ইসলাম ও জীবন

হঠাৎ মধ্যরাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আযান ! জানা গেল আসল ঘটনা

আজ রাতে ১০:০০ থেকে ১০:৩০ দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হঠাৎ আযান শোনা যায়। বিষয়টি নিয়ে পূর্বে কোনো কিছু না জানায় সবার মধ্যে একটা প্রশ্ন তৈরি হয় তা কেন এই আযান দেওয়া হল? এবং কিসের কাজে আসবে এই আযান!

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য এই আযান দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

অনেকেই বলছেন এটা ধর্মীয় গোড়ামি আবার অনেকেই বলছেন এটা শরীয়ত সম্মত।

ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের থেকে জানা যায়- ১০ (দশ) সময়ে আযান দেওয়ার বিধান রয়েছে-

ফতোয়ায়ে শামী, রদ্দুল মুখতার, জা আল হক, শরহে আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে- ১০ জায়গায় আজান দেওয়া সুন্নাত:

  • ১. সন্তান জন্ম নিলে
  • ২. কোন মহামারী দেখা দিলে
  • ৩. আগুন লাগলে
  • ৪. জ্বিন দূরীভূত করা
  • ৫. মানসিক রোগী
  • ৬. কেউ রাস্তা হারিয়ে ফেললে।
  • ৭. কোন হিংস্র জানোয়ার এর আক্রমণ রোধ করার জন্য।
  • ৮. কেউ অতিরিক্ত রাগান্বিত হলে
  • ৯. কোন এলাকায় মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে
  • ১০. ইন্তেকালের পর কবরের পাশে।

    [বিঃদ্রঃ আজানে ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ্’ ও ‘ হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ ব্যতিত বাকি শব্দগুলো উচ্চারিত হবে]
চলুন জেনে নেই আসল বিষয়টি কি! মধ্যরাতে আযান দেওয়ার বিষয়টি কতটুকু শরীয়ত সম্মত!

আযানের কারণ কি?
মহামারি থেকে মুক্তির জন্য এটা বিশেষ ধরনের আযান। কিন্তু কিছু এলাকায় ১০ টায় কিছু এলাকায় সাড়ে ১০ টায় দিচ্ছে। এটা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে স্বীকৃত;

হযরত আল্লামা ডক্টর মোহম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন আল কাদেরী হুজুরের আইডি থেকে কপিকৃতঃ

মহামারিতে আযান দেয়ার শরয়ী বিধান ও গুরুত্ব:
আযান ইসলামের এক মৌলিক ইবাদত নামাজের দিকে আহবানের মাধ্যম। আযানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়, বিপদ ও আযাব দূরীভূত হয়।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে হুযুর (ﷺ ) এরশাদ করেন:
” ﺍِﺫَﺍ ﺍُﺫِّﻥَ ﻓِﯽْ ﻗَﺮِﯾَﺔٍ ﺍٰﻣَﻨَﮭَﺎ ﺍﻟﻠﮧُ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺑِﻪٖ ﻓِﯽْ ﺫٰﻟِﻚَ ﺍﻟْﯿَﻮْﻡِ “
-যখন কোন গ্রামে আযান দেয়া হয়, তখন মহান আল্লাহ ( ﷻ ) সেদিন ওই গ্রামকে তার আযাব থেকে নিরাপদে রাখেন।
[আল-মু’জামুল কবীর, খ-১, পৃ-২৫৭, হাদিস:৭৪৬, মুদ্রণ: মাকতাবায়ে
ফয়সলীয়া, বৈরুত। ফতোয়ায়ে রযভীয়্যা, খন্ড:৫, পৃ-৩৬৯, রেযা ফাউন্ডেশন, লাহোর]

মহামারীর সময় আযান দেয়া একটি মুস্তাহাব বিষয়। ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদ্দুল মুখতার বা ফতোয়ায়ে শামীতে আযানদানের ১০টি মুস্তাহাব সময়ের মধ্যে মহামারীর সময় আযানের কথা উল্লেখ রয়েছে। মুজাদ্দিদে দীনো মিল্লাত,ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ ইমাম আহমদ রেজা খান (রা.) লিখেন-
” ﻭﺑﺎ ﮐﮯ ﺯﻣﺎﻧﮯ ﻣﯿﮟ ﺍﺫﺍﻥ ﺩﯾﻨﺎ ﻣﺴﺘﺤﺐ ﮨﮯ “

মহামারীর সময় আযান দেয়া মুস্তাহাব।
[ফতোয়ায়ে রযভীয়্যা, খ-৫, পৃ-৩৭০, মুদ্রণ-রেযা ফাউন্ডেশন লাহোর। বাহারে শরীয়ত, প্রথম খন্ড, অংশ-৩, পৃ-৪৬৬, মাকতাবাতুল মদীনা করাচী]

কারণ এ মহামারীর কারণে জনমনে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে,যার ফলে জনগণ উদ্বিগ্ন থাকে, ভীতি ও ত্রাসের শিকার হয়, এমন পরিস্থিতিতেও আযান আত্নার প্রশান্তি ও ভয়-ত্রাস দূর করার মাধ্যম।

আবু নাঈম ও ইবনে আসাকির হযরত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণণা করেন, হুযুর ( ﷺ) ইরশাদ করেন-
ﻧَﺰَﻝَ ﺁﺩَﻡُ ﺑِﺎﻟْﮭِﻨﺪِ ﻓَﺎﺳْﺘَﻮْﺣَﺶَ ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﺟِﺒْﺮَﺋِﯿْﻞُ ﻋَﻠَﯿْﻪ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﻓَﻨَﺎﺩﯼٰ ﺑِﺎﻟْﺎَﺫَﺍَﻥِ .
-যখন হযরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে ভারতবর্ষে অবতরণ করলেন, ভীত-সন্ত্রস্থ হলেন, তখন জিবরাইল (আ.) নেমে (ভয় দূর করার জন্য) আযান দিলেন।
[হিলয়াতুল আউলিয়া, খ-২, পৃ-১০৭, হাদিস:২৯৯, মুদ্রণ-দারুল কিতাব আল- আরাবিয়্যা,বৈরুত]

মুসনাদুল ফিরদৌস-এ আমীরুল মু’মিনীন,সৈয়্যদুনা আলী আল- মুরতাদ্বা (রা.) থেকে বর্ণিত,
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺍﯼٰ ﺍﻟﻨَّﺒِﯽُّ ﺻَﻠّٰﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ﺣُﺰِﯾْﻨﺎً ﻓَﻘَﺎﻝَ ﯾَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﺍَﺑِﯽْ ﻃَﺎﻟِﺐٍ ﺍِﻧِّﯽْ ﺍَﺭَﺍﻙَ
ﺣُﺰِﯾْﻨﺎً ﻓَﻤُﺮْ ﺑَﻌْﺾَ ﺍَﮬْﻠِﻚَ ﯾُﺆَﺫِّﻥُ ﻓِﯽْ ﺍُﺫُﻧِﻚَ ﻓَﺎِﻧَّﻪٗ ﺩَﺭْﺀُ ﺍﻟْﮭَّﻢِ
-তিনি বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে বললেন, হে আলী! আমি তোমাকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখছি, তোমার পরিবারের কাউকে তোমার কানে আযান দিতে বলো, কেননা তা চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা দূরকারী।
[মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, আযান পর্ব, খ-২, পৃ-১৪৯, মুদ্রণ-মাকতাবায়ে ইমদাদীয়া,মুলতান]

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি থেকে রক্ষায় অন্যান্য আমলের পাশাপাশি আযান দেয়া একটি শরীয়ত সমর্থিত মুস্তাহাব আমল। এটার জন্য কোন সময় নির্ধারিত নেই। মহান রাব্বুল আলামীন আমলের তাওফিক নসীব করুন। তদীয় প্রিয় হাবীব (ﷺ )’র উসীলায় মুসলিম মিল্লাতকে সকলপ্রকার বিপদাপদ ও মহামারী থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ