সর্বশেষ আপটেড

একতাবদ্ধ হওয়ার এবং সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধের গুরুত্ব

আজকের আমরা জানবো ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৩য় সপ্তাহে আরবী ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট একতাবদ্ধ হওয়ার এবং সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধের গুরুত্ব সম্পর্কে; আশা করছি তোমরা এটি অনুসরণ করে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৩য় সপ্তাহে আরবী ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর একটি ভালো উত্তর দিতে পারবে এবং মূল্যায়নে ভালো ফলাফল পাবে।

আজকে আমরা যেসকল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো-

১. সূরা আন আলে ইমরান এর আয়াত নং-১০৩ থেকে ১০৫;

২. আয়াত সমূহের অনুবাদ;

৩. আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা;

৪. একতাবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব;

৫. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেদের গুরুত্ব;

২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৩য় সপ্তাহে আরবী ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

সূরা আন আলে ইমরান এর আয়াত নং-১০৩

وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ کُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَکُمۡ مِّنۡهَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾

আয়াতের অনুবাদঃ আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘মাত স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করলেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নি-গহ্বরের প্রান্তে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে তাত্থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনাবলী তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হও। তাইসিরুল

আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ় রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেওনা, এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে দান রয়েছে তা স্মরণ কর। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অনল-কুন্ডের ধারে ছিলে, অনন্তর তিনিই তোমাদেরকে ওটা হতে উদ্ধার করেছেন; এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন, যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও।

সূরা আন আলে ইমরান এর আয়াত নং-১০৪

وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

আয়াতের অনুবাদঃ আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।

ব্যাখ্যাঃ ইসলাম যেসব সৎকর্ম ও পূণ্যের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রত্যেক নবী আপন আপন যুগে যে সব সৎকর্মের প্রচলন করেছেন, তা সবই আয়াতের উল্লেখিত ‘মারুফ’ তথা সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। ‘মারুফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিচিত। এসব সৎকর্ম সাধারণ্যে পরিচিত। তাই এগুলোকে ‘মারুফ’ বলা হয়।

এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব অসৎকর্মরূপী কাজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলে খ্যাত, তা সবই আয়াতে উল্লেখিত মুনকার এর অন্তর্ভুক্ত। এ স্থলে ‘ওয়াজিবাত’ অর্থাৎ ‘জরুরী করণীয় কাজ’ ও ‘মা’আসী’ অর্থাৎ ‘গোনাহর কাজ’ এর পরিবর্তে মারুফ ও মুনকার বলার রহস্য সম্ভবত এই যে, নিষেধ ও বাধাদানের নির্দেশটি শুধু সবার কাছে পরিচিত ও সর্বসম্মত মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটাই ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর” অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর পরে সরিষা পরিমাণ ঈমানও বাকী নেই’। [মুসলিমঃ ৪৯, আবু দাউদঃ ১১৪০]

অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অচিরেই আল্লাহ তোমাদের উপর তার পক্ষ থেকে শাস্তি নাযিল করবেন। তারপর তোমরা অবশ্যই তার কাছে দোআ করবে, কিন্তু তোমাদের দোআ কবুল করা হবে না। [তিরমিযীঃ ২১৬৯, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৯১]

অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, কোন লোক সবচেয়ে বেশী ভাল? তিনি বললেনঃ সবচেয়ে ভাল লোক হল যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎকাজে আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৬/৪৩১]

সূরা আন আলে ইমরান এর আয়াত নং-১০৫

 وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

আয়াতের অনুবাদঃ আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব।

ব্যাখ্যাঃ ‘সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর (বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে’ এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের পারস্পরিক বিরোধ ও দলাদলির কারণ এই ছিল না যে, তারা সত্য জানতো না এবং দলীলাদির ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল, বরং প্রকৃত ব্যাপার হল এই যে, তারা সব কিছু জানা সত্ত্বেও কেবল দুনিয়ার লোভে এবং ব্যক্তিস্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যে বিরোধ ও দলাদলির পথ অবলম্বন করেছিল এবং এ পদ্ধতি শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিল।

কুরআন মাজীদ বারংবার বিভিন্নভাবে (তাদের) প্রকৃত ব্যাপারকে তুলে ধরেছে এবং তা থেকে দূরে থাকার তাকীদও করেছে। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় যে, এই উম্মতের বিভেদ সৃষ্টিকারীরাও ঠিক ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের মতই স্বভাব অবলম্বন করেছে।

তারাও সত্য এবং তার প্রকাশ্য দলীলাদি খুব ভালভাবেই জানে, তা সত্ত্বেও তারা দলাদলি ও ভাগাভাগির উপর শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধির সমস্ত মেধাকে বিগত জাতিদের মত (শরীয়তের) অপব্যাখ্যা এবং বিকৃতি করার জঘন্য কাজে নষ্ট করছে।

একতাবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব

ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহতায়ালা ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন।

তাওহিদের পরে মুমিনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো- ঐক্য।

ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করা মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশনা। এ সর্ম্পকে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে (ইসলাম) আঁকড়ে ধর (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। ’ -সূরা আল ইমরান: ১০৩

ঐক্য সর্ম্পকে রাব্বুল আলামিন কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তোমরা  সেসব লোকদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ’ -সূরা আল ইমরান: ১০৫

ঐক্য প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের আরও কিছু আয়াত হলো-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং কখনো মুশরিকদের দলভূক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে, এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত। ’ -সূরা তাওবা: ৩১-৩২

‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। ’ -সূরা হুজরাত: ১০

‘এই যে তোমাদের জাতি, এতো একই জাতি, আর আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই দাসত্ব কর। ’ -সূরা তওবা: ৯২

ঐক্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমের এক নির্দেশনা থাকার পরও বর্তমানে মুসলিম সমাজের ঐক্যের অভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়। মুসলিম জাতি এক প্রাণ, এক দেহ- এই চেতনাবোধ দিনে দিনে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর আসছে। ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক সর্ম্পক ভ্রাতৃত্বের। এ সর্ম্পকের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কেউ তার স্বীকৃতি দিবে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এই ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জোর তাগিদ দিয়েছেন।

হজরত হারিছ আল আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে ওইগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংঘবদ্ধ, আমিরের নির্দেশ শ্রবণ, নির্দেশ পালন, হিজরত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? এর উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, নামাজ কায়েম এবং রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও। ’ –সুনানে তিরমিজি

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে। ’ –তিরমিজি

হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন কর, সংঘবদ্ধ  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন-যাপন করো না, কারণ বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করলে শয়তানের কু-প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। ’ -আবু দাউদ ও ইবনে মাজা

হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবিষ্ট করেন। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। ’ –মুসলিম

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনজন লোক কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকলেও একজনকে আমির না বানিয়ে থাকা জায়েজ নয়। ’ –আহমদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

হজরত রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয়; আর তার মাথা আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আহত হয়। ’ –সহিহ মুসলিম

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেদের গুরুত্ব

“তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো” (সূরা আল-ইমরান : ১১০)।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। এবং সাথে সাথে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আমাদের কাজ কী হবে তাও বলে দিলেন। সাবলীল ভাষায় হুকুম দিলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’।

এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর অবশ্যই আযাব নাযিল করবেন। এরপর তোমরা যখন আল্লাহকে ডাকবে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না” (মিশকাত শরীফ : ৪৩৬)।

কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বান্দাদের ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ সম্পর্কে সরাসরি হুকুম জারি করলেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আপন উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল উভয়ের একই বাণী দ্বারা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, ইসলামে ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আদেশ-নিষেধের পদ্ধতি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ কিভাবে করব সেটাও ইসলামী শরীয়তে বলা আছে।

ভাল কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো কৌশল, উত্তম উপদেশ এবং উৎকৃষ্ট তর্কের মাধ্যমে” (সূরা নাহল : ১২৫)। অত্র আয়াতে আল্লাহ পাক আমাদেরকে ‘সৎ কাজে আদেশ’ প্রদানে তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করতে বলেছেন। (১) হিক্মত তথা কৌশল, দক্ষতা। (২) উত্তম উপদেশ। (৩) উৎকৃষ্ট তর্ক বা উত্তম যুক্তি প্রদর্শন।

এ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বিদ্যমান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি গর্হিত-মন্দ কাজ হতে দেখবে সে যেন তা আপন হাত দ্বারা প্রতিহত করে। যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে মুখ দ্বারা। তাও যদি সম্ভব না হয় তবে হৃদয়ে ঐ মন্দ কর্মের প্রতি ঘৃণিত ভাব পোষণ করবে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দুর্বল স্তর” (মিশকাত শরীফ : ৪৩৬)।

এখন আমরা যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দেখানো পন্থা মোতাবেক ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ করতে পারি তবে এটা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে। নিজ সত্তায় আমল: আমি যখন কাউকে ন্যায় কাজের প্রতি আহ্বান করব তখন আমার চিন্তা করতে হবে যে, আমি ঐ ন্যায় কাজ করছি কি না। যখন কাউকে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত রাখতে যাব তখন ভাবতে হবে আমি নিজে ঐ মন্দ কাজ থেকে বিরত আছি কি না। এটাই ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ এর মানদণ্ড। প্রথমে নিজে আমল করতে হবে। অতঃপর অপরকে বলতে হবে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে ইমানদারগণ! কেন তোমরা তা বল, যা তোমরা নিজেরাই করো না? আল্লাহর নিকট এটি বড় অপছন্দনীয় যে, তোমরা তা বল যা তোমরা করো না” (সূরা সাফ্ফ : ২,৩)। ‘যা বলে তা না করা’র ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন কিছু ব্যক্তিকে দেখেছি যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কাঁচি দ্বারা কর্তন হচ্ছে। আমি জিব্রাইল (আঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জিব্রাইল (আঃ) উত্তরে বললেন, এরা আপনার উম্মতের সেসব উপদেশদাতা যারা অন্যকে সৎকাজের আদেশ দিত অথচ নিজেরাই ছিল উদাসীন” (মিশকাত শরীফ)।

আলোচ্য কর্মের প্রতিদান: যারা ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ করবে তাদের প্রতিদান কী হবে? প্রভু তাদেরকে কীভাবে পুরস্কৃত করবেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে তারাই হবে সফলকাম” (সূরা আল-ইমরান : ১০৪)। ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে রয়েছে প্রভুর পক্ষ থেকে সফলতার নিশ্চয়তা। সাথে আমলনামায় সওয়াব তো লেখা হবেই।

আসুন, এই মহান কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ সম্পর্কে জানান দেই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার তৌফিক দান করুক, আমিন।

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

আপনার জন্য আরও কিছু তথ্যঃ

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ