্রশাখাগুলির মধ্যে নৃত্য, সঙ্গীত, মঞ্চনাটক অন্তর্ভুক্ত)। এছাড়া রন্ধনকলাকেও শিল্পকলার একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা যায় (যার মধ্যে রন্ধন, চকোলেট প্রস্তুতি, দ্রাক্ষাসুরা প্রস্তুতি, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত)। শিল্পকলার কিছু শাখা-প্রশাখায় দৃশ্যমান উপাদানের সাথে পরিবেশন (যেমন চলচ্চিত্রগ্রহণ) কিংবা অঙ্কনের সাথে লিখিত বিষয়বস্তুর (যেমন কমিক্স) সমন্বয় ঘটানো হয়। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র থেকে আধুনিক যুগের চলচ্চিত্র পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই শিল্পকলা মানুষের সাথে তার পরিবেশের সম্পর্ককে গল্প বলার ছলে প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে।
আদিম সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য নিরূপণ ও ছবিসহ উদাহরণঃ
প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে আমরা মানুষের শিল্পচেতনার পরিচয় পাই। সে সময়ে মানুষ শিল্পকর্মের জন্ম দিয়েছিলো ঠিকই তবে তার ধরনটা ছিলো আলাদা। এ সময়ের শুরুতে মানুষ শিল্প সৃষ্টি করেছিলো প্রতিনিয়তঃ যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখবার জন্য। প্রগৈতিহাসিক যুগে মানুষকে জীবন ধারনের জন্য, খাদ্য সংগ্রহের জন্য জীবজন্তু শিকার করতে হতো। আর মূলতঃ এসব জীবজন্তুর ছবিই তারা এঁকেছে। আর এখান হতেই শুরু হয়েছিলো প্রগৈতিহাসিক শিল্পকলার ইতিহাস। মানুষের আদিম বন্যদশা হতে সভ্যতার উত্তরণের পথটা ছিলো বন্ধুর। প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে তাকে পদে পদে নানা কষ্ট সহ্য করে এগুতে হতো নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে।
পৃথিবীতে আগমনের পর হাজার বছর ধরে মানুষ শিকার করে জীবন ধারন করেছে। উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করতে পারেনি বলে বুনো জন্তু শিকার করেছে পাথরের হাতিয়ারের সাহায্যে। এই সময়কে পাথর যুগ নামে অভিহিত করা হয়।
পাথরযুগকে প্রধানতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১.প্যালিওলিথিক (পুরান প্রস্তর যুগ বা পুরাপলীয় যুগ)
২.নিওলিথিক (নব্য প্রস্তর যুগ)
এছাড়াও এ দুটি যুগের মধ্যবর্তী সময়ে তৃতীয় আরও একটি যুগের নাম দেয়া হয়েছে-
৩.মেসোলিথিক (মধ্যপলীয় যুগ)
প্যালিওলিথিক (পুরাপলীয় যুগ) :
পুরা অর্থ প্রাচীন এবং উপল অর্থ পাথর আর এ দুটো শব্দের সমন্বয়ে হয়েছে পুরাপলীয় শব্দ। এ যুগে মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শিকারি কার্য়কলাপ চালিয়েছে পাথরের হাতিয়ারের মাধ্যমে। তাই সমগ্রভাবে শিকারী যুগকে পুরালীয় যুগ বলা হয়। তবে সাধারনভাবে বলা চলে পুরাপলীয় যুগের শিকার ব্যবস্থাই ছিলো পৃথিবীর সব অঞ্চলের মানব সমাজের মূল ভিত্তি। পুরাপলীয় যুগে মানুষ তাদের ধ্যান ধারনা ও জীবনের অভিজ্ঞতাকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের মাধ্যমে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। এ যুগের শেষ পর্বে অর্থাৎ উচ্চ পুরাপলীয় যুগের গুহাবাসী শিকারী মানুষরা গুহার দেয়ালে ছবি এঁকেছে। আর এগুলোই হচ্ছে চিত্রকলার আদি নিদর্শন।
তবে শিল্পকলার ইতিহাসে এই গুহাচিত্রগুলো আদি চিত্রকলার নিদর্শণ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ যুগের মানুষের বাস্তবতা এবং তাদের আঁকা চিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়নি। তার কাছে অঙ্কিত বস্তুটি ছিলো বাস্তব। বস্তু বা প্রাণীর অবয়ব সৃষ্টির পেছনে যে কারনটি কাজ করেছিলো তা হলো সে আকাঙ্খিত বস্তুটিকে পাওয়ার ইচ্ছা। এটিকে যাদুবিশ্বাস বলা হয়। নির্দিষ্ট কোনো পশুকে বধ করার ইচ্ছা বা কোনো শত্রুর প্রাণনাশের ইচ্ছা হতে এই যাদুবিশ্বাসের উদ্ভব। তবে একথা মনে করা হয় যে যাদুবিশ্বাস হতেই ধর্মের সৃষ্টি। পুরানপ্রস্তর যুগে ভাস্কর্যের বেশ কিছু নিদর্শন মেলে। এগুলোর মধ্যে উৎপাদিকা শক্তির প্রতিকরূপে কিছু মাতৃকামূর্তি উল্লেখযোগ্য। সাধারনত এই সেই নগ্ন নারী মুর্তিগুলি অত্যন্ত স্থূলাঙ্গী, বক্ষ ও নিতম্ব বিশাল, মাংসল শিথিল, যাকে ইউরোপীয়রা সাধারন নাম দিয়েছে ভেনাস। গর্ভধারিনী এসব মাতৃমুর্তিগুলি গর্ভোন্মেষ প্রকাশের ক্ষেত্রে ছিলো আবেদনময়।
পুরাপলীয় যুগের বিখ্যাতএকটি মুর্তির নাম – ভেনাস অফ উইলেনডর্ফ ( খৃঃ ২৮০০০ – ২৩০০০ খৃঃ পূঃ লাইমস্টোন,৪’১/৪” উচ্চতা )
নিওলিথিক (নব্য প্রস্তর যুগ) :
আনুমানিক আট হতে দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজ আবিষ্কার করার পর তৎকালীন সমাজের আরো উন্নতি হয়। এ সময় মানুষ আরো উন্নত এবং মসৃন পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। কৃষি আবিষ্কারের পর এই যুগকে নাম দেয়া হয়েছে নিওলিথিক (নব্যপ্রস্তর যুগ)। নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করে কৃষিভিত্তিক স্থায়ী জীবনে অভ্যস্থ হতে শুরু করে। এ সময়ে মানুষ পশু শিকারের চাইতে পশু পালনের দিকে বেশী আগ্রহী হয়। নব্যপ্রস্তর যুগেই আমরা প্রথম স্থাপত্য কর্মের নিদর্শন লক্ষ্য করি। এগুলোকে অবশ্য যথার্থ স্থাপত্য কর্ম বলা যায় না। তবে স্থাপত্যকর্মের আদিরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ সময়ে নির্মিত স্থাপত্য কর্মের মধ্যে রয়েছে – ডলমেন : নব্যপ্রস্তর যুগে নির্মিত প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভের উদাহরন।
এটির নির্মানশৈলীতে রয়েছে সমাধির চারপাশে কতগুলো পাথর রাখা হতো। আর একখানা বড় পাথর দিয়ে উপরিভাগ ঢেকে দেয়া হতো। এই সমস্ত ডলমেন আবিষ্কৃত হয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে । ইংল্যান্ড, স্পেন প্রভৃতি অঞ্চলে এগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলির গুরুত্ব এজন্যই যে ডলমেনকে আমরা মানব সভ্যতার প্রাথমিক স্তরের স্থাপত্য হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। মানুষ এগুলির উপর ভিত্তি করেই নির্মান করেছিলো প্রথম স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী।
স্টোনহেঞ্জ (খৃঃ পূঃ ২০০০ অব্দ) :
নব্যপ্রস্তর যুগে আবিষ্কৃত আরো একটি স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন স্টোনহেঞ্জ – যা ইংল্যান্ডে অবস্থিত। বিশাল বিশাল পাথর খন্ডকে অল্প ব্যবধানসহ দাঁড় করিয়ে তাদের মাথায় পাথর বসিয়ে দেয়া হতো। অধুনা পন্ডিতগন মনে করেন যে, এ সমস্ত স্টোনহেঞ্জ জ্যোতির্বিদ্যার কাজে ব্যবহৃত হতো। পৃথিবীতে শিল্পচৈতন্যের উদ্ভব হয়েছে এভাবে আদিযুগ হতেই তা সম্মোহনের জন্যই হোক আর উৎসবের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই হোক। জীবনকে স্পর্শ করেই শিল্পের সৃষ্টি। জীবনের প্রাত্যাহিকতা আনন্দিত রাখার জন্যই বিকাশ এবং ক্রমাগত শিল্পরীতির পরিবর্তন।
বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য নিরূপণ ও ছবিসহ উদাহরণঃ
চিত্রকলা
যেসমস্ত শিল্পকলাতে ব্যবহারিক উদ্দেশ্য মাথায় না রেখে শুধুমাত্র নান্দনিক বা সৌন্দর্যমূলক কারণে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয়, তাদেরকে ললিতকলা বা চারুকলা বলে। এগুলির মধ্যে আছে রংচিত্র অঙ্কন, রেখাঙ্কন, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, ইত্যাদি। কোনও ধারণা বা অনুভূতি নান্দনিকভাবে প্রকাশের জন্য কোনও সমতল পৃষ্ঠতলে তুলি, আঙুল বা অন্য কোনও সরঞ্জামের সাহায্যে এক বা একাধিক রঙ পাতলা স্তরের মতো প্রয়োগ করে বা লেপন করে শুকিয়ে চিত্র অঙ্কন করাকে রংচিত্র অঙ্কন বা সংক্ষেপে চিত্রাঙ্কন (Painting) বলে।
রংচিত্র অঙ্কন এক ধরনের দ্বিমাত্রিক দৃশ্যকলা, অর্থাৎ এটির উল্লম্ব দৈর্ঘ্য ও অনুভূমিক প্রস্থ, শুধুমাত্র এই দুইটি মাত্রা রয়েছে এবং এটিকে চোখ তথা দর্শনেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে উপভোগ করতে হয়। রংচিত্র অঙ্কনে আকৃতি, রেখা, রঙ, রঙের আভা বা মাত্রা, বুনট, ইত্যাদি উপাদানগুলিকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করে, এগুলিকে নির্দিষ্ট সজ্জায় বিন্যস্ত করে, এগুলির সমন্বয় সাধন করে ও এগুলিকে গ্রন্থনা করে (গেঁথে) কোনও দ্বিমাত্রিক সমতল পৃষ্ঠে আয়তন, শূন্যস্থান, চলন ও আলোর অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা হয় এবং এভাবে কোনও বাস্তব বা পরাবাস্তব ঘটনা উপস্থাপন, কোনও কাহিনীর বিষয়বস্তুর ব্যাখা প্রদান, কিংবা সম্পূর্ণ বিমূর্ত দৃশ্যমান সম্পর্ক সৃষ্টির মত শৈল্পিক অভিব্যক্তিমূলক কাজ সম্পাদন করা হয়।
ভাস্কর্য
নির্মাণ দৃশ্যকলার একটি শাখা ভাস্কর্য যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে শক্ত বা নমনীয় উপাদান-পদার্থকে নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী আকার, আকৃতি ও আয়তন প্রদান করে ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করা হয়। ভাস্কর্য নির্মাণকারী শিল্পীকে ভাস্কর বলে এবং উৎপাদিত শিল্পকর্মটিকে ভাস্কর্য বলে। ঐতিহ্যগতভাবে ভাস্কর্য সাধারণত দুই ধরনের হয়। প্রথমত এটি নিরাবলম্ব ভাস্কর্য হতে পারে, অর্থাৎ কোনও অবলম্বন ছাড়া স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে দণ্ডায়মান একটি শিল্পকর্ম হতে পারে। দ্বিতীয়ত এটি উদ্গত ভাস্কর্য হতে পারে, অর্থাৎ এটি কোনও পৃষ্ঠতল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বা অবলম্বনরূপী কোনও পৃষ্ঠতলের উপরে বসানো হতে পারে।
ভাস্কর্য এমনকি দর্শককে ঘিরে রাখা পরিপার্শ্বস্থ কোনও কিছু হতে পারে। ভাস্কর্য শিল্পে কাঁচামাল বা মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন বিশেষ কাদামাটি, ধাতু, পাথর, কাঠ, মোম, হাতির দাঁত, অস্থি, কাপড়, কাচ, পলেস্তারা, রবার কিংবা বিচিত্র যেকোনও বস্তু। এই উপাদান পদার্থগুলিকে কেটে, কুঁদে, আকার প্রদান করে, ছাঁচে ঢেলে, আঘাত করে, চাপ দিয়ে, সুতায় গেঁথে, জোড়া লাগিয়ে, ধাতু গলিয়ে, একত্রে সন্নিবিষ্ট করে বা অন্য কোনও উপায়ে সংযুক্ত করা হয় ও আকার-আকৃতি-আয়তন দান করা হয়। একজন ভাস্কর অভিমুখ, প্রতিসাম্য, অনুপাত, মাপ, সন্ধি, ভারসাম্য, ইত্যাদি মূলনীতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।
স্থাপত্য
বাংলাদেশের স্থাপত্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থাপনার গঠন বৈশিষ্ট্য ও শৈলীকে বোঝায়। বাংলাদেশের স্থাপত্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যার মূল রয়েছে এদেশের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ইতিহাসের মাঝে। এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিকশিত এবং সামাজিক, ধর্মীয়, বহুজাতিক সম্প্রদায়ের প্রভাবে তৈরি। বাংলাদেশের স্থাপত্য এদেশের মানুষের জীবনধারা, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক স্থাপত্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে অসংখ্য স্থাপত্য নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যেগুলো হাজার বছরের পুরনো। ফজলুর রহমান খান ছিলেন একজন অবকাঠামো প্রকৌশলী এবং স্থাপত্যবিদ যিনি আজকের যুগের সুউচ্চ ভবন তৈরির মৌলিক পদ্ধতি গুলোর সূচনা করেন। “অবকাঠামো প্রকৌশলের আইনস্টাইন” হিসেবে গণ্য খানের “নলাকার নকশা” বহুতল ভবনের নকশায় বিপ্লব নিয়া আসে। ১৯৬০ এর সময় থেকে ৪০-তলার উপরে বেশিরভাগ দালান খানের প্রকৌশল নীতি থেকে প্রাপ্ত একটি নলাকার নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হচ্ছে।
উইলিস টাওয়ার যা আমেরিকার দ্বিতীয় উঁচু ভবন (একসময় সর্বোচ্চ ছিল শুধু আমেরিকাতে নয় সারা বিশ্বে এবং অনেক বছর ধরে), জন হ্যানকক সেন্টার, হজ টার্মিনাল প্রভৃতির স্থপতি তিনি। তার নকশা ভবনগুলোকে শুধ শক্তিশালী এবং দক্ষ রূপই দেয় নি, দালান তৈরিতে উপকরণের ব্যবহার ও কমিয়ে আনে (অর্থ সাশ্রয়ী) এবং দালান গুলোর উচ্চতা ক্রমশ বাড়ানো সম্ভব হতে থাকে। নলাকার নকশা, অভ্যন্তরীণ জায়গা বাড়িয়ে তোলে, দালানকে যেকোনো আকার নিতে সাহায্যের মাধ্যমে স্থপতিদের অকল্পনীয় স্বাধীনতা প্রদান করে।
তিনি বহুতল ভবনে সহজে উপরে ওঠার জন্য স্কাই লবি আবিষ্কার করেন এবং অবকাঠামো নকশায় কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার প্রচলন করেন। ফজলুর রহমান ২০ শতকের অগ্রগণ্য অবকাঠামো প্রকৌশলী যিনি এই পেশায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অকল্পনীয় এবং চিরস্থায়ী বদান রেখে গেছেন। ২০ শতকের শেষার্ধে আকাশচুম্বী দালান তৈরির মিছিলে অন্য যেকোনো মানুষের চেয়ে ফজলুর রহমানের অবদান অনেক বেশি এবং এটর ফলে মানুষের পক্ষে “আকাশের শহরে” বসবাস এবং আকজ করাআ সম্ভব হয়েছে। খান একটি ধারা প্রবর্তন করেন যা অতুলনীয় এবং স্থাপত্য ও অবকাঠামো প্রকৌশলে দৃষ্টান্ত।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২২ পঞ্চম সপ্তাহের চারু ও কারুকলা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান- আদিম যুগের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের সাথে বর্তমান সময়ের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের তুলনামূলক বিবরণ।
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।