সর্বশেষ আপটেড

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য এইচএসসি ২০২২ ১১শ সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে আজকের আর্টিকেলে এইচএসসি ২০২২ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র এসাইনমেন্ট সমাধান- গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

এইচএসসি ২০২২ ১১শ সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর।

এইচএসসি ২০২২ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র এসাইনমেন্ট সমাধান

পরিবারের ধারণা Concept of Family

পরিবার সমাজ – জীবনে এমন একটি স্থান দখল করে আছে , যেখানে ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করে এবং মৃত্যু অবধি সেখানেই জীবন অতিবাহিত করে । পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজ বা সংস্কৃতি নেই যেখানে পরিবারের কোনো ধরনের অস্তিত্ব নেই । সাধারণ অর্থে পরিবার বলতে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও এক জন নারীর যৌথভাবে বসবাস করার একটি সংগঠনকে বুঝায় । বস্তুত পরিবার হলো বিবাহ ও রক্ত সম্পর্ক দ্বারা যুক্ত মানুষের একটি ক্ষুদ্র দল যারা স্বামী – স্ত্রী সন্তান , ভাই – বোন , মা – বাবা ইত্যাদি সামাজিক সম্পর্কে পরিচিত । এর প্রত্যেকটি সদস্যের মধ্যে নিবিড় আত্মীয়তা তথা মুখোমুখি সম্পর্ক বিদ্যমান পরিবার শিশুর জন্ম ও লালন – পালনের কেন্দ্র । সেহেতু অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় পরিবারের সঙ্গে তার সদস্যদের সম্পর্ক খুবই নিবিড় ও অন্তরঙ্গ ।

সমাজবিজ্ঞানী আর . এম . ম্যাকাইভার ( Machiver ) ও সি . এইচ . পেজ ( Page ) – এর মতে , “ পরিবার হলো এমন এক গোষ্ঠী যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট যৌন সম্পর্ক বর্তমান থাকে এবং সন্তান উৎপাদন , প্রতিপালনের কাজে যা সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ীভাবে নিযুক্ত থাকে । সমাজবিজ্ঞানী পি . গিসবার্ট ( Gisbert ) বলেন , “ The family is in a way of biological unit having a common dwelling place for its members . It implies an institutionalized sex relationship regulating the relations between husband and wife , and a system of nomenclature and reckoning descent which forbids marriage within certain degrees . ” অর্থাৎ পরিবার এক অর্থে একটি জৈবিক একক । এর সদস্যরা একই বাসস্থানে বসবাস করে । এর মাধ্যমে স্বামী – স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক একটি নিয়ন্ত্রিত ও নির্দিষ্ট রূপ লাভ করে ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর

সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ( Ogburn ) ও নিমকফ ( Nimkoff ) – এর মতে , “ পরিবার হলো সন্তান – সন্ততির অধিকারী বা সন্তান সন্ততিবিহীন স্বামী – স্ত্রী অথবা সন্তান – সন্ততির অধিকারী কোনো একজন পুরুষ বা কোনো একজন মহিলা সহযোগে গঠিত মোটামুটি স্থায়ী একটি সংগঠন । কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী বার্জেস ( Emest Watson Burgess ) ও মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী লক ( Harvey J. Locke ) – এর মতানুযায়ী , “ পরিবার হলো ব্যক্তিদের বৈবাহিক , রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত একটি দল , যারা নির্দিষ্ট একটি বাসস্থান গড়ে তুলে স্বামী – স্ত্রী , মা – বাবা , পুত্র – কন্যা , ভাই – বোন ইত্যাদি ভূমিকায় পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা ও মিথস্ক্রিয়ায় রত হয়ে একটি অভিন্ন সংস্কৃতির জন্ম দেয় ।

উপরের সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে , পরিবার হলো এমন একটি সামাজিক সংগঠন , যেখানে স্বামী – স্ত্রী সমাজের নিয়ম – কানুন সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাস করত সন্তান – সন্ততি জন্মদান ও লালন – পালন করে । পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় যোগাযোগ হেতু মানসিক ঐক্য গড়ে ওঠে এবং তারা পরিবারে স্ব স্ব ভূমিকা পালন করত এক অভিন্ন সংস্কৃতির সূচনা করে । এক কথায় বলা যায় , পরিবার হলো সাধারণ বাসস্থান , অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সন্তান উৎপাদনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সামাজিক দল বা সংস্থা ।

পরিবারের প্রকারভেদ Types of Family

পরিবার একটি মৌলিক ও সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান । পরিবার সর্বজনীন সংগঠন হলেও দেশ কাল ভেদে পরিবারের আকৃতি প্রকৃতিতে বিভিন্নতা রয়েছে । মূলত কতকগুলো উপাদান যেমন— যৌন সম্পর্কের প্রকৃতি , বংশানুক্রম অবস্থান , কর্তৃত্ব ইত্যাদির ভিত্তিতে পরিবার নানা প্রকারের হয়ে থাকে । বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে পরিবারের প্রকারভেদ নিম্নরূপ :

ক . কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার দুই প্রকার । যথা—

১. পিতৃপ্রধান পরিবার ( Patriarchal family ) : পারিবারিক কর্তৃত্ব যদি পিতা তথা স্বামীর হাতে ন্যস্ত থাকে তাহলে সেই পরিবারকে বলা হয় পিতৃপ্রধান পরিবার । হার্বাট স্পেন্সারের মতে , আদিকাল থেকেই পরিবারের নেতৃত্ব পুরুষের ওপর অর্পিত । তার মতে পৃথিবীর কোনো সমাজেই নিখুঁত মাতৃপ্রধান পরিবার দেখা যায় না। বাংলাদেশি সমাজে প্রধানত এ ধরনের পরিবার প্রথা চালু আছে ।

২. মাতৃপ্রধান পরিবার ( Matriarchal family ) : পুরুষের পরিবর্তে স্ত্রীর হাতে পরিবারের কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকলে সেই পরিবারকে বলা হয় মাতৃপ্রধান পরিবার । এ ধরনের পরিবারে স্ত্রীর প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত । বাংলাদেশের গারো ও খাসিয়া উপজাতির মধ্যে এ ধরনের পরিবার লক্ষণীয় ।

খ . বংশ মর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবার দুই প্রকার । যথা

১. পিতৃসূত্রীয় পরিবার ( Patrilineal family ) : যে পরিবারের সন্তান – সন্ততি পিতার সূত্রে সম্পত্তি এবং বংশনাম বা মর্যাদা লাভ করে তাকে পিতৃসূত্রীয় পরিবার বলে। এই অর্থে বাংলাদেশি সমাজের পরিবার পিতৃসূত্রীয় ।

২. মাতৃসূত্রীয় পরিবার ( Matrilineal family ) : যে পরিবারের সন্তান – সন্ততির ওপর বংশনাম বা মর্যাদা ও সম্পত্তি মাতার দিক থেকে বর্তায় তাকে মাতৃসূত্রীয় পরিবার বলে । গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায় ।

গ. বিবাহোত্তর বাসস্থানের ভিত্তিতে পরিবার চার প্রকার । যথা

১. পিতৃবাস পরিবার ( Patrilocal family ) : বিবাহের পর নবদম্পতি যদি স্বামীর পিতৃগৃহে বাস করে তাকে পিতৃবাস পরিবার বলে । বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ বাংলাদেশে এ ধরনের পরিবার অধিক প্রচলিত ।

২. মাতৃবাস পরিবার ( Matrilocal family ) : বিবাহের পর নব দম্পতি যদি স্ত্রীর মাতৃগৃহে বসবাস করে তবে সেই পরিবারকে মাতৃবাস পরিবার বলে । বাংলাদেশের গারো ও খাসিয়া উপজাতির মধ্যে এ ধরনের রীতি প্রচলিত ।

৩. নয়াবাস পরিবার ( Neo – local family ) : বিবাহের পর নবদম্পতি যদি নতুন কোনো আবাস স্থলে ( স্ত্রীর বাবার বাড়ি কিংবা স্বামীর বাবার বাড়িতে নয় ) বসবাস করে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে । বর্তমান আধুনিক শিল্পায়িত বা শহুরে সমাজে এ ধরনের পরিবার দেখা যায় ।

৪. দ্বৈতবাস পরিবার ( Duo – local family ) : বিয়ের পর নব দম্পতি যদি কিছুদিন স্বামীর বাবার বাড়ি এবং কিছুদিন স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস করে তবে সে পরিবারকে দ্বৈতবাস পরিবার বলে । এ ধরনের পরিবার সমাজে কম দেখা যায় ।

ঘ. আকৃতির ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার । যথা—

১. অনু পরিবার ( Nuclear family ) : এ ধরনের পরিবারকে একক পরিবারও বলা হয়ে থাকে । স্বামী , স্ত্রী সহযোগে অথবা স্বামী – স্ত্রী এবং তাদের এক বা একাধিক অবিবাহিত সন্তানকে নিয়ে অনু পরিবার গঠিত । সাংগঠনিক দিক থেকে এই পরিবার আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট । এর মধ্যে পিতা ও অবিবাহিত সন্তান কেবল এই দুই পুরুষের বসবাস । বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবারের সংখ্যাই সর্বাধিক ।

২. যৌথ পরিবার ( Joint family ) : রক্ত সম্পৰ্কীয় যোগসূত্রের ভিত্তিতে কয়েকটি একক পরিবারের সমষ্টি হলো যৌথ পরিবার । যৌথ পরিবারে বিবাহিত পুত্ররা স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি সহযোগে পিতা – মাতার সাথে বসবাস করে । এ পরিবারে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন যেমন- চাচা , চাচী ও তাদের সন্তান – সন্ততিও বসবাস করতে পারে । এই পরিবারের সদস্যরা একত্রে উপার্জন , ব্যয় ও ভোগ করে । আগে গ্রামীণ বাংলাদেশে যৌথ পরিবার প্রথা প্রচলিত ছিল । বর্তমানে বাংলাদেশে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ভেঙে পড়ছে ।

৩. বর্ধিত পরিবার ( Extended family ) : সাধারণ অর্থে একক পরিবারের বর্ধিত রূপই বর্ধিত পরিবার । যে পরিবারে স্বামী – স্ত্রী , সন্তান – সন্ততি ও নাতি – নাতনি একসাথে বসবাস করে তাকে বর্ধিত পরিবার বলে । সাধারণত বর্ধিত পরিবারে তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা একসাথে বাস করে । বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এ ধরনের পরিবার চোখে পড়ে ।

ঙ . স্বামী – স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার । যথা-

১. একক বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Monogamian family ) : একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে বিবাহের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে একক বিবাহভিত্তিক পরিবার । বাংলাদেশি সমাজে এ ধরনের পরিবারের প্রাধান্য লক্ষ করা যায় ।

২. বহু বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Polygamian family ) : একজন পুরুষের সাথে একাধিক মহিলার অথবা এক জন মহিলার সাথে একাধিক পুরুষের বিবাহের ভিত্তিতে গঠিত পরিবারকে বলে বহু বিবাহভিত্তিক পরিবার । এ ধরনের পরিবার আবার দুই প্রকার । যথা

  • i . বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Polygynous family ) : একজন পুরুষের সাথে একাধিক স্ত্রী লোকের বিবাহের ভিত্তিতে গঠিত পরিবারকে বলে বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার । বাঙালি তথা মুসলিম সমাজে এ ধরনের পরিবার প্রথা দেখতে পাওয়া যায় ।
  • ii . বহু স্বামী বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Polyandrous family ) : একজন মহিলার সাথে একাধিক পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে বহু স্বামী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে । ভারতের টোডা উপজাতির মধ্যে এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকলেও আধুনিক সমাজে এ ধরনের পরিবারের প্রচলন নেই বললেই চলে ।

৩. দলগত বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Group marriage based family ) : একদল মহিলার সাথে একদল পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে যে পরিবার গঠিত হয় তাকে দলগত বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে । নৃবিজ্ঞানীদের মতে , আদিম সমাজে এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থার প্রচলন ছিল ।

চ. পাত্র – পাত্রী নির্বাচনের ভিত্তিতে পরিবার দুই প্রকার । যথা-

১. বহিঃগোত্রীয় বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Exogamous family ) : নিজ গোত্রের বাইরে বিবাহের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পরিবারকে বহিঃগোত্রীয় বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে। এ বিধান অনুসারে নিজ গোত্রীয় মানুষের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ।

২. অন্তঃগোত্রীয় বিবাহভিত্তিক পরিবার ( Endogamous family ) : নিজ গোত্রের মধ্যে বিবাহের মাধ্যমে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে অন্তঃগোত্রীয় বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে । এ বিধান অনুসারে স্বগোত্রীয়দের মধ্যে বিবাহের আয়োজন করা হয় । বাংলাদেশে হিন্দু সমাজ স্বজাতি বর্ণের মধ্যে পাত্র – পাত্রী নির্বাচন এ ধরনের পরিবার গড়ে তোলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।

উপরে প্রদত্ত পরিবারের প্রকারগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায় , বর্তমান বিশ্বে একক্ পরিবার সর্বজনীন বিষয় । বাংলাদেশ , ভারত , ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের গ্রামীণ সমাজে এখনও যৌথ পরিবার লক্ষ করা গেলেও তার পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে । এছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজে পিতৃপ্রধান পরিবারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে , পরিবার পূর্ণ পিতৃ বা মাতৃপ্রধান হয় না । কেননা আধুনিকতা , শিক্ষা , কিংবা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রসারে পিতৃপ্রধান পরিবারেও যেমন স্ত্রীর কিছু গুরুত্ব থাকে তেমনি মাতৃপ্রধান পরিবারেও স্বামীর অবস্থানকে গুরুত্বহীনভাবে দেখা হয় না ।

পরিবারের বৈশিষ্ট্য Characteristics of Family

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে , পরিবার অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান । সমাজবিজ্ঞানী আর . এম . ম্যাকাইভার ( MacIver ) ও সি . এইচ . পেজ ( Page ) এর মতানুযায়ী পরিবারের কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান । এগুলো হলো-

  • ১. জোড় সম্পর্ক ( Mating relationship ) ;
  • ২. বিবাহের ধরন ( Form of marriage ) ;
  • ৩. নামকরণ ব্যবস্থা ( System of nomenclature ) ;
  • ৪. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ( Some economic provision ) ;
  • ৫. সাধারণ আবাস ( Common habitation )।

এছাড়া পরিবারের আরও কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো :

১. সর্বজনীনতা ( Universality ) : মানব সভ্যতা বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই পরিবারের অস্তিত্ব দেখা যায় । মানুষ মাত্রই পারিবারিক জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত । এক কথায় পরিবার হলো মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ জীবনের সর্বজনীন রূপ ।

২. আবেগিক ভিত্তি ( Emotional basis ) : পরিবার কতকগুলো আবেগীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে । পারিবারিক পরিবেশে যেমন স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তেমনি স্নেহ – মমতা , প্রেম – প্রীতি , আবেগ – অনুরাগের মতো কোমল অনুভূতিসমূহ এর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রকাশ পায় ।

৩. গঠনমূলক প্রভাব ( Formative influence ) : জন্মের পর থেকেই একটি শিশু পারিবারিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় । বিশেষ করে পরিবারের আঙ্গিক ও মানসিক অভ্যাস ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে । সেহেতু ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য । ফ্রয়েড ও অন্যান্য মনোবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে , একটি শিশু যখন যৌবনে পদার্পণ করে তখন যে ধরনের মানসিক অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় সেসব সে পরিবার থেকেই আয়ত্ত করে । এ কারণেই দেখা যায় , যেসব পরিবারের সন্তান – সন্ততিরা ভালোভাবে লালিত – পালিত হয় সেসব সন্তান মানবিক গুণাবলি অর্জনে অধিকতর সমর্থ ।

৪ . সীমিত আকার ( Limited size ) : আকারের দিক থেকে অন্যান্য গোষ্ঠী বা সংগঠনের চেয়ে পরিবার অনেক ছোট ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর

৫. সমাজকাঠামোতে অবস্থান ( Position in social structure ) পরিবার অন্যান্য সামাজিক সংগঠনসমূহের কেন্দ্রস্বরূপ । সহজ – সরল সমাজে , এমনকি পিতৃতান্ত্রিক সমাজের উচ্চতর পর্যায়েও সমগ্র সমাজকাঠামো ও পরিবার এককসমূহ দ্বারা গঠিত । বস্তুত কিছু সংখ্যক পরিবারের সমষ্টির মাধ্যমেই সমাজজীবনের সূত্রপাত ঘটে ।

৬. সদস্যদের দায়িত্ব – কর্তব্য ( Responsibility of members ) : পরিবার নামক সামাজিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে মানুষকে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশি দায় – দায়িত্ব পালন করতে হয় । সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন , “ In times of crisis men may work and fight and die for their country , but they toil for their families all their lives . অর্থাৎ সংকটকালে মানুষ কাজ করতে পারে , যুদ্ধ – বিগ্রহে অংশ নিয়ে দেশের জন্য মৃত্যুবরণও করতে পারে । কিন্তু তারা তাদের পরিবারের জন্য জীবনভর পরিশ্রম করে ।

৭. সামাজিক অনুশাসন ( Social regulation ) : অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর মতোই পরিবারও কতকগুলো সামাজিক অনুশাসনের অধীন । উদাহরণস্বরূপ বিবাহব্যবস্থার কথা বলা চলে । সমাজভেদে বিবাহের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হলেও প্রত্যেক সমাজেই বিবাহের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে , তা মান্য করেই বিবাহ সম্পাদন করতে হয় । আবার কোনো কোনো পরিবারে একান্তই নিজস্ব পারিবারিক রীতিনীতি দেখতে পাওয়া যায় ।

৮. স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রকৃতি ( Permanent and temporary in nature ) : প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার স্থায়ী ও সর্বজনীন হলেও সংঘ হিসেবে পরিবার সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা কর

৯. দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা ( Physical and psychic security ) : ব্যক্তিমাত্রই পরিবারের মধ্যে দৈহিক নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে । পরিবারের সদস্যদের সকল বিপদ – আপদ থেকে রক্ষা করতে পরিবার মাত্রই সতত সচেষ্ট ও সক্রিয় থাকে । শিশুরা তো বটেই , এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক , বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই পারিবারিক পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।

১০. সামাজিক মর্যাদা ( Social status ) : বস্তুত পারিবারিক সূত্রেই ব্যক্তি সমাজে পরিচিত হয় । প্রতিটি পরিবারই তার সদস্যদের প্রয়োজনীয় মর্যাদা প্রদান করে । নিজ পরিবারের সুনাম বা দুর্নামের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা নির্ধারিত হয় তথা এরই প্রেক্ষাপটে সামাজিক পরিমণ্ডলে অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থায়ী হয় ।

১১. উত্তরাধিকার নির্ধারণ ( Inheritance ) : সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পারিবারিক সম্পত্তির অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় পার্থক্য দেখা দেয় ।

১২. সামাজিকীকরণ ( Socialization ) : পারিবারিক পরিবেশেই শিশুর সামাজিকীকরণের সূত্রপাত ঘটে । পরিবারের মধ্যেই শিশু সমাজে প্রচলিত নিয়মানুবর্তিতা , নৈতিক আদর্শ , আচার – আচরণ , রীতিনীতি প্রভৃতির সাথে পরিচিত হয় ও সেগুলোকে আয়ত্ত করে ।

১৩. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ( Social control ) : পরিবারের সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকা তার সদস্যদের ওপর বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে থাকে । পরিবারের এই ভূমিকা সুসংহত সমাজব্যবস্থা গঠন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয় ।

১৪. সংস্কৃতির সংরক্ষক ( Protector of culture ) : পরিবার সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতির ধারক – বাহক এবং সংরক্ষক হিসেবে মূল ভূমিকা পালন করে । পরিবারের মধ্যেই শিশু সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতির ধারার সাথে পরিচিত হয় । পরিবারই তাকে সমাজের সংস্কৃতির মেনে চলার শিক্ষা দান করে । এ শিক্ষা দানের মাধ্যমে পরিবার কার্যত সংস্কৃতির সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে ।

পরিবারের কার্যাবলি Functions of Family

সমাজের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার । এটি অন্যান্য সংগঠনের মতোই বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন প্রকার কাজ সম্পন্ন করে থাকে । মূলত বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমেই পরিবার তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে । আদিম কাল থেকে সমাজের বেশিরভাগ কাজ পরিবারের মধ্যেই সম্পাদিত হয়ে আসছে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ( Ogburn ) বলেন , পরিবারকে হয় ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় । যথা- প্রজনন ( Reproduction ) নিরাপত্তা ( Protection ) , সামাজিকীকরণ ( Socialization ) , যৌন আচরণরীতি ( Regulation of Sexual behaviors ) , সদস্যদের প্রতি মমতা ( Affection and Companionship ) এবং সামাজিক মর্যাদা দান ( Providing of social status ) ।

আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স ( Parsons ) – এর মতে , পরিবারের দুটি প্রধান কাজ হচ্ছে-

  • ক . মুখ্য সামাজিকীকরণ ( Primary Socialization ) : মূখ্য সামাজিকীকরণ হলো শিশুরা যে সমাজে জন্মায় সেই সমাজের সাংস্কৃতিক আদব – কায়দা , আচার – আচরণ শিক্ষা লাভ করার একটি প্রক্রিয়া । এ প্রক্রিয়া শৈশবকালেই ঘটে বিধায় পরিবার হলো মানব ব্যক্তিত্ব উন্নয়নের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ।
  • খ . ব্যক্তিত্ব স্থিতিকরণ ( Personality Stabilization ) : অন্যদিকে ব্যক্তিত্ব স্থিতিকরণ বলতে পরিবারের পূর্ণবয়স্ক সদস্যদের আবেগগত সহায়তায় পরিবার কর্তৃক পালনকারী ভূমিকাকে বোঝায় ।

নিচে পরিবারের প্রধান প্রধান কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :

১. জৈবিক কাজ ( Biological function ) : পরিবারের অনেকগুলো মৌলিক কাজ রয়েছে । এর মাধ্যমে মানবজাতি স্থায়িত্ব লাভ করছে এবং বংশবৃদ্ধি করছে । এটাই পরিবারের জৈবিক কাজ । আদিম যুগে মানুষ যৌথভাবে বসবাস করত তখন তাদের মধ্যে অবাধ যৌনাচার প্রচলিত ছিল । যুগ যুগ ধরে এই যৌনাচার প্রথা প্রণালি বিবর্তিত হয়ে পরিবারে রূপ লাভ করে তা একক বিবাহ প্রথায় পরিণত হয়েছে । মূলত নর – নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষা পারিবারিক সংগঠনের মধ্যে বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ স্বীকৃত উপায়ে পরিতৃপ্তি লাভের সুযোগ পায় । এছাড়া পরিবার সন্তান উৎপাদন করে । আদিম যুগেও পরিবারের এই কাজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতো ।

২. অর্থনৈতিক কাজ ( Economic function ) : পরিবারের ভরণ – পোষণ করার জন্য আয় ও উৎপাদন করতে হয় এবং তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় । আয়ের কিছু অংশ দুর্দিনের জন্য জমা করেও রাখা হয় । জীবন বীমা শিল্পে লগ্নি , ব্যবসা , । ক্রয় অথবা চাকরি ইত্যাদি যেভাবেই হোক কিছু না কিছু সঞ্চয় করতেই হয় । এসব আয় ব্যয় ও সঞ্চয় মূলত পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত । আদিম সমাজে স্ত্রী এবং সন্তান – সন্ততিদের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হতো । কারণ স্ত্রী ও সন্তানই ছিল অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার । বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের পরিবারগুলো অদ্যাবধি উৎপাদন , আয় ও ভোগের একক । সেখানে নারী – পুরুষ সবাই মিলে কৃষিকাজের বিভিন্ন দিকে অংশগ্রহণ করে । শিল্পায়িত সমাজের পরিবারের তুলনায় গ্রামের পরিবারগুলো উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত ।

৩. শিক্ষামূলক কাজ ( Educational function ) : পরিবার হলো শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র । পরিবারের প্রাথমিক দায়িত্ব হল শিশুদের সামাজিক করে গড়ে তোলা । শিশুকে আদব – কায়দা , চাল – চলন ও ব্যবহারিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় শিক্ষা – দেয়ার দায়িত্ব পরিবার পালন করে থাকে । পরিবারের মধ্যেই সন্তান স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা কাজ চালায় । এর জন্য দরকার হয় আদর্শ পিতা – মাতার । বিশেষজ্ঞদের মতে , শিশু শিক্ষার দায়িত্ব অনভিজ্ঞ পিতা – মাতার হাতে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ ভবিষ্যতে পঙ্গু সমাজ ও জাতি গঠন করা ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা

৪. ধর্মীয় কাজ ( Religious function ) : পরিবার যেমন প্রাথমিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল তেমনি পরিবার থেকে এর সদস্যরা ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করে থাকে । উদাহরণস্বরূপ একটি মুসলিম পরিবারের সদস্যকে তার পরিবারের নিয়ম ও প্রথা অনুযায়ী চলতে হয় এবং পরিবারে অন্য সদস্যদের ন্যায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হয় । তা না হলে পরিবারের সদস্যগণ একই বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে না ।

৫. চিত্তবিনোদনমূলক কাজ ( Recreational function ) : পরিবারের সদস্যগণ অবসর সময়ে বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলার মাধ্যমে জীবনের একঘেয়েমি ভাব দূর করতে পারে । যেমন- ছেলেমেয়েরা পরিবারে খেলাধুলা , বয়স্করা পরিবারে গল্পগুজব করে এবং সকলেই পরিবারে অবসর কাটিয়ে থাকে । আবার পার্ক , সিনেমা , খেলার মাঠে অবসর বিনোদন করা হয় । আবার যারা বাইরে যাওয়ার মতো সময় পান না তারা ঘরে বসেই টেলিভিশন , রেডিও , সংবাদপত্র দ্বারা বিনোদন করে থাকেন ।

৬. মনস্তাত্ত্বিক কাজ ( Psychological function ) : প্রতিটি পরিবারেরই একটি মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকা রয়েছে । পরিবারই হলো একমাত্র মানসিক যন্ত্রনা নিবারণের কেন্দ্রস্থল । অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন যে , অন্য কোনো কারণে না হোক অন্তত মনস্তাত্ত্বিক কারণে হলেও পরিবার মানবসমাজে টিকে থাকবে । উদাহরণস্বরূপ , মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রচলিত থাকলেও পরিবারের ভূমিকার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয় ।

৭. রাজনৈতিক কাজ ( Political function ) : পরিবার কতকগুলো রাজনৈতিক কাজও সম্পাদন করে । পরিবারের অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্তান – সন্ততিদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা । পরিবারকে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় পিতা বা মাতাই পরিবারের প্রধান । পারিবারিক পরিমণ্ডলেই শিশু পরিবার প্রধানের আদেশ – নিষেধ মেনে চলতে , পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের ধারণা অর্জন করতে এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযুক্ত সদস্যদের মতামত গ্রহণ করতে শেখে । মূলত পরিবারই একজন সুনাগরিকের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা

৮. সামাজিকীকরণ এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ ( Functions of socialization & social control ) : পরিবার থেকেই সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা যায় । পরিবার শিশুদের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা পালন করে । শিশুর সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ প্রথম পরিবার থেকেই শুরু হয় । তাই পরিবারকে সামাজিকীকরণের সূতিকাগার বলা চলে ।

৯. রক্ষণাবেক্ষণমূলক কাজ ( Maintenance function of family ) : পরিবার শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । জন্মের পর বিভিন্ন বিপদ – আপদ থেকে সন্তানদের রক্ষার্থে পরিবার নানা কাজ করে থাকে । যেমন- শিশু কোনো কারণে ভয় পেলে , হঠাৎ অসুস্থ হলে ও দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের রক্ষার্থে পরিবার অনেক কাজ করে । পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজও পরিবার করে থাকে ।

তবে উল্লিখিত কাজগুলো সময়ের ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে । তবে পরিবর্তন হলেও পরিবারের গুরুত্ব হয়তো কোনো দিনই হ্রাস পাবে না । দেখা যায় , বর্তমানে আধুনিক পরিবার অতীতের মতো ততোধিক কার্য সম্পাদন না করলেও বিবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে । এজন্য নির্দ্বিধায় বলা যায় পরিবার অতীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে , বর্তমানেও করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে ।

গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারের ধরন এবং এর পরিবর্তনশীল ভূমিকা: Types of Rural and Urban Family and its Changing Role

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ । এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় যৌথ পরিবার , বর্ধিত পরিবার ও একক পরিবার ব্যবস্থা দেখা যায় । বর্তমানে শিক্ষা ও শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে বর্ধিত পরিবারের প্রভাব অনেকটা কমে গিয়েছে । আবার যৌথ পরিবার আজ ভাঙনের মুখে । এর প্রধান কারণ হচ্ছে শিল্প কারখানায় চাকরি করায় শ্রমিকরা ঘর ছাড়া হতে বাধ্য হচ্ছে । বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের পরিবারগুলো মূলত একক বা অণু পরিবার । আবার গ্রামের পরিবারগুলো ঐতিহ্যগতভাবে যৌথ পরিবার । এর মূল কারণ হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা পরিবারের কর্তার বিষয় সম্পত্তি ভোগ করে এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পৈতৃক সম্পত্তি পায় । এছাড়া অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে । বিশেষ করে বাংলাদেশের সমাজ কৃষিভিত্তিক হওয়ায় এখানে জমির মূল্য অনেক বেশি ।

এদেশে সামাজিক মর্যাদা ও জীবনযাত্রার মান ভূসম্পত্তির মালিকানার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । সে কারণে পরিবারের সন্তান – সন্ততি পরিবার থেকে পৃথক হয়ে আপন ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চায় না । আবার অনেক সময় পৃথক হলে আর্থিক দূরাবস্থার সম্মুখীন হতে হয় । সেজন্যই এদেশে এখনও যৌথ পরিবার ব্যবস্থা একেবারে বিলীন হয়ে যায় নি বাংলাদেশে একক বিবাহভিত্তিক পরিবারই বেশি । তবে গ্রামীণ ধনী মুসলিম পরিবারে একাধিক স্ত্রীভিত্তিক পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে। অবশ্য ইদানীং এর হার / সংখ্যা কমে আসছে ।

গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা

অন্যদিকে , শহরে বহু স্ত্রীভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম । বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান । এসব পরিবার মূলত পিতৃবাস রীতি অনুসরণ করে । পুত্র সন্তানহীন পরিবারে কেউ একটি মাত্র মেয়েকে এমন পাত্রে বিবাহ দেয় যে পাত্র স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস করে । অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ঐ পরিবারে যদি কখনও পুত্র সন্তান জন্মে বা কোনো মনোমালিন্য হয় তবে জামাতা তার স্ত্রীসহ ঐ পরিবার ত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হয় । আবার , বলা যায় বাংলাদেশের সমাজ মূলত আমেরিকান সমাজের মতোই দ্বি – সূত্রীয় নীতি অনুসরণ করে । পিতৃ ও মাতৃ উভয় কূলের আত্মীয়দের প্রায় সমান মর্যাদা দেয়া হয় । পাশ্চাত্যের তুলনায় বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো অত্যন্ত মজবুত । এখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আবেগ , ভালোবাসা এবং হৃদয়ের বন্ধন অতি দৃঢ় ।

পরিবার অণু , বর্ধিত বা যৌথ যাই হোক না কেন জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধন এখানে এতই প্রবল যে অনেক সময়ই তা যুক্তিকে উপেক্ষা করে অবশ্য বাংলাদেশে শিক্ষার প্রসার , ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধের ধারণা , আর্থিক দূরাবস্থা , ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং নেহায়েত ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই বন্ধন কিছুটা শিথিল হয়ে পড়েছে । আধুনিক উন্নয়নশীল সমাজে পারিবারিক সংগঠন দ্রুত ভেঙে পড়ছে । এর অর্থ এই নয় যে , একদিন হয়ত পরিবার একেবারে লোপ পেয়ে যাবে । আসল কথা শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর পরিবর্তন হচ্ছে ।

এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২২ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র এসাইনমেন্ট সমাধান- গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা আলোচনা।

আরো দেখুন-

সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ