সর্বশেষ আপটেড

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

এইচএসসি ২০২২ ১২শ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয়– হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

এইচএসসি ২০২২ ১২শ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান

তারিখ :—/—/২০২২ ইং।
বরাবর ,
প্রধান শিক্ষক,
ক উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল , কুমিল্লা-১২০৭,
কুমিল্লা।

বিষয় : হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে বিষয়ক প্রতিবেদন।

জনাব, বিনীত নিবেদন এই যে , আপনার আদেশ নং ক.উ.বি.৩৫৫-১ তারিখ :-/—/২০২২ ইং অনুসারে উপরােক্ত বিষয়ের উপর আমার স্বব্যখ্যাত প্রতিবেদনটি নিম্নে পেশ করলাম ।

হালাল উপার্জন সম্পর্কে বর্ণনা

হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হালাল হবে না, অনুরূপ হালাল বস্তু হারাম পন্থায় লাভ করলে তা-ও হালাল বা বৈধ হবে না। হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ ইবাদত। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত। ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)। সকল মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ।’ (জামিউল আখবার: ১০৭৯)। ‘হালাল উপার্জন একটি জিহাদ।’ (কানযুল উম্মাল ৯২০৫)।

হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।’ (জামিউল আখবার: ৩৯০)। যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনাে শাস্তি দেবেন ।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৫)।

“যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে হালাল রিজিক আহার করল, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলাে খােলা থাকবে, সে যেখান দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৭)। নবীজি (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে নবীগণের সঙ্গে শামিল হবে এবং অনুরূপ পুণ্য লাভ করবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৮)।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

হালাল রিজিক ও সৎ উপার্জনের সব প্রচেষ্টাই ইবাদত। জীবিকার জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন। শ্রমিক তাঁর মনিবকে ফাঁকি দিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। মনিব তাঁর শ্রমিককে ঠকালে, ন্যায্য পাওনা দিলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না। কর্মচারী মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না, মালিক তাঁর কর্মচারীর প্রতি জুলুম ও অবিচার করলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না।

ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দিলে, ওজনে বা পরিমাণে কম দিলে, নকল পণ্য বিক্রি করলে; মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনােভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, তবে তাঁর রিজিকও হালাল হবে। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ওই সকল লােকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা মানুষ থেকে গ্রহণ । সময় ঠিকমতাে নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা-৮৩ মুতাফফিফিন, আয়াত: ১-২)। সৎ ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক, শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।

হালাল উপার্জনের পদ্ধতি

ইসলামে উপার্জনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দু’টি মূলনীতি রয়েছে।

  • এক. মূলগত: যা উপার্জন করা হবে তা মূলগতভাবে হালাল হতে হবে।
  • দুই. পদ্ধতিগত: যা উপার্জন করব তা বৈধ পন্থায় হতে হবে।

এক. মূলগত:

একজন ব্যক্তি যা উপার্জন করবে সে উপাৰ্জেয় বস্তুটি অবশ্যই উত্তম ও হালাল হতে হবে। আর ইসলাম যাবতীয় কল্যাণকর ও হিতকর বস্তুকে মানবজাতির জন্য হালাল করেছে। সেলক্ষ্যেই পবিত্র কুরআনে ৩৬ ও ১১ শব্দের অবতারনা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সম্বােধন করে হালাল ও তাইয়্যিব যা রয়েছে তা থেকে আহার করতে বলেছেন। তিনি বলেন:

“হে মানুষ! পৃথিবীতে হালাল ও তাইয়্যেব যা রয়েছে তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করাে না, নি:সন্দেহে সে তােমাদের প্রকাশ্য শত্রু।[1]

উপরােক্ত আয়াতের আলােকে বলা যায় যে, শুধুমাত্র হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই তাইয়্যিব (পবিত্র ও উত্তম) হতে হবে। এখানে তাইয়্যিব বলতে ভেজালমুক্ত স্বাস্থসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ আয়াতে হালাল শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং তাইয়্যিব দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং এ দু’শব্দ দিয়ে দু’টি মূলনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

দুই. পদ্ধতিগত

উপার্জনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটি অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে। কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায়। অর্থসম্পদ উপার্জন করতে ইসলাম নিষেধ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুমিনগণকে। সতর্ক করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:

يا أيها الذين قاموا لا تأكلوا أموالكم نگم بالباطل إلا أن تكون تجر عن تراض من ولا تقتلوا أنفسكم إن الله کان بگه چیما ۲۹
و من يفعل ذلك غدرا وظلما فسوف نصليه تارة وكان ذلك على اللي يبيها

“হে মুমিনগণ! তােমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করােনা। কিন্তু তােমাদের পরস্পর রাযি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ; এবং একে অপরকে হত্যা করিওনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তােমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন। করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ।”[2]]

মহান আল্লাহ বলেন:

ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل وصلوا بها إلى الحكام لتأكلوا فريقا بين أقول الناس بأتم وأنتم تعلمون [النساء:29

“তােমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করাে না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে। শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করাে না।[3]

উপরােক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, উপার্জনের পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির ঘােষনা রয়েছে। আর এ ধরনের উপায় জুলমের নামান্তর। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত উচিৎ উপার্জনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারােপ করা।

প্রখ্যাত আধুনিক তাফসিরকার আল্লামা রশিদ রেজা আয়াতে উল্লেখিত হালাল ও তাইয়্যিবা এ দু’টি শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, কোন বস্তু তাইয়্যিব বা উত্তম হওয়ার অর্থ হলাে তাতে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকা। কেননা পবিত্র। কুরআনে যেসব বস্তুর ব্যাপারে হারাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলাে মূলগতভাবেই হারাম বা নিষিদ্ধ। একমাত্র নিরূপায় অবস্থা ছাড়া কোন অবস্থাতেই তার ব্যবহার বৈধ নয়। এ ছাড়াও এক ধরনের হারাম রয়েছে যা মূলগতভাবে হারাম নয় কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন কারণে তাকে হারাম বলা হয়েছে। মূলত: এ জাতীয় বস্তুর বিপরীতেই তাইয়্যিব বা উত্তম। শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যেসব বস্তু অন্যায়ভাবে উপার্জন করা হয়েছে, ন্যায়ানুগ পন্থায় করা হয়নি। যেমন: সুদ, ঘুষ, জুয়া, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধোঁকা-প্রতারনা, আমানতের খিয়নত ইত্যাদি পন্থায় করা হয়েছে এগুলাে হারাম। অর্থাৎ এগুলাে তাইয়্যিব বা উত্তম নয়। সারকথা প্রতিটি অপবিত্র বস্তুই হারাম, তা মূলগত কারণেই হােক কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন কারণেই হােক।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের গুরুত্ব ইসলামে যেমনি রয়েছে, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও অত্যাধিক। ইসলাম মানুষের জন্য যাবতীয় জীবনােপকরণকে সহজসাধ্য, সুস্পষ্ট, ও পবিত্র করার নিমিত্বে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা দিয়েছে। অতএব নির্দেশনা বহির্ভূত যাবতীয় উপার্জনই হারাম বা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের বক্তব্য। হল মানুষকে নিজের সামর্থ্য ও যােগ্যতানুযায়ী নিজেই নিজের প্রয়ােজনীয় অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর সন্ধান করবে। এটি মানুষের অন্যতম অধিকার। তবে ইসলাম মানুষকে এ অধিকার দেয়নি যে, সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্য স্বীয় খেয়ালখুশিমত যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারবে। তাইতাে ইসলাম অর্থসম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যাক্তির জন্য কল্যানকর যাবতীয় ব্যবস্থাকে ইসলাম হালাল করেছে। নিম্নে এ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে আলােকপাত করা হল:

এক, হালাল উপার্জন একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান

ইসলাম মানুষের জন্য হালাল ও হারামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপন করেই শেষ করেনি, বরং হালাল উপার্জনে রয়েছে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা। ফরজ ইবাদত সমূহের আদায়ের পর এ মহতি কর্মে ঝাপিয়ে পরতে উৎসাহিত করা। হয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও বৈধ উপায় অবলম্বন করা ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের উপর ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের প্রশ্নে সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদের ব্যপারে নবী করিম সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেন:

ويأتي على الناس زمان، لا يبالي المرء ما أخذ منه، أمن الحلال أم من الحرام»

“মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন ব্যক্তি কোন উৎস থেকে সম্পদ আহরন করছে, তা হালাল না হারাম, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না।”[4]

দুই. হালাল উপার্জন দু’আ কবুলের পূর্বশর্ত।

মানুষের প্রত্যহিক ও জাগতিক জীবনের চাহিদার কোন অন্ত নেই। তবে এগুলাে মানুষের কাঙ্খিত ও বাঞ্চিত হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মহান স্রষ্ট্রার অনুগ্রহের, ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। আর এর জন্য প্রয়ােজন একান্তে তাঁর দরবানে আরাধনা করা। মহান আল্লাহ ও মানুষে এ ব্যপারে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এটি অন্যতম ইবাদত ও বটে। রাসূল সা. বলেন :

[5] دد الدعاء هو العبادة »

“দোয়া হচ্ছে ইবাদত” অতএব দু’আ ইসলামে অন্যতম একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর গভীর প্রেম নিবেদন করা চলে এবং যাবতীয় প্রয়ােজন পূনণে সহায়ক হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মটি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেননা, অতএব অবৈধ উপার্জন যারা করে তাদের খাদ্যের উপার্জন হয় অবৈধ অর্থে হওয়ায় ইসলম যাবতীয়। রক্ত গােশত সবই হারাম দ্বারা পুষ্ট হয়। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির প্রার্থনাকে ইসলামে কখনাে সমর্থন করেনা। এ মর্মে রাসূল সা. বলেন:

لا يقبل إلا طيبا، وإن الله أمير المؤمنين بما أمر به المرسلين، فقال: (يا أيها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا، » إن الله طي إني بما تعملون عليه) [المؤمنون: 51] وقال: (يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رأيكم) [البقرة: 172] ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر، يمد يديه إلى السماء، يا رب، يارب، ومطعمه حرام، ومشربه حرام، وملبسه حرام، وغذي بالحرام، قائی
دیا لات؟

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।” আল্লাহ তা’আলা বলেন : “হে ইমানদারগণ! তােমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলাে আমি তােমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।” অতঃপর রাসূল সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলােমেলাে চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল। হবে?”[6]ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ

حللا طيبا فقام سعد بن أبي وقاص ، فقال : يا رسول الله »
كلوا مما في الأرض تليت هذه الاية عند رسول الله ص (يا أيها الناس صلى الله عليه وسلم، ادع الله أن يجعلني مستجاب الدعوة ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : يا سعد أطب مطعمك تكن مستجاب … »

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা হল। “হে মানবমন্ডলী! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর।” তখন সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লহর কাছে দু’আ করুন যেন আমার দু’আ কবুল হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সাদ, তােমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তােমার দু’আ কবুল হবে।”[7]

তিন. হালাল উপার্জনে বরকত লাভ হয়।

উপার্জনে বরকত লাভ করতে হষে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেকেই বরকত মন্ডিত করেন। এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের বরকত নষ্ট করে দেন। আর যেখানে অপচয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্পদের প্রাচুর্যতা লাভে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে বরকতের কারণে খুব স্বল্প সময়েই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চার. হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের একমাত্র উপায় ।

মানুষের দু’টি জীবন রয়েছে, একটি ইহলৌকিক, অপরটি পরলৌকিক। অতএব হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যাক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাস্তি অপেক্ষা করছে।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলাের যােগান দিতে মানুষকে বেছে নিতে হয়। সম্পদ উপার্জনের নানাবিধ পন্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেসব পেশা অবলম্বন করে তা হলাে: কৃষি, ব্যবসাবানিজ্য, চাকুরী, শিল্প প্রভৃতি। উপার্জনের মাধ্যম ব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষেই উপযুক্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে মহান আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব হিসেবে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি; বরং তাদের যাবতিয় মৌলিক অধিকারও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে লক্ষে তিনি মহাশুণ্যের সব সৃষ্টিকে মানুষের সেবায় নিয়ােজিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

بيعا ثم استوى إلى السماء فوق سبع سمو وهو يك شيء عليم ۲۹} [البقرة:29]هو الذي خلق لكم ما في الأرض

“তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি পৃথিবীর সবকিছু তােমাদের (ব্যবহারের জন্য) তৈরী করেছেন।”[1]। তবে এক্ষেত্রে তিনি মানুষকে দিয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা যা তার ইখতিয়ারভুক্ত একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ফলে প্রত্যেকে স্ব-স্ব যােগ্যতা, মেধা, শ্রম ও সময়ের যথােপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যেমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রয়াস চালায়।
মানবজীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানুষের জীবন নির্বাহের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে সমাদৃত, মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ মানুষকে এর গুরুত্ব অনুধাবন বােধগম্য করার নিমিত্তে পবিত্র কুরআনে সালাতের পাশাপাশি যাকাত তথা অর্থের উল্লেখ ৮২ স্থানে করেছেন। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ অর্থনৈতিক বিধানও নির্দেশ করেছেন। ফলে কুরআনুল কারিমকে একটি অর্থবিদ্যার মহাকোষ বললেও অত্যুক্তি হবে । মানুষ কিভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণাবলীর সম্পর্কে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। তাইতাে ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদে তিনি যাকাত ফরয করেছেন, যেন সম্পদ এক শ্রেণির লােকদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে। আল্লাহ তা’আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:

فإذا قضيت الصلوة كانت سيروا في الأرض وابتغوا من فضل آلي و آگژوأ آله كثيرا لعلكم تقليځون) [الجمعة: 10]

“সালাত সমাপ্ত হলে তােমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তােমরা সফলকাম হও[2]।” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন:

فإذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض للتجارة والتصرف في حوائجكم

“যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তােমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়ােজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়াে[3]।”
এখানে উপার্জনের একটি মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। আর তাহলাে এমন পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আল্লাহর স্মরণে ব্রত থাকা যায়।
অতএব, যেসব পেশায় বা উপার্জনের পন্থায় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলাম তা অবৈধ হিসেবে ঘােষনা করেছে। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। সেটি হলাে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যদি কখনও আল্লাহর স্মরণে ব্রত হওয়ার আহবান আসে, তাহলে তখন যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্ম পরিহার করা সকল ইমানদারদের জন্য ওয়াজিব।[4]] জীবিকা অর্জনের নিমিত্তে বিদেশে পাড়ি জমানােরও নির্দেশও রয়েছে এবং এটিকে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার
সমপর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:

الجمعة: 9]وآخرون يضربون في الأرض يبتغون من فضل الله وآخرون يقاتلون في سبيل أن

“আল্লাহ জানেন যে, তােমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।”[5]।

.أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في المكاسب والمتاجر

আলােচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
“অর্থাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত।[6]”
তাছাড়া ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। এ মর্মে যুবাইর ইবনে ‘আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لأن يغدو أحدكم، فيحطب على ظهره، فيتصدق به ويستغني به من الناس، خير له من أن يسأل رجلا، أعطاه أو منعه ذلك»

“তােমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বােঝা বহন করে এনে বিক্রয় করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুক এটা তার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করা, চাই তাকে দান করুক বা না করুক তার চাইতে উত্তম।”[7]।
অতএব উপার্জন করার মনােবৃত্তি ব্যতিরেকে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হয় তাদের এ ধরনের পেশাকে অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«ما يزال الرجل يسأل الناس، حتى يأتي يوم القيامة ليس في وجهه مزعة لحم» |

“তােমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায় সে কিয়ামতের দিন এমন অরস্থায় আগমন করবে যে, তার মুখমণ্ডলে এক টুকরাে গােশতও থাকবে না।[8]” ইসলাম মানবতার ধর্ম। দুস্থ মানবতার সেবায় দান করার রীতি ইসলামে চালু আছে। তবে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে ইসলাম অনুমােদন দেয় নি। বরং একে বার বার নিরুৎসাহিত করেছে যা, নিষেধের পর্যায় পৌঁছে গিয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম নিজ হাতে উপার্জন করাকে সর্বোত্তম উপার্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ মর্মে হাদীসে
এসেছে:

« عن رافع بن خديج، قال: قيل: يا رسول الله، أي الكسب أطيب؟ قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور

হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।”[9]নবী রাসূলগণের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানাে ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।

হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

হালাল উপার্জন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যেমন বিরাট নেয়ামত, ঠিক তেমনি হারাম উপার্জনের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। হারাম উপার্জনের ফলে আল্লাহতায়ালা মানবজীবন থেকে সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেন। রােগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। আর্থিক অভাব অনটন ও সংকট নেমে আসে।
এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ইসলাম মনে করে, আধ্যাত্মিকতার জন্য হালাল খাবার হচ্ছে সর্ব । প্রথম ধাপ। সুতরাং মানুষকে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই হালাল রুজি-রােজগার করার পাশাপাশি তাকে। অবশ্যই পবিত্র ও হালাল খাদ্য খেতে হবে।

পবিত্র কোরআন-হাদিস এবং নবী-রাসূল ও ইসলামি স্কলাররা সর্বদা হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্যের প্রতি গুরুত্বারােপ করেছেন। তাদের অভিমত হলাে- সর্বদা হালাল রুজি অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা তা মানুষকে ধার্মিক হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করে। কোরআনে কারিমের সূরা মায়েদার ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! তােমরা ওই সব সুস্বাদু বস্তু হারাম করাে না, যেগুলাে আল্লাহ তােমাদের জন্যে হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করাে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ‘

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে এসেছে, একদিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের বর্ণনা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সাহাবিরা রাসূলে খােদার বর্ণনা শুনে এতাে বেশি আলােড়িত হলাে এবং কান্নাকাটি করলাে যে, সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলাে ভালাে খাবার দাবার ছেড়ে দেবে। আরাম-আয়েশ, নিজের সুখ শান্তিকে হারাম করে ফেলবে। রাতগুলাে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবে। দিনের বেলা রােজা রাখবে, দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করবে এমনকি এই সিদ্ধান্তের ওপর তারা স্থির অবিচল থাকবে বলে শপথও নিয়েছিল।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

নবী করিম (সা.) এই খবর শুনতে পেয়ে লােকজনকে মসজিদে সমবেত করে বললেন, আমাদের দ্বীন ই সংসারত্যাগী বৈরাগ্যদের দ্বীন নয়। আমি আল্লাহর রাসূল হওয়ার পরও ঘর এবং পরিবারের কাছ থেকে পৃথক হইনি, দাম্পত্য জীবনযাপন করি। জেনে রেখাে, যে আমার পদ্ধতির বাইরে যাবে সে মুসলমান নয়।
এ আয়াতে জীবনের ভারসাম্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তােমাদের ওপর যা কিছু হারাম করেছেন, সেগুলাে করা জায়েজ নয়। আবার যেসব বিষয় তােমাদের ওপর হালাল করা হয়েছে সেগুলােকে হারাম করাও জায়েজ নয়। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধের প্রতি আত্মসমর্পিত এবং আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যেই পদচারণা করে। না তার চেয়ে অগ্রবর্তী হবে না পশ্চাত্বর্তী। মানুষ যে হালালকে নিজেদের জন্যে হারাম করে নিচ্ছে, তা এক ধরনের আগ্রাসন এবং ঐশী সীমা লঙ্ঘনের শামিল। এ আচরণ ঈমানের আত্মার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বস্তুত খাদ্য সামগ্রী, পানীয় সামগ্রী এবং হালাল ভােগ্যবস্তুগুলােকে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে দিয়েছেন। তাই এগুলােকে পরিত্যাগ করা ঐশী রহমত ও দয়ার প্রতি ভ্রুক্ষেপহীনতার শামিল। ইসলাম মানব স্বভাবসিদ্ধ একটি ধর্ম, তাই পবিত্র জিনিসগুলােকে ত্যাগ করা মানব স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলামে সবধরনের উগ্রতা নিষিদ্ধ, এ দু’টি আচরণই ঐশী সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। হালালকে হারাম করা যেমন জায়েজ নয় তেমনি হারামকে হালাল করা জায়েজ নয়। এসব বিধান আল্লাহর হাতে, মানুষের হাতে নয়।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

হালাল বস্তুগুলাে থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। সেই সঙ্গে হালাল বস্তুগুলাে থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি কিংবা অপচয় করাটাও উচিত নয়।
যা সূরা মায়েদার ৮৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু তােমাদেরকে দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও এবং আল্লাহকে ভয় করাে, যার প্রতি তােমরা বিশ্বাসী।’ বর্ণিত আয়াতদ্বয়ে পার্থিব জগতের হালাল ভােগ্যবস্তু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে নিষেধ করার পাশাপাশি হালাল এবং পবিত্র বিষয়গুলাে ব্যবহার করার আদেশ দিয়ে বলা হচ্ছে- ভেবাে না পার্থিব জগতের কল্যাণগুলােকে কাজে লাগানাে অপছন্দনীয় কিংবা নিন্দনীয় কোনাে কাজ। বরং পার্থিব জগতের সব নিয়ামতই আল্লাহর পক্ষ থেকে তােমাদের জন্যে দেওয়া রিজিক। তিনিই এগুলাে তােমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তােমরা এসব সুযােগ-সুবিধাকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করবে- এটাই সঙ্গত।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলাে- এসব কল্যাণময় নিয়ামতকে কাজে লাগানাের ক্ষেত্রে ন্যায়, ভারসাম্য এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন খাও এবং পান করাে। তবে অপচয় করাে না আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, খাও এবং যথার্থ কাজ করাে, খাও এবং অন্যদেরকেও খাওয়াও।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয় হলাে-

ক. পার্থিব সুযােগ-সুবিধাগুলাে অর্থাৎ ঐশী নিয়ামতগুলাে থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে ঈমানদার এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলা জরুরি।
খ. তাকওয়া মানে পৃথিবী অর্থাৎ পার্থিব জগতকে উপেক্ষা করা নয় বরং পার্থিব জগতকে যথার্থভাবে ব্যবহার করা পরকালীন কল্যাণের জন্যে।

হালাল খাবারের সুফল

১. হে মুমিনগণ! আল্লাহ তােমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেছেন তাকে হারাম সাব্যস্ত করাে না এবং সীমালংঘন করাে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালােবাসেন না। আল্লাহ তােমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তােমরা ঈমান রাখ তাকে ভয় করে চলাে। -সূরা মায়েদা: ৮৭-৮৮

২. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও লটারির তীর এসবই অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করাে, যাতে তােমরা সফলতা অর্জন করাে। শয়তান তাে মদ জুয়া দ্বারা তােমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপণ করতে চায় এবং চায় তােমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং বলাে, তােমরা কি (ওইসব । জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? -সূরা মায়েদা: ৯০-৯১

৩. সুতরাং এমন সব (হালাল) পশু থেকে খাও, যাতে আল্লাহ নাম নেওয়া হয়েছে- যদি তােমরা সত্যিই তার। নিদর্শনাবলীতে ঈমান রাখাে। -সূরা আনআম: ১১৮

৪. তােমাদের জন্য এমন কী বাঁধা আছে, যদ্দরুন তােমরা যে সকল পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা থেকে খাও। অথচ তিনি তােমাদের জন্য (সাধারণ অবস্থায়) যা কিছু হারাম করেছেন তা তিনি তােমাদেরকে বিশদভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তবে তােমরা যা খেতে বাধ্য হয়ে যাও (তার কথা ভিন্ন, হারাম হওয়া সত্ত্বেও তখন তা খাওয়ার অনুমতি থাকে)। বহু লােক কোনাে রকমের জ্ঞান ছাড়া (কেবল) নিজেদের খেয়ালখুশির ভিত্তিতে অন্যদেরকে বিপদগামী করে। নিশ্চয়ই তােমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। -সূরা আনআম:১১৯।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

৫. যে পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তা থেকে খেয়াে না। এরূপ করা কঠিন গােনাহ। (হে মুসলিমগণ!) শয়তান তার বন্ধুদেরকে তােমাদের সঙ্গে বিতর্ক করার জন্য প্ররােচণা দিতে থাকে। তােমরা যদি তাদের কথামতাে চলাে- তবে তােমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে। -সূরা আনআম: ১২১

৬. (হে নবী! তাদেরকে) বলাে, আমার প্রতি যে অহি নাজিল করা হয়েছে তাতে আমি এমন কোনাে জিনিস পাই না, যা কোনাে আহারকারীর জন্য হারাম, যদি না তা মৃত জন্তু বা বহমান রক্ত কিংবা শােকরের গােশত হয়। কেননা তা নাপাক। অথবা যদি হয় এমন গােনাহের পশু, যাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জবেহ করা হয়েছে। হ্যাঁ যে ব্যক্তি বাধ্য হয়ে যায়, আর তার উদ্দেশ্য স্বাদ আস্বাদন না হয় এবং প্রয়ােজনের সীমালংঘন করে না, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আনআম: ১৪৫

হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন ইসলামের অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। মানুষ আল্লাহর দাস। যেভাবে নামাজ দ্বারা মানুষের দাসত্ব প্রকাশ করতে হয় সেভাবে হালাল খাবার খেয়ে আর হারাম খাবার বর্জন করেও দাসত্ব প্রকাশ করতে হয়। নিজের ইচ্ছা হলেই কোনাে কিছু খাওয়া যাবে না। আগে জানতে হবে, এ খাবার আমার জন্য হালাল কিনা।

আবার সাধনার নামে সিদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে মনগড়াভাবে কোনাে হালাল খাবারকে বর্জন করা যাবে না। নিজের আগ্রহ। বিসর্জন দিয়ে প্রভুর দেওয়া সীমানা মেনে হারাম গ্রহণ না করা আর হালাল না ছাড়ার মধ্য দিয়েই একজন দাসের প্রকৃত দাসত্ব ফুটে উঠবে। তাই একজন ঈমানদারের জন্য হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিধান। এটা ইসলামের ধর্মের অপরিহার্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।

হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার কয়েকটি পর্যায় আছে।

  • এক. কোনাে হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করা।
  • দুই. কোনাে হালাল খাবার বর্জনের শপথ করা।
  • তিন. কোনাে হালাল খাবার বর্জনকে উত্তম বা পূন্যের কাজ মনে করা।

যদি কোনাে ব্যক্তি কোনাে হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করে তবে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি কোনাে হালাল খাবার বর্জনের শপথ করে তবে তার জন্য এ শপথ ভঙ্গ করে সেই খাবার খাওয়া ওয়াজিব এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করাও ওয়াজিব।

আর যদি কেউ কোনাে হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করলাে না কিন্তু তা বর্জন করাকে উত্তম বা সওয়াবের কাজ মনে করে তবে সে নিকৃষ্টতম বিদআতে লিপ্ত হলাে। যেমন- অমুসলিম আহত হবে এ কথা ভেবে কেউ যদি গরুর গােশত না খাওয়াকে শ্রেয় মনে করল তাহলে সে বিদআত করল। আবার কোনাে রােগের কারণে বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে যদি কোনাে হালাল খাবার বর্জন করা হয় তবে এতে কোনাে সমস্যা নেই।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম

হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার পর্যায় হলাে- আল্লাহর দেওয়া সীমালংঘন করা। মদ ইসলামের বিধানমতে হারাম খাবার। জুয়ার উপার্জনও হারাম। চাই তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যায়ে অনুমােদিত হােক অথবা অনুমােদনবিহীন ব্যক্তিগত পর্যায়ে হােক। ভাগ্য যাচাইয়ের নামে কিছু মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষকে বেশি প্রদানের যত পদ্ধতি আছে তা সবই জুয়া। যদি লাইগ্যা যায়’ জুয়ার একটি মুখরােচক স্লোগান আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। সরকারিভাবেও আমাদের দেশে জুয়ার অনেক আয়ােজন আছে। মুসলমানমাত্রই এগুলাে থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে। প্রতিমার বেদিতে যে সব খাবার রাখা হয় সেগুলােও মুসলমানদের জন্য হারাম। অনেক মুসলমানকে দেখা যায় অন্য ধর্মের পূজার প্রসাদ খেতে। পূজার প্রসাদ প্রতিমার বেদিতে উৎসর্গিত- তাই তা মুসলমানের জন্য হালাল নয়।

প্রতিবেদকের নাম : খাদিজাতুল স্বর্ণা
রােল নং : ০১
প্রতিবেদনের ধরন : প্রাতিষ্ঠানিক
বিষয় : হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে বিষয়ক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন তৈরির স্থান : কুমিল্লা
তারিখ :—/—/২০২২ ইং।

এই ছিল তোমাদের ১২শ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান– হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

আরো দেখুন-

সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ