সর্বশেষ আপটেড

মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা

২০২২ সালের সুপ্রিয় এসএসসি শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সকলে সুস্থ আছো। চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য ৯ম সপ্তাহের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে- ২০২২ সালের এসএসসি ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট ৯ম সপ্তাহ সমাধান– মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা নিয়ে আলোচনা করবো।

এসএসসি পরীক্ষা ২০২২ নবম সপ্তাহ ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট

বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে গ্রিক সভ্যতার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের অবদান এবং বিশ্বসভ্যতায় প্রাচীন রােমান সভ্যতার ধর্ম, দর্শন ও আইনের প্রভাব আলােচনা শিখে ৯ম সপ্তাহের নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করে যথা নিয়মে জমা দিতে হবে। দেরি না করে চলো দেখা যাক, মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা শিরোনামে কি প্রতিবেদন রয়েছে আজকের আলোচনায়।

নিচের ছবিতে এসএসসি পরীক্ষা ২০২২ নবম সপ্তাহ ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট দেখুন-

৯ম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট: এসএসসি পরীক্ষা ২০২২

অ্যাসাইনমেন্টঃ তােমার পাঠ্যপুস্তকে পঠিত মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন কর।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • ১। বিশ্বসভ্যতাসমূহের (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােম) সংক্ষিপ্ত পটভূমি;
  • ২। সভ্যতাসমূহের উল্লেখযােগ্য অবদান চিহ্নিত ও ব্যাখ্যা;
  • ৩। প্রতিবেদন রচনার ধাপসমূহ অনুসরণ;
  • ৪। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে আলােচ্য চারটি সভ্যতার ভূমিকা মূল্যায়ন।

২০২২ সালের এসএসসি ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট ৯ম সপ্তাহ সমাধান

তারিখ: ৩১.০১.২০২২ ইং
প্রধান শিক্ষক
বক্সগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।

বিষয় : মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোমান সভ্যতার উল্লেখযোগ্য অবদানসমূহ পর্যালোচনা বিষয়ক প্রতিবেদন।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে আপনার আদেশ নং ব.উ.বি.৩৬০-১ তারিখ ২০.০১.২০২২ খ্রি: অনুসারে উপরোক্ত বিষয়ের উপর আমার স্বব্যাখ্যাত প্রতিবেদনটি নিম্নে পেশ করলাম।

বিশ্বসভ্যতাসমূহের (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােম) সংক্ষিপ্ত পটভূমি:

গ্রিক সভ্যতা: 

মহাকবি হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি- তে তিনি প্রাচীন গ্রিসের যে কাহিনীগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন তাতে ঐতিহাসিকগণ নড়ে-চড়ে বসেন। হোমারের কাহিনীকে শুধু কাহিনী না ভেবে এর ভেতরের সত্যতা খুঁজতে শুরু করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের অক্লান্ত চেষ্টায় উন্মুক্ত হয় গ্রিক সভ্যতার সঠিক ইতিহাস। ইজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে এবং এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কৃত হয় এক উন্নততর প্রাচীন নগর সভ্যতা। সন্ধান মেলে মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশত নগরীর ধ্বংস স্তুপের। যাকে বলা হয় ঈজিয়ান সভ্যতা বা প্রাক ক্লাসিক্যাল গ্রিক সভ্যতা। এই সভ্যতার অধিকাসীরা ছিল সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অধিকারী। সভ্যতাটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১। মিনিয়ন সভ্যতা: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১৪০০ পর্যন্ত সময়কালকে মিনিয়ন সভ্যতার স্থায়ীত্ব ধরা হয়।

২। ইজিয়ান সভ্যতা: খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১১০০ পর্যন্ত সময়কালকে ইজিয়ান সভ্যতার স্থায়ীত্ব ধরা হয়।

রোমান সভ্যতা: 

ইতালির খরস্রোতা টাইবার নদীর তীরে ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা সাতটি পাহাড়ের আশে পাশে বিক্ষিপ্তভাবে মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই বাসস্থানগুলো মিলে একটি নগরি গড়ে ওঠে। এই নগর রাষ্ট্রটি ক্রমেই বেড়ে চলল এবং বিস্তার লাভ করতে করতে পরিণত হয় এক বিশাল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। রোমকে কেন্দ্র করে এই সুবিশাল সাম্রাজ্য ও সভ্যতা গড়ে ওঠে বলে ইতিহাসে এটি রোমান সভ্যতা নামে পরিচিত। সে সময়ের প্রথম দিকে রোমের শাসনভার ছিল একজন রাজার অধীনে। তখন একটি সভা ও সিনেট ছিল। রাজার স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ৫১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রোমান সভ্যতা প্রায় ৬০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল।

মিশরীয় সভ্যতার পটভুমি: Background of Egyptian civilization

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে বর্তমানে যে দেশটির নাম ইজিপ্ট, সেই দেশেরই প্রাচীন নাম মিশর। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত নীল নদের অববাহিকায় একটি সমৃদ্ধ জনপদের উদ্ভব হয়। এ সময় থেকে মিশর প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে। এরপর ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে প্রথম রাজবংশের শাসন আমল শুরু হয়। ঐ সময় থেকে মিশরের ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়। একই সময়ে নারমার বা মেনেস হন একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরােহিত। তিনি প্রথম ফারাও-এর মর্যাদাও লাভ করেন। এরপর থেকে ফারাওদের অধীনে মিশর প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেযােগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

সিন্ধু সভ্যতার পটভূমিঃ

সিন্ধু সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম। খ্রিস্টের জন্মের আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার অব্দে এর গোড়াপত্তন হয়। সিদ্ধু সভ্যতার দুটি প্রধান কেন্দ্র বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদারো এবং পাঞ্জারের ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পা। সিন্ধু সভ্যতার উৎপত্তি সিন্ধু নদীর তীরে, পরে তা পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বহুদূর বিস্তৃত হয়। বলা হয়, এটি ১৫ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই সভ্যতার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় সুমেরীয় সভ্যতার। কৃষিকর্মের উন্নতি সত্ত্বেও এটি ছিল নগর ও বাণিজ্যভিত্তিক সভ্যতা। অনেকের ধারণা, চীন, সুমেরীয় ও মিশরের প্রাচীন সভ্যতার তুলনায় সিন্ধু সভ্যতা ছিল বেশি অগ্রসর ও উন্নত।

মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পাতে খনন কাজ চালিয়ে পাওয়া গেছে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও পোতাশ্রয়ের সন্ধান। সুপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, আগুনে পোড়ানো ইট, পাথরের মন্দির, সমাধিস্থান ও শিক্ষায়তনের নিদর্শন ও পাওয়া গেছে এখানে। সিন্ধু সভ্যতায় ছিল সুবিন্যস্ত শাসন ব্যবস্থা এবং ছিল নিজস্ব চিত্রলিপি ও লিখন প্রণালী। ওদের পোশাক পরিচ্ছদের অন্তর্ভুক্ত ছিল কার্পাস সুতোর বস্ত্র, চাদর ইত্যাদি। দেহের শোভাবর্ধন করার জন্য তারা সোনা, রূপা, শঙ্খ ও মূল্যবান পাথরের অলঙ্কার, পশুর হাড়, হাতির দাঁতের চিরুনি, আয়না, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার করতো। সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তন কারা করেছিল এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় এখানে প্রোটে অস্ট্রালয়েড মেডিটেরিনিয়ান, আলপাইন, ও মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠীর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। নৃতাত্ত্বিকদের ধারণা, মেডিটেরিনিয়ান বা দ্রাবিড় গোষ্ঠীই এ সভ্যতার প্রবর্তক। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে আর্যদের আক্রমণে এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।

সভ্যতা সমূহের অবদান নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো-

সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদানের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বিষয় :

শিল্প : মিশরীয়দের চিত্রকলা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরত্বপূর্ণ। অন্যান্য দেশের মতাে চিত্রশিল্পও গড়ে উঠেছিল ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে। তারা সমাধি আর মন্দিরের দেয়াল সাজাতে গিয়ে চিত্রশিল্পের সূচনা করে। তাদের প্রিয় রং ছিল সাদা-কালাে । সমাধি, পিরামিড, মন্দির, প্রাসাদ, প্রমােদ কানন, সাধারণ ঘর-বাড়ির দেয়ালে মিশরীয় চিত্রশিল্পীরা অসাধারণ ছবি এঁকেছেন। সেসব ছবির মধ্যে সমসাময়িক মিশরের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের কাহিনি ফুটে উঠেছে।

লিখনপদ্ধতি ও কাগজ আবিষ্কার : মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। নগর সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয় লিখনপদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে। প্রথম দিকে ছবি এঁকে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত। এই লিখন পদ্ধতির নাম ছিল হায়ারোগ্লিফিক।

ভাস্কর্য: ভাস্কর্য শিল্পে মিশরীয়দের মতাে প্রতিভার ছাপ আর কেউ রাখতে সক্ষম হয়নি। ব্যাপকতা, বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত বিশাল আকারের পাথরের মূর্তিগুলাে ভাস্কর্য শিল্পে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। প্রতিটি ভাস্কর্য ধর্মীয় ভাবধারা, আচার অনুষ্ঠান, মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রতিটি শিল্পই ছিল আসলে ধর্মীয় শিল্পকলা। সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গিজার অতুলনীয় কিংস। ফিংকস হচ্ছে এমন একটি মূর্তি, যার দেহ সিংহের মতাে, কিন্তু মুখ মানুষের মতাে। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড হচ্ছে ফারাও খুফুর পিরামিড। মন্দিরগুলােতে মিশরীয় ভাস্কর্য স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন প্রতিফলিত হয় ।

বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি সাধনে সিন্ধু সভ্যতার অবদান :

সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল বলে এর নাম রাখা হয় সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার সংস্কৃতিকে হরপ্পা সংস্কৃতি বা হরপ্পা সভ্যতা ও বলা হয় । ঐতিহাসিকদের মতে ২৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতা টিকে ছিল। ঐতিহাসিকরা আরাে মনে করেন পাঞ্জাব থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভৌগলিক এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠে ছিল। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলাের অন্যতম হল সিন্ধু সভ্যতা তাই বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে তার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার অবদানের কয়েকটি দিক হল।

নগর পরিকল্পনা : সিন্ধুসভ্যতার এলাকায় যেসব শহর আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে সবচেয়ে বড় শহর। ঘরবাড়ি সবই পােড়ামাটি বা রােদে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলাের বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বােঝা যায় যে, সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা উন্নত নগরকেন্দ্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাের নগর পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তাগুলাে ছিল সােজা। প্রত্যেকটি বাড়িতে খােলা জায়গা, কৃপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের জন্যে ছােট নর্দমাগুলােকে মূল নর্দমার সাথে সংযুক্ত করা হতাে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতাে। পথের ধারে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপােস্ট।

পরিমাপ পদ্ধতি : সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা দ্রব্যের ওজন পরিমাপ করতে শিখেছিল। তাদের এই পরিমাপ পদ্ধতির আবিষ্কার সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে বিবেচিত। তারা বিভিন্ন দ্রব্য ওজনের জন্য নানা মাপের ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বাটখারা ব্যবহার করত। দাগ কাটা স্কেল দিয়ে দৈর্ঘ্য মাপার পদ্ধতিও তাদের জানা ছিল।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রেখে গেছে। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পঁচিশ কক্ষের বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের রোমানদের অবদান :

রোমিও সাহিত্যঃ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় রোমানরা গ্রিকদের অনুকরণে রচনা করেন।প্লুটাক(২৫৪-১৮৪খ্রিস্টপূর্ব) ১২ টি নাটকের মাধ্যমে রোমের আচরণ ও কৃষ্টির আলোকপাত করেন। রোমিও সাহিত্যে নাটকের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। গীতিকাব্যকার ক্যাটুলাস ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া সিসিরো এবং ভার্জিল সাহিত্যচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেন।

রোমান ধর্মঃ তাদের গৃহ ছিল ধর্ম ও দেবদেবীর আখড়া। প্রত্যেক গৃহে জেনাস নামে একজন তত্ত্বাবধায়ক দেবতা ছিল।এছাড়া ভেস্তা আগুনের দেবতা,সার্টান ফসলের দেবতা, জুনো গর্ভবতী হওয়ার দেবতা,নেপচুন সাগরের দেবতা, ভেনাস প্রেমের দেবতা,জুপিটার আকাশের দেবতা- তাদের ছিল। পন্ডিত ভারো বলেন, রোমানদের ২০০০০দেবদেবী ছিল। সপ্তাহের দিন গুলোর নাম গৃহের নাম অনুসারে রাখা এবং 25 ডিসেম্বর sevior দেবতার জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করা অতীন্দ্রিয়বাদে গৃহীত আচার-অনুষ্ঠান থেকে এসেছে।

মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা

রোমান দর্শনঃ রোমানরা দর্শনের ক্ষেত্রেও গ্রিক প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। গ্রীক দর্শন এর উপর ভিত্তি করে রোমান দর্শনের সূত্রপাত। বিশ্ব সভ্যতার রোমান দার্শনিকদের অবদান অপরিসীম। পশ্চিমের সক্রেটিস নামে কেটো খ্যাত ছিলেন আদি রোমান দার্শনিক।তার মতে, গ্রীক সভ্যতা নয়, রোমান সভ্যতাই সভ্য পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তার করবে ।তিনি সক্রেটিসের নয় যুক্তি জ্ঞান ও নৈতিকতা শৃঙ্খলা ভক্ত ছিলেন। রোমের অবদানের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপঃ

  • ১. জলসেবা এবং সেতু
  • ২. জুলিয়ান ক্যালেন্ডার
  • ৩. রাস্তা ও মহাসড়ক
  • ৪. নম্বর
  • ৫. কংক্রিট
  • ৬. বেসিলিকাস
  • ৭. সংবাদপত্র
  • ৮. আইন
  • ৯. নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক শহরগুলি
  • ১০. নর্দমা এবং স্যানিটেশন

সভ্যতায় গ্রিসের অবদান :

ভৌগােলিক কারণে গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলাে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও তাদের সংস্কৃতি ছিল অভিন্ন। রাজনৈতিক অনৈক্য থাকা সত্ত্বেও তারা একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী বলে মনে করত। তাদের ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, খেলাধুলা সবকিছু এক সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এই সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল অবদান ছিল এথেন্সের। আর এই সংস্কৃতির নাম হচ্ছে হেলেনীয় সংস্কৃতি।

শিক্ষা : শিক্ষা সম্পর্কে গ্রিক জ্ঞানী-গুণীরা বিভিন্ন ধারণা পােষণ করতেন। তারা নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করতেন সুশিক্ষিত নাগরিকের হাতেই শাসনভার দেওয়া উচিত। সরকারের চাহিদা ও লক্ষ্য অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল আনুগত্য ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়া। স্বাধীন গ্রিসবাসীর ছেলেরা সাত বছর বয়স থেকে পাঠশালায় যাওয়া-আসা করত। ধনী ব্যক্তিদের ছেলেদের ১৮ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হতাে। কারিগর আর কৃষকের ছেলেরা প্রাথমিক শিক্ষা পেত। দাসদের সন্তানের জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মেয়েরাও কোনাে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারত না।

সাহিত্য : সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসের সৃষ্টি আজও মানবসমাজে মূল্যবান সম্পদ। হােমারের ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’ মহাকাব্য তার অপূর্ব নির্দশন। সাহিত্য ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল নাটক রচনায়। বিয়ােগান্ত নাটক রচনায় গ্রিকরা বিশেষ পারদর্শী ছিল। এসকাইলাসকে এই ধরনের নাটকের জনক বলা হয়। তাঁর রচিত নাটকের নাম প্রমিথিউস বাউন্ড। গ্রিসের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন সােফোক্লিস। তিনি একশটিরও বেশি নাটক রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রাজা ইডিপাস, আন্তিগােনে ও ইলেকট্রী অন্যতম। আর একজন বিখ্যাত নাট্যকারের নাম ইউরিপিদিস। এরিস্টোফেনেসের মিলনান্তক ও ব্যঙ্গ রচনায় বিশেষ খ্যাতি ছিল। ইতিহাস রচনায়ও গ্রিকরা কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। হেরােডটাস ইতিহাসের জনক নামে পরিচিত ছিলেন। হেরােডটাস রচিত ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রথম বইটি ছিল গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে । থুকিডাইডেস ছিলেন বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক। তাঁর বইটির শিরােনাম ছিল ‘দ্য পেলােপনেসিয়ান ওয়র’।

মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা

ধর্ম : গ্রিকদের বারােটি দেব-দেবী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজা ছাড়াও তারা বীরযােদ্ধাদের পূজা করত । জিউস ছিল দেবতাদের রাজা। অ্যাপােলাে ছিলেন সূর্য দেবতা, পােসিডন ছিলেন সাগরের দেবতা। এথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী। বারােজনের মধ্যে এই চারজন ছিলেন শ্রেষ্ঠ। রাষ্ট্রের নির্দেশে পুরােহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। ডেলােস দ্বীপে অবস্থিত ডেলফির মন্দিরে বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মানুষ সমবেত হয়ে এক সঙ্গে অ্যাপােরলা দেবতার পূজা করত।

দর্শন : দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে গ্রিসে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিদিন কীভাবে এর পরিবর্তন ঘটছে—এসব ভাবতে গিয়ে গ্রিসে দর্শনচর্চার সূত্রপাত। থালেস ছিলেন প্রথম দিককার দার্শনিক। তিনিই প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। এরপর গ্রিসে যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে । তাদের বলা হতাে সফিস্ট। তারা বিশ্বাস করতেন যে, চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই । পেরিক্লিস তাঁদের অনুসারী ছিলেন। সক্রেটিস ছিলেন এ দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান। তার শিক্ষার মূল দিক ছিল আদর্শ রাষ্ট্র ও সৎ নাগরিক গড়ে তােলা। অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করার শিক্ষাও তিনি দেন। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গ্রিক দর্শনকে চরম উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন।

মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা

বিজ্ঞান : গ্রিকরা প্রথম বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অঙ্কন করেন গ্রিক বিজ্ঞানীরা। তারাই প্রথম প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়। গ্রিক জ্যোতির্বিদরা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন । চাঁদের নিজস্ব কোনাে আলাে নেই। বজ্র ও বিদ্যুৎ জিউসের ক্রোধের কারণে নয়, প্রাকৃতিক কারণে ঘটে – এই সত্য তারাই প্রথম আবিষ্কার করেন। জ্যামিতির পণ্ডিত ইউক্লিড পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগােরাস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপােক্রেটসের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : গ্রিক শিল্পের বিশেষ করে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে বিশেষ উন্নতি হয়েছিল। গ্রিক চিত্রশিল্পের নিদর্শন মৃৎপাত্রে আঁকা চিত্রের মধ্যে দেখা যায়। স্থাপত্যের সুন্দর সুন্দর নিদর্শন গ্রিসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। বড় বড় স্তম্ভের উপর তারা প্রাসাদ তৈরি করত। আর প্রাসাদের স্তম্ভগুলাে থাকত অপূর্ব কারুকার্যখচিত। পার্থেনন মন্দির বা দেবী এথেনার মন্দির স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শনের ভগ্নাবশেষ এখনও চোখে পড়ে। গ্রিক ভাস্কর্য পৃথিবীর শিল্পকলার ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগের জন্ম দিয়েছিল। সে যুগের প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী ছিলেন মাইরন, ফিদিয়াস ও প্রাকসিটেলেস।

সুতারাং বলা যায়, বিশ্বসভ্যতা বিকাশে প্রত্যেক সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য।

প্রতিবেদকের নাম: খাদিজাতুল স্বর্ণা

রোল-০১

শাখা-ক

বিভাগ- মানবিক

এটিই তোমাদের ২০২২ সালের এসএসসি ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা অ্যাসাইনমেন্ট ৯ম সপ্তাহ সমাধান- মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার উল্লেখযােগ্য অবদানসমূহ পর্যালােচনা।

আপনার জন্য আরও কিছু তথ্যঃ

অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য সবার আগে পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন, ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে নিন এবং ফেসবুক পেইজ টি লাইক এবং ফলো করে রাখুন। খরচ বাঁচাতে এবং সবার আগে আপডেট পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ