ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ের প্রয়ােজনীয়তা
এইচএসসি ২০২২ ১২শ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয়- এইচএসসি ২০২২ ইতিহাস ১ম পত্র এসাইনমেন্ট সমাধান– ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ের প্রয়ােজনীয়তা।
এইচএসসি ২০২২ ১২শ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ের প্রয়ােজনীয়তা।
নির্দেশনা :
- কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করা,
- মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা,
- কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি ছকে উপস্থাপন,
- সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা।
এইচএসসি ২০২২ ১২শ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করা
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল। এই দল সাধারণভাবে কংগ্রেস নামে পরিচিত। কংগ্রেস দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলদুটির একটি (অপর দলটি হল ভারতীয় জনতা পার্টি)। এটি একটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন। ১৮৮৫ সালে থিওজোফিক্যাল সােসাইটির কিছু “অকাল্ট” সদস্য কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এঁরা হলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম, দাদাভাই নওরােজি, দিনশ এদুলজি ওয়াচা, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনমােহন ঘােষ, মহাদেব গােবিন্দ রানাডে ও উইলিয়াম ওয়েডারবান প্রমুখ। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব দান করেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে, কংগ্রেস দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। সেই থেকে মূলত নেহেরু-গান্ধী পরিবারই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দান করতে থাকেন।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল যা ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সকল দলের সাথে এ দলটিও নিষিদ্ধ ছিল এবং ১৯৭৬ সালে আইনগতভাবে বৈধতা পায়। এরপরে আবদুস সবুর খান মুসলিম লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে যােগ দেওয়ার পর তার একজন নেতা শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে ঢাকায় ব্রিটিশ রাজ্যের অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুঘলদের সমর্থন ও ভারতবর্ষের অন্যান্য গােষ্ঠীগুলাের বিরােধিতা না করে ভারতের মুসলমানদের রক্ষা করার লক্ষ্যে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস
১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজন ও পাকিস্তান স্বাধীনতার পর, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ পাকিস্তান মুসলিম লীগ হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ক্ষমতায় আসে। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৫ সালের নির্বাচনে ইউনাইটেড ফ্রন্টে প্রাদেশিক আইন পরিষদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ১৯৬০-এর দশকে মুসলিম লীগ দুটি পৃথক দল, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগে বিভক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ সহ সকল ধর্ম ভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পাস করা হয় যা উভয় পক্ষকে বৈধতা করে দেয়। এরপর উভয় দল একত্রিত হয় এবং ১৯৭৬ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশ মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ দুটি ভগ্নাংশে বিভক্ত হয়েছিল। আবদুস সবুর খান দলটির রক্ষণশীল ভগ্নাংশের নেতৃত্ব দেন এবং শাহ আজিজুর রহমান উদারপন্থী ভগ্নাংশের নেতৃত্ব দেন। আজিজুর রহমান শীঘ্রই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে যােগ দেন। ১৯৭৯ সালে আবদুস সবুর খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সংসদ নির্বাচনে ২০ টি আসন জিতেছিল। সাবুর খানের মৃত্যুর পর, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ একাধিক ভগ্নাংশে বিভক্ত হয়ে যায়। দুইটি বিভক্ত অংশ (মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ – বিএমএল) এখনও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভােকেট মােহম্মদ বদরুদ্দোজা আহমেদ সুজা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি ছকে উপস্থাপন
কংগ্রেস উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবােধের উন্মেষ লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন সভা-সমিতি ও সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীসমূহ নিজেদের দাবি-দাওয়া এবং মতামত প্রকাশ করতে শুরু করে। সংবাদপত্রের প্রসার এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সর্বভারতীয় ধ্যান-ধারণা প্রচারে সুবিধা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৮৮৫ খ্রি. অবসরপ্রাপ্ত বৃটিশ সিভিলিয়ান অ্যালনে অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম। বৈঠক বােম্বাইতে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে বৃটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের নীতি অনুসরণ করলেও ধীরে ধীরে নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মাধ্যমে এই দল ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরােভাগে এসে যায়। তা সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের পূর্ণ আস্থা অর্জনে এই দল ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত জাতীয়তাবাদী ভাবধারার ফলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
প্রথম অধিবেশনে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয় সেগুলাে ছিল:
(১) বৃটিশ ভারতীয় সরকারের কার্যাবলি তদন্তের জন্যে একটি রাজকীয় কমিশন গঠন;
(২) ভারত সচিবের পরিষদ বিলুপ্ত করা;
(৩) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদসমূহের সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা;
(৪) সিভিল সার্ভিসের প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষা একই সঙ্গে ইংল্যান্ড এবং ভারতে নেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং পরীক্ষার্থীর বয়স অনধিক ২৩ বছর নির্ধারণ করা। অন্যান্য সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের জন্যে ভারতে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা;
(৫) সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অনাবশ্যক এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা। উক্ত দাবিগুলােতে ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। একই সঙ্গে বৃটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যহীনতার কোন ইঙ্গিত এই প্রস্তাবসমূহে পাওয়া যায় না।
মুসলিম লীগের উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি
১৯০৬ খ্রি. ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা মুসলমানদের স্বাতন্ত্রবাদী চিন্তার ফল। ভারতীয় কংগ্রেস মুসলিম সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। প্রধানত মুসলিম স্বার্থরক্ষার নামে ভারতের নেতৃস্থানীয় মুসলমানগণ মুসলিম লীগের গােড়াপত্তন করেন। কংগ্রেসের মত মুসলিম লীগেরও প্রাথমিক পর্যায়ের নীতি ছিল বৃটিশ শাসনের প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য প্রদর্শন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লীগ ও কংগ্রেস পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে নীতি অনুসরণ করে। ১৯১৬ খ্রি. স্বাক্ষরিত লখনৌ চুক্তি এই নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে জিন্নাহ্র নেতৃত্বে লীগ মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় মনােনিবেশ করে এবং মুসলমানদের একমাত্র প্রনিতিধিত্বকারী সংগঠনের মর্যাদা দাবি করে। এতে কংগ্রেসের সঙ্গে লীগের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৪০-এর মার্চ মাসে লীগের ‘লাহাের প্রস্তাব’ তথা মুসলমানদের জন্যে স্বতন্ত্র বাসভূমির দাবির ফলে এই সংঘাত চূড়ান্তরূপ নেয়। এই স্বাতন্ত্রবাদী রাজনীতি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান নামক পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। এ ছিল দ্বিধাবিভক্ত জাতীয়তাবাদ তথা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চূড়ান্ত পরিণতি।
এই বিভাজনের মূল নিহিত ছিল সম্প্রদায় ভিত্তিক চিন্তা-চেতনার মধ্যে যা প্রথম থেকেই জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে আচ্ছন্ন করেছিল। ভারতের হিন্দু ও মুসলমান দুই প্রধান সম্প্রদায়ের ওপর বৃটিশ শাসনের অভিঘাত ছিল ভিন্নতর। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুগণ সহজে নতুন শাসক গােষ্ঠীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেদের জাগতিক উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। এক্ষেত্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার জন্য তারা সব বৈষয়িক ব্যাপারে হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়দের সামনে যতটুকু উন্নতির সম্ভাবনা ছিল তার চাবিকাঠি ছিল এই নতুন প্রচলিত শিক্ষা। হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা উল্লেখযােগ্য অংশ এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আত্মােন্নতিতে সক্ষম হয়।
নানা কারণে মুসলিম সম্প্রদায় এই শিক্ষা গ্রহণে যুগপৎ অনিচ্ছুক ও অপারগ হওয়াতে তাদের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষার ব্যাপারে মুসলমানগণ নানা দ্বিধাদ্বন্দে থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত সম্প্রদায় হিসেবে তারা হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষকালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান বিদ্যমান ছিল, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঘণবিদ্বেষ, সন্দেহ ও বিভেদের বীজ বপন করে। রাজনৈতিক স্বাতন্ত্রবাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক ভিত এভাবেই তৈরি হয়। এই সম্প্রদায় ভিত্তিক বিভেদ বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ নীতির সহায়ক হয়।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস
উনিশ শতকের শেষ দিকে যখন বৃটিশ সরকার কিছু কিছু সংস্কারের মাধ্যমে ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয় তখন মুসলমান হিন্দু আধিপত্যের ভীতি দেখা দেয়; কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনই স্বাভাবিক। তখনকার ভারতবর্ষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক আনুগত্যের বাইরে অন্য কোন কিছু রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল হবে তা বােধগম্য হয়নি। মুসলমানদের ভীতি খুব অমূলক ছিল বলে মনে হয় না। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি ছিল খুবই দুর্বল ছিল। বৈষয়িক সাফল্য হিন্দুদের মধ্যে একপ্রকার শ্রেয়বােধের জন্ম দেয় যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ভীতি ও স্বাতন্ত্র্যবােধকে আরাে বাড়িয়ে তােলে।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উনিশ শতকের মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতীয় জাতীয়তাবােধের পরিবর্তে স্বীয় সম্প্রদায়ের জাগরণের প্রচেষ্টাই অধিক লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত, হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কার্যাবলিতে এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয় যে ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণা তেমন শক্তিশালী ছিল না। ১৮৮৫ খ্রি. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় যে এই সংগঠনে মুসলমানদের উপস্থিতি ছিল নগন্য। যদিও কিছু মুসলমান প্রথম থেকে কংগ্রেস পার্টিতে নেতৃত্বের পদে আসীন ছিলেন, তথাপি ব্যাপকহারে মুসলমানদের সমর্থন লাভে এই সংগঠন শােচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। অসাম্প্রদায়িক ও সর্বভারতীয় জাতীয়তার দাবিদার হিসেবে কংগ্রেসের এই ব্যর্থতা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেই শক্তিশালী করে।
বিশ শতকের শুরুতে বৃটিশ ভারতীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত কতিপয় সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধির সহায়ক হয়। এ প্রসঙ্গে ১৯০৫ খ্রি. ভাইসরয় লর্ড কার্জনের বঙ্গবিভাগ উল্লেখযােগ্য। এর প্রতিক্রিয়া সারা ভারতে বিস্তার লাভ করে এবং রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম সমস্যাকে আরাে জটিল করে তােলে। যদিও সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রশাসনিক সুবিধার্থে সুবৃহৎ বাংলা প্রদেশকে দুই ভাগ করা হয়, বঙ্গ বিভাগ বিরােধী উদীয়মান জাতীয়তাবাদী শক্তি একে ‘ভাগ কর। এবং শাসন কর’ নীতির বহিপ্রকাশ হিসেবে দেখে। কার্জনের কিছু বক্তব্যের মধ্যেও এই ভেদনীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস
১৯০৪ খ্রি. ফেব্রুয়ারি মাসে লর্ড কার্জন ঢাকায় প্রদত্ত এক ভাষণে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের নিকট এমন এক সম্ভাবনা তুলে ধরেন যা পূর্বেকার দিনের মুসলমান রাজা-বাদশাহদের আমলে বিদ্যমান ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, পশ্চাৎপদ পূর্ব বাংলার মানুষের সমুখে লর্ড কার্জন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরেন। ঢাকার নওয়াব সলিমুল্লাহর সক্রিয় সমর্থনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মধ্যে পরিকল্পিত বঙ্গবিভাগের পক্ষে জনমত সংগঠিত হতে থাকে। অপরদিকে কলিকাতা কেন্দ্রিক হিন্দু ভদ্রলােক শ্রেণী এর ঘােরতর বিরােধিতায় লিপ্ত হয়। বঙ্গ বিভাগের বিপক্ষেও সাম্প্রদায়িক এবং শ্রেণী স্বার্থের উপাদান নিহিত ছিল। পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে গঠিত নতুন প্রদেশ কলিকাতা কেন্দ্রিক পেশাজীবী, কল-কারখানার মালিক, ভূ-স্বামী ইত্যাদির শ্রেণীস্বার্থকে বিঘ্নিত করবে এটা সহজেই অনুমেয় ছিল। এ ধরনের বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষিত ভদ্রলােক শ্রেণীর অন্তর্গত ছিল। সুতরাং বঙ্গ বিভাগের পশ্চাতে কার্জনের আসল উদ্দেশ্য যাই হােক না কেন এর ফলে বাংলা তথা ভারতীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি। আরাে ব্যাপকতর হয়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বৃটিশ ভারত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের আবির্ভাব হয়। এই বিভাজন ছিল হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি। ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষকালেই সাম্প্রদায়িক ভাবধারা লক্ষ্য করা যায়। দুই প্রধান সম্প্রদায়ের মধ্যকার সার্বিক অসমতা তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতীয়তাবােধ জাগরণের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। সংখ্যালঘু মুসলমান সংখ্যাগুরু হিন্দু কর্তৃক শাসিত ও শােষিত হওয়ার ভয় করতাে। এই ভীতি পুরােপুরি অমূলক ছিল না, কারণ ধর্মীয় আনুগত্যই ছিল সর্বাপেক্ষা প্রবল। ১৯৩৭-৩৯ খ্রি. বৃটিশ ভারতের আট প্রদেশে কংগ্রেস শাসনের সময় মুসলিম ভীতি আরাে ঘনীভূত হয়। ফলে মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা ও স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবি জোরদার হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে এই দাবি পূর্ণতা লাভ করে। রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই দায়ী ছিল।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২২ ইতিহাস ১ম পত্র এসাইনমেন্ট সমাধান– ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণে পারস্পরিক মতবিনিময়ের প্রয়ােজনীয়তা।
আরো দেখুন-
- লালসালু উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির টিকে থাকার সংকট ও নীতিবােধের দ্বন্দ্ব
- দ্রবণের আয়নিক গুণফল এবং দ্রাব্যতা গুণফলের প্রয়োগ নিরূপন
- গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর
- একটি কম্পিউটার ল্যাবের সকল কম্পিউটার টুইস্টেড পেয়্যার ক্যাবলের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হওয়ায় ডেটা স্থানান্তরের গতি কম পাওয়া যায়। এতে ব্যবহৃত নেটওয়ার্কটির টাইপ, মাধ্যম এবং টপােলজির বিশ্লেষন
- মিয়োসিস প্রফেজ-১ এর উপপর্যায় পর্যালোচনা
- ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের আঙ্গিকে বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচন উপযোগী দরিদ্র আইন প্রণয়নের রূপরেখা অঙ্কন
- অর্থের সময় মূল্য এবং এর বিভিন্ন ধারণা প্রয়োগ
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।